নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কী ভাবার কথা কি ভাবছি?

ডি এইচ খান

স্বাধীনতা অর্জনের চে রক্ষা করা কঠিন

ডি এইচ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

'দ্য আর্ট অব ওয়ার' :০৩ : কিভাবে আক্রমন করবেন?

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৪২



১৯৩৮ সালে চেকস্লাভিয়ার জার্মান সীমান্তবর্তী সুদেতানল্যান্ডের জনতার জন্য এডলফ হিটলারের দরদ উথলে উঠল। তার কয়েকদিন আগেই চাপাবাজি আর ভোটাভুটি করে গায়ের জোরে তিনি অস্ট্রিয়া দখল করে নিয়েছেন। এইবার তার দাবী, সুদেতানল্যান্ডের জনতা মানসে সাচ্চা জার্মান, আর তারাও অস্ট্রিয়ানদের মতই পিতৃরাস্ট্র জার্মানীর কোলে ফিরে আসতে উন্মুখ। ঐ বর্বর চেকস্লাভিয়ান সরকার এদের মাইরাই ফেলবে, তাই নিতান্তই মহান জার্মান জাতির স্বার্থে সুদেতানল্যান্ড তার চাই ই চাই। চেকস্লাভিয়ার ছিল শক্তিশালী সেনাবাহিনী, কিন্তু তার ইউরোপিয়ান মিত্র ফ্রান্স বৃটেন সবাই তখন আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ এড়াবার পথ খুজতে আতঙ্কে আছে। তাই ঐ বছরেরই ৩০ সেপ্টেম্বরের এক শান্ত স্নিগ্ধ সকালে জার্মানীর মিউনিখ শহরের গোলটেবিলে চেকস্লাভদের উপস্থিতি ছাড়াই ফ্রান্স বৃটেন মিলে অনাড়ম্বরভাবেই চেকস্লাভিয়াকে হিটলারের হাতে তুলে দিল। যুদ্ধ মানেই ধ্বংস, যুদ্ধ মানেই মৃত্যু।জাজেস টু নোটঃ যুদ্ধ-রক্তপাত ছাড়া জার্মানীর চেকস্লোভাকিয়া জয় এবং ইংগ-ফরাসী এলাইয়েন্সের ভুমিকা!





মহামতি সানজু বলেন, যুদ্ধের সেরা পলিসি হল, কোনপ্রকার কায়িক ক্ষতি ছাড়াই শত্রুর দেশ দখল করে ফেলা। শত্রুর আর্মিকে ধ্বংস করার চে আত্মসমর্পনে বাধ্য করতে পারাটা শ্রেয়। একশ যুদ্ধে জেতা মানেই যুদ্ধে পারদর্শীতার উতকর্ষ না, পারদর্শীতার উতকর্ষ হল যুদ্ধক্ষেত্রে না গিয়েও শত্রুকে পরাজত করতে পারা।



তাই সেনাপতি হিসেবে আপনার সেরা স্ট্রেটেজি হবে শত্রুর পরিকল্পনাকে ভেস্তে দেবার চেস্টা করা। তা না পারলে অন্যান্য শক্তিশালী দেশের সাথে আপনার শত্রুর সম্পর্কটা যেন নড়বড়ে করে দেয়া যায় সেই চেস্টা করা। যদি তাও না পারেন, তবে অন্তত চেস্টা করুন দেয়ালঘেরা শহরে অবস্থান নেয়া শত্রুর সাথে লড়াই এড়িয়ে যেতে। কারন দেয়ালঘেরা শহর আক্রমনের প্রস্তুতি নিতে লাগবে তিনমাস, আর দেয়ালভেঙ্গে শত্রুর কাছে যেতে আরও তিনমাস লেগে যাবে। আর অধৈর্য হয়ে যদি প্রস্তুতি ছাড়াই আপনি আক্রমন করে বসেন, তো আপনার তিন ভাগের একভাগ ফোর্স মারা পড়বে শহর দখলের আগেই। আপনি যদি দক্ষ সেনাপতি হন তাহলে চেস্টা করবেন নিজ সৈন্য হতাহত না করেই যুদ্ধে জিততে। আর একেই বলে কৌশলী আক্রমন বা এটাক বাই স্ট্রেটেজেম।





