নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অসংখ্য মানুষের ভালবাসা বা ভূয়সী প্রশংসা প্রত্যাশা করি না, প্রচুর গালি আর প্রচুর অসভ্যতা সহ্য করি।

আমি মানব অতএব আমার মধ্যে থাকবে মানবতা

ডানপিঠে নিশাচর

আমি কোন কবি নই, আমি কোন সাহিত্যিক-ও নই। তবুও মাঝে মাঝে এক একটি গভীর রাতের কিছুটা সময় আমার আঙুল প্রসব করে গল্প, ছোট গল্প, অনুগল্প, কবিতা নাম না জানা আমার আরোও অনেক সন্তান। এড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে চতুর্দিকে। যারা যে নামেই ডাকুক না কেন আমি বিরক্ত হই না। আমি সাহিত্য পড়ি না। জন্ম দেই। আমি জীবন থেকে নেই না্, বরং জীবন আমার থেকে নেয়। আমি মোটেও কেউকেটা নই, কীটস্ব-কীট আমি। আমার ধনবল নেই, শিক্ষা গৌরব নেই। আমি প্রকৃতি থেকে শিখি । বই পড়ে শিখি । অন্যের কথা শুনে শিখি । বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিখি । বিভিন্ন উৎসে বিচরন করি । জানার চেষ্টা করি । এভাবে লেখার রসদ সংগ্রহ করি । তারপর নিজের ভাবনা, বোধ, বিশ্বাস, অভিব্যক্তি দিয়ে মাঝেমধ্যে লেখার চেষ্টা করি । এক্ষেত্রে কিছু যোগ-বিয়োগ করি ।

ডানপিঠে নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

'শাহবাগে এক অন্যরকম সন্ধ্যা'

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:২২



প্রায় ৩ সপ্তাহ পর ঢাকায় ফিরেছি তখন।

পরের দিন একটু অস্বষ্থি লাগছিলো তাই বিকেলে চলে গেলাম শাহবগে।

গিয়ে দেখি পরিচিত আড্ডাবাজ অনেক মুখই অনুপস্থিত

আর যারা আছে তাদেরকে একটু ব্যাস্ত দেখাচ্ছে।

২দিন আগে অভিনু কিবরিয়া দাদার ‘ফাসি’ লেখাটা আমাকে এতটাই শিহরিত করেছিলো যে, এর জন্য উনার থেকে শাহবাগে অথবা ছবির হাঠে এক কাপ চা খাব ঠিক করেছিলাম।

দেখলাম অভিনু দা একটু ব্যাস্ত তো ভাবলাম উনি ফ্রি হয়ে নিলে চা চাইবো। এদিকে আবার মিঠু ফোন দিয়েছে, আমার বইটি ফেরৎ দেবে বললো তাই শাহবাগে আসতে বললাম। এরই মধ্যে সূর্য্য ডুবে গেল ভাবলাম এই ফাকে একজন নীরব দর্শক হয়ে শাহবাগটাকে একটু দেখি।



এই ভেবে চায়ের দোকানের সাথের রোড ডিভাইডারে যেখানে বসে চায়ের কাপের সাথে চলে আড্ডা সেখানে বসে পড়লাম। বসার আগে আমার ১০ গজের ভেতরে পরিচিত কেউ নেই সেটা নিশ্চিত হয়ে নিলাম। আমার পাশের লোকটি একটি গোল্ড লিফ নিল আর আমি বললাম মামা একটা চা দাও।

তখন আমার হাতে চায়ের কাপটা সবেমাত্র পৌছেছে আর লোকটা জায়গায় বসেই কয়েক টানে সিগারেটটা প্রায় শেষ করার উপক্রম, বুঝতে পারলাম লোকটার তাড়া আছে। সিগারেটের তিন চতুর্থাংশ শেষ করেই লোকটা অবশিষ্ট অংশটুকু নিচে ফেলে দিয়ে দ্রুত চলে গেলো।

ঐ অবশেষটুকু আমার পায়ের কাছেই পড়ে ছিলো, নিভেনি তখনো।



আমি সেই জ্বলন্ত সিগেরেটেরে দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নিভে যাওয়ার সাক্ষী হতে চলেছিলাম আর দু’হাতে চায়ের কাপটাকে মুখের খুব কাছে রেখে চায়ের কাপের উড়ন্ত ধোয়ার ভাপ নিচ্ছিলাম।

