নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চিন্তা ভাবনার খোলা খাতা আপনাদের সবার ভালো লাগলে ভালো না লাগলে দুঃখিত

মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে

ধ্রুব অন্যকোথাও

আমাকে অমানুষ ডাকুন

ধ্রুব অন্যকোথাও › বিস্তারিত পোস্টঃ

ট্রানজিট নস্টালজিয়া

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫৬

ঢাকা শহরে ইজতেমা এর সময় যেন ঈশ্বর নেমে আসেন। নাহয় এতো মানুষের উপরে আরো এত মানুষ কিভাবে নেয় এই শহর কে জানে?
ইজতেমার নিউজ আর ভিডিও দেখে অনেক স্মৃতি ফিরে আসে।
টোফেল দিতে যাচ্ছি ঢাকায়। চট্টলা এক্সপ্রেস এর টিকেট পাইছিলাম(নাম টা পুরাপুরি ঠিক মনে নাই)। নর্মাল সিট পাই নি। জানালার পাশে কতগুলো বেঞ্চ আছে। সেইখানে বসছিলাম। আমার সামনে বগির মাটিতেও শয়ে শয়ে মানুষ। অদ্ভুত দৃশ্য সব। বাথরুমের দরজা ভাংগা সবাই আমরা শুনতেছি দেখতেছি কে কি করতেছে বাথরুমে। একাধিক বুকের কাপড় সরিয়ে মাটিতে বসে চলন্ত ট্রেনে বাচ্চাদের দুধ খাওয়াচ্ছে।

সেটা দেখে আমার চুবির শাটলের একদিনের কথা মনে পড়ে গেলো।শহরে যাচ্ছি কাজে। হঠাত শুরু হয়ে গেলো চুবির ঐতিহ্য বগি বনাম বগির মারামারি। আমার পাশে একজন ট্রেনের সিটের নিচ থেকে বিরাট কিরিচ বের করলো। অনেকটা machette এর মতো। কিছুক্ষন মারা মারি হইচই চললো। ওই ছেলে ফিরে আসলো বগিতে। পিঠ ফালাফালা করে কাটা। শাটল ট্রেনে আগে ভিখারিনি রা উঠতো, পাতা কুড়ানি মহিলারা উঠতো। উনারা নিজেদের শাড়ির কাপড় ছিড়ে ছেলের পিঠের ক্ষত গুলো বেধে দিলো। তারপর
২০ মিনিট পর ট্রেন ছাড়লো। খুবই স্বাভাবিক বেপার। আমি নিজে ভয় পাইছিলাম সেটা নাহ। কিন্তু এটা একটা নুইসেন্স এর মতো লাগছিলো। আমার রিএকশন ছিলো “উফফ, কাজ টা মিস হয়ে গেলো। এখন ট্রেন ১ ঘন্টা লেট হয়ে গেলো,বাল”
আরেকদিন, এরকম টিউশনি করে বাসে করে ফিরলাম। বাস থেকে নামার সাথে সাথে দেখি পরিচিত এক ভাই দৌড়াচ্ছেন তার পিছে সিএনজি করে লুংগি পড়ে লোকাল লোকজন আসতেছে মারার জন্য।
আবার আরেকবার লোকাল সিএনজি করে চবির মেইন গেইটে এসে নামলাম দেখি আমার পুরান স্কুলের ক্লাসমেট মাটি থেকে গাছ উঠায় একজন কে মাটিতে ফালায় পিডাইতেছে। ফান টাইমস। এর ভিতরেই নির্বিকার আমরা হেটে যে যার বাসায় ঢুকলাম।
আরেকবার জিইসি থেকে নিউ মার্কেটের গাড়িতে উঠছি(ভুল হইতে পারে)। আমার পাশের মহিলা বোরকাওয়ালি। পায়ের নিচ থেকে হঠাত করে কক কক করে মুরগীর আওয়াজ। ফাক, মহিলা মুরগীর খাচা নিয়ে উঠছে বাসে।আর সেই মুরগী কক করতেছে সমানে। গন্ধে টের পাওয়া উচিত ছিলো কিন্তু বাসে এত রকমের গন্ধের ভিতরে আর কি গন্ধ পাবো?
টেম্পোতে ঝুলেঝুলে, তরী তে ঝুলে, সিএনজিতে অর্ধেক পা বের করে যে জার্নি সেগুলোর হিসেব করলে তুলনামুলক ভাবে পানসেই বলতে হবে।

