নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কী ভাবার কথা কি ভাবছি?

ডি এইচ খান

স্বাধীনতা অর্জনের চে রক্ষা করা কঠিন

ডি এইচ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

খালিদের ইয়ারমুখ যুদ্ধ (কিস্তিঃ৮/ ৩য় দিনের যুদ্ধ)

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৫২


ইয়ারমুখ যুদ্ধের তৃতীয় দিনও আবার একযোগে তিন দিক থেকে আক্রান্ত হয়ে জেনারেল কানাত্বির হতবিহবল বোধ করলেন। ঠিক গতকালই সকালে ইনিশিয়াল সাকসেস পাবার পরও দুপুরের পর প্রায় একই ভাবে খালিদের কাউন্টার এটাকের কারনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়ে তাকে বাইজান্টাইন লাইনে ফিরে যেতে হয়েছিল। ‘পিনসার’ অথবা ‘ডাবল এনভেলপমেন্ট’ নামের এই কৌশলটা কানাত্বিরের কাছে একেবারে অজানা কিছু না। কিন্তু যুদ্ধের আগে তিনি সম্ভবত খালিদ বিন ওয়ালিদকে খুব ভাল করে স্টাডি করার সুযোগ পাননি। করলে জানতেন যে ঠিক গতবছরই খালিদ ইরাক ফ্রন্টে ওয়ালাজার যুদ্ধে এই কৌশলটি প্রয়োগ করে বিশাল সসনিয়ান আর্মির বিরুদ্ধে জয় হাসিল করে নিয়েছিলেন।

কিন্তু আজ অবস্থা আরো শোচনীয় লাগছে। কারন খলিদ তার ‘পিনসার’ মুভে আরো ভ্যরিয়েশন এনে যুদ্ধক্ষেত্রকে আরো জটিল করে তুলেছে। সুরাবিল আর আমরের মুসলিম পদাতিক বাহিনী এই মূহুর্তে তাদের সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্স বরাবর বাইজান্টাইনদের লেফট উইং আর লেফট সেন্টারকে পিনড ডাউন করে রেখেছে। আর এই সুযোগে খালিদ একযোগে বাইজান্টাইনদের ডান আর বাম থেকে তো ক্যভুলারি চার্জ করেছেই, সবচে ভয়ঙ্কর হল সুরাবিল আর আমরের বাহিনীর মাঝখান দিয়ে আরও একটা ক্যভুলরি রেজিমেন্ট একই সময়ে এসে কানাত্বিরের লেফট সেন্টারের বাম ফ্ল্যাঙ্কে চার্জ করে বসেছে। তিনদিক থেকে আক্রান্ত বাইজান্টাইনরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে স্টিফ রেজিস্টেন্স দিতে বাধ্য হল। কানাত্বিরের ক্যভুলরি রিজার্ভ ট্র্যাভার্স করতে গিয়ে ইতোমধ্যে একবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে। শুরু হল অভাবনীয় রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ। সঙ্গত কারনেই জেনারেল কানাত্বির অসহায় বোধ করলেন। কারন যুদ্ধের এই পর্যায়ে ভাহান তার বাইজান্টাইন রিজার্ভ লঞ্চ না করলে এই যুদ্ধে জেতা প্রায় অসম্ভব।


অথচ ইয়ারমুখ যুদ্ধের সকালটা শুরু হয়েছিল বাইজান্টাইনদের অনুকুলেই। সবকিছুই ভাহানের প্ল্যান মতই এগুচ্ছিল। ভোরের আলো ফুটতেই বাইজান্টাইনরা একযোগে সমস্ত মুসলিম ফ্রন্ট জুড়ে আক্রমণ করল। জেনারেল গ্রেগরি আর কুরিন বাইজান্টাইন রাইট উইং আর রাইট সেন্টার নিয়ে ইয়াজিদ আর আবু উবায়দার মুসলিম লেফট উইং আর লেফট সেন্টারকে ব্যস্ত রাখল যেন শুরুতেই খালিদ তার মোবাইল রিজার্ভ কোন একটা নির্দিস্ট সেক্টরে লঞ্চ করার সুযোগ না পায়।

এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী কানাত্বির বাইজান্টাইন লেফট উইং আর লেফট সেন্টার নিয়ে সর্বশক্তিতে ঝাপিয়ে পরল মুসলিম রাইট উইং আর রাইট সেন্টারের ওপর। গতকালের যুদ্ধে আমরের বাহিনী ইতোমধ্যে যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই শুরু থেকেই কানাত্বির আমরের রাইট উইং এর উপর চড়াও হল। আমর সর্ব শক্তিতে তার ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্স ধরে রাখার চেষ্টা করলেন। দিনের শুরুতেই পিছু হটা ঠেকাতে আমর তার কাভুলরি রিজার্ভ লঞ্চ করলেন। কিন্তু বাইজান্টাইনরা সম্ভবত আমরের এই মুভটার জন্য রেডিই ছিল। তাই তাদের কঠিন প্রতিরোধের মুখে আমরের ক্যভুলরি রিজার্ভ কমান্ডার কায়েস রিপালসড হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন।

