নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কী ভাবার কথা কি ভাবছি?

ডি এইচ খান

স্বাধীনতা অর্জনের চে রক্ষা করা কঠিন

ডি এইচ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার অভিন্নতা

২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৪



পাক্কা সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে এগুচ্ছি। গাড়ির মিটার বলছে আশি কিলোমিটারের মত রাস্তা পেছনে ফেলে এসেছি। রাস্তার দু’পাশে মাইলের পর মাইল ছোট-বড় কাঁটা ঝোপের মাঠ, ইংরেজিতে বলে সাভানাহ। সেই সাভানাহর বুক চিরে বয়ে গেছে দক্ষিন সুদানের লালচে কাঁকর বিছানো মাটির রাস্তা। প্রায় বাকহীন সোজা রাস্তা ধরে চলতে চলতে ঝিমুনি ধরে যায়। গত সাড়ে তিন ঘন্টার যাত্রায় দু’টো মাত্র গাড়ির দেখা পেয়েছি। দিনে দুপুরেও এখানকার রাস্তায় গাড়ী খুব একটা চলে না, তাই যখনি দেখা মেলে, একে অন্যকে অতিক্রমের সময় বেশ সাদরেই ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে হাই হ্যালো আর হাত নাড়ানাড়ি চলে। কিন্তু রাস্তার আশে পাশে একটাও বড় গাছ পাইনি যে কিছুক্ষনের জন্য থেমে একটু বিস্রাম নেব। অথচ নিজেদের জন্যে না হলেও গাড়ির ইঞ্জিনটাকে কিছুক্ষন বিস্রাম দেয়াটা জরুরী। অগত্যা রাস্তার পাশেই খোলা আকাশের নিচে যাত্রা বিরতি নিলাম।





দক্ষিন সুদান জায়গাটা একেবারে নিরক্ষরেখা বরাবর পড়েছে। আবহাওয়া রুক্ষ আর দিনে সুর্যের তাপ প্রচন্ড। নিতান্ত বাধ্য না হলে স্থানীয়রাও দুপুরের রোদে বাইরে বের হয়না। এবারের যাত্রায় দেখা হল ‘তপোসা’ নামের অদ্ভুত আরেক উপজাতির সাথে। এরা খুটির ওপর বানানো খরের বাসায় থাকে। অনেকটা পাখির বাসার মতই দেখতে। প্রায় অর্ধ নগ্ন তপোসারা ব্যাঙ্ক নোট দেখেনি কখনও। আদিম বিনিময় প্রথায় লেনদেন চালায়। ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলেকে একটা আপেল খেতে দিয়েছিল আমার এক সহকর্মী। সে নাকি আপেলটা বেল ফাটানোর মত ভেঙ্গে খাবার চেস্টা করছিলো। সভ্যতার অনেকদুরের এই তপোসা গ্রামে এসে মনে হল জীবন কখনও থেমে থাকেনা। অঢেল সম্পদ আর আধুনিকতার আশীর্বাদ ছাড়াই এরা ভালবাসে, ঘর বাঁধে, বংশরক্ষা করে; এরাও বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকার জন্য সত্যকারের চাহিদা আসলেই খুব অল্প, অথচ আমরা অনাবশ্যক প্রচুর্যের আশায় হন্যে হয়ে পরি।







যাত্রাবিরতি শেষে যখন উঠি উঠি করছি, হটাত দেখি ঋজু পায়ে এক মহিলা একটা বাচ্চা কোলে রাস্তা ধরে এগিয়ে আসছে। চাঁদি ফাটা রোদ, চারপাশের রূক্ষতা আর ভুতুরে নির্জনতা ছাপিয়ে বাচ্চাকোলে মমতাময়ী এই মা আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করল। এদেশে যৌনতার সংজ্ঞা আদিম। পুরুষরা অলস আর উশৃংখল। মেয়ের বাবাকে ন্যুনতম ১০ টা গরু যৌতুক না দিলে বিয়ে হবেনা। কিন্তু বিয়ে না হলেও মনোদৈহিক সম্পর্কে বাধানেই। বিয়ে মানে এখানে আদতে বৌ পেটানোর বৈধতা মাত্র। তাই সন্তান লালনের কোন দায়িত্ব বা প্রবৃতি এদের পুরুষদের মাঝে নেই। তাই মায়েদের এখানে সব দায়-দায়িত্ব।মনে পড়ল সেই কথাটা, ‘God could not be everywhere, so he created mothers.’ অভিজ্ঞতা থেকে জানতাম এরা ইংরেজি বোঝেনা, তাই অনুমতি নিয়ে ছবিটা তোলার অবকাশ ছিলনা। ত্রস্ত হাতে আমাকে ক্যামেরা তাক করতে দেখেও মা এর কোন ভাবান্তর হলনা। ভাবলেশহীনভাবে হেটে চলে গেলেন।





ফিরতি পথে দেশে ফেলে আসা আমার মেয়েটার কথা মনে পড়ল। স্বল্প অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকাটা আমার মত চাকুরেদের পেশাগত বাস্তবতা। নিজের সন্তানদের বেড়ে উঠতে দেখা; হাতেকলমে জীবন, রঙ, উৎসব আর বাস্তবতার সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া; তাদের উল্লাশ, আহ্লাদ, শোক অথবা পীড়ায় তাদের পাশে থাকতে পারার চে আনন্দের আর কিইবা হতে পারে। সব শিশুর কাছেই একটা বয়ষ পর্যন্ত বাবা একটা হিরো, বাবার কাছে সব উত্তর আছে, বাবা পৃথিবীর সেরা স্টোরি টেলার। এমন দাবী অবশ্য খুবই ক্ষনস্থায়ী । তবুও সব বাবাই এই সাময়িক শেষ্ঠত্বটাকে ভীষন উপভোগ করে।



গত বসন্তে মেয়ে পয়লা বসন্তের সাজে সেজেছিল।মেয়ের মা একগাদা গাঁদা ফুল দিয়ে সাজিয়েছিল। এভাবে যদি সব কয়টা উতসবে সাথে থাকা যেত, কী মজাটাই না হত! কিন্তু জীবন আর জীবিকার তাগিদে, স্বচ্ছল আর সামাজিকভাবে বেঁচে থাকার জন্যই এই আপাত বিচ্ছিন্নতাকে মেনে নিতেই হয়। তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, ঐ তপোসা পল্লীতে জন্মালে বোধহয় মন্দ হত না।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৪৬

স্টকহোম বলেছেন: জীবন বড়ই কঠিন।
খুব আপনার সুন্দর পিচ্চিটা।
অনেক আদর রইলো ওর জন্য, আর আপনার জন্য শুভ কামনা!!

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৪৯

স্টকহোম বলেছেন:
খুব সুন্দর আপনার পিচ্চিটা।

৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩১

ডি এইচ খান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাই

৪| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৫১

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বাহ।+

২১ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫১

ডি এইচ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.