নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চিন্তা ভাবনার খোলা খাতা আপনাদের সবার ভালো লাগলে ভালো না লাগলে দুঃখিত

মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে

ধ্রুব অন্যকোথাও

আমাকে অমানুষ ডাকুন

ধ্রুব অন্যকোথাও › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতীত - দুঃস্বপ্ন -১

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২৬

অতীত দুঃস্বপ্ন (পর্ব - ১)
---------------
ঘুম থেকে উঠে মাথা ব্যথা নিয়ে ফোন টা ধরে কানের কাছে নেয় শিহাব। সোমার নাম্বার থেকে কল আসতেছে ক্রমাগত। এই মেয়ে কে নিয়ে যে কি করবে শিহাব বুঝে পায় না। কাল রাতেও ওর পুরো পরিবার কে গাড়ি করে পাশের শহর থেকে ঘুরায় নিয়ে আসছে। তাও উনাদের কম্পলেইন করা বন্ধ হয় নাই। বাসায় আসার পর বলতেছে এই রকম জায়গায় না থেকে নিউ ইয়র্ক চলে যাইতে। ঘিঞ্জি হইলেও ওইখানে নাকি জীবন আছে। বাল আছে। রাস্তায় দাঁড়ায় পচা পানির ফুচকা খাইতে চাইলে শিহাব বাংলাদেশেই ফিজিক্স পইড়া ব্যাংকের খাতার হিসাব গুনতে পারতো। সোলার সেলের এফিশিয়েন্সি বাড়াইয়া পৃথিবীর বদলানোর স্বপ্ন তার মাঠেই মারা যাইতো। পাশের ঘিঞ্জি কাদা ওয়ালা শহরে সোমার হাত ধরে হাটলেও বাংগালীরা তাকায় থাকে।সেইখানে কেউ বাংলায় প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারে না। তাদের কে সিলেটি না হইলে চিটাংগা ভাষায় জিজ্ঞেস করতে হয়। আরো এক ডিগ্রি বাড়ায় বললে একদম ইংরেজী তে প্রশ্ন করা লাগে যেকোনো কিছু।
আমেরিকার বোকাচোদা ইমিগ্রেশন পলিসির আগা পাশ তলা বাংলাদেশীর ছিড়ে খুড়ে খেয়ে নিচ্ছে। আইস দিয়ে ডিপোর্ট করে সাড়তে পারতেছে না সরকার। সেই সাথে আবার এই এলাকায় চলে হিউম্যান ট্রাফিকিং। সেইখানে আবার মাস্টার্স করতেছে এক ভাই ড্রাইভ করে মাল ট্রান্সপোর্ট করে। প্রথমে বুঝে নাই। পরে দেখে গাড়ির ট্রাংক ভর্তি ছোট ছোট বাচ্চা।
সেই ট্রমা বেশি দিন লাগে নাই কাটতে। বউ সহ দেশে যাবে দেইখা ৫০০০ ডলারের শপিং করতে হচ্ছিল তাই আবার আল্লাহু আকবার বলে নেমে গেছিলো ভাই হিউম্যান ট্রাফিকিং এর ভ্যান গাড়ি চালাইতে। এখনো পুলিশ ধরে নাই একবার এটা নিয়া মসজিদে গলাবাজি করতেছিলেন ভদ্রলোক। পরে পুলিশে জানানো হইলে এক কাপড়ে দেশে পাঠায় দিছে। এখন অবশ্য ভালোই আছে। বিদেশী ডিগ্রি থাকায় প্রাইভেট ভার্সিটীর টিচার হয়ে গেছে।
সোমা কল করেই যাচ্ছে।ওর ফ্যামিলিকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসা লাগবে। বালের দেশ,বালের জীবন। কেন যে এইসব প্রেম করি?
-কি?
-ঘুম থেকে উঠছো?
-হ্যা,কি লাগবে?
-আব্বা আম্মাকে নিয়ে যাওয়া লাগবে এয়ারপোর্টে।
-হ্যা,জানি।
-তুমি এভাবে কথা বলতেছো কেনো?
- এমনি।
-থাক তোমার যাওয়া লাগবে না। আমার বোঝা হয়ে গেছে।
- কি বুঝছো?