কায়েসের ক্যভুলরি চার্জ রিপালসড করার পর পরই কানাত্বির এটাকের মোমেন্টাম বজায় রাখতে পেছন থেকে ফ্রেস টুপস রিসাইকেল করে এনে পুর্নোদ্যমে আক্রমন চালালেন। এবার তার মূল লক্ষ্য আমর আর সুরাবিলের বাহিনীর সংযোগ স্থল গুড়িয়ে দিয়ে মুসলিম বাহিনীর পেছনে পৌছানো। সুরাবিল আর আমর প্রাণপণ চেষ্টা করলেন ফ্রন্ট অটুট রাখতে কিন্তু দুপুরের আগেই প্রেশার এত বেশি প্রচন্ড হয়ে উঠল যে একইসাথে মুসলিম ফ্রন্টের বেশ কয়েক পয়েন্টে ভাঙ্গন ধরল। অযথা সৈন্যক্ষয় কমাতে আমর পিচড ব্যাটেল থেকে নিজের ট্রুপস ডিসেঙ্গেজ করে নিয়ে সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্সে পিছু হটলেন। আমর আর সুরাবিলের বাহিনীর মাঝখান দিয়ে মুসলিম ফ্রন্টের পেছনে যাবার বাইজান্টাইন পরিকল্পনা ঠেকাতে আমরের বাহিনীর সাথে সমতা রেখে সুরাবিলের বাহিনীও সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্সে পিছু হটল।

দুপুর নাগাদ দুটো আলাদা ফ্রন্টে যুদ্ধ চলতে লাগল। ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্সে ইয়াজিদ আর আবু উবায়দা বনাম গ্রেগরি আর কুরিনের বাহিনী, এবং সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্সে সুরাবিল আর আমরের বিরুদ্ধে কানাত্বিরের সম্মিলিত বাহিনী। অনেক ইতিহাসবিদই মনে করেন আমরের সাথে সুরাবিলের পিছিয়ে আসাটা খালিদের পুর্ব পরিকল্পনারই অংশ ছিল।

সেকেন্ড লাইন অফ ডিফেন্সে এসে আমর আর সুরাবিল দ্রুত তাদের ফোর্স রি অর্গানাইজ করে খালিদের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকল। মুসলিম সৈন্যদের সেকেন্ড লাইনে ফের অর্গানাইজড হতে দেখে কানাত্বির নতুন করে আক্রমনের প্রস্তুতি নিল। ঠিক এমন সময় খালিদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কানাত্বিরের বাহিনীর ডান আর বাম দিক থেকে একযোগে চার্জ করল মুসলিম ক্যভুলরি। আর তা দেখে আমর আর সুরাবিলও তাদের পদাতিক বাহিনী নিয়ে ফ্রন্টাল এটাক লঞ্চ করলেন। সুরাবিল আর আমরের বাহিনীর গ্যাপ দিয়ে যখন আরো একটা মুসলিম ক্যভুলরি ইউনিট কানাত্বিরের বাহিনীর মাঝ বরাবর চার্জ করে বসল তখন শুরু হল চরম রক্তক্ষয়ী এক সংঘর্ষ।

জয়ের দ্বার প্রান্তে এসে এভাবে পরাজয় বাইজান্টাইনরা সহজে মেনে নিতে চাইল না। আর মুসলিম বাহিনীও জানত পিছু হটার আর কোন উপায় নেই। ফলে ইয়ারমুখের প্রান্তর বাইজান্টাইন আর মুসলিম সৈন্যদের রক্তে লাল হয়ে উঠতে লাগল। কিন্তু ত্রিমুখী আক্রমনের তোড়ে একসময় বাইজান্টাইন ফ্রন্ট আর ফ্ল্যাঙ্ক ক্রমশ ফর্মেশন হারাতে শুরু করল। ওদিকে ভাহানের পক্ষ থেকে কোন রিজার্ভ তখনো এসে পৌছেনি। অতএব মর্মান্তিক সৈন্যক্ষয় আর নিশ্চিত পরাজয় এড়াতে বাধ্য হয়ে কানাত্বির তার বাহিনীকে দ্রুত রিট্রিট করার আদেশ দিলেন।

মুহুর্তে বাইজান্টাইনরা মুসলিম আর্মির কাছ থেকে ডিজেঙ্গেজ হয়ে ফর্মেশন বদলে রিয়ার গার্ড একশনের মাধ্যমে পিছু হটা শুরু করল। খালিদ তাদের ধাওয়া করার লোভ সংবরন করলেন। কারন ইতোমধ্যে সুরাবিল আর আমরের বাহিনী এতোটাই ডিপ্লেটেড যে তাদের পক্ষে আর বাইজান্টাইনদের পিছু ধাওয়া করে হারাবার মত শক্তি অবশিষ্ট নেই।

