নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জিতু

ফেইসবুকে আছিঃ https://www.facebook.com/shamimahmedjitu রকমারিতেঃ http://www.rokomari.com/book/77323 কবিতার পেইজঃ https://www.facebook.com/PriyoPromotyo

জিতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাক্তার, সাংবাদিক এবং গালি খাওয়া, পোড়-খাওয়া মানুষের গপ্পো!

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২১

সাম্প্রতিক সময়ে ডাক্তার এবং সাংবাদিকদের মধ্যে যে মুখোমুখি অবস্থান সেটা নিয়ে সবাই আমাকে প্রশ্ন করছেন। আমি কোন উত্তর দেই নি এখন পর্যন্ত, সমানে এর ওর স্ট্যাটাস শেয়ার দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা লিখি। সামনের বছর আরও বই বেরুবে, বিতর্কিত বিষয়ে কথা-বার্তা বললে আলোচনায় থাকা যাবে, বই বিক্রির জন্য যৌনতা কিংবা আলোচনায় থাকা অত্যন্ত জরুরি।



যাই হোক কাজের কথায় আসি। প্রথম কথা হচ্ছে আমার আব্বাজান Jahir Uddin Ahmed একজন ডাক্তার। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি.বি.এস পাস করেন বহু বছর আগে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুরও আগে, সম্ভবত। আব্বা পাস করার পর কিছুদিন আমাদের গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজীতে রোগী দেখতেন। তারপর সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন এবং যেহেতু সৎভাবে সরকারি চাকরি করলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা যায় না, তাই তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করার পর কখনই আর প্র্যাকটিস করেননি। আব্বা দীর্ঘদিন সরকারি চাকরি করলেও ঘুষ খাননি, প্র্যাকটিসও করেননি। দুইটার যে কোন একটা করলে আমার আর এন.জি.ও'তে চাকরি করতে হয় না। আমি লেখক হতে পারতাম, এবং লেখক হলে যে মোটামুটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বুড়ো আঙ্গুলের সমান লেখক হতাম, তাতে কোন সন্দেহ নাই।



যাই হোক, কাজের কথায় আসি। আব্বা ডাক্তার, শুধু তাই না, আমার প্রিয় বন্ধু Robin AR, যে কিনা পৃথিবীর সবচে ভাল ডাক্তার, এবং আরেক বন্ধু, Tareq Salahuddin, যে কিনা যতটা ভাল ডাক্তার, তার চাইতেও ভাল সাংবাদিক এবং আরও কিছু বন্ধু যারা যতটা ভাল ডাক্তার, তার চাইতেও ভাল সংবাদ পাঠিকা, তার চাইতেও ভাল সুন্দরী।



যাই হোক, কাজের কথায় আসি। আমার অফিসের বড় বসও হচ্ছেন ডাক্তার। যত বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে আছে তাদের কর্তা ব্যক্তি হচ্ছেন সব ডাকসাইটে ডাক্তারগণ। এছাড়া আমার চেনা সব সফল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞও হচ্ছেন একেকজন ব্যর্থ ডাক্তার। সব মিলে আমার জীবন ডাক্তারময়। এদের মধ্যে সবচে ভাল ডাক্তার আমার আব্বা। সর্দি থেকে ক্যানসার পর্যন্ত সকল রোগের চিকিৎসাই তার কাছে একটা - ভাত খেয়ে লাইট বন্ধ করে শুয়ে থাক। ছোটবেলায় এই চিকিৎসাই পেয়েছি তার কাছে।



সাংবাদিকদের কথা আর কি বলব। আমার বেশিরভাগ সুন্দরী বান্ধবীই সংবাদ পাঠিকা এবং ডাক্তার। যেহেতু সংবাদ পাঠিকা তাই তাদের সাংবাদিক বললেও ভুল বলা হবে না। এছাড়া মিডিয়াতে টুকটাক আমারও অনেক কাজ। অনেক সাংবাদিক বন্ধু। তবে আমি নিজে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারিনাই, তাই ডাক্তারদের কেউ একহাত নিলে মন্দ লাগে না। অন্যদিকে সাংবাদিক হওয়া তো কোন ব্যাপার না, যে কিছু হয় না, সে সাংবাদিক হয়, তাই সাংবাদিকরা যখন একহাত নিচ্ছে ডাক্তারদের তখন মজাই লাগছে।



এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমি কোন দল? ডাক্তার না সাংবাদিক। এর উত্তর পরে। প্রথম কথা হচ্ছে আমি ডাক্তার এবং সাংবাদিকদের এই মারামারিতে আনন্দিত। এই প্রথম দেশে আওয়ামী লীগ, বি.এন.পি ছাড়া অন্য দুই দলের মারামারি হচ্ছে। এটা গনতন্ত্রের জন্য ভাল। আমি যখন মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ি, তখন আমাদের স্কুলের একটা ছেলের পায়ের ওপর দিয়ে ট্রাক চলে গেল। আমরা সবাই মনের আনন্দে ট্রাক, বাস ভাঙ্গলাম। এই ভাঙ্গাভাঙ্গির আনন্দের সাথে তুলনা করা যায় এমন অন্য আনন্দের কথা এখানে লেখা ঠিক হবেনা, এমন আনন্দ!



