নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চিন্তা ভাবনার খোলা খাতা আপনাদের সবার ভালো লাগলে ভালো না লাগলে দুঃখিত

মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে

ধ্রুব অন্যকোথাও

আমাকে অমানুষ ডাকুন

ধ্রুব অন্যকোথাও › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের মৃত্যু

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৮

ঈশ্বর, আমি কি শেষ হয়ে গিয়েছি? আমি ফুরিয়ে গিয়েছি? আমি মরে গিয়েছি?
নাহ, তুমি এখনো মরো নাই তবে তুমি শেষ হয়ে গিয়েছো। তুমি মরার আগে কি হবে সেটা আমি বলতে পারি। শুনতে চাও?
কি?
তুমি মরার আগে এই ক্লান্ত এবং ফুরিয়ে যাওয়া অবস্থায় দেখতে থাকবা সবাই কিভাবে জীবন নিয়ে আগায় যাচ্ছে, তুমি কিভাবে ব্যর্থ হইলা সেটা দেখবা, তুমি দেখবা তুমি প্রতিদিন কিভাবে করে হেরে যাচ্ছো, তোমার সাথের সবাই বড় বড় কান্ডারী হবে, বিজ্ঞানী হবে, পিএইচডি করবে,, কোম্পানীর সিইও হবে, বাড়ি বানাবে,নিউ মডেলের গাড়ি নিবে, তোমার কেনে আংগুলের সমান ছেলেরা তোমার থেকে ১০ বছর এগিয়ে যাবে সেটা দেখতে একই জায়গায় থেকে থেকে হতাশ,ক্লান্ত শ্রান্ত অবস্থায় শুয়ে থেকে।এর আগে তুমি মরবে না।
আমার ঘোর ভাংগে বৃষ্টির শব্দে।সেই সাথে ফোনটাও বাজতেছে। আমার ৫বছরের সম্পর্কের বান্ধবী কল দিয়ে চলছে। কল ধরতে একদম ইচ্ছে হচ্ছে না। কি হবে?
তালহা নতুন বাড়ি কিনছে, সোমা রা ইউরোপে ছুটি কাটাচ্ছে, সবাই বিয়ে করে ফেলছে,বাচ্চা নিয়ে ফেলতেছে আমরা কি করতেছি। সেই ক্লিশে এখন আর খাটে না। কোন ক্লিশে?
“বাড়ি ঘর গাড়ি ই কি সব?”
কারন, আজকাল জুনিয়র রা ফটোগ্রাফি করে, ইউটিউবে কভার সং বাজিয়ে, টিকটকে বুক দেখিয়ে নেচে নেচে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছে।
আর আমি? কিভাবে বিল দিবো, দেশে টাকা পাঠাবো কিভাবে, ভাইয়ের ড্রাগ রিহ্যাবের চিকিতসার খরচ, পরিবারকে এইখানে সেটল করানো,বর্তমান গাড়ির খরচ চালানো,বাজার করা এসবের হিসাব করে চলছি।
আমার বাবা মা,বান্ধবীর বাবা মা সবাই কল দিয়ে চলছে।
আমি আর নিতে না পেরে এখন অফিসের কাজ এর কথা বলে গাড়ি নিয়ে দূরে চলে আসছি।জানিও না কোথায়। গাড়ির জানালা দিয়ে বৃষ্টি গুলো কে সাদা তুষারে পরিনত হতে দেখি আস্তে আস্তে।
চোখ বন্ধ করে আমি আবার ঈশ্বর কে খুজি কথা বলার জন্য।
-ঈশ্বর তুমি আছো?
-তার মানে আমি হেরে গিয়েছি তাই না?
-হা, তুমি অনেক আগেই হেরে গিয়েছো।
-কবে?
-যেদিন তুমি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেছো সেদিনই।
-সবাই সেদিন নতুন করে সব শুরু করে কিন্তু সেদিন তুমি শেষের শুরু করেছিলে।
আমি উঠে বসি।নাহ,এগুলো ঈশ্বরের কথা না। এগুলো আমার বান্ধবীর কথা। আমি অনেকক্ষন ড্রাইভ করে ক্লান্ত হয়ে এসব ভুলভাল চিন্তা করতেছি।
ফোন বের করলাম, মেসেঞ্জার খুললাম। আমার সেই বান্ধবীর অনেক গুলো কল। ইউনিভার্সিটি এবং এলাকার বাংলাদেশী কমিউনিটির মেসেঞ্জার গ্রুপে সে আমাকে খুজতেছে।
“কেউ কি জানেন,ও কই?”