যাহোক, সূর্য অস্ত যাবার সাথে সাথে তৃতীয় দিনের যুদ্ধ শেষ হল। উভয় পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়েছে। তুলনামূলকভাবে বাইজান্টাইনদের হতাহত অনেক বেশি। তারউপর তৃতীয় দিন শেষেও তারা যে লাইন থেকে যুদ্ধ শুরু করেছিল সেই লাইনেই ফিরে গেছে, তাই মানসিকভাবেও তারা ভীষনভাবে দমে গেছে।

পক্ষান্তরে মুসলিম ক্যাম্পে সৈন্যদের মনোবল এখন তুঙ্গে। যদিও হতাহত হয়েছে অনেক কিন্তু তিন দিনের যুদ্ধ শেষে তাদের ডিফেন্সিভ ব্যাটেলের মাধ্যমে বাইজান্টাইনদের ঠেকিয়ে রেখে দূর্বল করার উদ্দেশ্য বেশ ভাল ভাবেই সফল হয়েছে। কিন্তু তিনদিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলিম তীরন্দাজেরা। তাদের সংখ্যা সাকুল্যে ২০০০ জনে এসে ঠেকেছে। অগত্যা খালিদ তার চার আর্মির জন্য মাত্র ৫০০ জন করে তীরন্দাজ ভাগ করে দিলেন।

রাতে ভাহান আর খালিদ দু জনেই জানতেন যে যুদ্ধ এই মুহুর্তে সবচে ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে এসে পৌছে গেছে। আগামীকালই বাইজান্টাইনরা শেষ চেষ্টা চালাবে। হয় তারা সফল হবে অথবা আক্রমনের সামর্থ হারিয়ে যুদ্ধের ফলাফলের ভার খালিদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হবে। পরদিনের যুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা আদায় করে নিতে ভাহান তার জেনারেল, অফিসার আর সৈন্যদের জন্য বিশাল সব পুরস্কার ঘোষনা করলেন।

ওদিকে খালিদ আর আবু উবায়দা গভীর রাত অবধি তাবুতে তাবুতে গিয়ে সবার খোঁজ খবর নিলেন। তারপর খালিদ পরদিনের যুদ্ধের পরিকল্পনা আর কন্টিজেন্সি নিয়ে ভাবতে বসলেন। তিনি বাতাসে রক্তের গন্ধ পাচ্ছেন, কারন তিনি স্পষ্ট আঁচ করতে পারছেন যে আগামীকাল ইয়ারমুখ যুদ্ধের চতুর্থ দিন ইয়ারমুখ প্রান্তরে রক্তগঙ্গা বইতে চলেছে।

ইয়ারমুখ যুদ্ধের চতুর্থ দিনের যুদ্ধকে ইতিহাস চেনে “ব্যাটেল অব লস্ট আইজ” নামে...

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৪

পারভেজ উদ্দিন হৃদয় বলেছেন: ধন্যবাদ, সুন্দর পোস্ট,
অনেক কিছু জানলাম

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১২

ডি এইচ খান বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০১

মাহিরাহি বলেছেন: চালিয়ে যান।

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১৩

ডি এইচ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:২৬

আল্লার বান্দা বলেছেন: +++ Thanks.. For your hard work. Waiting again for next episode.

১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫২

ডি এইচ খান বলেছেন: ইনশাল্লাহ, ভাই।

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৪০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন! ইতিহাসকে বর্তমানের ভাষায় উপস্থাপনের দারুন দক্ষতায় প্রতিটি পোষ্ট হয়ে উঠছে সূখপাঠ্য..


++++

১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫৩

ডি এইচ খান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫২

শরাফত বলেছেন: পোস্টে প্লাস এবং প্রিয়তে ।

আসলে মুসলিম বাহিনীর উপর সত্যিই আল্লাহর অশেষ রহমত থাকত সবসময় ।
নতুবা প্রতিটি যুদ্ধেই এমন অসম সমীকরণকে তাদের নিজেদের পক্ষে নিয়ে জয়লাভ করা সম্ভব হতোনা ।

আর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) একজন লিজেন্ড।

১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫৫

ডি এইচ খান বলেছেন: খালিদ নিঃসন্দেহে লিভিং লিজেন্ডও ছিলেন।

৬| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৪১

কাফি বিডি বলেছেন: এইখানে পড়ি, আর মুখবইতে লাইক দিই :D ::salute::

১১ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮

ডি এইচ খান বলেছেন: হা হা হা।

ব্লগে সবাই হয় সিরিয়াস পাঠক অথবা লেখক। এই ব্যাপারটা শুধু ব্লগেই সম্ভব। মাচ প্রফেশনাল।

৭| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩৬

কাফি বিডি বলেছেন: ট্রাইং মাই বেস্ট

৮| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:৪২

সায়ান তানভি বলেছেন: পরের পোস্টের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছি।

৯| ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩৮

ডি এইচ খান বলেছেন: দিয়ে দিলাম। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.