ক্লসউইতজ ছিলেন প্রুশিয়ান জেনারেল আর বিখ্যাত মিলিটারী থিওরিস্ট। তিনি বলেন শত্রুর তিনগুন সেনা সাথে না থাকলে আক্রমনে গিয়া লাভ নাই, আপনি হারবেন। তেমনি সানজু বলেন, যদি আপনার হাতে শত্রুর দশগুন বেশি সেনা থাকে, তাহলে শত্রুকে অবরুদ্ধ করার চেস্টা করতে পারেন। যদি আপনার আর শত্রুর রেশিও হয় ৫:১, আক্রমন করেন; যদি হয় ২:১, তাহলে শত্রুকে ভাগ করে নিয়ে তারপর আক্রমন করুন। যদি সমানে সমান হন, বুঝেশুনে লাগতে যান, হারজিতের সম্ভাবনা কিন্তু ৫০:৫০।



যদি আপনি শত্রুর চে সংখ্যায় দুর্বল হন, তাহলে পিছুহটার রাস্তা চিনে রাখুন। অবশ্য যদি দেখেন আপনার শত্রু বিভিন্ন কারনে এলোমেলো অবস্থায় আছে, তাহলে সংখ্যাগত সীমাবদ্ধতা নিয়েও আপনি যুদ্ধ করে জিততে পারবেন। কিন্তু মনে রাখার বিষয় হল, শেষপর্যন্ত কিন্তু যার আর্মড ফোর্সেস এর সাইজ বড়, সেই জেতে। স্পার্টানরা থার্মোপেলির যুদ্ধে ৩০০ জন মিলে ঐতিহাসিক যুদ্ধ লড়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিন্তু পার্সিয়ানদের ঠেকাতে পারেনি।





যুদ্ধে উভয় পক্ষেই কিন্তু ট্রেইনড সৈন্য আর অফিসার থাকে। তারপরও কেউ হারে, কেউ জেতে। উপযুক্ত সেনাপতির নিয়োগের মাধ্যমে এই পার্থক্যটা গড়ে দেয় রাস্ট্রপ্রধান। যুদ্ধে সেনাপতিরা রাস্ট্রের রক্ষক। দক্ষ আর বিচক্ষন সেনাপতির হাতে রাস্ট্র সুরক্ষিত, আর অদক্ষ সেনাপতির কারনে রাস্ট্র পর্যুদস্ত হয়।



তিনভাবে একজন রাস্ট্রপ্রধান তার আর্মির জন্য দুর্ভাগ্য ডেকে আনেন।

একঃ আর্মি নিয়া হব্লিং করা বা ল্যাংচানো। মানে হল, আর্মি রেডি আছে কিনা তা না জেনেই যুদ্ধে পাঠানো। এই রেডিনেস মানে ট্রেনিং রেডিনেস, লজিস্টিক রেডিনেস, এমন কি যেখানে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে সে টেরেইনে আর আবহাওয়ায় যুদ্ধের জন্য রেডিনেস, সবই। ১৮১২ র পেট্রিয়াটিক ওয়ারে নেপোলিয়নের গ্রান্ড আর্মি যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই রাশিয়ার মাটিতে রাশিয়ানদের হারানোর চেস্টা করল এবং হারল। পক্ষান্তরে কুয়েত থেকে সাদ্দামের ইরাকি সেনাবাহিনীকে হঠাতে, ২০০৬ এর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত টানা লজিস্টিক প্রিপারেশন নেয় যুক্তরাষ্ট্র, এই অপারেশনের নাম অপারেশন ডেজার্ট শিল্ড। ফলাফল শোওার্জকফের গ্রাউন্ড এটাক শুরুর ১০০ ঘন্টার ভেতর ইরাকিদের পরাজয়।



দুইঃ সিভিল প্রশাসন চালানোর মত করে আর্মি চালানোর অপচেস্টা। বেশ্যাবৃত্তিকে যদি পেশা বলে মেনে নিতে আপনার কোন সংকোচ না থাকে, তবে জানবেন যে সামরিক পেশা পৃথিবীর অন্যতম ৩য় প্রাচীন পেশা (প্রথমটা হল কৃষিকাজ)। তাই ঐতিহ্যগতভাবেই সেনাবাহিনী পরিচালিত হয় নিজস্ব কোড দ্বারা, যা অন্যান্য রাজ্য প্রশাসন পরিচালনার চে ভিন্নতর। চানক্যের মত প্রতিথযশা অর্থশাস্ত্রবিদের রননীতি শুনলে কিন্তু চমকে উঠবেন, তার মতে শত্রুকে ভ্রুনাবস্থায়ই বধ করতে পারাতেই সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব!



