নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘুমাতে ঘুমাতে কাঁদা হয়ে গেলাম। ঘুমাতে ঘুমাতে চোখের নীচে কালি পড়ে গেল। শুধুমাত্র Rono আসবে ২টায়, তাই অনেক কষ্টে নিজেকেই নিজে ঠেলে-ঠুলে শাওয়ারে পাঠালাম দুপুর দেড়টা'র দিকে।
সকালে ১০টায় একবার অনেক কষ্টে উঠে ব্রেকফাস্ট করে এসে শুয়েছিলাম। যদিও ভাবছিলাম কোরিয়ার শেষ দিনের খরচ নিজেকে জোগাতে হবে, ঘুমিয়ে সেই হাজার হাজার টাকা নষ্ট করা ঠিক হবে কিনা। কিন্তু বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়েই মনে হলো আরে এত কষ্ট তো আরামের জন্য। জাদুঘর, চিড়িয়াখানা না দেখে যদি ঘুমিয়ে আরাম পাই, তাহলে সেটাই করা উচিৎ। যেই ভাবা সেই কাজ। ঘুম দিলাম।
১।৩০টায় উঠলাম। নিজেকে শাওয়ারে পাঠালাম। বাথটাবে ফোন নিয়ে ঢুকেছি, রনো ফোন দিতে পারে। ঠান্ডা-গরম পানি মিশিয়ে বাথটাবে শুয়ে মাত্র ঘুমিয়েছি - তখনই রনো'র ফোন। টাওয়েল খুঁজে পাইনা, এদিকে কোরিয়ার বাথরুমে দরজা গ্লাসের, লক থাকেনা। ভাবলাম কিছু কথা থাক না গুপন। রনো বললো, একটু দেরি হবে। আমি মহা খুশি। যাক পানির মধ্যে ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার করার সুযোগটা পাওয়া গেল।
রনো'র সাথে প্রথমে গেলাম একটু দূরে। বেশ দূরে। ৩ সাবওয়ে স্টেশন দূরে। এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি। বড় বড় দালান, ছোট ছোট ফোন, বড় বড় রাস্তা, ছোট ছোট মানুষ, বড় বড় ওভারকোট, ছোট ছোট স্কার্ট। আমরা ঘুরে বেড়াই। কোরিয়ান বার্গার খাই। বিসমিল্লাহ বলে খাই, বার্গার হালাল উপায়ে জবাইকৃত কিনা জানিনা।
সেখান থেকে যাই নাম-সান সোল টাওয়ারে। কোরিয়ায় এসে যে জিনিসটা শিখলাম সেটা হচ্ছে Seoul এর উচ্চারণ সিউল না, সোল। সোল টাওয়ারে কেবল কারে চড়ে গেলাম, কুটি কুটি টাকা খরচ করে। কেন গেলাম জানিনা। কালকের নেপালিগুলোকে ইচ্ছা মতো গালি দিলাম এই বুদ্ধি দেবার জন্য। কেবল কারে এরা মানুষ ভরে গরুর ছাগলের মতো, যেমন গরু-ছাগল পরিবহনের জন্য টয়োটা জাপানে একটা গাড়ি বের করেছিল Probox নামে। তারও আগে প্রায় ঘন্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে ৩ তলার বোর্ডিং গেটে যেতে হলো ভিড় ঠেলে। গাউসিয়া মার্কেটে ছোটকালে একবার উঠতি বয়সের মেয়েদের কাছে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছিলাম, আবার হলাম আজকে। ভিনদেশে, কেবল কারের মধ্যে, অন্ধকারে।
সোল টাওয়ার একটা অত্যন্ত সুন্দর জায়গা। কিন্তু গরীব বাঙ্গালীর পৃথিবীর যে কোন সুন্দর জায়গা দেখলেই দীর্ঘশ্বাস বেড়োয়। আহারে এর চাইতে কত সুন্দর পাহাড় ছিল আমাদের। বান্দরবনে এমন একটা টাওয়ার করলে কত্ত সুন্দর হইত, করল না। জটিল জায়গায় মনের আনন্দে ঘোরাঘুরি করে ফিরলাম হোটেলে। ভোরে ৪টায় বের হতে হবে, এয়ারপোর্ট ২ ঘন্টার পথ সোল থেকে। ৩ টা ভয় এখন, either i am gonna miss the flight, or the flight is gonna miss me; or the world is gonna miss us both!
