নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চিন্তা ভাবনার খোলা খাতা আপনাদের সবার ভালো লাগলে ভালো না লাগলে দুঃখিত

মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে

ধ্রুব অন্যকোথাও

আমাকে অমানুষ ডাকুন

ধ্রুব অন্যকোথাও › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্দা ৪র্থ ও শেষ কিস্তি(ডার্ক কমেডি)

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৩

পূর্বের তিন কিস্তি
১। http://www.istishon.com/node/9639
২। http://www.istishon.com/node/11176
৩। http://istishon.com/node/13499
[এক মাস ও ৭ দিন পর]
ঘরটা ছোট।চিপা টাইপের।সারা ঘরে কেমন ভ্যাপসা টাইপের গরম। আবার ঘরের বাতাস জুড়ে কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ।মল-মুত্র-ঘাম মিশ্রিত প্রকট একটা দুর্গন্ধ।নাক উলটে যাচ্ছে শরীফের।সে একবার উপরে আরেকবার নিচে আরেকবার ডানে আরেকবার বামে তাকাচ্ছে।এরপর আবার নিচের দিকে তাকিয়ে এক বৃদ্ধ তেলাপোকা চলাচল লক্ষ করছে।হাটার ধরন টা দেখে বলছে।তেলাপোকাটা আমাদের দেশের পেডোফেলিক বুড়াদের মতন। ওই যে মোড়ে বইসা থেকে কম বয়স্ক মেয়েদের কাপড়ের উপর দিয়ে ভাজ গুলা খেয়াল করতে থাকে ওই টাইপের বুড়োদের মতন হাটা।তেলাপোকাটা আরেকটু সামনে গিয়ে আরেকটা মরা তেলাপোকার উপর হামলে পড়ল এবং তাকে কামড়ে খাওয়া শুরু করল।শরীফ অবাক হলো না।বাংলাদেশী তেলাপোকা বাংলাদেশী আচরন করতেছে এতে অবাক হবার কি আছে?