আমি পুরোনো মেসেজ খুজা শুরু করলাম। সেই মেয়ে গুলো কোথায়? ভার্সিটি আর কলেজে যারা আমাকে মেসেজ দিতো “তোর সাথে কথা না বললে আমি কিছু করতে পারিনা” , “কক্সবাজারে তুই থাকলে খুব ভালো লাগতো”, “পুকুরের ধারে বসে আছি তোকে খুব চাইতেছি”, “তোর আর আমার সম্পর্ক টা কি আর নর্মাল লেভেলে আছে?”,”তুই আমাকে জোনাকি ধরে দিবি?”, “আমি গোসল করে আসছি মাত্র, তুই আমাকে একবার একটু সুন্দর বলবি?”, “আমাকে প্লিজ কনসার্টে নিয়ে যাইস”
এদের কারো বিয়ে হয়ে গেছে, কারো বাচ্চা হয়ে গেছে,কেউ এখনো সিংগেল।
বিগত চার বছর যোগাযোগ নেই।
আমি হারিয়ে গিয়ে অতীত কে খুজতে থাকি,জীবন সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া নাবিকের মতো করে।কিন্তু সবাই তো সমুদ্র থেকে রাস্তা খুজে বের করে তীরে পৌছে গেছে। আমার কি হবে?
ফোন বেজে উঠে।
“তুমি কই?”
“আমি এইতো আছি,ব্যস্ত। কিছু লাগবে তোমার?”
“নাহ,তোমার খোজ পাচ্ছিলাম না।তাই আর কি”
“ড্রাইভ করতে করতে ঘুম আসতেছিল।তাই”
“নাহ,বাবা, মা কে দেখতে যাবো।”
“যাও”
“তোমাকে ছাড়া গেলে উনারা মন খারাপ করবে”
“নাহ, করবে না”
“আমি মন খারাপ করবো”
“আচ্ছা,আমি কালকে আসি। প্ল্যান করবো নাহয় তখন।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।হবু শ্বশুর বাড়িতে অবশ্য না গেলে প্রচন্ড ইম্ম্যাচুরিটির একটা বেপার হয়। আমি এখন দুধের বাচ্চা নাই। এডজাস্টমেন্ট, কম্প্রোমাইজ,স্যাক্রিফাইজের নাটকে আমি হরহামেশাই ডেনিয়েল ডে লুইস টাইপ পার্ফরমেন্স দেই।অস্কার টাই মিসিং শুধুমাত্র। হাসিমুখে মেনে নেই আমার আর পরিবার সম্পর্কে উনাদের যত রকমের ফালতু আলাপ।
“তোমার বাবা মা তো আসলে যে শিক্ষা দিছে তোমাকে সেটা ঠিক নয়”
“তোমাকে তো আরো চালু ভাবছিলাম কিন্তু এখন তো দেখি ভুল”
“তোমাকে পছন্দ করছে?”
“আসলে নিজের কোয়ালিফিকেশনের বাইরে গিয়ে বিয়ে করাটা কতখানি ঠিক ভেবে দেখো”
আমি এরপর ২০-২৫ মিনিট ধরে ওর আর ওর ভাইয়া আপুদের প্রতিদিনের জীবনের গল্প শুনলাম। সবার জামাই এবং ভাইয়ারা কতো ভালো জায়গায় আছে, পিএইচডি লাইফে কত ভালো করতেছে ভালো জায়গাতে ইত্যাদি বললো। আমি হুম হাম করলাম।
“চলে আসো তাড়াতাডি। তোমার ওই ফালতু অফিসে আর কি কাজের চাপ? চলে আসো বাসায় কারো উপর চাপায় দিয়ে। এমনিতে যে আরাম তোমার চাকরি। টাকা এমনিতে হালাল হয় না,অমনিতেও হয় না।ভালো চাকরি খুজতে হবে”
আমি আর হুম হাম ও করলাম না। আমি বললাম “দেখি”
পৃথিবীতে আবারো অনেক দিন পর একা বোধ করলাম। ফোনটা নিয়ে দেখলাম কাকে কল দিবো। আমার ভেন্টিং করা দরকার। কিন্তু লিস্টে দেখি বন্ধুরা কেউ বউ নিয়ে ব্যস্ত,কেউ বাচ্চা নিয়ে, কেউ নতুন বন্ধুদের নিয়ে,কেউ মদ খেয়ে পড়ে আছে মাটিতে। বালের এই ফোন রেখে লাভ কি?
আমি ফোন ছুড়ে মেরে মাটিতে ফেলি । পা দিয়ে লাথি মেরে ভেংগে চুড়ে ফোন টা কে দূরে ছুড়ে ফেলি। রাগ খুব বাজে জিনিস। বাইরে বরফ, ঠানডা আর চারিদিক ঠান্ডা হয়ে আছে। ড্রাইভ শুরু করলাম। গ্যাস ট্যাংক এখনো ফুল আছে। ঠিক করলাম, অর্ধেক যেখানে তেল শেষ হবে সেইখানে গিয়ে থামাবো। গাড়ি চালাতে লাগলাম। গান চলতেছে
Aftermath এর অস্পৃহ
“এখানে নয় এভাবে নয়
কিভাবে নষ্ট হচ্ছে সময়
পরে থেকে অর্বাচীন কোন সত্বার মাঝে
আরধ্য সময়, বহমান কেবল ক্ষয়
সমাধিত চেতনার অবসাদে নন্দিত পরাজয়
এ সবই গল্প”

