নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চিন্তা ভাবনার খোলা খাতা আপনাদের সবার ভালো লাগলে ভালো না লাগলে দুঃখিত

মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে

ধ্রুব অন্যকোথাও

আমাকে অমানুষ ডাকুন

ধ্রুব অন্যকোথাও › বিস্তারিত পোস্টঃ

Bangladeshi Hypocrisies(part 1)

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৩

অবশ হয়ে গিয়েছিলাম।সারা শরীর-মন সব অবশ হয়ে গিয়েছিল।ডিজিটাল পৃথিবীর ডিজিটাল জগতের দাসত্বের শৃংখল কেমন এক নেশা দিয়ে অবশ করে ফেলেছিল।অবশ্যি ডিজিটাল জগত টার ভালো দিকের অভাব নেই,কিন্তু আমাদের মন কে আটকে রাখার জন্য সকল পদ্ধতির পসড়া সাজাতে জুড়ি নেই তার।বাংলাদেশের মতন দেশের মানুষের জন্য ব্যাপারগুলা যেন আরো প্রকটাকার ধারন করেছে।
আমাদের কপটতা,মিথ্যাচারিতার বাধ ভেঙ্গে গিয়েছে এই ডিজিটাল জগতের মাধ্যমে।
তার সাথে সাথে যেন আমাদের মননশীলতার অভাব কে সবার সামনে নিয়ে আসছে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্লগ।আমি নিজেই কত নতুন নতুন গালি শিখলাম :P
আমাদের সমাজের অদ্ভুত রকমের অন্ধকার দিক গুলো নতুন করে যেন দেখলাম
--আমাদের ইনসিকিউরিটি বোধ,সেলফ রেস্পেক্টের অভাব প্রকাশ পাইতেছে শয়ে শয়ে এদ মি কমেন্টে
--আমাদের নিচু মানসিকতার পরিচয় আমরা পাই নারী সেলেব্রেটি দের ছবিতে অশ্লীল কমেন্টের ছড়াছড়িতে,নারী খেলোয়াড়দের ছবির কমেন্টে,খেলোয়ার দের স্ত্রী-কন্যা-গার্লফ্রেন্ড দের ছবিতে,এইসব বাদ দিলেও সাধারন এক নারীর ছবিতেও আমরা উতকট কমেন্ট করার সুযোগ ছাড়িনা।ওহ আর এদ মি তো আছেই :P
আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা খুবি অদ্ভুত।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সৃজনশীলতার প্রতি কেমন একটা এলার্জি কাজ করে।
পরিচিত উদাহারন দেই-
একজন ১০-১২ দিন ধরে কষ্ট করে একটা পেইন্টিং করলে সমাজ বলে “কি বালছাল ছেলে খালি ছবি আকে”
কপাল ভাল হইলে দুই একজন বলবে হু ভালো হইছে।
আর পেইন্টার সাহেব কাউকে দিয়ে দেখাতেও পারবেনা কারন এর আগের জেনারেশনে কেউ সাহস করে পেইন্টিং করেন নাই।তো যেটা হবে পেইন্টার সাহেবের পেইন্টিং এর না হবে উন্নতি না তিনি পাবেন চালিয়ে যাওয়ার সাহস।আর যদি কপাল খারাপ থাকে জাতি তাহলে আমাদের দেশ আরেকজন ছেচড়া পেইন্টার পাইবেক।
এবার আরেকটা পরিচিত উদাহারন--
একজন ১০-১২ দিন ধরে একটা বই আর কিছু নোট মুখস্ত করে পরীক্ষা দিয়ে হয়ে গেল ফার্স্ট।সমাজের প্রতিক্রিয়াঃ
“কোলে তুলে নাচ সবাই”...
Edward Norton অভিনীত “Leaves of grass” সিনেমাতে খুব সুন্দর একটা ডায়ালগ আছে
“BRADY: Heidegigger's got some idea and then
some French guy's got a take on that

