নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো, ডেল্টা এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট, লা গোর্ডিয়া এয়ার পোর্ট থেকে সন্ধ্যা ৮ টায়। লা গোর্ডিয়া নিউ ইয়র্কে ই JFK র মতোই আরেকটি এয়ারপোর্ট, JFK তে প্রধানত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উঠানামা করে আর লাগোর্ডিয়ায় প্রধানত আমেরিকার বিভিন্ন শহরে যাওয়া আসা করা লোকাল ফ্লাইটগুলো উঠানামা করে। গাড়িতে দুটো এয়ারপোর্টের মাঝে দূরত্ব প্রায় আধা ঘণ্টার মত।
ফ্লাইটের সময় ঘনিয়ে আসতেই জানানো হলো ফ্লাইট দেরি হবে। প্রথমে বললো ৯ টায়, তার পর ১০ টায়, তার পর বললো ১১ টায় !
প্রায় ১১ টা যখন বাজে বললো আজ আর ফ্লাইট যাবে না। যাত্রীদের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে ও অন্য ফ্লাইটে যাওয়ার ব্যাবস্থা করবে। ওদের নির্দেশনা মতো ডেল্টার এক কাউন্টারে গিয়ে আমরা সবাই লাইন ধরে দাঁড়ালাম, ফ্লাইট বুকিং, হোটেল এবং ফুড ভাউচার নিতে। পাশা পাশি দুই লাইন, দুইজন স্টাফ একে একে যাত্রীদের বুকিং, হোটেল ইত্যাদি দিচ্ছে। আমি পরদিন রাত ৮ টার ফ্লাইটে সিট পেলাম, হোটেল/ফুড ভাউচার নিয়ে লাইন ছেড়ে আসছি , চোখে পড়লো পাশের লাইন এর মাথায় এক মহিলা, বয়স্ক, শাড়ি পড়া, স্টাফের সাথে বাংলায় কিছু বলতে চেষ্টা করছেন। এগিয়ে গিয়ে ইন্টারপ্রেটর হিসাবে ডেল্টার স্টাফের সাথে কথা বলে উনার বুকিং, হোটেল ও ফুড ভাউচার নিলাম। উনাকে দিয়েছে পরদিন সকাল ৯টার ফ্লাইট। লাইন থেকে বেরিয়ে এসে কথা বলে জানলাম উনি, ডেট্রয়ট থাকেন, স্বামী ছেলে সহ। দেশে গিয়েছিলেন, আজই ফিরেছেন। দুপুরে এক ফ্লাইটে ডেট্রয়ট যাওয়ার কথা ছিল, উনার নিউ ইয়র্ক - ডেট্রয়ট ফ্লাইট লা গোর্ডিয়া থেকে উনি জানতেন না, তাই JFK তে বসেছিলেন, যখন জানতে পারেন ততক্ষনে সে ফ্লাইট চলে গেছে! পরে ডেল্টা উনাকে রাত ৮ টার ফ্লাইটে বুক করে দেয়। জিজ্ঞেস করলাম স্বামী ছেলের সাথে যোগাযোগ করেছেন। বললেন করেননি, নম্বর আছে কিন্তু কোনো ফোন নেই। তখনি আমার ফোন থেকে উনার স্বামীর সাথে কথা বলতে দিলাম। ভদ্রলোক ও তাঁর ছেলে তখনও ডেট্রয়ট এয়ারপোর্টে, উনার কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে অধীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করছেন!
আমি ভদ্রলোকের সাথে কথা বলে জানিয়ে দিলাম, উনার স্ত্রী পরদিন সকাল ১১ টায় ডেট্রয়টএ পৌঁছাবেন।
ততক্ষনে হোটেলে যাওয়ার বাস এসে গেছে। বললাম, চলেন হোটেলে, সকালে আপনার ফ্লাইটের আগে ওরাই আপনাকে এয়ারপোর্টে নিয়ে আসবে। উনি যাবেন না, বললেন এয়ারপোর্টেই রাত কাটিয়ে দিবেন, কাল আবার ফ্লাইট মিস করতে চান না! অগত্যা , উনাকে এয়ারপোর্টে রেখেই আমি হোটেলে চলে এলাম। পরদিন বেলা ১২টার দিকে ভদ্রলোক ফোন করলেন, উনি পৌঁছান নি, ওই ফ্লাইট এসেছে কিন্তু উনি আসেননি! কান্না জড়িত কণ্ঠে উনি আমাকে উনার খোঁজ নিতে বললেন, আরো বললেন উনি অসুস্থ, হাই ডায়বেটিক, ভয় পাচ্ছেন কিছু হলো কিনা! ভেবেছিলাম ৫ টার দিকে হোটেল থেকে বেরোবো, কি আর করা ১ টার আগেই এয়ারপোর্টে চলে এলাম। উনি কোথায়, কেন সকালের ফ্লাইটে যেতে পারেননি খোঁজ করতে চেষ্টা করছি, এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে, কেউ কোনো খবর দিচ্ছে না। উনি আমার কেও নন, তাই প্রাইভেসী! শেষ পর্যন্ত এক ভারতীয় মহিলাকে পেলাম, ডেল্টার স্টাফ। তাকে পুরো ঘটনাটা বুঝিয়ে বললাম, বললাম উনি ইংরেজি বলতে পারেন না, অসুস্থ , উনার স্বামী ছেলে ডেট্রিয়টে উনার কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে উৎকণ্ঠিত, পাগলপ্রায়।
ভদ্রমহিলা আমাকে নিয়ে এক কাউন্টারে গিয়ে উনার ইনফো থেকে বের করলেন, উনি নিজেই কোনো কারণে সকালের ফ্লাইট বদলিয়ে বিকেল ৪ টার এক ফ্লাইটে রিবুক করেছেন এবং সে ফ্লাইট ১৪ নম্বর গেট থেকে যাচ্ছে। লা গোর্ডিয়ায় ডেল্টার একটা আলাদা টার্মিনালই আছে, ১৪ নম্বর গেটে গেলাম, ভারতীয় সে মহিলাও আমার সাথে, গেটে অনেকেই বসে আছে, কিন্তু উনাকে কোথাও দেখলাম না। আমি এবার উনাকে অনুরোধ করলাম একটা এনাউন্স করা যায় কিনা! উনি রাজি হলেন, তবে বাংলায় করা যাবে না, ইংরেজিতে করতে হবে। শেষে তাই করা হলো। টার্মিনালে PA সিস্টেমে উনার নাম ধরে ১৪ নম্বর গেটে আসতে অনুরোধ করা হলো। প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা করেও উনার আসার কোনো লক্ষণ পেলাম না! এরই মাঝে কিছুক্ষন পর পরই উনার স্বামী ফোন করছেন, কোন সন্ধান পেলেন?
