নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কী ভাবার কথা কি ভাবছি?

ডি এইচ খান

স্বাধীনতা অর্জনের চে রক্ষা করা কঠিন

ডি এইচ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

'দ্য আর্ট অব ওয়ার' : ০২ : ওয়েজিং ওয়ার।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৭

মুবারিজুনরা ছিলেন চ্যাম্পিয়ন মল্লযোদ্ধা, তারা খেলাফায়ে রাশেদিনের হয়ে লড়তেন। সেকালের রেওয়াজ অনুযায়ী যুদ্ধ শুরু হত ডুয়েল বা দ্বন্দযুদ্ধ দিয়ে। এইসব ডুয়েলের ফলাফল সাধারন সেনাদের মনোবলে দারুন প্রভাব ফেলত, তাই মুবারিজুনদের ভুমিকা ছিল গুরুত্বপুর্ন। এইরকম আরেকটা এলিট ফোর্স ছিল মধ্যযুগের ইউরোপিয়ান নাইটরা। এখনকার দিনের কমান্ডোরাও অনেকটা একই রোল প্লে করে থাকেন।



ট্রোজান ওয়ার হিরো একিলিসও ছিলেন একজন এলিট যোদ্ধা। ট্রয়ের রাজপুত্র হেক্টরকে দ্বন্দযুদ্ধে হারানো একিলিস ছিলেন একজন চরম স্কিল্ড ইনফেন্ট্রিমেন। ট্রোজান ওয়ারে তিনি গ্রীক সেনাপতি আগামেননের হয়ে ট্রোজানদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। সানজুর পাঠক হিসেবে আপনি আর্ট অব ওয়ারে একিলিসের স্কিল অনুসন্ধান করলে হতাশ হবেন। সানজুর আর্ট অব ওয়ার বস্তুত আগামেননদের জন্য লেখা।



সুতরাং ধরে নিচ্ছি আপনি একটা যুদ্ধ বাধাবেনই। এই যুদ্ধ বাধানোর ব্যাপার স্যাপার নিয়াই সানজুর তের অধ্যায়ের দ্বিতীয় অধ্যায়, নাম 'ওয়েজিং ওয়ার'। কথায় আছে, এমেচারেরা ভাবে যুদ্ধের ট্যাকটিক্স নিয়া, আর প্রফেশনালেরা ভাবে যুদ্ধের লজিস্টিক নিয়া। কারন একটা যুদ্ধ চালানো বেশ খরচের ব্যাপার। আসেন সানজুর জবানিতে খ্রীস্টের জন্মের ৫০০ আগের সময়কার যুদ্ধের খরচের বৃত্তান্তটা শুনি।





গড়পরতায় একেকটা সামরিক অভিযানে চার ঘোড়ায় টানা চ্যারিয়ট লাগে ১০০০টা, আরো ১০০০টা লাগে চার ঘোড়ায় টানা মালবাহী ওয়াগন; আর লাগে এক লাখ বর্মসহ যোদ্ধা। এমন একটা বাহিনী নিয়ে ১০০০ লি দূরে গিয়ে যুদ্ধ করতে আনুসাঙ্গিক খরচ সহ প্রত্যেকদিনের জন্য গুনতে হয় ১০০০ স্বর্নমুদ্রা। তাহলেই ভাবেন আধুনিক একেকটা কেম্পেইনের খরচ কী হতে পারে! এইবার হিসেব করেন আপনার ট্রেজারি কী পরিমান এফোর্ড করতে পারবে। ফাইনালি আপনিই ডিসাইড করেন যুদ্ধে যাবেন কিনা, গেলে কয়টা ডিভিশন নিয়া কত দিনের জন্য যাবেন।