যাই হোক আসল ঘটনায় ফিরে যাই,
প্রায় ১০-১২ ঘন্টার মতো লাগছিলো ঢাকা এয়ারপোর্ট স্টেশন যেতে। সেখান থেকে বাসে আর হেটে টোফেল দিয়ে আসলাম। গেলাম পুরান ঢাকার দিকে। এরপর তো আসল মজা। আজিমপুর থেকে বাসে উঠলাম। বাস ছাড়বার আগেই ভর্তি সব ইজতেমার মুসল্লী। খুবই সুন্দর একটা দৃশ্য। পুরা বাস সাদায় সাদাময়। অনেকদিন পর বাসের গন্ধ চেঞ্জ। আতর আর জর্দার সুন্দর একটা মিক্স। বাস গুলো ছিলো সেরা। পিছন দিকে বেশির ভাগ বাস ভেঙ্গে পড়ছে। বাইরে থেকে বাসের স্ট্রাকচার এর বিশাল গর্ত দিয়ে যাত্রীদের কোমর থেকে নিচে পুরো টাই থাকতো ভিজিবল।
একটু পরে অবশ্য ঘটনা ভিন্ন হয়ে গেলো। তখন আবার বাসে ককটেল মারার সিজন। পুরা বাস ভর্তি আবার জানালাও সব বন্ধ। ককটেলের ভিক্টিম হইতে কেউ চায় না। একজন বাসে উঠার পর থেকেই বলতেছে “ভাইয়া খুব বমি আসতাছে”
আরেহ, ইজতেমার ময়দানে আল্লাহর আরশের হাওয়ায় দেখবি ভালো লাগতেছে।

কিসের কি আধাঘন্টা পরে আল্লাহু আকবার ওই ছেলে পুরা বাসের মেঝে জুড়ে বমি করে দিলো। সেটাও দুই একজন বিরক্ত হইলো। বাকিরা নর্মালি নিলো। বাসের হেল্পার গিয়ে পত্রিকা নিয়ে আসলো।সেটা দিয়ে পরিষ্কার করা হইলো। ককটেলের ভয় কাটিয়ে একটা জানালা খোলা হইলো ছেলেটার জন্য। বাকি তিন ঘণ্টা আমরা বমির গন্ধের ভিতর দুলে দুলে জার্নি করলাম।
রাতের বেলা ট্রেন স্টেশন গেলাম। সেইখানেও স্বাভাবিক ভাবে ইজতেমার জজ্ঞ দেখলাম। জামালপুর অথবা আশেপাশের কোনো এক জেলার ট্রেন । আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আমার পাশে মানুষজন লাফ দিয়ে ট্রেনের ছাদে ঊঠার চেষ্টা করতেছে। আমার পাশে এক লোক ফোন দিয়ে ভিডিও করতেছে আর মজা নিতেছে। একটা টোকাই আমার পাশে দাঁড়ায় আছে। হঠাত লোক টা ওই ছেলেকে চ্যাংদোলা করে তুলে ট্রেনের ছাদে ঢিল মারলো।
টোকাইও হতবাক আমিও হতবাক। ভাগ্য ভালো ট্রেনের ছাদের লোকজন অন্যদের উঠাতে উঠাতে এলার্ট ছিলো তারা ধরে ফেললো টোকাই কে।
লোকটা হেহে করে হেসে বললো “তুইও চলি যা ট্রেনে উঠে”
আমি বের হয়ে বাস ধরলাম। প্রখ্যাত ইউনিক বাস। চার ঘণ্টায় ভাটিয়ারি নামায় দিলো। সেইখানে চান্দের গাড়ির জন্য বসে থাকা ঠান্ডার মধ্যে। চা খেতে খেতে দুই ঘনটা পার করলাম। এরপর, চান্দের গাড়ি চড়ে বড় দীঘির পাড় যাওয়া। সেইখানেও ঝুলে ঝুলে ট্রাভেল। নয়নাভিরাম সব দৃশ্য। আর্মি ইজ দা গডফাদার অইখানে। হেল্পার সিগন্যাল দেয় চেকপোস্টের কাছে এসে। তখন বাইরের দিকে ঝুলে থাকা আমরা একটু করে ভিতরে ঢুকি। তারপর চেকপোস্ট পার হইলে আবার ঝুলে থাকে।