-আসতেছি। বেশি কথা বইলো
বাংলাদেশের নাটক আর গল্পের বইয়ের মেয়ে রা নেকু নেকু হয়। আসলে বাস্তবতায় সব মেয়েরা মোটেও এরকম না। শিহাব এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিখে গেছে। ওর আগের গার্লফ্রেন্ড যখন ইয়াবা খেয়ে গিয়ে রাত বিরাতে ঘরে পোলাপান ঢুকাইতো তখনই শিখে গেছে। ওরা দুইজনেই উত্তর বংগ থেকে একসাথে আসছিলো। শিহাব পড়তো পাবলিকে।একটা জংগলে ছিলো তার ইউনিভার্সিটি।তার আগের সেই গার্লফ্রেন্ড থাকতো শহরে।একটা ফ্লাট এ।
সেইখানে শিহাব ও যাইতো। শিহাব দুই তিন বছর সিনিয়র ছিল। যখন চাকরি হচ্ছিল না ওইসময় কণা (তখনকার গার্লফ্রেন্ড) সুন্দর মতো আরো প্রেম করা শুরু করে। সেই ছেলেও কণার ঘরে যায়। ওই সময় আবার শিহাব কে টেক্সট করে কণা। প্রথম নাকি ওই ছেলে ঘরে আসছে।
“এই যে ও আসলো মাত্র।কাপড় ছাড়তেছে এখন”।
শিহাব এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসতো। গা গুলিয়ে বমি আসতো। প্রথম কয়েক মাস কষ্ট হইলেও শিহাব আর সবার মতো সব ভুলে গিয়ে নতুন প্রেম করতো একটার পর এঁকটা।নতুন নতুন মেয়ে নতুন নতুন গল্প। নতুন নতুন চুলের গন্ধ,গায়ের গন্ধ। কিন্তু দিনশেষে বেকার যুবক। অনেকদিন এভাবে যাওয়ার পর জি আর ই এর খবর পেয়ে শিহাব জি আর ই দেয়। কোনোরকম একটা স্কোর মাঝারী একটা ইউনিভার্সিটি তে যায়। সেখানে ১০-১২ জন বাংলাদেশী আছে।একজন বাংলাদেশী প্রফেসর আছে মোটামুটি প্রতাপশালী এবং বাংলাদেশীদের কে কাজ জানলে ফান্ড দিয়ে দেয়।
ওইখানে প্রথমেই এলাকার বুড়া আংকেল আন্টিদের দাওয়াতে গিয়ে যখন দেখে বেসিকালি একটা কলোনীর নিম্ন মানের আড্ডা ছাড়া আর কিছু হয় না । আবার বেশিরভাগই বিএনপি শিবির মাইন্ডের মানুষজন। সব ভালো কাজ জিয়া করছে। আর কেউ কিছু করে নাই দেশে। শিহাবের রুমমেট ছিলো হিন্দু। তাকে নিয়ে গেছে। তখন এক মহিলা বলা শুরু করলেন
“এই হিন্দু রা সব নষ্টের মূল। আমার একদম পছন্দ নাহ হিন্দুদের। সব চাকরিতে এখন খালি হিন্দুরা”
আরেক বিসিএস ভাই ছিলেন। উনার শখ হইলো কয়দিন পর পর ডিগ্রি করতে আসা। সরকারের টাকায়। এইখানে এসে বড় বড় গপ্পো। তার মাঝে একদিন মারামারি হাতাহাতি হয়ে গেলো। বিসিএস ভাই বললেন “ট্যাক্সের টাকায় পড়ে এসে এইখানে সেবা করেন খারাপ লাগেনা?”
সবাই চুপ হয়ে যায়। এক ভাই ছিলেন উনি সাধারনত কথা বলেন কম।
উনি মুখ খুললেন “নাহ,লাগেনা। ট্যাক্সের টাকায় যা পড়ছি সেটা এক বছরে ফেরত দিছি। ওই ট্যাক্সের টাকার পড়ালেখার যেই মান আমি দেখছি।তার থেকে একটু টাকা দিতাম তাও যদি কিছু পড়ালেখা হইতো।আপনি যে ট্যাক্সের টাকায় নিজের ছেলেমেয়েকে এইখানের সিটিজেন বানায় সেটল করাচ্ছেন সেটার কি হবে?তাদেরকে ট্যাক্সের টাকায় দেশে পড়ান।হিপোক্রিসি করেন কেন?”