মানুষ জেতার জন্যই যুদ্ধ করে। যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হতে থাকে সৈনিকের অস্ত্রের ধার আর মনোবল ততই কমতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে রাস্ট্রের সম্পদ চরম ভাবে বিনস্ট হয়। সম্পদের ঘাটতি রাস্ট্রকে দুর্বল করে দেয় আর এই অবস্থায় স্বভাবতই আপনার প্রতিবেশীরা সুযোগ নেবার চেস্টা করবে। তখন যত ভাল উপদেস্টা আর সভাসদই আপনার থাকুকনা কেন, কার্যকর কোন পরিকল্পনাই আর আপনার পক্ষে করা সম্ভব হয়ে উঠবেনা।



ভিয়েতনাম যুদ্ধ, আফগানদের যুদ্ধ, গালফ ওয়ার অথবা দুইটা বিশ্বযুদ্ধই দেখুন, কোন পক্ষই কিন্তু এসব দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে তেমন লাভবান হতে পারেনি। তাই আক্রমন যখন করবেন তখন শত্রুর চোখের পলক পড়ার আগেই সর্বশক্তিতে আক্রমন করুন আর, যুদ্ধ যত সংক্ষিপ্ত করা যায় ততই মঙ্গল। কারন দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ শেষে কোন দেশ লাভবান হয়েছে, এমন উদাহরন ইতিহাসে নেই!



যুদ্ধের কুফল সম্পর্কে যদি আপনি ওয়াকিবহাল না থাকেন তাহলে যুদ্ধ করে লাভবান হবার কৌশল আপনি কখনই রপ্ত করতে পারবেন না। একজন কৌশলী সমরবিদের একই যুদ্ধ চলাকালে দ্বিতীয়বার নতুন করে সৈন্য সংগ্রহের দরকার পরেনা, আর রসদও সরবরাহ করতে হয় সাকুল্যে দুইবার; একবার সেনাদল যুদ্ধে যাবার সময়, আরেকবার যুদ্ধে জিতে ফেরার পথে, মাঝের সময়টা তার আর্মি শত্রুর দখল করা রসদ দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়। অবশ্য ভিনদেশে দীর্ঘদিন যুদ্ধরত আর্মির রসদ যোগাতে যেকোন রাস্ট্রকেই ভুগতে হয়, আর ভুগতে হয় সেই রাস্ট্রের জনগনকেও।



যুদ্ধ লাগলে দেশে দ্রব্যমুল্য বাড়বেই, এর প্রভাব দেশের জনগনের ওপরও পরবে। ফলে দেশের সার্বিক উৎপাদন হ্রাস পাবে আর দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দশ ভাগের তিন ভাগ কমে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত যুদ্ধ সরঞ্জামাদি মেরামত আর রসদ যোগাতে সরকারি রাজস্বের দশ ভাগের চার ভাগ খরচ হয়ে যাবে। তাই আপনি যদি বিচক্ষন জেনারেল হন, আপনি চাইবেন শত্রুর রসদ ছিনিয়ে নিয়ে চলতে। কারন এই প্রেক্ষাপটে শত্রুর এক দফা রসদ আপনার নিজের ২০ দফা রসদের সমান।



প্রাচীনকালে রাজারা যেকোন দেশ দখলের পর গনিমতের মালামাল সৈন্যদের মাঝেই ভাগ করে দিতেন, কারন একটা যুদ্ধ শেষে আপনার সৈন্যদের কিছু ইন্সট্যান্ট প্রাপ্তি থাকা উচিত। কিন্তু যুদ্ধ জয়ের জন্য শত্রু সেনাদের তো আগে নিধন করতে হবে, আর সেটা সম্ভব যদি আপনি আপনার সৈন্যরদের ঠিকমত তাতায়ে দিতে পারেন।