ঘরটাতে মানুষ ঢুকল এইবার।দুইজন একইসাথে আসলো।একজন সাদা পোশাক পড়া,আরেকজন একটা লাল-কালো শার্ট পড়ে ঢুকলো।
-আপনার নাম শরীফ?
-জী
-কমেডিয়ানের ক্লাস মেট?
-হুম।
-ও যে এভাবে আত্মহত্যা করবে এটা আগে বলছিল?
-জী মাইক দিয়ে এনাউন্স করছিল।ডিপার্টমেন্টের ছাদে উঠে।
শরীফ এই কথা বলার পর গোয়েন্দা দুইজন নিজেদের দিকে তাকালো।ও আচ্ছা পাঠক আমি মনে হয় বলিনি আমি আত্মহত্যা করেছি।এখনো অবশ্য মরতে পারিনি।হাসপাতালে শুইয়া আছি।কি যে উল্টাপাল্ট হইলো বুঝে উঠতে পারছিনা।বেচে থাকার কথা মোটেও না।কি থেকে যে কি হইল বুঝতে পারছিনা।এতক্ষন ধ্রুব আপনাদের কে স্রেফ থানার ভিতরে জিজ্ঞাসাবাদের কক্ষের ভিতর থেকে ধারা বিবরনী দিয়ে আসছে।শরীফ ছেলেটা আমার ক্লাসমেট ওইদিন আমার লাস্ট শো তে উপস্থিত ছিল।এজন্য ওরে উইটনেস হিসাবে প্রশ্ন করবার জন্য নিয়ে আসছে।তেমন কিছু না।
পুলিশের লোক দুইজন তাকিয়ে থাকল শরীফের দিকে কিছুক্ষন,বুঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে ব্যাপার টা।শরীফ ওদেরকে বোকা বানাচ্ছে কি না বুঝার চেষ্টা করছে।
-আপনি কি আমাদের বোকা বানাচ্ছেন?
-না
-আপনার চোখ দেখি
-দেখেন
-[ঠাস করে চড় মেরে]শালা গাজাটি।এখানে ঢুকার আগেও গাছ খাইয়া ঢুকছোস,হারামজাদা।
-[নিজেকে সামলে নিয়ে]এতক্ষনে পুলিশের মতন আচরন করতেছেন।বেতন ভাতা আন্দোলনের কথা মনে পড়ে গেল।লাঠিপেটা খাইছিলাম।বেশি অস্থির ছিলো।সেসময় ডিএসএলআর আর ফেসবুকে সেলফির প্রচলন একেবারেই ছিলো না।সো আসলে খেত একটা আন্দোলন ছিল সেইটা।এখন তো বাংলার ঘরে ঘরে গাই ফক্স।ভি ফর ভেনডেটা সিনেমা সবার মুখস্ত কিন্তু কেউ অরিজিনাল রাইটার এলান মুর রে কেউ চেনার দরকার মনে করে না।সবাই কুল পিপল।আন্দোলন মানেই সাদা কালো প্রো-পিক, ব্যানার নিয়া পিছনে ঘোলা ঘোলা করা ছবি আর সেলফি।এই ছবি গুলাই বিভিন্ন ফটোগ্রাফি গ্রুপে দিয়া লাইক কুড়ানো এই না হল বর্তমান বাংগালির আন্দোলন।শাহবাগ থেকেই তো দেখতেছি।
-[ঠাস করে চড় মারার আওয়াজ] হালায় আসলেই টাল।প্রশ্নের উত্তর দে।
-[রাগত স্বরে] বললাম তো।বিসিএস পইড়া আইছেন কথা বুঝেন না।
-[ঠান্ডা গলায়]সিরিয়াস?
-হা।পাবলিসিটি স্টান্ট হিসাবে এই কাম টা সে করছে।ডিপার্টমেন্টের ছাদে উইঠা বলতেছিল “প্রানপ্রিয় বন্ধু বান্ধবী ও সম্মানিত শিক্ষক বৃন্দ আমি আগামী সেপ্টেম্বর ১৩ তারিখ সুইসাইড করবো বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে সবাই দেখতে আসবেন কিন্ত।নাস্তার প্যাকেটের ব্যবস্থা থাকবে”।ওর সুইসাডের দিনে এতো ভিড় কেন হইছিলো বুঝতেছেন না?বিসিএস কইরা পুলিশ হইছেন এতটুকুও কি মাথায় নাই?নাকি বাপে গাছ থেকে পাক বাহিনীর দিকে ঢিল মাইরা মুক্তিযোদ্ধার যে সার্টিফিকেট টা পাইছিলো সেইডা বেচে চাকরী নিছেন?
এতক্ষন সাদা পোশাক পড়া অফিসার চুপ করে ছিলেন।উনি উঠে দাড়ালেন।শরীফরে কলার ধরে উঠিয়ে ফেললেন। -[ফিসফিস করে] কুত্তার বাচ্চা তোরে সেবা করতাছি নূন্যতম টাকায় ভাল্লাগতেসেনা না?বিসিএস এর কথা যে কইলি জানোস তো তোকে ইচ্ছা করলেই র‍্যাবের কাছে দিয়া কমু হালায় জংগী।দাড়িও আছে।ক্রসফায়ার মারো।
-[ভীত স্বরে]না মানে কেন করবেন?এখন কি আর ক্রসফায়ার আছে?
-ক্রসফায়ার বানামু তোর জন্য,খানকা হালা।কথা কম কইয়া প্রশ্নের উত্তর দে।
শরীফ বন্ধু আমার ফার্স্ট ইয়ার থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কিন্তু প্রতি সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনের আগের রাতে গাজার আসর বসায়।আর কোথাও বেড়াতে গেলে ওর কাছেই মদের বোতল থাকে।অদ্ভুত এক চরিত্র তাই না?অবাক হওয়ার কিছু নাই।এরকম শয়ে শয়ে ছেলেমেয়ে দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি।ব্যাপার না।আমার বাবা বলেছিলেন একবার “ইউনিভার্সিটি শব্দটা ইউনিভার্সাল এর সাথে সম্পর্কিত।এইটা একটা ইউনিভার্সাল জায়গা।সব ধরনের চিড়িয়া আছে”। আমি কথাটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।আমি নিজেই তো এর মাঝে একজন তাই না?মানে কয়জন পারে নিজের সুইসাইডের ঘোষনা দিতে,তাই না।এইরে,আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে শরীফরে তো ছাইড়া দিলো। কি করবো লেখক হালায় ঘুম যাচ্ছে,আর কি এক ন্যার‍্যাটিভ ধরছে।ঘোড়ার ডিম
-এই ধ্রুব,এই হালা মোটা উঠ।
-আরে সারা রাত ঘুমাই নাই।
-খালি এক্সকিউজ তোর।
-জীবন অনেক কঠিন রে।
-*ক ইউ এন্ড *ক ইউর জীবন।এগুলা কেউ *দে না।পাঠক রা বইসা আছে,উঠ শালা।
যাই হোক,এইবার রুমে ঢুকল আমার ক্লাসমেট প্রিয়তি।হ্যা,ওই যে বান্ধবী।
পুলিশের লোক গুলা তার দিকে তাকালো।ইশারা দিলো বসতে।
-বসেন
-ধন্যবাদ।
-কমেডিয়ান নাকি আপনার বেশ কাছের বন্ধু?
-বন্ধু,বলা ঠিক না।ক্লাসমেট।
-ওর ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে কিন্তু আপনি আছেন।
-হ্যা,ওইটাতো গ্রুপ ছবি।
-আপনার প্রো-পিক ও তো ওর তুলে দেওয়া।
-হ্যা,তো?ওর ক্যামেরা আছে তুলে দিবেনা?আর আমাদের তুলে দিলে তো ওর নিজেরি এক্সপোজার তাই না?
আমার প্রো-পিক লাইক তো দেখেছেন.২৫০+
-হুম।সময় আসলেই বদলে গিয়েছে।বন্ধুত্ব এত সহজে আর হয় না,তাই না?
-অবশ্যি।জীবনে আগাতে হলে ভালো এবং কাজের বন্ধু দরকার।ও না পারতো প্রোগ্রামিং,না পারে ম্যাটল্যাব,না কিছু।বন্ধুত্ব তো এসবের উপর ভিত্তি করেই হবে তাই না?সে শুধু আছে তার সিনেমা,কার্টুন আর বই নিয়ে।ক্যামেরাও পাইছে কি একটা।মাঝে মাঝে দুই একটা ভালো ছবি তুলে তাও লাইক-টাইক কিছু পায় না।ওরে কাছ থেকে মাঝে মাঝে দুই একটা সাহায্য পাইছি কারন বেটায় থাকে ক্যাম্পাসের বাসায়।নাহয় আর কি।জি আর ই একটা দিছে কিন্তু তাও বেশি পায় নাই।
-ইন্টারেস্টিং। আমি আসলেই বুড়ো হয়ে গিয়েছি।ওর সুইসাইডের দিন আপনি কই ছিলেন?
-আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে।অবশ্য সবাই জানে ও আমার কাজিন।কিন্তু আসলে আমার বয়ফ্রেন্ড।
-আচ্ছা
-আপনারা কি দেখেছিলেন? কি হয়েছিলো বলতে পারবেন?
একটু ফেইড আউট করি।প্রিয়তি এখন টেকনিক্যাল বিবরন দিবে আসলে কি হয়েছিলো তার।আমি শিওর নাস্তা না থাকলে ও জীবনেও আসতো না।তার ডেটিং ও হয়ে গেলো।কাহিনী টা করেছিলাম বিকালে তো।আশেপাশে সব কাপল।কেউ লুকিয়ে চুমু চুরি করছিলো।কেউ হাত ধরে বসেছিলো।আবার কেউ কেউ মডার্ণ জুটি।তারা পাশাপাশি বসে থেকে দুইজনেই মোবাইলে কিংবা ল্যাপটপে হিজিবিজি টেপাটেপি করে।এটাই প্রেম-এটাই ভালোবাসা।বাইনারী ডিজিট আর সার্কিটের বেড়াজালে আটকা ভালোবাসা।
প্রিয়তি উঠে গেল।এরপর আমারই এক শিক্ষক ঘরে ঢুকলেন।মানুষটা শিক্ষক হিসেবে অসাধারন।কিন্তু উনার মাঝে অন্যরকম কিছু ব্যাপার আছে।শরীফের সাথে তার খাতির টা খুব বেশি।দুইজনেই একসাথে ঝুপড়িতে বসে ধোয়া টানেন। এখন গাজা নাকি সিগ্রেট কে জানে?এই স্যারের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে শুরু করে ক্লাস পর্যন্ত খুব আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব দেখতেও বেশ হ্যান্ডসাম।আই মিন সামাজিক স্ট্যান্ডার্ড টা খুব সুন্দর ভাবে উনি মিলাতে পেরেছেন।ভদ্রলোকের বয়স ৩৫+ ।বাইরে থেকে সবে এম এস এবং পি এইচ ডি করে ফিরেছেন।এখনো অবিবাহিত।এই লোক কাজ করেছেন অসাধারন কিছু জিনিস নিয়ে কিন্তু তার পরিচয় সারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সাথে বিকাল সন্ধ্যা রাত পেরিয়ে আড্ডা ঘুরাঘুরির জন্য।প্রেমের কাহিনীও কম নাই ভদ্রলোকের।গত এক দুই মাস ধরে এই এক ছাত্রীর সাথে তাকে দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায়।শিক্ষক পিতার মতন এখন কন্যাকে নিয়ে ঘুরতেই পারেন নাকি?