এরপর উচু গলায় চেচামেচি থেকে শুরু হয়ে গেলো হাতাহাতি।
এরপর থেকে শিহাব এগুলোতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রী দের দাওয়াতে গিয়েও খালি টাকা পয়সা আর মার্ভেল মুভি নিয়ে আলাপ। মরুক গিয়ে সবাই। কেউই পড়াশোনা রিসার্চ নিয়ে ইন্টারেস্টেড না একফোটা। কত অপরচুনিটি আছে সেগুলো নিয়া চিন্তা নাই। আছে শুধু শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার ধান্ধায়। আর আছে ইমিগ্রেশন বেশ্যার দল।এরা পুরুষ নারী দুইরকমেরই হয়। এদের ধান্ধা এইখানে সিটিজেন পাত্র-পাত্রী জোটানো। পরে অবশ্য সুন্দর হাসিমুখে ছবি দেয়। জীবন সুন্দর মতোই আগায়। বড় স্ট্রেস কেটে গেলে জীবন সুন্দর না হয়ে যাবে কই?
এক মেয়ে এক বার জিজ্ঞেস করলো
-ভাইয়া,আপনাদের ল্যাবে শন ছেলেটা কেমন?
-কেন?
-টিন্ডার ডেটে গেছিলাম। ভালো লাগছিলো খুব।
- মানুষ তো ভালোই।
-ভাইয়া মানুষ দিয়ে কি হবে? ফিউচার কেমন?
শিহাবের ইচ্ছা হইলো নিজেকে চড় মারতে। আমেরিকায় এসে ও ভুলে গেছে যে সে আসলে বাংলাদেশী।
শিহাব বললো,
“হুম ভালো। ইউ এস সিটিজেন। সায়েন্টিস্ট হওয়ার ধান্ধায় আছে ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স এর।”
মানে? বেতন কেমন হবে?
১২০কে বছরে।
তার মানে আব্বু আম্মুকে নিয়ে আসা যাবে দ্রুত।
হুম।
থ্যাংক ইউ শিহাব ভাইয়া। ইউ আর এ গ্রেট হেল্প।
এক মাস পর বিয়ে হয়ে গেলো। সাদা ছেলে হাটু গেড়ে শর্ট স্কার্ট এর বাংলাদেশী অপুষ্ট বাদামী বেমানান হাটু ওয়ালা মেয়ে কে প্রপোজ করার একটা ছবি দিছে। আরেকটা দিছে কাচাহাতে পড়া লাল শাড়ি পড়ে সাদা বেটা কে জড়ায় ধরা অবস্থার ছবি। সাদা পোলাপানরাও খুব বাদামী শিক্ষিত মেয়েদের পছন্দ করে।আমেরিকান অনেক মেয়েদের তুলনায় লো মেইন্টেইনেন্স করা লাগে। আমেরিকান মেয়েরা পৈ পৈ নিজের হিসাব ঠিক রাখবে। বাংলাদেশী মেয়েরা অনেক সময় রোমান্টিসিজমে ভুগবে,আবেগ দেখাবে,সেই সাথে একটু রান্না বান্নাও করবে। সোজা কথায় কম স্পয়েলড হবে। এটাই ভাবে অনেক সাদা আমেরিকান।কিন্তু দিন দুনিয়ার অনেক পরিবর্তন হইছে।
অবিবাহিত সিনিয়র ল্যাব মেট বাংলাদেশী আপু এই পোস্ট দেখে লাইক দিয়ে অকারনে শিহাবের উপর রাগ করে দুইটা ঝাড়ি মেরে ল্যাব থেকে চলে গেলো। এরপর দেখা গেল ফেসবুকে সলো গার্ল ট্রিপ দিচ্ছেন ন্যাশভিল, টেনেসি তে। ছেলেদের হিসাব নিকাশ ও অদ্ভুত। এই সাদা মেয়েদের পিছে ঘুরে কিন্তু পাত্তা পায় না তাই নিউইয়র্ক, “বার্জিনিয়া” আর এল এ অর্থাৎ ফেরেশতা দের শহরে গিয়ে এরা ফার্স্ট জেনারেশন আমেরিকান সিটিজেন মেয়েদেরকেই খুজতে থাকে। কপাল খুলে যায় যদি দেখে মেয়ে কিছুদিন বাংলাদেশেও থাকছে। তাইলে তো মামা ছক্কা।
এর মাঝে সোমা আসে ইউনিভার্সিটি তে। শিহাবের পাশের ল্যাবে। শিহাব এর সাথে সোমার দেখা হয় ল্যাবের সামনে।
বরফ পড়ে চারিদিক সাদা হয়ে গেছে।
সোমা তখনো বাংলাদেশী জিন্স পড়া। এইখানকার শীতের কাপড় নিয়ে ক্লিয়ার আইডিয়া হয় নাই বুঝা যাচ্ছে পোশাক আশাক দেখে।