চলতে চলতে চলতে চলতে শেষে গিয়ে থামলাম একটা পার্কের সামনে। নেটিভ আমেরিকান দের জমি ছিল, ওদের একটা গ্রাম ছিল এটা।এই জমিতে না থেকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে গেছে,মারা গেছে।সাইনবোর্ড তাই বলে ।
চারিদিক সুন্দর সাদা হয়ে আছে তুষারের চাদরে ঢাকা পড়ায়। দূর থেকে কুলকুল আওয়াজ আসছে। এইখানে আকাশ ও একদম পরিষ্কার। আকাশে অদ্ভুত সুন্দর চাঁদ পুরো আকাশ টা দখল করে আছে। আমি ঝর্নার পাড়ে গিয়ে বসলাম। কাঠের বেড়া দেওয়া। পানি পড়তেছে বেশ উপর থেকে কয়েকটা ভাগে ভাগ হয়ে একসাথে।তুমুল তেজে। এখনো জমে বরফ হয় নি। আশেপাশে সাদা বরফ কিন্ত ঝর্না তে সুন্দর পানির ফ্লো।সাথে আকাশের বিশাল চাঁদ। অদ্ভুত একটা অনুভূতি। পুরো জায়গাটাতে আমি একা থাকা স্বত্ত্বেও ভয় কিংবা আতংক কাজ করছে না একটুও ।
কিন্তু এই অভয় আসার সাথে সাথে সব কিছু নীরব হয়ে গেলো। কেন জানো ঝর্নার আওয়াজ ও কমে আসতে লাগলো। আমি হতবাক হয়ে দেখি নদী টা স্থির হয়ে গেলাম। আমি পা জমে আসলো। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল পালায় যাইতে কিন্তু পা গুলো বরফে আটকে গেলো।নড়তে পারতেছি না আর। এটা কি হইলো/?
ঝরনা পাশের জংগল থেকে হঠাত দুইটা ছায়া বের হয়ে আসলো। আস্তে আস্তে হেটে হেটে। আমি ভয়ে কাপতে শুরু করলাম। উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করে পড়ে গেলাম। পা গুলোকে গ্রাস করছে সাদা বরফ। ছায়া গুলো কাছা কাছি আসতেই আমি আরো অবাক আর ভয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
একটা নেটিভ আমেরিকান বুড়ো সারা গায়ে উল্কি আকা,চোখে কাপড়ের পট্টি বাধা,আলখাল্লা পড়া এবং অনেক গয়না সারা শরীর জুড়ে। তার সাথে যা ছিলো তাতে আমি আরো ভয় এবং অবাক হলাম। হাত পা কাপাকাপি আরো বেড়ে গেলো। বিশাল এক ভাল্লুক তার সাথে।
বয়স্ক লোক টা আমার কাছে আসলো। হাতের ইশারা দিয়ে ভাল্লুক টাকে ইংগিত করলো আমার দিকে যেতে । আমি ভাবলাম আমি শেষ। এইবার আর রক্ষা নেই। এরা আমাকে মেরে হয়তো এই ভাল্লুক কে দিয়ে খাওয়াবে।
ভাল্লুক টা আমার কাছে এসে আমাকে শুকে দেখে। তারপর পরিষ্কার বাংলায় নেটিভ বয়স্ক লোক টা কে বলে “শালার তো গায়ে মরার গন্ধ নাই কিন্তু চারিদিকে কেন মরার মতো আলো ছড়াচ্ছে?”
