নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কী ভাবার কথা কি ভাবছি?

ডি এইচ খান

স্বাধীনতা অর্জনের চে রক্ষা করা কঠিন

ডি এইচ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মজার দুইটা ঘটনা! না পড়লেই মিস!! ;)

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৬:০৮



ঘটনা-এক



৭১০ খীস্টাব্দ। কাউন্ট জুলিয়ানের কন্যা রুমিয়া যখন রাজ অতিথি হয়ে হিস্পেনিয়া সফরে গিয়েছিলেন, হিস্পেনিয়ার লম্পট রাজা রোডেরিক তার শ্লীলতাহানি করেন। কাউন্ট জুলিয়ান ছিলেন আফ্রিকা মহাদেশে নিযুক্ত বাইজান্টাইন ভাইসরয়। উমাইয়াদ খেলাফত তখন খলিফা আল-ওয়ালিদের যোগ্য নেতৃত্বে আফ্রিকার মরক্কো অবধি বিস্তার লাভ করেছে। জঘন্য সেই অপমানের শোধ নিতে কাউন্ট জুলিয়ান তখন আফ্রিকায় নিযুক্ত মুসলিম গভর্নর মুসা বিন নুসায়েরকে স্পেন আক্রমনে প্ররোচিত করলেন। গভর্নর মুসা স্পেন অভিযানের সেনাপতি হিসেবে তারেক বিন যিয়াদকে নিয়োগ দিলেন। কাউন্ট জুলিয়ানের সহায়তায় তারিক মাত্র ৫০০০ সেনা নিয়ে স্পেনের উদ্দেশ্যে সাগর পাড়ি দিলেন। ওদিকে রাজা রোডেরিকের সৈন্য সংখ্যা প্রায় এক লাখ। তারেক জানতেন, এই অসম যুদ্ধ জিততে হলে পিছুহটার ভাবনা মন থেকে মুছে ফেলতে হবে। তাই স্পেনের মাটিতে পা দিয়েই তিনি সব নৌযান একসাথে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। পরে গুয়াদালেতের যুদ্ধে তারেকের আর্মির কাছে রাজা রোডেরিকের আর্মি হেরে যায়, আর রোডেরিক নিজেও প্রান হারান।



ঘটনা-দুই



১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষদিকে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সকাল দশটায় ক্যাবিনেট মিটিং এ বসেছেন। উপস্থিত আছেন পররাস্ট্র মন্ত্রী সর্দার স্বরন সিং, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম, কৃষিমন্ত্রী ফখ্রুদ্দিন আলী আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ইশান্ত রাও আর আছেন সেনাপ্রধান স্যাম মানেকশ। শুরুতেই ইন্দিরা পশ্চিম বঙ্গ, আসাম আর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীদের শরনার্থী সমস্যা সংক্রান্ত মেসেজগুলো পড়ে শোনালেন। তারপর মানেকশর দিকে ফিরে বললেন, ‘আমি চাইছি, আপনি পুর্ব পাকিস্তানে ঢুকুন।’ মানেকশ বললেন, ‘আপনি কি জানেন, এঁর মানে যুদ্ধ!’ ইন্দিরা বললেন, ‘কুচ পরোয়া নেহি।’

মানেকশ বললেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি বাইবেল পড়েছেন?’



পররাস্ট্র মন্ত্রী সর্দার স্বরন সিং বললেন, ‘এঁর সাথে বাইবেলের কি সম্পর্ক?’



মানেকশ বললেন, ‘এই আদি বইএর প্রথম চ্যাপ্টারের, প্রথম প্যারাগ্রাফের, প্রথম লাইনে ঈশ্বর বললেন, “আলোকিত হও”, অমনি চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠল। তেমনি আপনি যদি বলেন, “যুদ্ধ শুরু হোক”, যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু আপনাদের কি ধারনা, আপনারা কি একটা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত? আজ ২৮ এপ্রিল। বরফ গলে হিমালয়ের পথ গুলো খুলতে শুরু করেছে। এমন সময় যদি চায়নিজরা আল্টিমেটাম দিয়ে বসে, আমাদের কিন্তু দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে তখন।’



সর্দার স্বরন সিং আবার মুখ খুললেন, ‘চায়নিজরা কি আল্টিমেটাম দেবে নাকি?’