-আমাকে আপনারা কেন ডেকেছেন?জানতে পারি?
-স্যার,বসেন।
-[বসলেন]বলুন।
-কমেডিয়ান আপনার ছাত্র?
-হ্যা।
-তার সুইসাইডের সময় আপনি তো ওখানে ছিলেন তাই না?
-হ্যা,ছিলাম। হঠাত পাশের জন প্রশ্নকর্তাকে কানে কানে কি জানি বললেন।
প্রশ্নকর্তার চোখ – মুখ শক্ত হয়ে গেল।
-আপনাকেই তাহলে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল?
-মানে?
-শিক্ষক হয়ে ছাত্রীর সাথে এগুলা করার কি মানে?
-হা হা হা।
-[অবাক হয়ে] হাসছেন কেন?লজ্জা হচ্ছেনা?শিক্ষক তো পিতার মতন তাই না?দিনে করেন পিতার মতন স্নেহ আর রাতে চলে আদর তাই না?
-টেবিলের ওপ্রান্তে বসে আমাকে জাজ করতে পারার মজাটাই আলাদা তাই না?ঘুষের টাকা গুলা দিয়েই তো টিসোট এর ঘড়িটা কিনেছেন।তাই না?আমার তো সেই সুযোগ নেই।আমি এতিম,বড় হয়েছি চাচার বাসায়।টিউশনি যা করছি তা দিয়ে করছি ডিগ্রি।বেতনের যা অবস্থা বিয়ে করার কি অবস্থা আছে?আমি তো শিক্ষক,তাও বিশ্ববিদ্যালয়ের।সামাজিক ইজ্জত মেইনটেইন করেই তো বিয়েটা করা লাগবে তাই না?
-চুপ করেন।খুব তো ইজ্জত মেইন্টেইন করলেন ছাত্রীর সাথে।
-যা করেছি,যতটুকুই করেছি তার একটুও জোর করে করিনি।
-আপনার নিজের বিবেক এত সস্তা?
-আমিও মানুষ।চাওয়া-পাওয়া তো আছে তাই না?কামের কাছে সবাই বশবর্তী।
-হ্যা,সেটাই।আমরা সবাই ভাদ্র মাসের রাস্তার কুত্তা।
আমার স্যার হা করে তাকিয়ে থাকলেন।অফিসার তাকে বললেন “যান,এখন।অনেক ধন্যবাদ”।