তিনঃ অনুপযুক্ত অফিসারদের দ্বারা সেনাবাহিনী পরিচালনার চেস্টা করা। যুদ্ধে প্রত্যেক স্তরের সেনা কমান্ডারদের মটিভেশন আর ডেডিকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। অন্যক্ষেত্রে যতই চৌকাষ হোন না কেন, যথাযথ রেজিমেন্টেশন ছাড়া কেউই যুদ্ধক্ষত্রে সৈন্য পরিচালনার পারদর্শিতা অর্জন করতে পারেন না, আর এই রেজিমেন্টেশন গড়ে ওঠে দিনের পর দিন সৈন্যদের সাথে নিবির সহচর্যে। তাই কমান্ডার নির্বাচনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেই হবে। অন্যথায় সেনাবাহিনীতে দেখা দেবে বিশৃংখলা আর প্রতিবেশিরা সে সুযোগ কাজে লাগানোর চেস্টা করবে।





যুদ্ধে বিজয় সম্পর্কে পুর্বানুমানের কোন সুযোগ কি আছে? সানজু কিন্তু বলেন, আছে। তার মতে পাঁচটি ক্ষেত্রে এমন ভবিষ্যতবানী করা যায়।



একঃ সেই জিতবে যে জানে কখন লড়তে হবে আর কখন লড়াই এড়াতে হবে।



দুইঃ যিনি বড় এবং ছোট উভয় ধরনের সৈন্যদল পরিচালনায় সিদ্ধহস্ত।



তিনঃ যার সেনাদলের সবাই একই স্পিরিটে একতাবদ্ধ।



চারঃ যিনি সদা নিজ আর্মিকে প্রস্তুত রাখেন আর শত্রু কখন বেখেয়াল হবে সেই প্রতীক্ষায় থাকেন।



পাঁচঃ যার জেনারেলরা যোগ্যতর আর যিনি তার জেনারেলদের সৈন্য পরিচালনায় অযথা হস্তক্ষেপ করেন না।



আপনি যদি আপনার নিজের আর আপনার শত্রুর, উভয়ের সামর্থ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন, ১০০ যুদ্ধেও আপনার হেরে বসার ভয় নেই। যদি আপনি নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন কিন্তু শত্রু সম্পর্কে সম্যক অবগত নাও হন; আপনার হারজিতের অনুপাত হবে ৫০:৫০। মানে কিছু যুদ্ধে আপনি জিতবেন আবার কিছু যুদ্ধে হারবেন। আর যদি আপনি আপনার নিজের আর আপনার শত্রুর, কারো সম্পর্কেই যথেস্ট ওয়াকিবহাল না থাকেন, আপনি নিশ্চিত থাকুন, আসছে প্রত্যেকটা যুদ্ধে আপনি শোচনীয়ভাবে হারবেন।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: আপনার এই ধারাবাহিক পোস্টসমূহ খুবই ভালো লাগছে। আর ভালো লাগছে এই জন্যে যে, এখানে আপনি শুধু Sun Tzu-র কথাগুলোই অনুবাদ করে দিচ্ছেন না, সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনাও করছেন এবং সেটা প্রাণবন্তভাবে, যুক্তির নিরিখে... !:#P

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৫১

ডি এইচ খান বলেছেন: আপনার নরম্যান্ডি অভিযানের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ৭০টি ছবির সচিত্র বর্ণন পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৩০

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার হচ্ছে। পরের পর্বে যাচ্ছি।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৩৪

ডি এইচ খান বলেছেন: উতসাহ পাচ্ছি; আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।

৩| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯

অরণ্যতা বলেছেন: কিছু মনে করবেন না, আপনার পেশা কী?

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৪

ডি এইচ খান বলেছেন: যা পড়ি, ভাবি, লিখি; তাই করি রে ভাই।
আপ্নে তো বুদ্ধিমান মানুষ, ইশারাই ক্বাফি।

৪| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫

অরণ্যতা বলেছেন: নারে ভাই আমি বুদ্ধিমান নই। যাইহোক বুঝে নিয়েছি

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫৪

ডি এইচ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৩

আততায়ী আলতাইয়ার বলেছেন: এই পোস্ট পড়ে বুঝলাম যে ২য় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের রননীতে হিটলার কত বোকা ছিলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.