আর এখন ডিসি,নোভা তে বাসে ট্রেনে চড়ে অফিসে যাই। সেইখানেও হঠাত হঠাত দেখি মানুষজন দুই একটা চিপসের প্যাকেট, স্টারবাকস এর প্লাস্টিক কাপ, বার্গার এর কাগজ দেখি। এক দুইবার দেখছি পেশাব করে দিতে স্টেশনে আর স্টেশনের বাইরে। দুই একজন চিৎকার চেচামেচি করে বাকিরা দেখেও সেই বাংলাদেশের মতো “ধুর বাল” এসব কারনে দেরি ন হইলেই হইলো বলে নিজের কাজে মন দেয়।
গল্প গুলো উবার পূর্ব সময়ের কথা।এখন ঢাকায় আবার মেট্রো রেইল হইছে সেইখানে ঢাকার পশ পোলাপান ওভারকোট পরে পোজ দিয়ে ছবি তুলতেছে।। সময়ের সাথে সাথে রঙ অনেক বদলাবে। প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যাও রাস্তাঘাটে অনেক বাড়ছে।
এইখানে একদিন একজন বলছিলো, “সিটি বাস খালি যায়,পোলাপান সাইকেল চালাবে কিন্তু বাসে উঠবে না।”
সাইকোলজিকালি ট্রানজিট ইনফ্রাস্ট্রাকচার কে পছন্দ করে না। অনেকটা বাংলাদেশে উত্তর বংগে যেমন বাড়ির পাশের হাইওয়ে তে মহিলারা ধান শুকানোর মতো কিন্তু গরু নিয়ে হাইওয়ে হেটে হেটে পার হওয়ার মতো বেপার আর কি।
বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় পুরনো ফেক সময় নিয়ে একটা প্রিভিলেজড নস্টালজিয়া কাজ করে। আস্তে আস্তে এই বাস গুলো, এই ট্রেন গুলো চেঞ্জ হইলে উঠে গেলে আমরা কি এইগুলো নিয়ে নস্ট জিয়া করবো।
হয়তো,শাটল ট্রেন নিয়ে হবে। কত গান আর কত স্মৃতি সেইখানে। বাকি গুলো নট সো শিইওর

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: ইজতেমা ঢাকা থেকে সরিয়ে কোনো চর অঞ্চলে করা উচিৎ।
এমনিতেই ঢাকা শহরের গজব অবস্থা। আর ইস্তেমার সময় আরো করুণ অবস্থা হয়। ইজতেমা করে দেশ বা জাতির কি উপকার হয়?

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫০

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: কিঅ্যাক্টা অবস্তা!! |-) এখনতো টঙ্গি ইজতেমাকে সারা দেশে কিছুটা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে তাতে কিছুটা রক্ষে, ১০ বছর আগে পুরা ঢাকা ও এর আশেপাশের জেলা সব অচল হয়ে যেতো এই ইজতেমার জন্য। ইজতেমাকে ৬৪ টি জেলায় ভাগ করে দেওয়া উচিৎ।

৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০৪

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


আপনার প্রথম বাক্য ইজতেমায় যাওয়া অনেকেই ভেটো দিবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.