নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মুহাম্মদ এনামুল হক আপনাদেরই লোক

ঢাকার লোক

বাংলা ভালোবাসি

ঢাকার লোক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃতের সম্পত্তির বন্টন

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:১৯

মৃত্যুর পর মৃত ব্যাক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মাঝে কিভাবে বন্টন হবে তার দিক নির্দেশনা আল্লাহ পাক কোরানের সুরাহ নিসার ১১ থেকে ১৪ নম্বর আয়াতে বলে দিয়েছেন। তবে এ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট জ্ঞান না থাকার কারণে আমাদের সমাজে বেশ কিছু ভুল অনেক সময়ই পরিলক্ষিত হয়। নিজের গুনাহ থেকে বাঁচা ও সেই সাথে সকল ওয়ারিশদের প্রতি সুবিচার করার স্বার্থে এ সম্পর্কিত সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি। এ ভুলগুলো পরিহার যেন আমরা করতে পারি সেই উদ্দেশ্যেই আজ এখানে এগুলো তুলে ধরছি।

১) মৃত্যুর পূর্বেই সম্পত্তি লিখে দেয়া : এটি সম্পূর্ণ নিষেধ, ওয়ারিশ কে কে হবে তা একমাত্র কোনো ব্যাক্তি মারা গেলেই নির্ধারিত হবে। আজ যে জীবিত উক্ত ব্যাক্তি মারা যাওয়ার সময় সে জীবিত থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। তা ছাড়া আজ উক্ত লোকের যে সম্পত্তি আছে মারা যাওয়ার সময় থাকবে তার নিশ্চয়তাও নেই।

২) জীবিতাবস্থায় এক ছেলেকে দেয়া আরেক ছেলেকে না দেয়া: সম্পত্তির কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ উপহার দিলে সব ছেলে মেয়েকে সমান দিতে হবে, একজনের বেশ কয়েকটা ফ্লাট আছে, এক ছেলেকে একটা ফ্লাট দিলে অন্য ছেলেকেও একটা ফ্লাট দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীসটি স্মরণীয়, নুমান বিন বশির বলেন একবার তার পিতা তাকে একটা উপহার দেন, কিন্তু তার মা আমরাহ বিনতে রাওয়াহা বলেন যে এতে রাসূলুল্লাহ (স) যদি সাক্ষী না হন তো তিনি তা মেনে নিবেন না। তার পিতা রাসূলুল্লাহ (স) এর নিকট গিয়ে এ ঘটনা বললে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন " তুমি কি তোমার অন্য্ সন্তানদেরও তেমন উপহার দিয়েছ?" তিনি উত্তরে "না" বললে রাসূলুল্লাহ (স) এ অসম আচরণের সাক্ষী হতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, "আল্লাহকে ভয় কর, সন্তানদের প্রতি ন্যায্য ব্যবহার কর। " (বুখারী (২৫২৮), মুসলিম (১৬২৩)
তবে কোনো একজনের বিশেষ প্রয়োজন থাকলে তার প্রয়োজন মিটানোর ক্ষেত্রে কম বেশি করা জায়েজ। যেমন এক ছেলে হোস্টেলে থেকে মেডিকেলে পড়ে, আরেক ছেলে বাড়িতে থেকে সাধারণ কলেজে পড়ে, সেই ক্ষেত্রে মেডিকেলে পড়া ছেলেকে বেশি খরচ দেয়া নাজায়েজ নয়। অথবা এক ছেলে বিদেশ যাচ্ছে তার খরচ দেয়া যেতে পারে।

৩) তেমনি কোনো এক ছেলেকে ত্যাজ্য করা : এটি সম্পূর্ণ হারাম, কোনো ছেলে বা মেয়ের কোনো কাজে তার উপর রাগ করে বা বিরক্ত হয়ে তাকে ত্যাজ্য করা ইসলামে হারাম। ইসলাম ত্যাগ করলে সে তার মুসলিম পিতা মাতার সম্পত্তির অংশ পাবে না , অন্য কোনো কারণে তাকে তার প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। কারো বড় ছেলে বিদেশে থাকে, মা বাবার খোঁজ রাখেনা, তাদের দেখেনা, তারা ছোট ছেলের সাথে দেশে থাকেন, ছোট ছেলে তাদের দেখা শোনা করে, ইত্যাদি কারণে বড় ছেলেকে কিছুই দিব না, সব সম্পত্তি ছোট ছেলেকেই দিয়ে যাব, এরকম করা মোটেই ইসলাম সম্মত নয়।