হঠাৎ পেছন থেকে এক নারীকন্ঠে শুনতে পেলাম

‘এক্সকিউজ মি প্লিজ’ ।

আমি তখনো ঐ নিভু-নিভু সিগারেটের দিকে তাকিয়ে গরম চায়ের ভাপ নিচ্ছি তো নিচ্ছি।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দ্বৈত নারীকন্ঠে শুনতে পেলাম

‘এক্সকিউজ মি প্লিজ’।

পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি ৩ জোড়া চোখ বিশিষ্ট ২ রমনী হাতে কিছু কাগজপত্রও আছে। এদের দু’জনেই প্রসংশনীয় সুন্দর (আমার জন্য নির্মম সুন্দর)।



একজন চশমাযুক্ত আরেকজনের মুক্ত আঁখি। তাদের একজন বললো

- আমরা একটি টোব্যাকো কম্পানি থেকে মাঠ জরিপ করতে এসেছি তো আমরা কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?

আমি ওদের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়!

সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে একটু কৈশরে ফিরে যাবো যেমনটা স্কুলের সহপাঠিদের সাথে করতাম তা-ই একটু ভিন্নভাবে করবো।

কপাল-কুচকে বললাম আপনারা দুজন মেয়ে একসাথে আছেন যেখানে, সেখানে আপনারা দু’জনেই তো কথা থেকে শুরু করে তর্ক-ঝগড়া-মারামারি সবই করতে পারেন! আমাকে জড়াতে হবে কেন!



১ম জন বললো – ভয় পাবেন না। আমরা শুধূ আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো। ব্যাস্

২য় জন – ইক্জেটলি... উই জাস্ট ওয়ান্ট টু নো ইয়ওর অপিনিয়ন। মনে করেন আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছি..

-থামেন.. থামেন! বাংলায় বলেন। ইংরাজি বুঝি না। ও আচ্ছা ইন্টারভূ !!

১ম জন – আচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি ?

২য় জন – ইয়েস ইন্টারভিউ, মানে সাক্ষাৎকার নেব। আমাদের জরিপের জন্য আপনার নাম জানা প্রয়োজন।



-ওহ! আমার নাম... টুটন

এবার ২ জনেই আমার নামের উচ্চারন আর বানান নিয়ে বেশ বিশ্লেষন করে নিলো। আমার চা পান করা শেষ। আমিও হাত গুটিয়ে বসলাম তাদের ইনাটারভূ দেবো বলে।



১ম জন – আপনার বয়স ?

-মানে ?

২য় জন – আপনার কতো বছর বয়স ?

-ওহ আচ্ছা । জ্বী ২২



১ম জন – আপনার পেশা ?

-পেশা !

২য় জন – মানে আপিন কি করেন ?

- নাহ! বলার মতো কিছুই করি না।



১ম জন – তা আপনার লেখাপড়া ?

-জ্বী!

২য় জন – মানে আপনি স্কুল/কলেজে কি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন বা করতেছেন তা-ই জিজ্ঞেস করছি?

- ওহ এই কথা। যথারীতি কপাল-কুচকিয়ে বললাম দুপুর পর্যন্ত।

এবার তারা দু’জনেই একে অপরের দিকে কপাল-কুচকিয়ে তাকাতে লাগলো।



১ম জন – দুপুর পর্যন্ত মানে !

২য় জন – কি বলেন এইসব ?

- আপনরা যা জানতে চেয়েছেন তাই বলেছি।

- মানে হচ্ছে, ছোট বেলায় কোন এক সকালে আমার বাবা আমাকে স্কুলে নিয়ে দিয়ে এসেছিলেন আর আমার কার্যকলাপে সন্তুষ্ট হয়ে দুপুরে টিফিন এর সময় স্কুলের হেডমাষ্টার আমাকে বাবার কাছে দিয়ে গেছেন।



এবার দু’জনে নিজেদের মধ্যে ফিস-ফিস করে কি যেন বলাবলি করলো ।



১ম জন – সিগারেটের সাথে সম্পর্ক কতোদিনের?

২য় জন – মানে কতদিন ধরে ধুমপান করেন ?

