নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কী ভাবার কথা কি ভাবছি?

ডি এইচ খান

স্বাধীনতা অর্জনের চে রক্ষা করা কঠিন

ডি এইচ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

'দ্য আর্ট অব ওয়ার' : ০৯ : দ্য আর্মি অন দ্য মার্চ - ১ম কিস্তি

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:১১







ইয়ারমুখ যুদ্ধের ৫ম দিন ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে মুসলিম ক্যাম্পের সীমানায় সাদা পতাকা হাতে বাইজান্টাইন দুত এসে দাড়াল। বাইজান্টাইন সেনাপতি ভাহান কয়েকদিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাঠিয়েছে খালিদের কাছে। তখনকার দিনে যুদ্ধেও এক ধরনের রাজসিক ভাব ছিল। যুদ্ধ শুরুর আগে সম্রাট হেরাক্লিয়াস আর খলিফা উমর দুজনই যখন কুটনৈতিকভাবে একটা সমাধানে পৌছাতে চেস্টা করছিলেন, তখন এই ইয়ারমুখ প্রান্তরেই ভাহান আর খালিদ যার যার সেনাদল নিয়ে প্রায় একমাস মুখোমুখি তাবু গেড়ে বসে ছিলেন। এরিমধ্যে একবার ভাহানের নিমন্ত্রনে খালিদ বাইজান্টাইন ক্যাম্পে গিয়ে শান্তি আলোচনাও করে এসেছিলেন, ফলাফল যথারীতি শুন্য, কেননা দুজনই জানতেন যুদ্ধ শুরু বা বাতিলের সিদ্ধান্তটা তাদের কারও হাতে নেই, যুদ্ধ একান্তই রাজনৈতিক ইস্যু।



বাইজান্টাইনরা যখন ৫টা আর্মি নিয়ে ইয়ারমুখ প্রান্তরে এসে পৌছেছিল, ততক্ষনে খালিদ পজিশনাল এডভান্টেজ নিয়ে নিয়েছে। এমন এক জায়গায় তারা ক্যাম্প করতে বাধ্য হল, যার পেছন দিয়েই বয়ে গেছে ভয়ঙ্কর এক গিড়িখাত; ওয়াদি-উর-রুক্বাদ নামের এই গিরিখাত কোথাও কোথাও প্রায় ৬০০ ফিট গভীর আর একটাই মাত্র ব্রীজ ওপাড়ে যাবার। তার ওপর খালিদের বাহিনী এমনভাবে ডেপ্লয় হয়েছে যে প্রান্তরের একমাত্র উঁচু জায়গা তেল-আল-জুম্মাও তাদের দখলে, এবং সকালে সুর্য থাকে মুসলমানদের পিঠে আর বাইজান্টাইনদের চোখে; দুপুরের আগ পর্যন্ত অনেকটা সময় বাইজান্টাইনরা প্রতিপক্ষকে ভাল করে দেখতেই পারে না।



যাহোক অবশেষে যুদ্ধ শুরু হল আর প্রথম ৪টা দিন ভাহান সর্বশক্তি দিয়ে মুসলিম প্রতিরক্ষা ব্যুহ গুড়িয়ে দেবার সবরকম চেস্টাই করলেন। কিন্তু প্রতিদিনই খালিদের ক্যভুলরি ট্যাকটিকসের কাছে হার মানতে হল। ভাহানের সেনারা ইতোমধ্যে টানা আক্রমন করে ব্যর্থ হতে হতে ক্লান্ত। তাই একটা যুদ্ধবিরতি বাইজান্টাইনদের জন্য খুবই দরকার। কিন্তু ধুর্ত খালিদ তাদের সেই সুযোগ কেন দেবেন? তাই ঐ রাতেই খালিদ তার ডিফেন্সিভ ফর্মেশন ঝেড়ে ফেলে অফেন্সিভ ফর্মেশনে ফোর্স সাজালেন। রাতেই বাইজান্টাইন ক্যাম্পের অনেক পেছন দিয়ে একটা কাট অফ পার্টি পাঠিয়ে দিলেন গিরিখাত পেরুবার একমাত্র ব্রীজ দখলের জন্য।



পরদিন মুসলিম আর্মির প্রচন্ড আক্রমনে বাইজান্টাইনরা এলোমেলো হয়ে ব্রিজের দিকে পিছু হটতে গিয়ে মুসলিম কাট অফ পার্টির কবলে পড়ল। খালিদ বাইজান্টাইনদের দামেস্ক পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে শোচনীয়ভাবে হারাল আর সম্রাট হেরাক্লিয়াস পবিত্র রেলিক নিয়ে ইজিপ্ট পালালেন।



সানজু বলেন, পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধের সময় দ্রুত পাহাড় পেরিয়ে গিয়ে উপত্যকা দখল করতে হয়, যেন পানি আর ঘাসের কমতি না হয়। তাছাড়া পাহাড়ী এলাকায় যাতায়তের পথ খুব সীমিত, তাই শত্রু এইসব প্রবেশপথ দখল করে ফেললে পাহাড়ি এলাকার ভেতর আটকে পরা সেনাদলের আত্মসমর্পন ছাড়া উপায় থাকে না।



ক্যাম্প করতে হয় অপেক্ষাকৃত উঁচু ভুমিতে যেন আপনার সামনের এলাকা আলোকিত থাকে আর সুর্য আপনার শত্রুর চোখের ওপর পরে, তাই বলে অনেক উঁচু পাহারের দুর্গম চুড়ায় কিন্তু নয়। পাহাড়ি এলাকায় উঁচু থেকে নেমে এসে আক্রমন করবেন, আর ভুলেও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উঠে এসে পাহারের চুড়ায় আক্রমন করতে যাবেন না।



খালিদ কি সানজুর আর্ট অব ওয়ার পড়েছিলেন কখনো, কে জানে? কিন্তু গেটিসবার্গের যুদ্ধের পিকেট চার্জেস এঁর নায়ক অথবা খলনায়ক, কনফেডারেট জেনারেল লী যে পড়েন নাই একথা নিশ্চিত। কারন তিনি পাহাড়ের উপরে বসা ইউনিয়ন ফোর্সকে ১২৫০০ সেনা নিয়ে আক্রমন করেছিলেন এবং অত্যন্ত বাজে ভাবেই হেরেছিলেন।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৭

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: যথারীতি চমৎকার। আপনার দেয়া বিভিন্ন যুদ্ধের উদাহরণগুলো পড়তে পড়তে যুদ্ধের ইতিহাসগুলো জানবারও একটা তৃষ্ণা অনুভব করছি।

পোস্টে প্লাস রইল।

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১৩

ডি এইচ খান বলেছেন: ব্লগে তেনারা কেউ আছেন কিনা জানিনা, তাই ভয়ে ভয়েই আপনার সাথে শেয়ার করি। ইসলামিক কোন যুদ্ধেই কিন্তু কোন অলৌকিক সাহায্যের ব্যাপার স্যাপার ছিলোনা। আই মীন ফেরেস্তারা এসে মুসলিমদের পক্ষে কখনই লড়েনি। বরং কমান্ডাররা ছিলেন ট্যাকটিকালি সাউন্ড আর সৈন্যদের মোরাল ছিল ভীষন রকম হাই। এইটাকে বলে ফেইথ বেইজড এপ্রোচ, জাপানিরাও অনেকটা এমনি।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:১৩

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: চলুক ...

চোখ থাকছে ...

১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫১

ডি এইচ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অনুপ্রেরনার জন্য।

৩| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: দুর্দান্ত রণকৌশল। অসাধারণ লেখনী। চলুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.