আমরা এখন কাজের কথায় আসি।আসলে ধ্রুব খুব চাচ্ছিল ডিটেকটিভ থ্রিলার লিখতে।তাই ওকে এতটা জায়গা দিলাম।আপনাদের সাথে শেষ দেখা হয়েছিল ১ মাসের একটু বেশিদিন আগে সাগরের বুকে ঝাপ দেওয়ার আগে।

সাগর তীরে স্বপ্নের মতন সারাটা দিন কাটানোর পর থেকে শুরু হয় দুঃস্বপ্ন।হ্যা জেগে থেকে থেকে দেখা সব দুঃস্বপ্ন।শুরুটা হয় বাসার পথে রওনা দেওয়ার সাথে সাথে।হাতে মোবাইলটা নেই।অন করি।প্রায় ৪০ টা এসএমএস মা-বোনের।সাথে সাথে কল দিলাম মা কে।মা ফোন ধরে বলল
-তুই কই?
-গাড়িতে।
-তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।

বিল্ডিং এর সামনে অনেক মানুষ।অর্ধবৃত্তাকার করে দাঁড়িয়ে আছে সবাই।একটু দুরে।সোডিয়াম সোনালি আলোতে লাগছে সবকিছু বিভ্রমের মতন।অবাস্তব জগতের সব চরিত্র যেন।ম্যাট্রিক্স এর জগতে সবাই সবুজাভ আমার এই জগতের সবাই হলুদাভ।কাছে গিয়ে দেখি রাস্তায় রক্ত লেগে আছে।দৌড়ে গেলাম।পা ভিজে গেছে লাল রক্তে।আমার মা এক কোনায় বসে আছে।পংগু বাবা চুপ করে হুইল চেয়ার বসে সব দেখছে।আমি কাছে গিয়ে দেখি আমার বোনের লাশ টা পড়ে আছে।শুধু একটা দিক দেখা যাচ্ছে মুখটার।চমতকার মুখ টার একটা দিক দেখা যাচ্ছে অপর পাশ টা পিচ ঢালা রাস্তায় থেতলে লেগে আছে।আর্ট ফিল্মের ডিরেক্টর দের স্বপ্নের সিন।আশেপাশে তাকালাম।সবাই বিভিন্ন কথা বলছে।সবই স্বান্তনা সূচক।যে আন্টি গতকাল নিজের মেয়েকে বলছিলেন ওই আপুর সাথে কথা বলবিনা আজ তার চোখেও পানি।আরেক আন্টি আমার মাকে জড়ায় ধরে আছেন সেই আন্টিই তিন দিন আগে বলেছিলেন “টাকা দিয়ে মাগী পালতেছে”।সাথে আরেক আন্টি উনিও স্বান্তনা দিচ্ছেন সেই আন্টিও পরশুদিন বলছিলেন “ক্যাম্পাসের ইতিহাসের সবচে খারাপ মেয়ে ওই বাড়ির মেয়েটা।” আরেক আন্টি লাশের পাশে বসে আছেন তিনি বলেছিলেন “হেহ,শুধু পড়ালেখা নিয়ে থাকলে মেয়েকে মানুষ করবে কে?আর পড়ালেখায় ভালো হইলে কি হয় নাকি?চরিত্র ঠিক হতে হবে”।একটা মৃত্যুই যথেষ্ট সমাজের হিপোক্রিসির পর্দা ছিড়ে আনতে।

উপরে তাকালাম।ছয় তলার ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে আমার বোনটা।ভালো এথলিট ছিলো।হাই জাম্প-লং জাম্পে রেগুলার চ্যাম্পিওন কিন্তু এক বিল্ডিং এর ছাদ থেকে আরেক বিল্ডিং এর ছাদে যাওয়া কি আর এতই সহজ?কোলের ভিতর মাথাটা নিলাম।আর উপরে তাকালাম।নাহ,সিনেমাটিক ক্লাইম্যাক্সের বৃষ্টি নামেনি।ঈশ্বর যেন প্রহসন ভরা কন্ঠে বলছেন “তোর মতন পরাজিত দের স্বপ্ন গুলা এভাবেই বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবে তোর বোনের মতন।তোর জগত এভাবেই ধীরে ধীরে রক্তাক্ত হয়ে তোর বোনের মাথার খুলির মতন চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে।তোর বাচার ইচ্ছা তোর বোনের মতন মুখ থেতলে রাস্তায় পড়ে থাকবে।এটাই তোর নিয়তি।এভাবেই তোর জগতের সবাই মারা যাবে,চলে যাবে।তুই চেয়ে থাকবি আকাশে”।
ঈশ্বর fx-991es মডেলের ক্যালকুলেটর ইউজ করেন এবং মনে হয় গোল্ডেন এ+ পেয়েছেন।তার হিসাবে ভুল হলো না।আমার বাবা মারা গেলেন এক সপ্তাহ পর।আর মা এর জায়গা হল সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ডে ক্রনিক ডিপ্রেসনের কারনে।