মানেকশ বললেন, ‘আপনিইতো পররাস্ট্রমন্ত্রী, আপনিই বলুন, দেবে কিনা?’ এবার মানেকশ ইন্দিরার দিকে ফিরে বললেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গতবছর পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে আপনি চাননি কমুনিস্টরা জিতুক, তাই আপনি বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সব শহর গ্রামে ছোট ছোট দলে সেনা মোতায়েন করতে। আমার দুই ডিভিশন সেনা তাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াই সেকশন আর প্লাটুন হিসেবে এখনো ওখানে মোতায়েন আছে। ন্যুনতম একমাস লাগবে ওদের ইউনিটে ফিরিয়ে এনে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে। এছাড়াও আমার একটা ডিভিশন আসামে, অরেকটা অন্ধ্র প্রদেশে, আর আর্মার্ড ডিভিশনটা আছে জানশি-বাবিনাতে। ন্যুনতম একমাস লাগবে এদের ফিরিয়ে এনে সঠিক পজিশনে বসাতে। এদের নড়াতে দেশের প্রত্যেকটা রাস্তা, প্রত্যেকটা রেলগাড়ী, প্রত্যেকটা ট্রাক, প্রত্যেকটা ওয়াগন আমার লাগবে। এই অবস্থায় পাঞ্জাব, হরিয়ানা আর উত্তর প্রদেশের ফসল স্থানান্তর অসম্ভব হয়ে যাবে। একারনে দেশে যদি দুর্ভিক্ষ হয়, তখন কিন্তু সবাই কৃষি মন্ত্রীকেই দুষবে, আমাকে না। তাছাড়া আমার আর্মার্ড ডিভিশনে সাকুল্যে তেরটা ট্যাঙ্ক সচল আছে এই মুহুর্তে।’



অর্থমন্ত্রী অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, ‘মাত্র তেরটা কেন?’



মানেকশ জবাব দিলেন, ‘কারন আপনি অর্থমন্ত্রী, তাই। গত দেড় বছর ধরে আমি টাকা চাচ্ছি, কিন্তু আপনি বলছেন, কোন টাকা নেই, তাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এখন এপ্রিলের শেষ। আমি প্রস্তুত হতে হতে পুর্ব পাকিস্তানে বর্ষা শুরু হয়ে যাবে। আর বর্ষা কালে ওখানে শুধু বৃস্টি হয়না, যেন আকাশ ভেঙ্গে পানি পরে। নদী হয়ে যায় সাগরের মত, আপনি যদি এক পাড়ে দাড়ান অন্য পাঁড় দেখতে পারবেন না, আর আশেপাশের সব এলাকায় বন্যা শুরু হয়ে যায়। তাই আমার সব মুভমেন্ট রাস্তার ওপর সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। বিমানবাহিনীও সেভাবে কাজে আসবে না। এঁর এই অবস্থায় আপনি যদি আমাকে পুর্ব পাকিস্তানে ধুকতে বলেন, তো আমি আপনাকে শতভাগ পরাজয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারি। আপনি আমার কতৃপক্ষ, এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আমার জন্য কি আদেশ?’



ইন্দিরা গান্ধী বাস্তবতা মেনে নিয়েছিলেন এবং মানেকশ কে স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা করে জানাতে বলেছিলেন কবে নাগাদ তারা প্রস্তুত হতে পারবে। মানেকশ ‘অপারেশন জ্যাকপট’ প্ল্যান করেছিলেন, এবং মুক্তিযোদ্ধা আর বাংলাদেশীদের সহায়তায় ‘লাইটেনিং কেম্পেইন’ এঁর মাধ্যমে ৯৩হাজার পাক সেনা সহ নিয়াজিকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করেছিলেন।



সানজু বলেন, আপনি যখন নিশ্চিত যে এই যুদ্ধে আপনি জিতবেনই, তখন আপনার শাসক না চাইলেও আপনি লড়তে যেতে পারেন, কারন জিতে গেলে সবাই আপনাকে বাহবাই দেবে। কিন্তু আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে এই লড়াই এ জেতার কোন সুযোগই আপনার নেই, সেক্ষেত্রে আপনার শাসক চাইলেও, আপনার উচিত হবে যুদ্ধ এড়ানো; কারন হেরে গেলে পরাজয়ের সব দায় আপনাকেই নিতে হবে, আর জেনেশুনে অসম্ভব এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেবার কারনে অসংখ্য মৃত্যুর দায়ে বিবেকের দংশন থেকেও আপনি রেহাই পাবেন না।



পুনশ্চঃ



ঘটনা দুইটাই আমার 'দ্য আর্ট অব ওয়ার' ভাবানুবাদ সংশ্লিষ্ট। প্রথম ঘটনাটা Click This Link

এবং দ্বিতীয়টা Click This Link তে প্রাসঙ্গিক ভেবে সংযোজন করা হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে ঐ অধ্যায় দুটো পড়ে ফেলেছেন, তাদের জন্য এই খুচরা আপলোড। অন্যদের ত্যাক্ত করার জন্য দুঃখিত। সবাইকে ধন্যবাদ।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৪৭

আপেক্ষিক বলেছেন: আগে জানা ছিল না।জেনে ভাল লাগল।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮

ডি এইচ খান বলেছেন: আক্ষরিক অর্থে উপেক্ষা না করে নিরপেক্ষভাবে আপেক্ষিক মতামতের জন্য ধন্যবাদ ভাই।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: আপেক্ষিকের সাথে একমত।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:০৫

ডি এইচ খান বলেছেন: অনেক দিন পর আপনার দেখা পেলাম ভাই। ঘটনার কথা ছাড়ুন, বলুন আপনি কেমন আছেন?

৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭

মামুন রশিদ বলেছেন: জেনে ভালো লেগেছে ।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫৬

ডি এইচ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: আমি ভালো, আপনি কেমন?

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭

ডি এইচ খান বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ, এই বেশ ভাল আছি ভাই।

৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৮

রওনক বলেছেন: "আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণি"
আপনার পতন অনিবার্য।

আপনার ব্লগে প্রথম ঢুকলাম। চমৎকার!

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:০৪

ডি এইচ খান বলেছেন: ঐটা তো নজরুলের কথা। হাহাহা।
আর উত্থান হলেই না তবে পতনের কথা আসে রে ভাই। আমিতো সমতলের লোক, ফ্ল্যাট হয়ে আছি। তাই ভয় নেই।

একটা চুটকি মনে পড়ল, এজাজত দ্যান বলার

একলোক গেছে হাত দেখাইতে। জ্যোতিষ বলল, 'তোর জীবনে অনেক উত্থান পতন দেখতে পাই। তুই অনেক উঁচুতে উঠবি, আবার নিজেই নিচে নেমে আসবি।'
সেই লোক পরে হাইরাইজড বিল্ডিং এ লিফটম্যানের চাকুরী পেয়েছিল। প্রতিদিন ২০ তলায় উত্থান-পতন। :)

৬| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:১৫

জিরো ডাইমেনশন বলেছেন: ভাল লেগেছে।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭

ডি এইচ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৭| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩১

মুদ্‌দাকির বলেছেন: প্রথমটা জানতাম, দ্বিতীয়টা যেন অনেক মজা পেলাম!! ভাগ্যিস তাঁরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেছিলেন, নইলে যুদ্ধে হেরে পরে হয়ত আমাদেরই ঘাড় মটকাতেন!!!

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪০

ডি এইচ খান বলেছেন: দাদারা সবসময়ই অনেক রিসোর্সফুল, সমস্যা হল আমরা ঠিকমত তাদের এক্সপ্লোয়েট করতে পারছিনা। সবারই বোঝা দরকার যে সব ক্যাপাসিটি নিজেরা গড়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া এই জামানায় অসম্ভব। তাই উনাদের পাখি ড্রেস, স্টার প্লাস আর বলিউডি আবর্জনা হজমের পাশাপাশি উনাদের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যাবার পথ বের করা জরুরী। তাহলেই উনারা টের পাবেন, সাইজ ডাজন্ট মেটার চপিং উড।

৮| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫

জনাব মাহাবুব বলেছেন: দুটোই ঘটনা চমৎকার। B-) B-)

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১

ডি এইচ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৯| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:১৫

জনসাধারণের মধ্যে একটি মলিন পট্টবস্ত্র বলেছেন: আগে জানতাম না।

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:০১

ডি এইচ খান বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।

১০| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩

অরণ্যতা বলেছেন: I was waiting for your article. Thank you for your article bro

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৪২

ডি এইচ খান বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।

১১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫

নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: আপনার ব্যাপারে আপনার এই পোস্টের ঠিক পরের পোস্টে যে মন্তব্য করেছি তার সত্যতা আবারো পেলাম। একাত্তরের এই ঘটনাটার কথা আমি জানতাম না। এটা কি তেলিয়াপাড়ার ঐতিহাসিক সম্মেলনের সময় ঘটেছিল?

১২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০৭

ডি এইচ খান বলেছেন: না ভাই। এটা ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশর একটা ভাষন থেকে নেয়া। তিনি অয়েলিংটনে গেস্ট স্পিকার হিসেবে ইন্ডিয়ান আর্মির অফিসারদের উদ্দেশ্যে লিডারশিপের ওপর বক্তৃতায়, লিডার দের নৈতিক সাহসের উদাহরন দিতে গিয়ে ইন্দিরার এই ক্যাবিনেট মিটিং এঁর ঘটনাটা বলেছিলেন।

১৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩৬

মোঃ ইয়াহিয়া বারী বলেছেন: ভাইজান আপনাকে প্রথমে ধন্যবাদ দেয়া দরকার কারন হল আপনি অনেক কষ্ট করে খেটে খুটে নিজে ব্লগে পাবলিশ করেন এবং আমরা সহজে তা জানতে পারি। ২ টা ঘটনাই আপনের থেকে জানলাম।

২১ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২২

ডি এইচ খান বলেছেন: কস্ট সার্থক বারী ভাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.