- আজন্ম । মানে জন্ম থেকেই চলছে ।



১ম জন - আজন্ম কিভাবে করবেন?

২য় জন – আপনাকে কি ফিডারে সিগারেট জ্বালিয়ে মুখে দেয়া হতো নাকি?

- তা হতে যাবে কেন! ধুমপান কি শুধু ঠোটে সিগারেট টানলেই হয়? আর আমার আশে পাশের লোকেরা যে সিগারেটে টান দিয়ে তাদের ভেতরের জার্ম, নিকেটিনসহ ধোয়াটা আমার মুখের দিকে ছাড়ে তাতে বুঝি ধুমপান হয় না!!



এবার দু’জনে একসাথে বলে উঠলো

‘আচ্ছা ঠিক আছে এবার আপনার একটা সাঈন দিন’।

আমি মুখটাকে বোকা থেকে বোকাতর করে তাকিয়েই রইলাম।



১ম জন – ওহ আচ্ছা আপনি সাঈন-- মানে দস্তখত, দিতে পারেন তো ?

২য় জন – না পারলে সমস্যা নাই । এক্ষুনি শিখিয়ে দিবো । ২মিনিটের ব্যাপার ।

-আমি এরকম সুন্দরী শিক্ষিকার কাছ থেকে হাতে কলমে শেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। বললাম আমি শুধু টিপসই দিতে পারি।(ভাবতেছি টের পাইবা শিক্ষকতা কারে কয়) ।



১ম জন – আচ্ছা আমরা আপনাকে এক্ষুনি শিখিয়ে দিচ্ছি (কোমড়ে ওড়নাটা পেছ দিয়ে)।

২য় জন - চলেন শুরু করি (ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে)



তারপর দু জনে মিলে নেমে পড়লো আমাকে সাঈন তথা দস্তখত শেখানোর মিশনে। এই শীতের সন্ধায় প্রায় ৩০মিনিট ধরে চলা মিশনে দু’জনেই ঘেমে গেছে।

একজন প্রায় ভিজে স্যাতস্যাতে হয়ে গেছে আর আরেকজনের মুখ লাল হয়ে গেছে যেন চশমাটি পিচ্ছিল মুখে আর টিকতে পারছে না।



আধাঘন্টার ব্যার্থ মিশন শেষে এবার তারা একটু বিশ্রাম নিতে বসলো । আমি দাড়িয়ে সৌজন্যসুলভ তাদের চা পানের অনুরোধ করলাম। তারা শুধু একটু পানি খেতে চাইলো।

ঠিক সেই ফাকে কোথা থেকে মিঠু আমার সামনে হাজির,হাতে (F8) Audit And Assurance বই।

চটজলদি করে বইটি খুলে একটা ডায়াগ্রাম বের করে বললো এইটা তুমি আগামী দিন আমারে বুঝাইয়া দিবা আমার এখন সময় নাই গেলাম। বলেই চলে গেল মিঠু।



এদিকে জরিপ করতে আসা শিক্ষিকাদ্বয় আমার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো । পরষ্পরের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো

'দেখেছিস! কেমন ছেলে!'

'কি গাঁধার খাটুনিটাই না খাটালো আমাদের!'

'ইচ্ছে তো করছে এখানে এই মুহূর্তেই সর্বনাশ করে ছেড়ে দিই'।



ছোট বেলায় প্রতি শুক্রবারে বিটিভিতে বাংলা সিনেমা দেখা হতো কারন তখনও আমাদের বাড়িতে ডিশ এন্টেনা (ক্যাবল কানেকশন) পৌছায় নি।

তো সে অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি, মেয়েদের মুখে সর্বনাশ শব্দটা কি অর্থ বহন করে।

তাই আমি তাদের এই অবস্থা দেখে তাৎক্ষনাত ঐস্থান থেকে প্রস্থান করে সোজা অভিনু দা'র কাছে চলে গেলাম।

অত:পর পরিস্থিতি ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত দাদা'র সাথেই রইলাম....

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৪৯

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: বর্ণনা মোটামুটি।

সরল হোন, পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে যাবে।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৭

ডানপিঠে নিশাচর বলেছেন: আপনার এই মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে নিক-টি ‘পাঠক১৯৭১’ না হয়ে ‘বিচারক১৯৭১’ হলে সার্থকতা পেত।
যাইহোক আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.