হোটেল থেকে মাগনা আইসক্রিম খেয়ে ডিনারে বেরুলাম ২জন। আমি আর রনো। ও একটা জিনিস খাওয়াতে চায়। মুরগীর তৈরি, মোটামুটি হালাল। সেই জিনিস খুঁজতে যেয়ে আমার ১৬০০ টাকার জুতো আর রনো'র মহামূল্যবান জিভ দু'টোয় ক্ষয়ে যেতে থাকে। কোথায় কি? কোথাও কোন মুরগী নাই। দামি দামি গাড়ি আছে, মদ আছে, নারী আছে, ধোঁয়া ওঠা কফি আছে, কিন্তু মুরগী নাই। মুরগী থেকে গরুতে নামলাম। দোকানদাররা পারলে আমাদের গরু ঠাওড়ায়। শেষে বহু ঘোরাঘুরি করে আমরা এক কোরিয়ান রেস্তোরায় ঢুকে গরুর সন্ধান পেলাম। এক কোরিয়ান বনলতা সেন জানাল গরু হবে। তারপর নিজেরা হাসাহাসি করল, গরু ঠাওরালো কিনা বলতে পারিনা। রনো'কে অনেক কারণেই ধন্যবাদ দেয়া যায়; কিন্তু বিশেষ ধন্যবাদ এই ডিনারটার জন্য। অসাধারণ খাবার, আমি তো খেয়ে 'ফেবুল্লা'।
তারপর রনো চলে যায় তার পথে। ফার্মেসির পি।এইচ।ডি তার অপেক্ষায়। আমি অলস হেঁটে যাই হলি'র coffee শপে। Holy'র কথা মনে পড়ে। এই মেয়েটা এত ভাল কেন?
প্রতি রাতের মতো কফি মগ হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। আকাশের দিকে তাকাই একবার। আমার অপেক্ষায় থাকা চাঁদ ঢাকা পড়েছে মেঘের তলে। আমি হাঁটতে থাকি। আমার হাতের কফি ঠান্ডা হতে থাকে। আমি জানি আরেকটু হেঁটে যখন আমি ডান দিকে ঘুরব, তখন বাম দিকের রেস্তোরাটার সামনে একটি কোরিয়ান মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে উদাস হয়ে। প্রতি রাতেই দেখছি, আজকে রাতেও দেখব। গত ক'দিনে কত মানুষ দেখলাম, কত মেয়ে দেখলাম - উদাস কই একজনকেও তো দেখিনি। প্রতি রাতেই ইচ্ছা করে মেয়েটার সাথে কথা বলি, জিজ্ঞেস করি তার মন এত খারাপ কেন?
আমার সেই ইচ্ছা আর পূরণ হয় না। আমার অনেক ইচ্ছাই আর পূরণ হয় না। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয় আমি জানি মেয়েটার মন উদাস কেন!
মেয়েটাকে বামে রেখে, চাঁদটাকে ওপরে রেখে আমি কোনদিকে যাই কে জানে! আমার অপেক্ষায় থাকে অনাপাতত অজানা গন্তব্য...
শামীম আহমেদ
১৩ এপ্রিল ২০১৪
সোল, কোরিয়া।
১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:১১
জিতু বলেছেন: প্রচুর স্কলারশিপ আছে। সেই সুযোগ নিতে পারেন। মাস্টার্স। ওদের এমব্যাসিতেও যোগাযোগ করতে পারেন ঢাকায়। ওয়েবসাইটে ইউনিভার্সি গুলোতেও যোগাযোগ করতে পারেন। অত্যন্ত নিরাপদ দেশ। জীবনযাপন একটু খরুচে আর ইংরেজী জানা মানুষ খুব কম। এছাড়া ভাল বলব
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ ভোর ৫:৪১
সানড্যান্স বলেছেন: কোরিয়ার ব্যাপারে আমার ব্যাপক আগ্রহ। আরো জানালে খুশি হব।
ভালোলাগা রইল!
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৮
ভীতু সিংহ বলেছেন: আমরা লন্ডন, আমেরিকা নিয়ে যেমন মাতামাতি করি; কোরিয়া সম্পর্কে তেমন আগ্রহ অনেকেরই নেই। ব্লগেও কোরিয়া প্রবাসী তেমন কাউকে দেখি না। যাইহোক, আপনার লেখা খুব ভালো লেগেছে। দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে আরও জানতে চাই।
বিঃ দ্রঃ এই অধম দক্ষিন কোরিয়া'র ভিসার আশায় আছে। EPS-TOPIK আর কিছুদিনের মধ্যেই। এই জন্যই কোরিয়া নিয়ে কিঞ্চিত আগ্রহী। আশা করি কিছু মনে নিবেন না। :#> :#>