৪) অসিয়ত করা : অসিয়ত করা বলতে একজনের মৃত্যুতে যারা এমনিতে ওয়ারিশ হবেন না , অর্থাৎ ইসলামী আইনে মৃতের সম্পত্তির কোনো অংশের হকদার হবেন না, তাদের কাউকে সম্পত্তি দিয়ে যাওয়া বা দিতে নির্দেশ দিয়ে যাওয়াকে বোঝায়। ওয়ারিশদের জন্য কোন ওয়াসিত করা রসূলুল্লাহ (স) নিষিদ্ধ করেছেন। কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে দান করতেও এই অসিয়ত করা যেতে পারে। ওয়ারিশদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করে এই অসিয়ত সমস্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশি যেন না হয়।
সা'দ বিন আবি ওয়াককাস বলেন বিদায় হজের বছর তিনি খুব অসুস্থ হয়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়লে রাসূলুল্লাহ (স) তাকে দেখতে আসেন, তখন তিনি বলেন, " ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনিতো আমার অবস্থা দেখছেন, আমার কিছু ধন সম্পদ আছে , একমাত্র মেয়ে ছাড়া আর কেউ ওয়ারিশ নেই, আমি কি আমার সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ সদকা করবো?" রাসূলুল্লাহ (স) বললেন "না"। " অর্ধেক করবো? ": রাসুল্লাহ (স) বললেন "না। " তিনি আরো বললেন, এক তৃতীয়াংশ দাও , সেই অনেক , তোমার ওয়ারিশদের দরিদ্র, পরের কাছে ভিক্ষা করছে রেখে যাওয়ার চেয়ে সম্পদশালী রেখে যাওয়া উত্তম। " মুসলিম (৩৯৯১)
অসিয়ত করার সময় মনে রাখতে হবে, অসিয়ত হতে হবে সম্পূর্ণ কল্যাণের উদ্দেশ্যে, কোনো একজন ওয়ারিশকেও ইচ্ছকৃতভাবে তার ন্যায্য অংশ থেকে কম দেয়ার বা বঞ্চিত করার অসদুদ্দেশ্যে নয়, অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে।

৫) শুধু মেয়ে সন্তান থাকলে তাদেরকে সব লিখে দেয়া: কারো যদি শুধু মেয়ে সন্তান থাকে, ছেলে না থাকে, তবে তার মৃতের ভাই, বোন, বাবা, মা, (জীবিত থাকলে) ইত্যাদি আত্মীয় স্বজনও সম্পত্তির একটা অংশের হকদার হন। অনেক সময় তাদের অংশ না দেয়ার জন্য আগে ভাগেই মেয়েদের নামে সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। এটি একটি গর্হিত অপরাধ, এতে একজন হকদারকে তার ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়।

৬) পালিত/দত্তক নেয়া সন্তান ওয়ারিশ নয়: ইসলামে এতীমকে লালন পালন উৎসাহিত করা হলেও দত্তক নেয়া নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে, বিশেষত পর্দা মেনে চলা সাপেক্ষে এবং প্রকৃত বাবা মার্ পরিচয় জানায়ে কোনো ছেলে বা মেয়েকে লালন পালন করা গেলেও সে এই লালন পালনকারী বাবা মার্ সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে না। তবে তাকে অসিয়তের মাধ্যমে কিছু অংশ দেয়া যেতে পারে।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন। মৃত্যুর আগে ভাগ বাটোয়ারা করা কঠিন একটা অন্যায়। এটা অনেকেই তারপরে করে।

সন্তানদের কিছু উপহার দিলে সবাইকে দিতে হয় এবং সমান দিতে হয়।
সন্তানকে ত্যাজ্য করার কোন বিধান ইসলামে নাই। কারণ সম্পত্তির প্রকৃত মালিক আল্লাহ। আমাদের কাছে সম্পদ কিছু দিনের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে শুধু।

৫ ও ৬ নাম্বারও আমাদের মানতে হবে।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০১

ঢাকার লোক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই !

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: ভালো লিখেছেন। অনেক কিছু জানা হলো। ধন্যবাদ।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫৫

ঢাকার লোক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ! কেমন আছেন? বেশ অনেকদিন পর কাল ব্লগে ঢুকেছিলাম, মন্তব্যে আপনাকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছি !

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:০৯

শেরজা তপন বলেছেন: উইল করে যাওয়া যে নিষেধ সেটা জানতাম না! যে সমাজে বা রাষ্ট্রে লিখে দেবার বিধান রাখা হয় সেখানে এমনটাতো ঘটাই স্বাভাবিক।
কন্যা সন্তান যাতে বঞ্চিত না হয় সেজন্য অনেকেই স্ত্রীর নামে সম্পত্তি লিখে দেন- সেটা কেমন?
দেখুন যাকে দিচ্ছে তাকেও যেমন সব কিছু নিয়ম নীতির মধ্যে করতে হবে তেমনি যারা ভাগ পাচ্ছে তাদেরও তেমন নিয়ম নীতির মধ্যে ভাগ নিতে হবে।
আপনি যদি ধারনা করেন- আপনার মৃত্যুর পরে ভায়েরা বোনদের বা ভাই ভাইকে বঞ্চিত করার সম্ভাবনা আছে- কিংবা শুধু কন্যা সন্তান থাকায়, আত্মীয় স্বজন ওত পেতে আছে, আপনার মৃত্যুর অপেক্ষায়, তখন কি করবেন?

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪০

ঢাকার লোক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য, একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, উইল করা আর সম্পত্তি লিখে দেয়া ঠিক এক অর্থে ব্যবহার সম্ভবত ঠিক নয়। লিখে দেয়া অর্থ সাধারণত সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দেয়া বোঝায় অর্থাৎ এতে মালিকানা ট্রান্সফার হয়ে যায়। আগের মালিকের আর কোনো অধিকার থাকে না। উইল করতে রাসূলুল্লাহ (স) বরং নির্দেশ দিয়েছেন, এমনকি বলেছেন যার সম্পদ আছে সে যেন উইল না করে ২ রাতও পার না করে । (সহী বুখারী)) ইসলামিক আইনে অভিজ্ঞ আলেমগণ বলতে পারবেন সে উইলে কি কি লিখা থাকে। আমার ধারণা এতে উইলকারী উইল করার সময় কে কে ওয়ারিশ, কি কি সম্পদ আছে, কোনো ঋণ থাকলে তার বিবরণ লিপিবদ্ধ করে তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশগণ যেন ইসলামী শরিয়া মতে যার যার প্রাপ্য অংশ পান সেইমতো নির্দেশনা দিয়ে যাবেন। বর্তমানে বাংলাদেশে মৃতের সম্পত্তি ভাগ করে রেজিস্ট্রি করতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ওয়ারিশ সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়, মৃতের সই করা ও নোটারি করা কোনো দলিলও গ্রহণ করা হয় না।
শরিয়া মত ওয়ারিশগণকে বঞ্চিত করার অসদুদ্দেশ্যে স্ত্রীকে লিখে দেয়া নিতান্তই অন্যায়, এতে একাধিক ভুল করা হয়, জীবিতাবস্থায় লিখে দেয়া এবং শরিয়া মত ওয়ারিশগণকে বঞ্চিত করা !
ওয়ারিশদের দায়িত্ব ইসলামিক আইন অনুসারে যার যার ন্যায্য প্রাপ্য নেয়া এবং অন্যদের দেয়া। কেউ বঞ্চিত হলে পরিবারের মুরুব্বিদের সহায়তা নিয়ে সালিশ করে মিটমাট করতে পারেন, সে পথেও যদি বার্থ হন তবে কোর্টের মারফত আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।

৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৬

নীল-দর্পণ বলেছেন: সুন্দর বিষয়ে লিখেছেন। আরেকটা পয়েন্ট আনতে পারতেন, আমাদের গ্রাম্য সমাজে একটা বিষয় বেশ প্রচলিত যে মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা বেশি পাবে। ইসলামী শরিয়তে কিন্তু নাই বরং যুগযুগ ধরে সম্পূর্ন ভুল।একটা ধারনা পোষন করে আসছে মানুষ।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৯

ঢাকার লোক বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ, এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। আপনি ঠিকই বলেছেন, মায়ের সম্পত্তি মেয়েরা বেশি পাবে এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন। মৃত স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর অংশ ও মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অংশে কিছু তারতম্য থাকলেও ছেলেমেয়েদের অংশ মৃত বাবা বা মা উভয়ের সম্পত্তির বেলায়ই এক। উভয় ক্ষেত্রেই ছেলেরা মেয়েদের দ্বিগুন পাবে।

৫| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৮

কামাল১৮ বলেছেন: ইসলামিক বন্টন ব্যবস্থা মোটেই ভালোনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.