যখন বড় হলাম, তখন ৫০০ এম।সি।কিউ থাকা না থাকা নিয়ে দেখলাম আমরা সহ ধানমন্ডি বয়েজ, গভর্মেন্ট ল্যাবের পোলাপাইনরাও ব্যাপক ভাংচুর করতেসে। এরপর যখন নিজে ভাল ছাত্রের স্বীকৃতি পাইলাম নটর ডেমে ভর্তি হয়ে, তখন দেখলাম ঢাকা কলেজের পোলাপাইন এমনকি প্রেমে ব্যর্থ হইলেও বাস, ট্রাক, হাত-পা নানা জিনিস ভাঙ্গে। তো এইসব ভাল ভাল স্কুল কলেজের পোলাপাইনরাই পরে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার নিদেনপক্ষে আমার মত অর্থনীতিবিদ হইসে। আমাদের বড় হয়ে ওঠা হচ্ছে ভাঙ্গাভাঙ্গি করে।



আজকের যেই ডাক্তাররা ব্যপক সাংবাদিক পিটাচ্ছে তারা তো আমাদের সাথে পিটাপিটি করে এসেছে স্কুল-কলেজ থেকেই। ডাক্তারি পড়ে এরা হঠাৎ করে ফেরেশতা হবে এটা আশা করি ঠিক না। উপরন্তু ডাক্তাররাও আমার আপনার মত মানুষ, তাদের বেগ আছে, আবেগ আছে, তারাও টয়লেটে যায়। আমরা এমন ভাব করি ডাক্তাররা হবে অন্যরকম। তাদের পূজা করতে হবে, এটা ঠিক না। অন্যদিকে সাংবাদিকদের কাছে মানুষের কোনই প্রত্যাশা নাই। সাংবাদিকরাও যে ভাল ছাত্র, তারাও যে আজকাল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও এই 'ব্যবসা'য় আসেন, এটা অনেকেই ভুলে গেছেন। আমরা আমাদের আশেপাশে যেসব নিম্নমানের অর্বাচীন সাংবাদিকদের দেখি তারা ২-৩ যুগ আগের এবং তাদের কাছে 'বেশী কিছু আশা করা ভুল'। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডাক্তাররা সেরাদের সেরা তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমি নিশ্চিতভাবে জানি, অন্যদের সাথেও কথা বলে দেখেছি, ডাক্তাররা সাংবাদিকদের পেটানোতে সাধারণ মানুষ খুশী, কারণ সাংবাদিকদের জবাবদিহিতার কোন জায়গা নাই, তাই সাংবাদিকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যখন ডাক্তাররা নিয়েছেন তখন সবাই খুশী। উদ্বেগের জায়গাটা হচ্ছে সাংবাদিকদের পেটানোর পাশাপাশি ডাক্তাররা যদি সাধারণ মানুষের উপকার করতেন, চিকিৎসাটা একটু ভালভাবে করতেন তাহলে আফসোস ছিল না। আমাদের দেশের ডাক্তাররা যেই সুযোগ সুবিধা পান তা অত্যন্ত লজ্জাজনক, কিন্তু সেইজন্যই তারা ডাক্তার, তারা এই অবস্থা জেনেই ডাক্তারি পেশায় এসেছেন, তাদের কেউ মাথার মধ্যে বন্দুক ধরেনি। তাছাড়া আপনাদের হরতাল শুধুমাত্র সাধারণ গরীব রোগীদের বহির্বিভাগে আর রাতের বেলায় দিব্যি প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন এটাও ঠিক না রে ভাই। আমার সাথে অর্থনীতি পড়া বন্ধুরা এখন সব ব্যাংকের ম্যানেজার হয়ে মোটামুটি কোটিপতি হয়ে গেছে আর আমি এন।জি।ও'তে চাকরি করি, আমার ব্যাংক ব্যালেন্স মাত্র ৭,০০০ টাকা, ক্রেডিট কার্ডের দেনা এক লক্ষ টাকার ওপর এইজন্য আমি থাইল্যান্ডের ভিসা এপ্লাই করতে পারছিনা - এটার জন্য আমি আমার target group কে পেটাতে পারিনা। আমি উন্নয়খাতে আসবার সময়ই জানতাম আমি আর ধনী হবো না, আমাকে অর্থনৈতিক দৈন্যতার মধ্যেই থাকতে হবে।



