নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চিন্তা ভাবনার খোলা খাতা আপনাদের সবার ভালো লাগলে ভালো না লাগলে দুঃখিত

মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে

ধ্রুব অন্যকোথাও

আমাকে অমানুষ ডাকুন

ধ্রুব অন্যকোথাও › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ,আমরা সুপার ম্যান না

২৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:৩২

[link|http://www.nytimes.com/2015/08/02/education/edlife/stress-social-media-and-suicide-on-campus.html|view this link
---------------------------------------------------------------------
উপরের লিংকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেশ ভালো একটা লেখা দেওয়া আছে।আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটের সাথে পুরোপুরি না মিললেও খুব বেশি অমিল ও নেই।এইখানে একজন ভালো ছাত্রী ও আপাতঃ দৃষ্টিতে খুব সাধারন অর্থাৎ টিপিক্যাল সুন্দর সামাজিক জীবন থাকা সত্ত্বেও আত্মহত্যা করা একজন মেয়ে আর বিভিন্ন রকমের সমস্যা থাকা আরেক মেয়ের আত্মহত্যা থেকে বেচে যাওয়ার উপর আলোকপাত করা হয়েছে।এখানে তাদের সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী মানানসই করে বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র-ছাত্রীদের কথাই বলা হয়েছে।এসব দেশের সাংবাদিকদের যে জিনিসটা অসাধারন তা হল এরা অনেক গবেষনা করেই একেকটা প্রবন্ধ লিখেন।আমাদের দেশের মতন গরু ছাগল থাকলেও তা সংখ্যায় অতি নগন্য।এখন কাজের আলাপটা করি।
আমাদের দেশের সমাজ ব্যবস্থা যেহেতু ভিন্ন সেহেতু আত্মহত্যা সিন্ড্রোমের রূপটাও ভিন্ন।আমাদের দেশে আত্মহত্যা সিন্ড্রোম স্কুল থেকেই শুরু।আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা মোটামুটি বেশ আঠালো এককথায়।ছাড়াছাড়া নয় উন্নত বিশ্বের মতন।এর যেমন ভালো দিক আছে তেমন আছে অতি খারাপ সব দিক।ভালো দিক হল আপনার মানসিক সাপোর্টের প্রয়োজন কিংবা কথা বলার মানুষের প্রয়োজন হলে তার অভাব হবেনা।আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের সবাই কাউন্সিলর -_-
আর খারাপ দিক হলো আমাদের সমাজের চোখে যেসকল পেশা সম্মানজনক কিংবা যেসকল প্রতিষ্ঠানে পড়লে সমাজে ইজ্জত বাড়বে সেগুলা তে সুযোগ না পেলে মোটামুটি আজীবন এর জন্য আপনি অভিশপ্ত।লাভ নাই,নোবেল পুরষ্কার টাইপ কিছু না পাওয়া পর্যন্ত আপনি অভিশপ্তই।সমাজ আপনাকে চোখে আংগুল তুলে বারবার দেখিয়ে দিবে তুমি নিচে পড়ে গেছো তোমাকে আর উঠতে আমি দিচ্ছিনা।তুমি শেষ।সবাই যেটা শুয়ে বসে এখন পাবে তুমি সেটা সব রক্ত বিন্দু ত্যাগ করে তারপর পাবা।আর শিল্প মাধ্যমে ক্যারিয়ার গড়তে চাও তুমি???এতবড় সাহস??তুমি এগুলা করলে এ+কে পাবে?তো এ+ এর দৌড়ে টিকে থেকে সবার কাছে মুখ রক্ষা তো করা লাগবে।
তো এই এ+ না পাইলেই দেখা যায় ৫ম কিংবা ৮ম কিংবা ১০ম, কিংবা দ্বাদশ শ্রেনীর ছেলেমেয়েরা অবলীলায় এত সুন্দর সম্ভাবনাময় জীবন টা শেষ করে দেয় নিমিষেই।
ভর্তিযুদ্ধ আর এইচ এস সি পরীক্ষার সময়টা হল বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক একটা সময়।এত চাপ এত আতংকের সময় আর হতে পারেনা। সামান্য ভুলে সম্পূর্ন ভবিষ্যতই শেষ।ধরে নিই কেউ একজন এইসব কিছু উতরে বের হয়ে গেল।মোটামুটি ভালো কোথাও গেল তারপরেও করল আত্মহত্যা কিংব হয়ে গেল হতাশ।হ্যা,একটা খুব কমন কারন ভালোবাসা।আমি সেটা নিয়ে কথা বলবনা।আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষে আমার ব্যাচের একজন আত্মহত্যা করেছিল অর্থনীতি বিভাগের তার নাম ও ছিল ধ্রুব।