নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জিতু

ফেইসবুকে আছিঃ https://www.facebook.com/shamimahmedjitu রকমারিতেঃ http://www.rokomari.com/book/77323 কবিতার পেইজঃ https://www.facebook.com/PriyoPromotyo

জিতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাসার কাজের মানুষ এবার মানুষ হোক!

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:১৩

এক



আজকে থেকে কোটি কোটি বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া আর কিছু ছিল না এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন নিয়েই আমরা বেজায় খুশী ছিলাম। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে 'মুভি অফ দ্যা উইক' হতো আর আমরা সারা সপ্তাহ তার অপেক্ষায় থাকতাম। বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই মিলে সেই সাদা-কাল চলচ্চিত্র দেখা। আমার পছন্দের ছবি ছিল বিমান অথবা জাহাজ সংক্রান্ত যেগুলো সেগুলো। সারা সপ্তাহ দোয়া করতাম যাতে এই সপ্তাহে একটা জাহাজ কিংবা বিমান নিয়ে মুভি হয়।



দুই



এমনই এক বৃহস্পতিবার আমার দোয়া কাজে লাগল। জাহাজ নিয়ে মুভি, Wow! সবাই মিলে জাঁকিয়ে বসেছি মুভি দেখবার জন্য। আমার আব্বা সেই মুহুর্তে বাসার কাজের ছেলেকে ডাকতে গেলেন যাতে আমাদের সাথে মুভি দেখতে বসে। আমাদের বয়স তখন ৮-১০ বছর হবে। আমরা বাবার এহেন অবিবেচকের মতন কান্ডে নেহাত বিরক্ত। বাসার কাজের ছেলের 'মুভি অফ দ্যা উইক' দেখতে হবে কেন? কাজের ছেলে থাকবে কাজের ছেলের মত। আমরা প্রতিবাদ জানালাম তীব্রভাবে। আমাদের আব্বা তার রিএক্ট করলেন আরও তীব্রভাবে। বললেন কারও মুভি দেখার দরকার নাই। সবাইকে রুম থেকে বের করে দিলেন।



তিন



আজকে অফিসের কাজকর্ম শেষে রাতের খানা খেতে গেছি চট্টগ্রামের একটি অভিজাত রেস্তরার ছাদে! কিছুক্ষণ পর একটি অত্যন্ত অভিজাত সম্ভ্রান্ত পরিবারের ১৪ জন সদস্য আসলেন খানা খেতে। তারা খেতে বসলেন - কতরকম যে উপাদেয় খাবার দাবার আসল। আস্ত মাছ-মুরগী কত কি! হঠাৎ খেয়াল করলাম তাদের পিছে একটা টেবিলে বাসার কাজের মেয়েটি একাকী বসে আছে। আমি নিশ্চিত ওদের সবার খাবার বিল ২০,০০০টাকার নীচে হবে না। যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হবে তাতেই অমন ১০টা কাজের মেয়ের খাবার হয়ে যায়, তবু তারা রেস্তরায় মেয়েটিকে খাবার দিল না। মেয়েটি পুরো সময় মানুষের চাইতে অনেক নীচু জাতের কোন প্রাণীর অবস্থান নিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকল।



চার



আমার আব্বার সাথে সেই ঘটনার পর লক্ষ লক্ষ বছর পার হয়ে গেছে। Maturity বেড়েছে আরও যুগখানেক আগে। মানুষ যে মানুষ সেটা বুঝতে শিখে গেছি। আরও বুঝেছি মানুষের মর্যাদা কোথা থেকে আসে। আপনার বাসার কাজের মানুষটিকে মাছের লেজটি, অথবার মুরগীর ডানা, গলা দিয়ে আপনি নিজেই কিভাবে পশুর শ্রেণীতে নেমে যাচ্ছেন একটু খেয়াল করে দেখবেন প্লিজ। একজন মানুষের শুধু শাকসব্জি খেয়ে বেঁচে থাকতে কোন সমস্যাই হয় না। কিন্তু আপনি তাকে বঞ্চিত করে মানুষ থাকতে পারেন না কিছুতেই। কাজের মানুষটিকে খাবার কষ্ট দিয়ে, প্রচন্ড গরমের মধ্যে ফ্যান চালাতে না দিয়ে, প্রচন্ড মশার মধ্যে মশারী দিয়ে ঘুমুতে না দিয়ে আপনি নিজেকে কোন স্তরে নামান নিজেই একান্তে একটু চিন্তা করুন।



পাঁচ



আপনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারেন, রোযা রাখতে পারেন, হজ্বও করতে পারেন কিন্তু বাসার কাজের মানুষটিকে নির্যাতন করলে আপনার ধর্মের ওসব ওজনদার কাজ-কর্ম কোন কাজে আসবে কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অন্যদিকে কোন মানুষ হয়ত ধর্মের মূল বিষয়গুলো পালন করছে না ঠিকঠাক মতো কিন্তু মানুষকে মানুষের যথাযোগ্য মর্যাদা দিচ্ছে, সে আপনার আমার চাইতে অনেক ভাল অবস্থানে থাকবেন আমি নিঃসন্দেহ।