আবার ফিরে আসি বর্তমানে।নাহ, আরেকটু অতীতে যাই।একেবারে বর্তমান না।আমার সুইসাইডের দিনে ফিরে যাই।একটু পরেই স্টেজে উঠবো।স্টেজ আর কি,একটা ছোট ইট বাধানো উচু জায়গা।আশে পাশে দেখি মানুষের ভীড় জমে গিয়েছে।অদ্ভুত ব্যাপার।এত মানুষ ক্যাম্পাসে কখনো একসাথে থাকে না।সবাই মৃত্যুকে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ দেখতে চায়,তাই না?মানুষ অজানার প্রতি প্রচন্ড আকর্ষন বোধ করে স্বাভাবিক নিয়মেই আর এটা তো মৃত্যু। মানবজীবনের সবচে স্বাভাবিক কিন্তু সবচে রহস্যময় ঘটনা।
আমি স্টেজের দিকে আগাচ্ছি।তোজো সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়ায়।
-কিরে?কি ব্যাপার?
-কি?
-সুইসাইড করবি?
-করলে?
-সুইসাইড করলে তোকে খুন করে ফেলব।
-হাহাহা
-আরে বেটা শোন সুইসাইড করলে তো তাইলে লাথি খাইলি।মানুষ কি মনে রাখবে তোরে মনে হয়?রুহী দুই দিন চোখের পানি ফেলবে?তার আগেই নতুন জুটাবে।আর আমি তো তোরে কবর দিয়ে এসেই পর্ন দেখবো।
সুইসাইডের শখ থাকলে করলে কর ৭০-৮০ বছর বয়সে।কোনদিক কোন সমস্যা নাই।উল্টা আর বোঝা হয়ে থাকবি না কারোর।আর সমাজে ছোট হওয়া লাগবে না তোর নাতি-পুতি আর পোলাপানের।নর্মাল মৃত্যু হিসাবে চালাই দিতে পারবে।
-হাহাহা।আসলে সুইসাইড বলতে নিজের শেষ পার্ফরমেন্স বুঝাইছি।নিজের একটা অংশ কে আজ খুন করবো।এটাতো আমার জীবনের একটা অংশ তাই না?
-আচ্ছা,যা।শেষ করে আয়।ঘুরতে যামু।
-অবশ্যি।
আবারো মিথ্যা বলা।জীবনে অসংখ্যবার মিথ্যা বলা হয়েছে।বিশেষ করে কেমন আছো এর উত্তরে জী ভালো।এই কথাটা।তবে তেমন দহন করেনি কথাটা।দহন করেছে ক্লাস সেভেনে ম্যাথে ৩৩ পাওয়ার পর মিথ্যা বলা,দহন করেছে যখন বলেছি কলেজে রেজাল্ট দেয় নি অথচ ফেল করেই বসে আছি।ভয়ংকর সব রাত ছিল।অনুশোচনার মতন ভয়াবহ অনুভূতি মানবজীবনে আর নেই।কষ্ট হচ্ছে তোজো কে মিথ্যা বলতে।মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম ভাবলাম বলব আমার মোবাইল প্যান্টের পকেটে বিশাল একটা ছুরি আছে।সেটা দিয়ে আত্মহনন করবো।কিছু না বলে উঠে গেলাম স্টেজে।জীবনে টুইস্টের দরকার আছে।যত খারাপই হোক না কেন।
স্টেজে উঠে তাকালাম চারিদিকে।মানুষ গুলো আজকে আমাকে খেয়াল করছে।বিকালে নরম আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।সবার চুলে সুন্দর মিষ্টি রোদের আভা।মন টা ভালো হয়ে গেল।জীবনের শেষ দিনে এমন একটা চমৎকার দৃশ্য দেখবো ভাবিনি।
মাইকটা হাতে নিয়ে কথা শুরু করলাম
“প্রথমেই জিজ্ঞেস করি নাস্তার প্যাকেট পেয়েছেন তো সবাই?একটু দেখি?বেশ বেশ সবার হাতেই আছে।আমি তো বেসিকালি এতিম এই মূহুর্তে তো আমার জন্য মেজবান আর কে দিবে?তাই আজকে নাস্তাটা দিয়ে দিলাম।নিজ গুনে ক্ষমা করে দিবেন।যারা মেজবানের তারিখ জানতে এসেছেন তারা চলে যেতে পারেন”।
সবাই হেসে দিলো।আবার শুরু করলাম