ততক্ষনে আমিও প্রায় এক্সযস্টেড। মহিলাকে বললাম, আমি সব কটা গেটে এক এক করে ঘুরে দেখি কোথাও বসে আছেন কিনা বা ঘুমিয়ে পড়েছেন কিনা ! মহিলা একটু অবাকই হলো, একজন অনাত্মীয় অপরিচিত জনের জন্য আমি টার্মিনালের ২৫/৩০ টা গেটে ঘুরবো !
শুরু হলো আরেক অভিযান, ১ নম্বর থেকে শুরু করলাম, বসে থাকা প্রতিটি মানুষকে দেখে দেখে হাঁটছি। শেষে এক গেটে এসে দেখি উনি বসে আছেন!
হাফ ছেড়ে বাঁচলাম! জিজ্ঞেস করলাম আপনি এখানে কেন? আপনার ফ্লাইট একটু পরে ছেড়ে যাবে ১৪ নম্বর গেটে থেকে ! উনি বললেন, কে নাকি বলেছে এ গেট থেকে যাবে! বললাম আপনাকে ১৪ নম্বর গেটে যাওয়ার জন্য মাইকে ডাকা হচ্ছিলো, শুনেননি? বললেন, উনার নাম শুনেছেন, কিন্তু কি করতে হবে বুঝেননি!
বললেন, সকাল থেকে কিছুই খাননি। আমি নিজেও লাঞ্চ করার সময় পাইনি। দুজনে এক রেস্টুরেন্টে কিছু খেয়ে নিয়ে দ্রুত ফিরে আসলাম সেই ভারতীয় মহিলার কাছে, উনি আমাদের নিয়ে গেলেন ১৪ নম্বর গেটে, ততক্ষনে বোর্ডিং শুরু হয়ে গেছে। লাইন বাইপাস করে তিনি উনাকে প্লেনে উঠিয়ে দিয়ে এসে আমাকে বললেন, তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো, তুমি না এলে এ ফ্লাইটও উনি মিস করতেন ! আমিও উনাকে ধন্যবাদ জানালাম, বললাম উনার সহযোগিতা না পেলে আমিও কিছুই করতে পারতাম না ! সব ক্রেডিট তাঁরই!
ফোনে উনার স্বামীকে উনার পৌঁছানোর সময় জানিয়ে দিয়ে মনে হল এবার বিশ্রাম দরকার! তখনো আমার ফ্লাইটের প্রায় ঘন্টা চারেক বাকি!
১৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬
ঢাকার লোক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। কারো জন্য কিছু করার সুযোগ পেলে, করতে পারলে, নিজের মনে যে প্রশান্তি ও আনন্দ পাওয়া যায় সেই এক বিরাট পাওয়া । আপনার পুরানো লেখাটি পড়লাম, ভ্যালেরিরা এখনো আছে বলেই দুনিয়া এখনো এতো সুন্দর! পড়ে অনেক ভাল লাগল। লেখাটির লিংক দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
২| ২৮ শে জুন, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫
টবগমৃুাপৃসত বলেছেন: This story is so heartwarming! I can't imagine how worried that man and his family must have been. Your kindness and persistence really helped reunite them. It's a reminder that even small Wordle Unlimited acts can have a big impact on someone's life.
১৮ ই আগস্ট, ২০২৪ ভোর ৫:৫৫
ঢাকার লোক বলেছেন: Thank you so much for your kind words!
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার! খুব ভালো কাজ করেছেন। অবশ্যই আপনার বিপদের দিনেও কেউ না কেউ এভাবেই এগিয়ে এসে আপনাকে সাহায্য করবে। এরই নাম মানবিকতা।
দশ বছর আগে আরেকবার আমেরিকা আসার সময় আমার আরেকটি বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা নিয়ে লেখা আমার এই পোস্টটিও পড়ে দেখতে পারেনঃ অজানা পথের অচেনা সাথী