এইভাবেই প্রথম সোমার সাথে পরিচয় হয় শিহাবের।
জিন্স আর সাদা টপস পড়া মোটামুটি সাস্থ্য ওয়ালা মেয়ে টার প্রতি আকর্ষন বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে শিহাবের। পাশের ল্যাবে কাজ করায় প্রায়ই কথা হতো। সিনেমা,গান,গল্পের বই,এনিমে,মাংগা,জীবন,সমাজ সব বিষয়ে বেশ জমতো। কিন্তু গল্প গুলো একদমই সারশুন্য হীন। ধীরে ধীরে কথা গুলো অন্যদিকে ঘুরতে থাকে।
একদিন রাতে ১১টা বাজে। ল্যাব থেকে শিহাব বাসায় যাবে। স্নো এর ভিতর সোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লিফট দেয় শিহাব।
“খুব ঠান্ডা,তোমার গাড়ি নাই?”
সোমা শিহাবের এই প্রশ্নের উত্তরে বলে, “নাহ,সবসময় বাস নিয়ে থাকি।কিন্তু আজ কাজ শেষ হতে দেরি হয়ে গেলো”
“এরকম হলে,আমাকে জানাবে।আমি প্রায়ই ল্যাবে রাতে থাকি। আমি লিফট দিবো”।
সোমা চুপ করে বলে “শুধু লিফট দিবে?”
গাড়ি ধীরে ধীরে স্লো করে ইমার্জেন্সি তে দিয়ে শিহাব সোমার দিকে ঝুকে যায় আর সোমা ও ওরদিকে এগিয়ে যায়। ঠোটের সাথে ঠোট মিলে যায়। এই বরফ ভেজা সন্ধ্যায় ভালোবাসার এই রূপ এর সূচনা দেখা যায়।
ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ভালোবাসার প্রকোপ। একজন আরেকজন এর বাসায় থাকে প্রায়ই। শিহাব এর রুমমেট রাশিক ভাই কিছুই বলেন না অবশ্য। উনি বেশিরভাগ সময় ল্যাবেই কাটান। রাতে রাতে হঠাত চিতকার চেচামেচি করেন।শিহাব তখন উনাকে ঘুম থেকে উঠায়। তাই লজ্জায় ল্যাবেই ঘুমান বেশির ভাগ দিন।রাশিক ভাইয়ের সম্পর্কে কেউই কিছু জানেনা।উনিও কারো সাথে মিশেন না,কথা বলেন না।শুধুমাত্র সোশাল মিডিয়ার গ্রুপ গুলোতে আছেন।কারো কোনো দরকার পড়লে কথা বলেন।
সোমা একাই থাকে একটা স্টুডিও এপার্টমেন্টে। এই মিডওয়েস্ট সবকিছু এতো সস্তা যে কোনো বেপারই না। সব খরচ করেও সোমা দেশে তার কলেজ শিক্ষক বাবা কে ৫০০ ডলার পাঠাতে পারে। তার মা হাউজ ওয়াইফ। সোমার অনেক স্বপ্ন গ্রাজুয়েশনের জন্য বাবা মা কে আমেরিকায় আনবে।অবশ্য এই মুহুর্তে মা এর নামে নিউইয়র্কের আত্মীয় স্বজন দের ইমিগ্রেশন কেস চলছে যেকোনো গ্রিন কার্ড চলে আসতে পারে। সোমা অনেক চিন্তা করে পড়তে এসেছিলো। কিন্তু এইখানে আসার পর আর পারছেনা। ফোকাস করতে কষ্ট হয়। তলপেট থেকে শুরু করে সব গরম হয়ে থাকে সারাক্ষন। মাথার ভিতর শিহাবের কথা ঘুরতে থাকে। এটা সোমার প্রথম সম্পর্ক। দেশে পছন্দ ছিলো অনেক। কিন্তু এইটাই প্রথম সম্পর্ক। শিহাব তার প্রথম পুরুষ। নিঃশ্বাস আটকে আসে আর মাথা ঝিমঝিম করে কেমন জানি।
তাই সে মাথা ঠিক রাখতে পারেনা একদমই। কোনোরকম পাশ করে যাচ্ছে।পিএইচডি করার স্বপ্ন থেকে এখন তার চিন্তা মাস্টার্স করে জব,বিয়ে,বাচ্চা।
আর সেইসাথে শিহাব কেও চাই তার। বালের পিএইচডি করে কি হবে? শিহাব এর দরকার নেই পৃথিবী বদলানোর। শিহাব কে সোমার নিজের করে চাই। ওকেও মাস্টার্স করায় বের করে নিতে হবে। হোক, ওর বড় বড় স্বপ্ন আছে। তাতে কি হইছে?