“আমাদের মানবজীবন না বলে আমি বলি আমাদের সামাজিক জীবনের বিভিন্ন লেয়ার আছে।প্রতিটা পর্দা দিয়ে ঢাকা। একটা একটা করে পর্দা দিয়ে ঢাকা।আমার এই ২৫ বছরের জীবনে বুঝ হওয়ার পর থেকেই আমি এই পর্দা সরিয়ে সরিয়ে প্রতিটা লেয়ার কে ভালো মতন ছুয়ে দেখে আসতে চেয়েছি।ছুয়ে এসে সেটা নিয়ে আমার চিন্তা টা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।আপনারাও শুনেছেন এই পর্দার আড়ালের গল্প গুলো আমার মুখ থেকে আমার মতন করে এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ”।
করতালির আওয়াজে চারিদিক মুখরিত।আমার সারা শরীরের লোম সব খাড়া হয়ে উঠলো হ্যা আমিও পৃথিবীর সকল পার্ফরমারদের মতন করতালির মাদকতা পূর্ন শব্দের প্রতি আসক্ত।

“ধন্যবাদ।পর্দা গুলো কি কি হতে পারে ভেবে দেখেছেন কি?আমি আপনাদের সাথে যেমন আমি কি আমার ঘরে একি রকম?আমার বাসার মানুষের প্রতি আমি যেমন আমি কি আপনাদের সাথে কিংবা আমার বন্ধু বা বান্ধবীদের সাথে একই রকম?না,মোটেও না।জীবনের প্রতিটা অংশেই ভারী ভারী পর্দা বসানো আমার,আপনাদের সবার।সমাজে পর্দা গুলো আমাদের বসানো।বিভিন্ন হিপোক্রেসী গুলোকে দূরে ঠেলার লুকিয়ে রাখার একমাত্র অবলম্বন।পর্দা কিছু ক্ষেত্রে নিত্য প্রয়োজনীয়।আপনার অন্তরংগতা তো আর কারোর সামনে আনা টা ঠিক না তাই না?তাহলে কি আর সেটার বিশেষত্ব কিছু থাকবে?জ্বী আমি পিছনের সারির ভাইয়া-আপুদের বলতেছি।আমরা সবাই দেখতেছি কি করছেন”।

পিছন থেকে দুই ছেলেমেয়ে উঠে কাপড় ঠিক করে গালি দিয়ে মধ্যাঙ্গুলী প্রদর্শন করে চলে গেল।
“ধন্যবাদ আসার জন্য।আমাদের সবার খুব ভালো লাগছে।অন্তরংগতার হিসাব যখন এলোই আসল পয়েন্টে চলে আসি আপনারা সবাই দেশি এমেচার পর্ন দেখার সুযোগ পেলে নিশ্চয় ছাড়েন না।আরে ভাইয়া আপুরা মাথা নেড়ে কি হবে।ওই পাশের রুমের আপুর স্ক্যান্ডাল বের হইছে চল দেখি একবার,আবার ডিপার্টমেন্টের বড় আপুর স্ক্যান্ডাল বের হইছে চল দেখি,ওই ক্লাসমেটের স্ক্যান্ডাল বের হইছে চল দেখি।তারপর শুরু হয় দেখা দেখি,ছড়াছড়ি।প্যাথেটিক একটা গল্প শুনেছিলাম। এক ছেলে তার বাড়িতে যাচ্ছে।শুধুই গার্লফ্রেন্ডের সাথে সময় কাটাবে।ফোন করে দেখা করতে বলেছে।এক জুনিয়রের সাথে দেখা বাসের মাঝে।পাশাপাশি বসাও হল।তার গার্লফ্রেন্ড ওদেরই ফ্রেন্ড।জুনিয়র জানেনা এই সম্পর্কের কথা।বাসে একথা-ওকথা করতে করতে হঠাত জুনিয়র বলে উঠল এলাকার এক মেয়ের ওদেরই ক্লাসের একজনের স্ক্যান্ডাল বের হয়েছে।দেখি দেখি করে উঠল আমাদের গল্পের নায়ক।দি কেয়ারিং বয়ফ্রেন্ড।দেখে তার গার্লফ্রেন্ডের ই স্ক্যান্ডাল আরেকটা ছেলের সাথে”।

সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে।আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখি তোজো নেই।দূরে দাঁড়িয়ে পেশাবের মতন স্বাদের ক্যাম্পাসের টংয়ের চা আর নিকোটিনের শলাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।এটাই সুযোগ।
“আমার জীবনের অবস্থা একটু আগে বলা গল্পের কুশীলব দের চেয়ে ভয়ংকর।আমার বোন মারা গিয়েছেন,বাবাও মারা গিয়েছেন।আমার বোন স্রেফ সমাজের ভয়েই ছাদ থেকে লংজাম্প এর প্র্যাকটিস করছেন।তাও ওল্ড স্টাইল সমাজের ভয় না,না বাংলা সিনেমা এবং হাজারো গল্প উপন্যাসের মতন পেট বাধায় নাই সে।বের হয়েছিল সেক্স স্ক্যান্ডাল।সকালে বের হওয়ার পথে এক ছেলেকে বিয়ে করার জন্য কান্না আর রাতে দেখি সেই ছেলেই তার লাশের কারন।আহা, এটাই মনে হয় আমৃত্যু ভালোবাসা।বাবা আগে থেকেই অসুস্থ আদরের মেয়ের শোকে গেলেন মারা।আর মা হলেন ডিপ্রেসড।এটাই স্বাভাবিক তাই না?মেধাবী মেয়ে আর স্বামী যখন আমার মতন অকাল কুষ্মান্ড কে রেখে মারা যায় তখন আমি নিজেও ডিপ্রেসড হবো।গুড চয়েস।মা তুমি এখন নিজের দিকে তাকাও,নিজেকে সময় দাও।এটাই সময়।আমার প্রেমিকাও আমার বাবা এবং মা এর মারা যাওয়া ও ডিপ্রেসড হওয়ার সিদ্ধান্তের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।এরকম মানুষের সাথে থাকার চেয়ে মরন ভালো” মোবাইল খুলে মেসেজ পড়ে উঠলাম।