অর্থনীতি বিভাগের এক বন্ধুকে কল দিয়েছিলাম ওই ঘটনার পরেরদিন। ওর সব বন্ধুরা সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল আমার নাম শুনে। ওই বছরেই (২০১১) তে বেশ কিছু সুইসাইড হয়েছিল।এরপরের বছর গুলোতেও চলেছিলো সুইসাইড।পরে একদিন শুনেছিলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয়েই আত্মহত্যার প্রবনতা আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি।এখন কেন এমন হয়?আমার যতটুকু মনে আছে।আমার ব্যাচের সেই ধ্রুব ছিল গরীব ঘরের ছেলে,পুরনো ব্যাচের কি কারনে যেনো ফর্ম ফিল আপ করতে পারেনি আমাদের সাথেও।আর যেহেতু পুরনো ব্যাচের ছাত্র সেহেতু নতুন দের সাথে মিলতে পারেনি আর পুরনো দের কাছে যেতেও পারেনি।সবমিলিয়ে আর পারেনি সে। তার বড় ভাই আইনে পড়তো, সেও একইভাবেই মারা গিয়েছিল এর আগের বছর।আবার আরেক বড় ভাই সেশনজটের কারনে চাকরীতে ঢুকতে না পেরে পরিবারের এবং সমাজের কাছ থেকে কথা শুনতে শুনতে দিলেন গলায় দড়ী।খুনি কে?আমাদের আর্থ-সামাজিক ও বিশ্ববিদ্যালয়।
এই আর্টিকেল টায় একটা পয়েন্ট অফ ভিউ দেওয়া হয়েছে।তা হল বন্ধু বান্ধব দের ঝা-চকচকে সোশ্যাল মিডিয়ার লাইফ।চেক-ইন,সেলফি,ডিএসএলআর এ তোলা অসাধারন সব ছবি,আবার ফাটাফাটি লাইফস্টাইল,সবার চোখে গিয়ে গিয়ে মাখিয়ে দেওয়া সুখের সব যুগল ছবি এগুলাও আমাদের আধুনিক ছাত্রসমাজের উপর ফেলছে ভালোই প্রভাব।সমাজ ও দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা যারা তুলনামুলক নিচু মানের জায়গায় থাকি কিংবা পড়ি তাদের বন্ধু বান্ধবরা আমাদের মনের ভিতর তৈরি করে দিচ্ছে তাদের সাথে নিশ্চিত হার মেনে প্রতিযোগিতা করার মনোভাব।জন্ম হয় হিনম্মন্যতার।আর তা যদি না হয়,আরো ভয়ানক ব্যাপার হল ধরুন ছোটবেলার বন্ধু ভালো জায়গায় পড়ে ছুটিতে ফিরলো কিন্তু আপনি সেই ছোটবেলার জায়গাতেই কোন একটা ইনফেরিয়র প্রতিষ্ঠানে পড়েন।তার সাথে সময় কাটাতে যাওয়া একটা ভয়ানক ব্যাপার। কারন সমাজের সবাই আপনার দিকে রাস্তার কাজের ছেলের ন্যায়,যে কিনা ভালো ছেলে টাকে এই স্বল্প সময়ে নষ্ট করে দিবে।আপনার সাথে কথা বলবে নাক সিটকে।আপনার পছন্দের মেয়েটাও আপনার সাথের বন্ধুর গায়ে পারলে ঝাপিয়ে পড়বে।জানি,এই কথা গুলা সবসময় সত্য নয়।কিন্তু সমাজটা ছোট থেকেই আমাদের সত্ত্বা এমন ভাবে ধ্বংস করেছে যে আমরা হিনমন্যতায় ভুগতে বাধ্য,এমনকি হোক সেটা কোন কারন ছাড়াই।
সমাজের এই সত্ত্বা ধ্বংস করার আরেকটা সাইড এফেক্ট হলো আমরা বুঝি না আমার নিজের কি পছন্দ কিংবা আমরা অতটা স্বাধীনচেতা হই না।যার ফলে বছরের পর বছর মনের বিরূদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করি এমনকি অনেকে রেজাল্ট ও ভালো করে।আর যারা পড়তে পড়তে ভালোবেসে ফেলে নিজের সাব্জেক্টে তারা আসলে অতি ভাগ্যবান।কিন্তু এমন ও অনেকে আছে যারা সাব্জেক্টের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়ে হতাশ কিংবা আত্মহত্যা করেছে।আবার সেই সাথে যোগ হয়েছে চাকরীর বাজারের দৌড়।কত সাব্জেক্ট আছে যেগুলোতে পড়ে কাংখিত লক্ষ্য আর অর্জন করা সম্ভব হয় না।তখন আবারো প্লেগের মতন ধেয়ে আসে হতাশা কিংবা মৃত্যু।
সবশেষে এটাই বলি,আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ,আমরা সুপার ম্যান না।আমাদের কে এভাবে বলবেন না "আরে ছেলে বড় হইছে নিজের সব সমস্যা নিজে ঠিক করবে"।আবার আমাদেরও উচিত না ভাবা, "আরে বড় হই গেছি এগুলা কার কাছে বলবো?এর চেয়ে এগুলা চাপা দিয়ে মেকি একটা জীবন যাপন করি,সেই ভালো" অথবা যাই ভাইয়ের সাথে গিয়া মাল খাই নাহয় গাজা খাই।আমাদের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করাটা খুব বেশি জরুরি হয়ে পড়ছে।অতি জরুরি।ছাত্র-ছাত্রীদের লাশগুলো আর সস্তা না করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.