শিহাব কে বুঝতে হবে, পিএইচডির স্বপ্ন বেশি বড় নাকি সোমাকে ওর জীবনে রাখাটা বেশি বড়?
সোমা ভাবে “শিহাব নিশ্চয়ই আমাকে চাইবে”
তারপর সোমা ভাবে, যদি তারপরেও শিহাব আমাকে না চায়,পিএইচডি করতে চায়,তাহলে?
ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে হবে। এই এপার্টমেন্ট এ নিয়ে আসতে হবে। টেবিল চেয়ার ছাড়া ও কিভাবে কাজ করবে? আমার বাবা মা আসলে সব দায়িত্ব ওর হাতে দিয়ে দিবো। সব খরচ ওর হাতে চাপায় দিবো। তখন বুঝবে পড়াশোনা করার অবস্থা ওর আর নাই। চাকরি দরকার এইসব খরচ চালানোর জন্য।তখন ও জব করবে এবং আমাকে আর পরিবার কে সময় দিবে।এইটা ওর জন্যেই দরকার। এটাই ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স।
রাশিক চিতকার করে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলো। ভাগ্যভালো ল্যাবে ঘুমাচ্ছে। নাহয়, শিহাব কে আবার উঠতে হইতো। শিহাব দুপুরের দিকে ল্যাবে যায়। সন্ধ্যায় খেয়ে দেয়ে ঘুম যায় আর ভোরে উঠে পড়ালেখা করে। তারপর ল্যাবে যায়। রাশিক ঘুম থেকে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা মনে পড়ে যায়।
ও একটা কমন দুঃস্বপ্ন দেখে। প্রায় প্রতি রাতেই এটা দেখে।
একটা পাহাড়ের ভিতর দিয়ে রাশিক হেটে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। কাপড় চোপড় সব ভিজে আছে। সূর্যাস্ত এর সময় সব কিছু হলুদ আলোতে ছেয়ে গিয়েছে। কেউ যেন জোর করে টিভির রিমোট জীবনের স্যাচুরেশন বাড়ায় দিছে। রাশিক স্বপ্নের ভিতর খোড়াচ্ছে। কিছুক্ষন হাটার পর সামনে একটা লেক দেখতে পায়। লেকের পানি লাল। পাহাড়ের প্রান্তে গাছের পাশে রাশিকের স্ত্রী তাকায় আছে ওর দিকে।তার চারিদিকে কচু পাতা সবুজ রঙের গাছ থেকে ফাস দেওয়া লাশ ঝুলছে। হালকা বাতাসে নড়ছে লাশ গুলো।
রাশিকের স্ত্রী কাদতে কাদতে বলে, “কেন ? কেন? কেন মারলে আমার মেয়ে কে?”