সবাই এখনো হতবাক।আমি পকেট থেকে ছুরি বের করলাম।

“আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী,আমরা পরিবারের বড় ছেলে-মেয়ে কিংবা একমাত্র ছেলে-মেয়ে।না,আমাদের অনুভূতি ও স্বপ্নের প্রকাশের সেই অধিকার নেই।আমরা পৃথিবীর মাটির তৈরি সুপারম্যান,নিজের অনুভুতিগুলো বড় ভারী পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখে সমাজ স্বীকৃত মানুষ হয়ে উঠার দায়িত্ব পালন করে যাওয়াই কাজ আমাদের।আমার বাবা মৃত,আমার মা ডিপ্রেসড আমি অনুভূতি দেখানোর রাইট রাখিনা।আমাদের বাবারা গরীব,আমাদের পরিবারের অর্থসংকট,আমাদের বোনদের বিয়ে হচ্ছেনা আমি চাকরী না পাওয়া পর্যন্ত,বড় বোন টিউশনির টাকা দিয়ে নিজে না খেয়ে ছোট ভাই বোনদের জামা কাপড় কিনলে পরে হবে তাদের ঈদ।এর মাঝেই আমরা নিজের স্বপ্ন কবর দিয়ে সবার স্বপ্ন লালন করি”।

গুঞ্জন শুরু হল।সবাই তাকিয়ে আমার দিকে।আমি মাটিতে বসে পড়লাম।হাতে ছুরিটা গলার কাছে আনলাম।দূর থেকে তোজো ছুটে আসছে।
“কিন্তু এত সুপারম্যানের ভিতর থেকে আমি মানুষ হতে পারলাম না।পরাজয় মেনে নিলাম।আমি এই ভানের জীবন আর চাইনা।ক্ষমা করো সবাই”।

গলায় ছুরি চালিয়ে দিলাম।লুটিয়ে পড়লাম।সব ঝাপসা হয়ে আসছে।এত আলো কেন?সর্গে অনেক আলো শুনেছিলাম।কিন্তু আমি সর্গে গেলে বুঝতে হবে ঈশ্বর যে বছর এ+ পেয়েছেন সেই বছর প্রশ্ন ফাস হয়েছিল...



উপসংহার

এই যে পাঠকবৃন্দ,হতাশ হওয়ার কিছু নাই।আমি লেখক ধ্রুব বলছিলাম।আপনাদের হিরো বেচে আছে।আমি অনেক বেশি দুর্বল ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন মানুষ কিন্তু আমার চরিত্ররা আমার থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
-হইছে ধ্রুব আর ভাব ধরিস না।
-অউ,তুমি ঘুম থেকে উঠছো?
-হা,পাঠকদের তুমি কি বলতেছো?
-না তেমন কিছু না।
-যাও মিয়া ভাগো,নিজের কাম করো।আর পারলে রুহী রে গল্পে নিয়ে আসো।
-আচ্ছা আচ্ছা।

আমি চোখ খুলে দেখি মা দাঁড়িয়ে।সেই সাথে আশেপাশে সব পরিচিত মুখ।আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে রুহী।ঢুকবে কি ঢুকবে না ইতস্তত করছে।
আমি বললাম “সবাইকে ধন্যবাদ,আমার জন্য এতটুকু করায়।তবে আমাকে ৫ মিনিট ওই মেয়েটার সাথে কথা বলতে দাও সবাই প্লিজ”।জাস্ট ৫ মিনিট একা”।
মা বললেন “কিন্তু তুই তো মাত্র উঠলি।একটু রেস্ট নে”।
-না।ওর সাথে কথা বলা টা জরুরি।
তোজো বুঝল ব্যাপারটা।সে আমার মা কে সরিয়ে নিয়ে গেল।রুহী ঢোকার সাথে সাথে সবাই চলে গেল।রুহী চেয়ার টেনে এনে বসল।
-কেমন আছো?
-তোমার সেন্স আজীবন এরকম থাকবে।আমার এই অবস্থা আর তুমি জিজ্ঞেস করছো কেমন আছি?আচ্ছা বলি।হ্যা রুহী আমি ভালো আছি।এখন আমি গান গাবো সারাদিন।কারন আমি ছুরি দিয়ে গলাটা কেটে খুলে ফেলেছি।
-এভাবে কথা বলছো কেন?
-তো কিভাবে বলবো।বল?
-বেয়াদবি করতেছো কিন্তু তুমি এখন।
-আচ্ছা রাণী রুহীজাবেথ বলেন কি বলবেন।
-আমি আসার সময় ভাবছিলাম তোমার সাথে সব শেষ করে দিয়ে তারপর বের হবো হাসপাতাল থেকে।
-তাই নাকি?কেন?ও আচ্ছা বুঝছি
-কি?
-হেহেহে।আমি এতটাই ওয়ার্থলেস যে সুইসাইড টাও ঠিক মতন করতে পারিনা।তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা কত সুন্দর আর স্মার্ট সুইসাইড করতে পারে কিন্তু আমি পারলাম না এজন্য?
চোখ মুখ সব শক্ত হয়ে গেল রুহীর।