ছয়



যে পরিবারটি আজ ছোট বাচ্চাদের সামনে কাজের মেয়েটির প্রতি অবিচার করল তারা প্রকারান্তে কিছু শিশুর ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিল। এই বাচ্চাগুলো কতটুকু সুনাগরিক হতে পারবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। বাসার ছোট ছোট কাজের মানুষগুলোকে দয়া করে প্রাপ্য মর্যাদা দিন। তাদের অধিকার তাদের দিয়ে আপনার হারাবার কিছু নেই উপরন্তু ধর্মীয় এবং মানবিক দুই বিচারেই আপনি ভাল থাকবেন।



সাত



এত নীতিবাক্যের মধ্যে আমিও আমার দায় স্বীকার করে নেই। আমি নিশ্চিত আমার হাজারখানেক ফেইসবুক ফ্রেন্ডসদের অনেকের বাসায় শিশু, কাজের লোক নির্যাতন হয়। আমার স্ট্যাটাসটি পড়ে আমার ওপর বিরক্ত হবেন না প্লিজ। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন এবং আপনার পরিবারে আপনার অবস্থান যাই হোক না কেন, আপনার বয়স যাই হোক না কেন - আপনি আপনার যুক্তি, ধৈর্য এবং নৈতিকতা দিয়ে আপনার কাজের মানুষটির পক্ষে দাড়ান। আমি বাজি দিয়ে বলতে পারি দিনের শেষে মানুষ হিসেবে আপনি অনেক ভাল অনুভব করবেন।



আমার এই স্ট্যাটাস পড়ে যদি কারও বাসার একটি কাজের মানুষেরও ভাগ্যের উন্নয়ন হয় তাহলে নিজেকে সার্থক মনে করব।



শামীম আহমেদ

১৩ অগাস্ট ২০১৪

চট্টগ্রাম।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৩৭

নতুন বলেছেন: মানুষের সাটিফিকেট বারতেছে...টাকা বড়তেছে... আর বাড়ছে অহংকার..

মানবতার পরিমান কমে যাইতেছে...

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:৩৫

রাজিব বলেছেন: খুবই সুন্দর একটা লেখা লিখেছেন। শুধু কাজের লোক নয় যারাই ঘরে বা বাইরে আমাদের সেবা দিচ্ছেন তাদের প্রতি মানবিক হওয়া যে কোন সভ্য লোকের নৈতিক কর্তব্য।
একজন রিকশাওয়ালা আপনার আমার থেকে ৫ টাকা বাড়তি ভাড়া নিয়ে কি বড় লোক হয়ে যাবেন নাকি আমরা পথের ফকির হয়ে যাবো। রাস্তায় একজন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা প্রচণ্ড গরমে, বৃষ্টিতে ভিজে কিংবা শীতে কেঁপে পিঠা, ডিম, ফল এগুলো বিক্রি করে তখন ১-২ টাকার জন্য দরকষাকষি করে আমাদের কি খুব লাভ হয়ে যাবে?
কিংবা বাসার কাজের বুয়া, দারওয়ান, ড্রাইভার। আমি বিশ্বাস করি যাকাত, ফেতরা আর কোরবানির মাংসে এদের হক অন্য যে কারো থেকে বেশী। সারা বছর এরা আমাদের জন্য কষ্ট করে। ঈদের সময় যদি ৫ কেজি মাংস পেয়ে ২ টা দিন তাদের পরিবার পেট ভরে খেতে পারে তাহলে ক্ষতি কি?
কেউ শখ করে রিকশাওয়ালা, কাজের লোক, দারওয়ান হয়না। তারাও স্বপ্ন দেখে তাদের ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখে ভাল কিছু করবে।
আশা করি আরও লিখবেন এবং নিয়মিত লিখবেন। সময় পেলে আমার লেখাটি পড়ে দেখবেনঃ Click This Link

৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৫:২৩

খেয়া ঘাট বলেছেন: +++++++++

৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭

সোহানী বলেছেন: আপনি কি আমার এ্যাসিসটেন্ট এর পোস্টগুলা পড়েছেন... পড়ার আমন্ত্রন থাকলো।

ভালো লাগা ও সহমত লিখাতে +++++

Click This Link

৫| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫

খাটাস বলেছেন: আপনার বাসার কাজের মানুষটিকে মাছের লেজটি, অথবার মুরগীর ডানা, গলা দিয়ে আপনি নিজেই কিভাবে পশুর শ্রেণীতে নেমে যাচ্ছেন একটু খেয়াল করে দেখবেন প্লিজ। চরম বলেছেন।
ফেসবুক আজেবাজে ফাউ প্যাঁচালের চেয়ে যদি এমন সচেতনতার চর্চায় ভরে ওঠে- তবু ও অবস্থার কিছুটা উন্নতি আশা করা যায়।
আপনার সুন্দর মানসিকতা, যদি ও এটাই স্বাভাবিক হউয়া উচিত, তবু ও দুর্লভ বলেই সুন্দর।
পোস্টে প্লাস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.