রাশিক বলে, “তুমিই তো বললে ইমিগ্রান্টের বউ হইতে চাও নাই। বাচ্চা কে চাও নাই তখন। আমাকে আর পরিবার কে গালাগালি করলে। আমাকে পুরুষত্বহীণ বললে প্রেগন্যান্ট করে দিছি বলে।তুমিই তো সাইন করে দিলা ডাক্তারের অফিসের কাগজে।”
“চুপ কর। তুই খুনী। তুই একটা খুনী।”
এই কথা বলে রাশিকের স্ত্রী চিতকার করে কান্না শুরু করে মাটিতে বসে। এই কান্নার আওয়াজেই কিনা রাশিক হঠাত করে খস খস আওয়াজ শুনে। ঝুলতে থাকা লাশ গুলো নড়তে থাকে। আকাশ তখন হলুদ থেকে কড়া লাল হয়ে যায়। রক্তের মতো টকটকে লাল আকাশ কে পিছনে রেখে ঝুলতে থাকা লাশ গুলো কালো আলখাল্লা পড়ে চিতকার করতে থাকে
“খুনী,খুনী।তুই একটা খুনী”
লাশ গুলোর চোখ জল জল করতে থাকে।লাশ গুলোর গলা সে চিনতে পারে। সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সময়ের পরিচিত রা। সবাই এরা মৃত।বিভিন্ন রাজনৈতিক কনফ্লিক্টে সময়ে সময়ে মারা গিয়েছে এরা রাশিকের চোখের সামনে।
ঝুলন্ত লাশ গুলো স্ট্রাগল করতে থাকে গলার ফাস ছিড়ে রাশিকের কাছে আসার জন্য।রাশিকের স্ত্রী চিতকার করতে থাকে। রাশিক্ তখন ভয়ে দৌড় দিয়ে লাল রক্তের মতো রঙের পানির লেকে লাফ দেয়।
পানি ছিল হাটু পানি। ডুব দিয়ে আবার রাশিক উঠে দাঁড়ায়। কে জানি রাশিকের আংগুল ধরে টান দেয়। ও পিছনে তাকায়।সাদা কালো ফ্রক পড়া একটা বাচ্চা রাশিকের আংগুল ধরে টান দেয়।
“বাবা,আমাকে মেরে ফেললা কেন?কি দোষ ছিলো আমার?”
“বাবা,বাবা,বাবা।কথা বলছো না কেন?”
এইসময়েই রাশিকের ঘুম ভাঙ্গে।
রাশিক তার অতীত থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে অনেক বছর ধরেই। কিন্তু কেন জানি হচ্ছে না। নিজের স্মৃতি থেকে পালিয়ে কোথায় যাবে আসলে? ল্যাবের একটা মেশিনের আওয়াজে তার একদিন প্যানিক এটাক হয়ে গিয়েছিলো কারন সেটার আওয়াজ অনেকটা পিস্তলের ট্রিগার চাপ দেওয়ার মতো।
রাশিকের স্ত্রী এইখানেই ছিলো। কিন্তু ছয় মাস আগে মারা গেছে ।
আসলে এবরশনের জন্য বেপারটা হয়েছিলো তা নয়। এবরশন এর ডিসিশন টা খুব কঠিন হওয়া স্বত্তেও দুইজন মিলে নিয়ে নিতে পেরেছিলো। কিন্তু অতীত যখন ফিরে আসলো তখন সবকিছুই সমস্যাক্রান্ত হয়ে গেলো।
কয়েক মাস আগে,
নতুন একটা মেয়ে মুভ করলো এই শহরে। যে কিনা রাশিকের পুরনো বান্ধবীর রুমমেট ছিলো। এই মেয়ে রাশিকের অতীতের সবকিছুই জানতো। পরিবার, ড্রাগস,খুনোখুনি,নারী সবকিছুই রাশিকের বান্ধবী এই মেয়ের সাথে শেয়ার করেছিলো। উইকেন্ডের বাংলাদেশী দাওয়াতে গিয়ে প্রথম এই মেয়ের সাথে পরিচয় সবার। মেয়েটা সবার সামনে রাশিক কে জিজ্ঞেস করে উঠে।
“ভাই, আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি নাবিলার রুমমেট।নাবিলার সাথে আপনার আর যোগাযোগ আছে?”
সবাই চুপ হয়ে যায়।
মেয়েটা আবার জিজ্ঞেস করে, “ভাই, আমি সানিকা। আমি নাবিলার রুমমেট। আমাকে চিনছেন?”