হান দের রাজত্বকালে কুয়েই চউ প্রদেশের পু ইয়াং আর পান হাং বিদ্রোহীদের দমন করতে চিন চউ এর রাজা তু শিয়াং অভিযান চালালেন। প্রাথমিকভাবে বিদ্রোহীরা পিছু হটল আর তু শিয়াং এর আর্মি গনিমতের মাল লুটে আরাম আয়েশে মত্ত হয়ে উঠল। অথচ বিদ্রোহীরা তখনও বেশ শক্তিশালী আর তারা পাল্টা আক্রমনের পায়তারা করছিল। তু শিয়াং দেখল আরাম আয়েশে মত্ত তার এই সেনাবাহিনী যুদ্ধের কোন মুডেই নেই। তাই তাদের ওয়ার ফুটিং এ ফিরিয়ে আনতে তিনি এক ফন্দি করলেন; তিনি তার সৈন্যদের জন্য একটা শিকারের প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন।



পরদিন সবাই শিকার করতে বেরিয়ে যেতেই তু শিয়াং তাদের সব ব্যারাকে আগুন লাগিয়ে দেবার নির্দেশ দিলেন। শিকার শেষে ফিরে এসে সৈন্যরা জানল যে দুষ্ট বিদ্রোহীরা সুযোগ পেয়ে তাদের সব আরাম হারাম করে দিয়ে গেছে। সৈন্যরা সবাই তখন রোষের আগুনে জ্বলছে আর এই সুযোগে তু শিয়াং তাদের এই বলে উস্কে দিল যে, তারা যদি তাদের সেরাটা উজাড় করে লড়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে এই বিদ্রোহীদের পুরোপুরি নিকেশ করে পুড়ে যাওয়া সম্পদের ১০ গুন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সৈন্যদের মাঝে জেদ আর প্রতিহিংসা তখন তুঙ্গে, আর তু শিইয়াং পরদিন সকালেই ক্রোধান্ধ এই সেনাদের নিয়ে স্পিরিটেড এক আক্রমনে বিদ্রোহীদের নির্মুল করলেন।



তাই সানজু বলেন, "সৈন্যরা প্রতিপক্ষের সেনাদের মারে কারন তারা হত্যার জন্য তাতিয়ে থাকে, আর তারা পরাজিত শত্রুর মাল লুটে নেয় কারন তারা ভাবে এটা তাদের প্রানপন যুদ্ধের তাতক্ষনিক পুরস্কার। তাই যখন যুদ্ধক্ষেত্রে ১০টা চ্যারিয়ট আটক করতে পারবে, প্রথম চ্যারিয়টটা যারা দখল করল, তাদের পুরস্কৃত কর। শত্রুর পতাকা নামিয়ে নিজের পতাকা চড়াও, নিজের চ্যারিয়টের সাথে শত্রুর চ্যারিয়টও যুদ্ধে কাজে লাগাও। কিন্তু যুদ্ধবন্দীদের সাথে ভাল আচরন কর, যেন তাদেরও কাজে লাগানো যায়। এভাবেই যুদ্ধে জিতে আরো শক্তিশালী হওয়া যায়। যুদ্ধে জিততে পারাটাই মুখ্য, তাই বুদ্ধিমান কমান্ডারেরা দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের সম্ভাবনাকে সবসময় সযত্নে এড়িয়ে চলে। এজন্যই যুদ্ধের সেনাপতিদের বলে জনতার ভাগ্যবিধাতা, তার উপরই জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করে।"

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২১

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: জায়গায় জায়গায় বানান ভুল থাকলেও লিখাটা সুন্দর ছিল... !:#P

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:০০

ডি এইচ খান বলেছেন: ভুলের জন্য দুঃখিত ভাই। আরো সতর্ক থাকব এরপর। আপনাকে ধন্যবাদ।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৪৮

ডি এইচ খান বলেছেন: ভুল গুলো এবার সংশোধিত।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৪৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

চালিয়ে যান... কিছুটা বানান সতর্কতা প্রয়োজন।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:২৩

ডি এইচ খান বলেছেন: এবার এডিট করে ঠিক করে দিয়েছি ভাই। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৪৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দারুণ হচ্ছে অনুবাদ!