then you write a review of that
and some other fella comes along

and on and on
and on and on
BILL: You've very neatly explained academia, Brady.”
ডেরিভেটিভ কাজের জন্য সবাই হাত তালি দেয়,পিঠ চাপড়ে দিবে।সৃষ্টিতে পিছপা করতে সবাই ধাক্কাই দেয়।
দেশের খুব কম জায়গাই আছে যেখানে সৃষ্টিশীলতার স্থান রয়েছে।
আমাদের দেশের সবার খুব কমন অভিযোগ দেশে ভালো গান-সিনেমা-নাটক নেই।সবই বলিউডি হয়ে গিয়েছে।সাহিত্য এর মান পড়ে গিয়েছে।কিন্তু নিজের সন্তান দের কেউ ঠেলে দিয়ে বলবেনা যা ব্যাটা একটা ভালো সিনেমা বানায় আন।
আর যদি দেয় তাহলে দেখা যাবে সেই ছেলে সারাদিন শুয়ে থেকে সিনেমা দেখে কষ্ট করে ক্যামেরা টা নিয়ে বের হবেনা।
স্বপ্ন থাকে সবার,কিন্তু স্বপ্ন পূরন করার জন্য দিন রাত খাটনিটাও নিজেরি করতে হবে।যদি বলি যে আমরা তো পিছায় আছি হেন তেন।তাহলে অন্য কোন রাস্তা দেখা উচিত।খেলাধুলা-শিল্পক্ষেত্র-সাহিত্যে সবখানে আমরা আন্তর্জাতিক মান থেকে হাজার হাজার মাইল পিছে।এখন যদি বলি ফ্যাসিলিটিজের অভাব সেটা নিজের সাথে বেইমানি করা হয়।কারন এবোলা আক্রান্ত আফ্রিকান রাও আমাদের কে টেক্কা দিচ্ছে খেলাধুলা থেকে শুরু করে সব কিছুতে।
আমাদের সমস্যা আমাদের সমাজের কোনা ঘুপচি গুলোতে।আমাদের নিজেদের মাঝে।আমাদের মননশীলতার স্ট্যান্ডার্ড খুবি নিচে।যার কারনে আমাদের সাধারন মানুষেরা বলিউডে তৈরিকৃত হলিউডের/পশ্চিমা ছবির সস্তা অনুকরন দেখেই স্যাটিসফাইড।আর যারা কালচারাল এলিট মনে করেন তারা ফারুকীর তৈরিকৃত অপ্রচলিত ছবির বাংলাদেশী ভার্সন দেখে তৃপ্তি লাভ করি।এটা তাদের কারোর দোষ না।তারা ক্রিয়েটিভ নাই হতে পারেন কিন্তু আমাদের দর্শক এবং মানুষের মননশীলতার স্ট্যান্ডার্ড এমনি কম তারা কেয়ার করেন না।ফারুকী বানাইছে ভালো হইতে হবে।সবখানেই ব্যাপারটা এমন।আমাদের দেশে শিন্ডলার্স লিস্ট ছবিটা খুবি জনপ্রিয়।আমাকে সবাই বলেছে এটা তাদের জীবনে দেখা সেরা সিনেমা।যদিও আমার কাছে জঘন্য মনে হয়েছে।তবে আমি মনে করি একেক জনের চয়েস একেক রকম।আমার কাছে মনে হয়েছে উচ্চ মার্গীয় স্ল্যাশার ফিল্ম দেখছি হলোকস্ট নিয়ে।যাই হোক আমার কথাটা এটা নিয়ে না।
আমি বলতে চাইছিলাম আমাদের মননশীলতার মান নিয়ে।ধরেন আমি একটা সিনেমা বানালাম যেখানে এক পাকিস্তানি আর্মি অফিসার বাংগালীদের বাচানোর জন্য জীবন দেয়।অথবা ধরেন ৭১ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা কিংবা তাদের নাম বেচে যারা চলেছে তারা নারীদের উপর কিরকম নির্যাতন করতো সেটার উপর ছবি বানাতে গেলে আমার ফাসির জন্য শাহবাগে বিরানী পার্টি বসবেই।কারন আমরা মানুষ না আমরা হিপোক্রেট।আমরা মনে করি আমরা খুবি উচ্চমার্গীয় চিন্তা করি কিন্তু দিন শেষে আমরা কমোডেই বসি হাগতে।
ক্রিয়েটিভ,এনালিটিকাল চিন্তার কোন প্রকাশ এজন্য ডিজিটাল যুগে খুবি কমে গিয়েছে।ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে,নেটের বিভিন্ন ব্লগ গুলো তে স্পোর্টস-ফিল্ম নিয়ে এনালিটিকাল লেখা রেয়ার।খুবি কম।যা আছে সবই অপ্রোয়জনীয় ও নিম্ন মানের।উদাহারনঃ
“সাকিব ভাই আর শিশির ভাবীর জন্য কয়টা লাইক?”
১ম কমেন্ট- এদ মি
“কিউট গরুটার জন্য কয়টা লাইক??”
“খাবারের মাঝে কেন মাছির ভাঙ্গা পাখা???কেন কেন কেন???রেস্টুরেন্টের মালিক রাজাকার”
আর সবার ভিতর যেন একটা ভয়।যেকোন ইস্যুতে একটা ভয় কাজ করে।হায় হায় আমাকে তো একটা সাইড ধরতে হবে।দেখি মেজোরিটি কি বলতেছে।নিজের চিন্তা চেতনার বিকাশ নেই।তা আমাদের সমাজের কারনেই।স্বাধীন চিন্তাকে দূরে ঠেলে দিতে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সোচ্চার।কিন্তু আবার সমাজ ব্যবস্থাই নাকি কান্নায় মশগুল হয় যখন সিনেমার পোস্টার অশ্লীল হয়,খেলোয়ার রা ম্যাচ হারে,সাহিত্য এর মান খারাপ হয়ে গেলে,গানের মান খারাপ হয়ে গেলে।এত কষ্ট পাচ্ছেন কেন সমাজ দাদা?আপনি তো ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারে ভরপুর নষ্ট সমাজ সৃষ্টির জন্যেই দিনের পর দিন কেরানী গিরি করেছেন।ছেলে মেয়ে গল্পের বই পড়তে গেলে কেড়ে নিয়ে পড়ার বই ধরিয়ে দিয়েছেন।কেউ সাহিত্য রচনা করছে শুনলে হেসে ব্যাংগ করেছেন।সিনেমা বানাতে গেলে আংগুল তুলে বলেছেন “মর রে নষ্টা”।খেলোয়ার হতে গেলে বলেছেন “শুধু খেললে হবেনা তোকে পাশের বাড়ির ছেলের মতন ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে,নাহয় তো সমাজের কাছে মান-ইজ্জত থাকবেনা”।গান গাইলে নাচলে তো পারলে আগুনে পুড়িয়ে মারেন।