নেটিভ বুড়া আমার হাত টা ধরে। কিছুক্ষন চুপ করে বলে “ও ভিতরে মরে গেছে।ওরে যাইতে দিতে হবে। ওরে কিছু করে আমাদের লাভ হবে না”
আমি কথা বলার চেষ্টা করলাম।চিতকার করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না। গলা বন্ধ হয়ে গেছে এরকম একটা অবস্থা আমার। কেউ যেন গলার ভিতর হাত ঢুকিয়ে শক্ত করে চিপে ধরে আছে।
নেটিভ আমেরিকান টা তারপর আমার দিকে তাকালো “আমরা এখানকার পুরনো আত্মা আর এই ভাল্লুক হইলো আমাদের আত্মা আর এই জমির মধ্যকার মিডিয়াম।ওর মাধ্যমে এইখানে আসি আমরা। এখানকার যত হারিয়ে যাওয়া,মারা যাওয়া, অতৃপ্ত আত্মা দের কে সাহায্য করার জন্য। আমরা চাই না আমাদের জমি তে এরকম আত্মা থাকুক। “
এরপর নেটিভ ভদ্রলোক আমার বুকে হাত দিয়ে বলে, “আমরা এইখানে সরাসরি যোগাযোগ করছি তাই মনে হচ্ছে আমি তোমার ভাষায় কথা বলছি।
তোমার ভিতর টা মারা গিয়েছে। তোমার আত্মা মারা গেছে।অপ্রয়োজনীয় ক্ষোভ দুঃখ ঘৃনা বুকে জমিয়ে ভারী করে লাফ দিয়ে নদীতে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে।”
তুমিও মারা যাও। এরকম পরাজিত মানুষ দের জন্য আমার পূর্বপুরুষ দের জমি নয়।”
ভাল্লুক টা আমার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকায় “সকাল হতে ৮ ঘন্টা বাকি। সবাই আসতে আসতে তুমি ঠান্ডায় জমে মারা পড়বে। এটাই তোমার প্রাপ্য”
এইটা বলে অন্ধ ন্যাটিভ আমেরিকান আর তার ভাল্লুক হেটে যেতে থাকে।হেটে হেটে দূরে চলে যেতে থাকে। আমি কথা বলতে পারছিনা। ঝরনার পানির ফ্লো আবার শুরু হয়। তুষার পাত শুরু হয় আবার। আমাকে আস্তে শ্বেত শুভ্র তুষার ঢেকে ফেলতে থাকে। আমার ঘুম আসতে থাকে। গভীর ঘুম। আমি ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকি।
চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসে।
অন্ধকার...

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৫৪

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: ঈশ্বেরর কাছে কোনো প্রশ্ন করে লাভ নাই। ঈশ্বর কোনো প্রস্নের জবাব দিতে পারবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.