নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কী ভাবার কথা কি ভাবছি?

ডি এইচ খান

স্বাধীনতা অর্জনের চে রক্ষা করা কঠিন

ডি এইচ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলপাই রঙের স্বপ্ন অথবা অল্প স্বল্প রিক্রুটিং এর গল্প :D

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৩

একজন ৩০০ টাকায় বাড়ীর ছোট ছেলেটাকে টিউশানি পড়ায়। বাড়ীর বড় মেয়ে সাথী, তার সাথেই কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ছোট টা ফার্স্ট ইয়ারে, নাম সুমাইয়া। বান্ধবীকে দিয়ে একবার মনের কথা জানিয়েছিল তাকে। পাছে টিউশানি ছুটে যায় সেই ভয়ে সে আর সাড়া দেবার সাহস করেনি। টিউশানি পড়াবার সময় দরজার ওপাশে সুমাইয়ার উপস্থিতি সে ঠিকই টের পায়। কিন্তু বাড়িতে অসুস্থ মা আর দিন মজুর বাবার কথা মনে পড়ে। টিউশানিটা হারালে পড়ার খরচ বন্ধ হয়ে যাবে। চোখের সামনে আনমনে ভেসে ওঠা প্রিয় মুখটা জোড় করে সরিয়ে দিয়ে ছাত্র পড়ানোয় মন দেয় সে। গভীর রাতে স্বপ্নেরা যখন লাগামহীন পঙ্খীরাজের মত দিগ্বিদিক ছোটে, একরাশ সাধ আর স্বপ্ন তাকেও হাতছানি দিয়ে ডাকে। একটা চাকরী তার খুব দরকার। কিন্তু এই বয়ষে, এই যোগ্যতায় আর এই সামর্থ্যে চাকরী পাবার দুরাশা তার স্বপ্ন ফানুসে জল ঢেলে দেয়।



অন্যজন একটা চাকরির আশায় হন্যে হয়ে ঘুরছে। বাবা মারা যাবার পর বড় বোনটার আর বিয়ে দেয়া যাচ্ছে না, অথচ বয়ষ ২৪ পেরিয়ে যাচ্ছে। ছোট বোনটাও এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। সবার বড় বোনটার সংসারেও নানান অশান্তি চলছে, কে জানে কবে কী হয়ে যায়। মায়ের মুখ আর বুক জুড়ে থাকা ভয় আর আশঙ্কা তাকেও কুড়ে কুড়ে খায়। পৈতৃক সঞ্চয়ে টান পরছে প্রতিদিন। বাড়ীর একমাত্র পুরুষ সদস্য হিসেবে সব প্রশ্ন আর প্রত্যাশার চাপ ক্রমাগত তার উপর বাড়ছে। মাঝে মাঝে ভাবে বাবার মত দিন মজুরের কাজটাই কী তার ভবিতব্য? একটা চাকরী তারও খুব দরকার। কিন্তু একটা চাকরী পাবার স্বপ্ন দেখার সাহস সে সঞ্চয় করতে পারেনা।



একটা চাকরীর জন্য দুজন লড়ছে আজ। ভুল বলা হল বোধহয়। দুজন নয় লড়ছে আসলে তেতাল্লিশ জন। দুজনের গল্পটা আসলে জানতে পারা গেছে। ১৫০ টাকা দিয়ে একটা এসএমএস আর এই রিক্রুটিং সেন্টারে আসার ভাড়া, তা যোগাতেই ধারদেনা করতে হয়েছে। দুজনেই সন্দিগ্ন চোখে একে অপরকে মাপার চেস্টা করে। দুরুদুরু বুকে আঁচ করার চেস্টা করে ওর হবে নাকি আমার? ভাবে, আমার কি আর হবে? ও ব্যাটা নির্ঘাত টাকা দিয়েছে। তাই ওরই হবে। টাকা ছাড়া কি আর এই জামানায় চাকরী হয়? তাও আবার সরকারী চাকরী? কে কে নাকি তিন লাখ দিয়ে পেয়েছেও। অবশ্য যারা পায় তাদের চেয়ে দালালদের কাছেই এসব কথা বেশি শোনা যায়। এক দালালকে অবশ্য সেও চিনত, কিন্তু দেবার মত টাকা থাকলে না কথা এগুবে। তিন লাখ তো অনেক টাকা, জীবনে একসাথে অত টাকা চোখেই দেখেনি। দালালরাও পার্টি বুঝে কথা বলে। অবশ্য লোকে বলে দেশে যদি টাকা ছাড়া কোন চাকরি হয়, সেটা নাকি এই এখানেই হয়।