-তুমি সুইসাইড করছো আমার পরীক্ষার সময়।আর সময় পেলেনা?আমার ক্যারিয়ার তুমি শেষ করে দিচ্ছো,আমার লাইফ শেষ করে দিচ্ছো ধীরে ধীরে এটা বুঝো না?আমার জন্য কত ভালো ভালো প্রস্তাব আসতেছে আর তুমি একটা কি?লুজার।সুইসাইড ও করতে পারো না।

-হাহাহাহাহাহা।দেখো তোমাকে আমি যথেষ্টই ভালোবাসি-ভালোবাসব।মানুষ বদলায় সত্য কিন্তু কিছু চিন্তা-অনুভূতি বদলায় না।তুমি আমার সাথে সাথে যা যা করেছ তা সহ্য করেই ভালোবাসব।শুধুমাত্র ভালো সময়গুলোর স্মৃতির প্রতি সম্মান রেখে।আর ভালো সময়গুলা যথেষ্টই ভালো ছিলো।

-তুমি মরে গেলেই ভালো হত।আমি আসলেই সামনে আগাতে পারতাম।তুমি সুইসাইডের এটেম্পট নেওয়ার পর থেকে আমি এসব ভাবছি।কি হবে তুমি মারা গেলে।আমি কি করবো?আমি কোথায় যাবো।

-স্যরি।হতাশ করলাম।আর সববারের মতন।
-সেটাই।
-আসলে সুর টা কেটেছে আমার নূন্যতম আকাঙ্ক্ষা আর তোমার অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষায়।সম্পর্কের এই সব ধাপে আসলে সব সময় নিজের হাসি ত্যাগ করে চলেনা।দুইজনের মুখেই ভিতর থেকে আসা হাসি টা থাকতে হয়।আমি দুঃখিত সব কিছুর জন্য।কষ্ট করে আসলা।সবসময়ের মতন নিজের জীবন নিয়ে থাকো,আর আমি নতুন করে নিজের জীবন নিয়ে ভাবি।এখন তুমি চলে গেলে ভালো হয়।
-তুমি সমাজ বুঝো না।আমি কোথায় পড়ি,আমার রেজাল্ট কি,আমার চেহারা কি তুমি কখনো দেখোনাই?আর নিজেকেও তো আয়নায় মনে হয় কখনো দেখো নাই।তোমাকে যা বলছি সবই রিয়ালাইজেশন এর জন্য বলছি।আমার উপর বাসার একটা প্রচ্ছন্ন চাপ তো আছেই আর আমি নিজেও বুঝি...তোমার মতন কুতসিত-ইডিয়ট ছেলে আমার মতন মেয়ের পাশে মানায় না।প্রথম দুই বছর ভুল করেছি।
-সেটাই,তুমি ভালোবাসা চিনো না মেয়ে।যাও।ভালো থেকো।

এই বলে আমি আরেকদিকে মুখ করে শুয়ে গেলাম আর চোখের কোনা দিয়ে দেখলাম রুহী চোখের পানি মুছতে মুছতে সরে গেল।আমিও চোখের কোনা টা মুছলাম।

শোয়া থেকে উঠে দাড়ালাম।জানালার পর্দা গুলো সরিয়ে দিলাম।আলো আসুক।আরো আলো আসুক।ছোট জীবনে আলো খুব দরকার।
কি পাঠক কোন বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতেছেন?কি ভাবতেছেন এখন নিজের ছবি তুলে জীবন বোধ নিয়ে বিশাল বড় লেকচার মারবো?জীবন অনেক সুন্দর,জীবনে শুধুই সামনে তাকাতে হয়,ভালো না লাগলে সম্পর্ক ছেড়ে দিন,সুন্দর পৃথিবীতে আরো কিছু দিন বাচুন,আমাদের কে বেচে থাকতে হয় শুধুই বেচে থাকার আশায়,প্রতিদিন ১০ মিনিট হাসুন ইত্যাদি ইত্যাদি *ল-*ল কথা বলবো ভাবছেন?আপনাদের জন্য আমার মধ্যাংগুলীই যথেষ্ট।জীবন কাব্যিক নয়।জীবন অন্ধকার-কঠিন-ভয়ংকর।ভালো লাগলেও ভালো,না লাগলেও কিছু করার নাই।আপনি একা এসেছেন একাই যাবেন।তোমাকে *দার কেউ নাই। এই সত্যের উপর থেকে পর্দা সরাও নাহয় বেচে থাকা লাগবে না আর।যাও ধ্রুব এখন দূর হও।অনেক লিখেছো।আমাকে এখন বাচতে দাও।আমি পর্দা গুলো সব সরিয়ে আলোতে বাচতে চাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.