দ্বিতীয় প্লাস।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৩৫

ডি এইচ খান বলেছেন: অনুপ্রেরণা অনুঘটকের মত। রেস্পনসিবিলিটি বিগেটস ইনিশিয়েটিভস, বাট এঙ্কারেজমেন্ট ইন্সপায়ারস সো মাচ দ্যাট ইট এক্সপান্ডস দ্য ব্রেডথ অফ দ্য টাইম ইন হ্যান্ড এন্ড স্কুইজেস দ্য ডিস্ট্যান্স।

প্রোফেসর সাহেব, থোরা শব্দ নিয়ে খেললাম আপনার সাথে, মাইন্ড কইরেন না প্লিজ। বন্ধু ভেবেই করলাম।

ভাবছি কয়েকটা দিন ব্রেক দেব। পড়তে যতটা সোজা লাগছে, আশা করি বুঝবেন যে, লিখতে কিন্তু অতোটা সহজ হচ্ছেনা। অনেকদিন আগের উদাহরনগুলো নিউরোনের ভাজে ভাজে লুকিয়ে থেকে উকি দেয়। কস্ট করে টেনে হিচড়ে বের করে এনে দেখি অনেক তথ্যই মিসিং। ভাগ্যিস উইকি গুগুল ছিল, তাই রক্ষে।

আপনেরে একটা জোক্স বলি, একবার এক কোর্সের সময় আমার এক কোর্সমেট বায়না ধরল তারে একটা বই এর নাম বলতে হবে যে বইটা পড়ার পর সেও অন্যদেরমত গ্রুপ ডিসকাশনের সময় পটাপট বিভিন্ন ওয়ার থেকে রেফার করতে পারবে। তো অরে বললাম মিলান ভেগোর জয়েন্ট অপারেশনাল ওয়ারফেয়ার কিনতে। বিশ্বাস করেন এই বই থাকলে আপনার বাসায় আর বালিশ লাগবে না, এমনি তার সাইজ। যাহোক, কিছুদিন পর দেখি সে আবার ঘ্যানর ঘ্যানর করে। এইবার বিষয়ডা হইল, তার অবস্থা নাকি সেই লোকের মত হইছে, যার ১০০১টা জোকসের একটা বই আছে, লেকিন বেচারা এখনও বুইজা উঠতে পারে নাই কখন কোথায় কোন জোকসটা বলবে, তাই প্রায়ই ভুল জাগায় ভুল জোকস বইলা ধরা খাইতেছে।

আমার অবস্থা না আবার সেইরকম হয়, সেই ভয়ে থাকি সারাক্ষন। হা হা হা

৪| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:১২

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার হচ্ছে। চালিয়ে যান। সাথেই আছি।


শুভ রাত্রি।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৩৭

ডি এইচ খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ রাত্রি।

৫| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:১৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ''এইবার বিষয়ডা হইল, তার অবস্থা নাকি সেই লোকের মত হইছে, যার ১০০১টা জোকসের একটা বই আছে, লেকিন বেচারা এখনও বুইজা উঠতে পারে নাই কখন কোথায় কোন জোকসটা বলবে, তাই প্রায়ই ভুল জাগায় ভুল জোকস বইলা ধরা খাইতেছে।''

হাহাহা :)

অনুবাদ করা হচ্ছে একটা থ্যাঙ্কলেস জব। অ্যাপ্রিসিএশন জিনিসটা দুর্লভ এই ফিল্ডে। আপনি যে এই কাজে হাত দিয়েছেন তাতেই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আস্তে ধীরে সুবিধা বুঝেই শেষ করেন এখন, সমস্যা নাই :)

শুভেচ্ছা।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১

ডি এইচ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৬| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১২

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: অসাধারণ লেখনশৈলী। তথ্যবহুল পোষ্টে অনেক ভাল লাগা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.