প্রত্যন্ত জেলার অচেনা গায়ের ছোট্ট কুটির ছেড়ে আসার সময় ছেলেটার মা বলেছিল, 'আল্লাহ ভরসা, তোর না হলে আর কার হবে বাবা?' তারপর ইচ্ছেকরেই দেরীতে খুলনা পৌছানো, যেন কোনরকমে দূরসম্পর্কের ঐ আত্মীয়ের বাসায় রাতটা কাটিয়ে সকাল সকাল রিক্রুটিং ইউনিটে ঢুকে পড়া যায়।



সেই সাত সকাল থেকেই পরীক্ষার পর পরীক্ষা। সময় যত গড়ায়, একে একে প্রতিদ্বন্দী কমতে থাকে, বাড়তে থাকে উতকন্ঠা! চাদি ফাটা রোদের তেজ কমতে থাকে, কমতে থাকে ধমনি জুড়ে ছুটে চলা এড্রিনালিনের স্রোত। চারদেয়ালের ভেতর ফলাফল তৈরি হতে থাকে আর বাইরের মাঠে একরাশ প্রত্যাশা আর প্রতীক্ষা হতে থাকে গাঢ় থেকে প্রগাঢ় ।



অবশেষে একে একে ডাক আসে সেই বিভিষীকাময় ছোট্ট ঘরটায়, শেষ মুহুর্তের স্বপ্নভঙ্গ আর হতাশা নিয়ে কিছু মানুষ ভারী পদক্ষেপে ফিরতি পথ ধরে। স্নায়ুছেড়া অনিশ্চয়তা নিয়ে বাকিরা স্থানু হয়ে বসে রয়।সবার শেষের ভাইবাটাতে সাহেব বড্ড বেশি সময় নেন। নাকি দিন শেষে সময়টাই এমন ধীর হয়ে যায়। অতঃপর তারও ডাক আসে সেই ছোট্ট ঘরটায় যাবার।



সারাদিনের ক্লান্তি, ঘাম আর উদ্বেগের ভারে শ্লথপায়ে সেও টেবিলটার ওপাশে এসে দাঁড়ায়। প্রত্যেকটা মুহুর্ত যেন অনন্তকাল। অভিনন্দিত হবার পরও কিছুক্ষন কিছুই যেন বুঝে উঠা যায় না। হঠাত মাথাটা কেমন ফাকা ফাকা লাগে। হাতের মুঠায় এপন্টমেণ্ট কার্ডটার দিকে অবিশ্বাস নিয়ে তাকায়। ব্যাপারটা ভাল করে বুঝে উঠার আগেই হ্যান্ডশেক শেষে দরজার বাইরে চলে আসা।



তারপর আচমকা নিজের ভেতরে খুব গভীরে কোথায় যেন একটা বিকট বিস্ফোরন ঘটে, বুনকা বুনকা এড্রিনালিনের জলোচ্ছাসে ভেসে যায় ক্ষুধা, ক্লান্তি। গ্লুকোজের ঘাটতি আর ইলেক্ট্রোলাইটের কমবেশিটা উপেক্ষাকরে টগবগিয়ে রক্ত বান ডাকে শিরায়-ধমনিতে। এডভেঞ্চারাস এক ভবিষ্যতের টিকেট হাতে উচ্ছাস আর উল্লাসে কিলবিলিয়ে উঠে গ্রন্থিল পেশি।



একরাশ ধুলা ঊড়িয়ে জলপাই রঙ্গা জীপটা বেরিয়ে যায়। লোকটার সাথে আর দেখা হলনা, ধন্যবাদটাও জানানো হলনা। হঠাত মায়ের কথা মনে পড়ে খুব। মা বলেছিল, 'আল্লাহ ভরসা, তোর না হলে আর কার হবে বাবা?



পুনশ্চঃ প্রেম অথবা অসচ্ছলতার গল্পে প্রগলভ হয়ে না,বরং পাঁচ স্তরের পরীক্ষায় সেরা সক্ষমতা দেখাতে পারার পরই দু'জন চাকরী পেয়েছিল।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৪

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: "তারপর আচমকা নিজের ভেতরে খুব গভীরে কোথায় যেন একটা বিকট বিস্ফোরন ঘটে, বুনকা বুনকা এড্রিনালিনের জলোচ্ছাসে ভেসে যায় ক্ষুধা, ক্লান্তি। গ্লুকোজের ঘাটতি আর ইলেক্ট্রোলাইটের কমবেশিটা উপেক্ষাকরে টগবগিয়ে রক্ত বান ডাকে শিরায়-ধমনিতে। এডভেঞ্চারাস এক ভবিষ্যতের টিকেট হাতে উচ্ছাস আর উল্লাসে কিলবিলিয়ে উঠে গ্রন্থিল পেশি। "

সবার সৎ স্বপ্ন পূরণ হোক নিজ যোগ্যতায় :)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৮

ডি এইচ খান বলেছেন: Amen

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: অভিনন্দন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.