ফেইসবুকেই শুধু না, প্রায় শতভাগ ডাক্তারকে দেখলাম আবেগপ্রবণ হয়ে কোন যুক্তি তক্কো ছাড়াই ডাক্তারদের পক্ষ নিচ্ছেন, যেমনটা ঘটছে সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও। সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোন সুবিধাই পায় না আবার সরাসরি তাদের কাছে আঘাতপ্রাপ্তও হয় না, তাই সাংবাদিকদের ব্যাপারে তাদের তেমন কোন অবস্থান নেই। কিন্তু ডাক্তারদের কাছে মানুষ যে সুবিধা পায় তার জন্য তারা ডাক্তারকে পূজাও করে আবার বাজে সেবার জন্য গালি দিতে দ্বিধাও করে না। এ বিষয়ে তিন জন ডাক্তারের ফেইসবুকের অবস্থান আমার ভাল লেগেছে - Khairul Islam, Pinaki Bhattacharya এবং Sezan Mahmud. তারা যৌক্তিক কথা বলেছেন।



এদিকে আমি ডাক্তার, সাংবাদিক উভয়কেই একটু critically দেখতে গিয়ে বোধহয় দু'কূলই হারালাম। এক্ষেত্রে আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই। আমি নার্সদের পক্ষে। দেশের মানুষ যতটুকু সেবা নিয়ে বেচে-বর্তে আছেন তার বড় কৃতিত্ব যায় নার্সদের ঝোলায়। দেশের সকল নার্সকে সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়ে ডাক্তার এবং সাংবাদিক বন্ধুদের গালি খাবার অপেক্ষায় থাকলাম। তবে আমার সকল সুন্দরি ডাক্তার এবং সংবাদ পাঠিকা বান্ধবীদের বলতে চাই - তোমরা এই আলোচনার বাইরে। তোমাদের জন্য শুধুই ভালবাসা।



শুভ রাত্রি।



শামীম আহমেদ

নিকেতন, ঢাকা।

২২ এপ্রিল ২০১৪।



https://www.facebook.com/shamimahmedjitu

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৫৬

জিকো বলেছেন: অনেকদিন পর একটা বকবকানি ধর্মীপোষ্ট খুবই মজা করে পড়লাম।

২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:৪৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:




আপনার বক্তব্যের সাথে সহমত !


আমাদের দেশের ডাক্তাররা যেই সুযোগ সুবিধা পান তা অত্যন্ত লজ্জাজনক, কিন্তু সেইজন্যই তারা ডাক্তার, তারা এই অবস্থা জেনেই ডাক্তারি পেশায় এসেছেন, তাদের কেউ মাথার মধ্যে বন্দুক ধরেনি। তাছাড়া আপনাদের হরতাল শুধুমাত্র সাধারণ গরীব রোগীদের বহির্বিভাগে আর রাতের বেলায় দিব্যি প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন এটাও ঠিক না রে ভাই।

৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:১৬

কোবিদ বলেছেন:

জিহ্ববাকে জিজ্ঞাসা করা হলো ৩২টা অস্ত্রসম দাঁতের মাঝে তুমি কি করে বসবাস করো ?
জিহ্ববা উত্তরে বলেলো, "যতক্ষন নিজেকে সংযত রাখি ততক্ষন কোন সমস্যা হয় না তবে
মাঝে মাঝে অসংযত হয়ে পড়লে তাদের দংশন নীরবে হজম করতে হয়"

সবাই যদি সংযত হয় নিজ নিজ ক্ষেত্রে তা হলে সংঘাত এড়ানো অসম্ভব নয়!

৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৫৬

শুঁটকি মাছ বলেছেন: বককানী পোস্ট অযৌক্তিক হয়নাই!

৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৩

বাঙলি বলেছেন: 'আমরা আমাদের আশেপাশে যেসব নিম্নমানের অর্বাচীন সাংবাদিকদের দেখি তারা ২-৩ যুগ আগের এবং তাদের কাছে 'বেশী কিছু আশা করা ভুল'।'

কথাটা কি জেনেবুঝে লিখেছেন, নাকি নির্ভেজাল ক্ষোভের পরিমিত বহিঃপ্রকাশ?

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:১৬

জিতু বলেছেন: একদম তথ্য নির্ভর এমনটা দাবী করছি না। দু'একজন ভাল থাকবেনই। বেশিরভাগের অবস্থা তথৈবচ।

৬| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৮

মুদ্‌দাকির বলেছেন:

"যেহেতু সৎভাবে সরকারি চাকরি করলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা যায় না, তাই তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করার পর কখনই আর প্র্যাকটিস করেননি"

কথাটাকি বাস্তব ?? নাকি ইমোশানাল ??

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:১৪

জিতু বলেছেন: বাস্তব, পুরোপুরি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.