আমাদের দেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক দের দেখেন।হুমায়ন আহমেদ,আনিসুল হক,শাহাদুজ্জামান।সবাই বিজ্ঞানের ছাত্র।কেউ খারাপ সেটা বলছিনা।কিন্তু সাহিত্যের ছাত্রের যার লেখালেখির ইচ্ছা আছে(বিসিএস পার্টির কথা বলছিনা)তারা নিশ্চয়ই একচুল পরিমান হলেও এদের চেয়ে ভালো লিখবেন।এই সত্যটা অস্বীকার করাটা বোকামী।কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা টা এরকম যে আহমদ ছফাদের সংখ্যা নগন্য কিন্তু আনিসুল হক,হুমায়ুন আহমেদের কপিক্যাট দের সংখ্যা শয়ে শয়ে।ধন্যবাদ হে সমাজ তুমি সফল।

আমার কিছু অনুরোধ সমাজের প্রতি--
--দয়া করে হিপোক্রেসি ঝেরে ফেলুন
--আপনাদের সন্তান-সন্ততিদের ভালোবাসার-ভালোলাগার বিষয় সম্পর্কে জানুন।নাহয়,আপনি ধরে বেঁধে স্কুল-কলেজে পাশ করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এর ভর্তি যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক উপহার পাবেন কিন্তু।
--সৃজনশীলতার পৃষ্ঠপোষক হোন।এই অনেকটা পরিবেশ বাচান টাইপের।ইন্সট্যান্ট ফলাফল পাবেন না তবে নিজের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যেই এটা দরকার।একটা সুন্দর সমাজের জন্য প্রয়োজন।
আমি এখনো স্বপ্ন দেখি সারাদিন ধরে কেউ রাস্তায় দাঁড়ায় মোবাইল আপডেট না করে ঐ সময়ে সৃজনশীল কিছু করবে।
বর্তমান প্রজন্ম(নিজেরেও বলতেছি কথা গুলা।চার বছর আগের আমি এবং চার বছর পরের আমি এর জন্য এই গুলা লেখা।যদি টাইম মেশিন পেয়ে যাই )
--হিপোক্রেট হয়ো না
--কাজের সাথে ধৈর্যশীল হও।
--স্বপ্ন সবার থাকে।স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে আসল কথা।তোমার স্বপ্ন লেখক হওয়া কিন্তু তোমার বই পড়ার সময় তাহলে মারা খাই মরি যাও।দরকার নাই লেখক হওয়ার।
--হতাশা থেকে দূরে সরে পড়ো।যেভাবে পারো।কারন হতাশার মতো খারাপ ব্যাধি পৃথিবীতে নাই।আমার জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ন অংশ এভাবে হারিয়ে গিয়েছে।হতাশার দাম নেই পৃথিবীতে।তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করবেনা তুমি এমন কেন?জিজ্ঞেস করবে তুমি কি?
সহজ ভাবে বলতে গেলে--
“সবাই তোমার পরীক্ষার নাম্বার টা জানবে নাম্বার পাওয়ার কারনটা জানবেনা”।
--সস্তা এবং ছোট বিষয়ে সেন্টিমেন্টাল না হওয়া।এগুলার দাম নেই বাস্তব জগতে।
--ইন্টারনেট সেলেব্রিটীদের ২ পয়সা দাম দিবা না।তারা এক হাতে এন্টি-রেপ পোস্ট দেয় আরেক হাতে হস্তমৈথুন করে।
--নিজস্বতা সৃষ্টি কর।নিজের মতামত যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করো।অন্যকে নিজের জন্য চিন্তা করতে দিওনা।
--সৃজনশীল কিছু করার চেষ্টা করো।জীবনে একবার হলেও।
--বাস্তব জগতকে প্রায়োরিটি দাও।জীবনের অভিজ্ঞতার দাম ফেসবুক-ব্লগের পোস্ট এর তুলনায় অনেক অনেক বেশী।

যাই এখন আমিও অনেক হিপোক্রেসি করলাম ফিরে যাই বাস্তবতায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.