রাশিক একবার তার স্ত্রীর দিকে তাকায়,আরেকবার বাকিসব বাংলাদেশী দের দিকে তাকায়। রাশিকের স্ত্রী রাশিকের অতীত নিয়ে একদম কিছুই জানেনা।
রাশিকের স্ত্রী তখন মেয়েটা কে বলে, “আপনি মনে হয় ভুল করছেন”
মেয়েটা তখন বলে, “নাহ,আপনি রাশিক ভাইয়া না?”
রাশিক তখন একটা দ্বন্দে পড়ে যায়। সানিকা কে অস্বীকার করে আগায় যাবে। নাকি অতীত কে মেনে নিবে। নিজের স্ত্রী এবং সমাজের উপর এতটুকু ভরসা কি করবে?
রাশিক তখন বলে “হ্যা, সানিকা আমি তোমাকে চিনেছি।নাবিলা তোমার কথা বলতো। নাবিলার সাথে যোগাযোগ নেই অনেক বছর।”
রাশিক নিজের স্ত্রী কে কাছে টেনে এনে বলে “এই যে আমার স্ত্রী”
সানিকার মুখ লাল হয়ে গেলো লজ্জায়।
“স্যরি ভাইয়া।আমি বুঝি নাই। নাবিলা তো আমেরিকাতেই আসছে।তাই আপনি কিছু জানেন কিনা ভাবছিলাম।”
সানিকা লজ্জামুখ নিয়ে রাশিকের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে “ভাবী আমি খুবই স্যরি”।
রাশিকের স্ত্রী মুখ নামিয়ে ফেলে। লজ্জাতে ওর মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। রাশিক এর স্ত্রী হেটে বের হয়ে যায়। রাশিক ওর পিছে পিছে যায়।
দুইজনেই গাড়িতে উঠে। পুরো রাস্তায় দুইজন একদম চুপচাপ যায়। বাসায় গিয়ে কাপড় ছাড়ে একদম নীরব থেকে। এরপর আসে ঘুম।
মাঝরাতে রাশিকের ঘুম ভাংগে দূর থেকে ভেসে আসা কান্নার আওয়াজ থেকে।পাশে নাবিলা নেই। তড়াক করে রাশিক উঠে দাঁড়ায়। ট্রাউজার আর টিশার্ট গায়ে গলিয়ে দৌড় দিয়ে বাসার সামনে আসে। নাবিলা এপার্টমেন্টের সামনে বসে আছে ফোন হাতে।ফোনের আলোতে নাবিলাকে দেখতে মনে হচ্ছে সাদা মুখের জাপানিজ হরর মুভির ভূতের মতো। রাশিক ওর কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়।
কাদতে কাদতে তামান্না (রাশিকের স্ত্রী) বলে “তুই এত বড় কাহিনি লুকাইছিস কেন আমার কাছ থেকে?”
রাশিক কিছু বলেনা।
“তুই নাবিলা মাগী কে মনে মনে এখনো চাইতেছিস?”
রাশিক চুপ থাকে।
“এজন্য বাচ্চা নষ্ট করাইছিস?যাতে নাবিলা মাগীর পেট বাধাইতে পারিস?”
তামান্নার চিতকারে আশপাশের বিল্ডিং গুলোর মানুষেরাও সব বের হয়ে আসতে থাকে।এইখানে পিএইচডি স্টুডেন্টরা আর পোস্ট ডক রা থাকে বিভিন্ন দেশের। অনেকেই মাথা বের করে তাকিয়ে তামান্নার কান্না মাখা চিতকার শুনতেছে।
রাশিক বলে “বাচ্চা তুই নষ্ট করছিস।নিজের হাতে সাইন করছিস। ইমিগ্রান্টের বউ বানাইছি বলছিস”
তামান্না চিতকার করে “চুপ কর হারামজাদা। নাবিলার কথা ভুলতে পারিস নাই এখনো আমি জানি তো। ইন্সটাগ্রাম এ ঠিকই ওর ছবি দেখিস আমার পাশে শুয়ে থেকেই।”
রাশিক মোটেও শুয়ে শুয়ে নাবিলার ছবি দেখে না। আজকে সানিকা বলার পর সব সোশ্যাল এ নাবিলা কে খুজে দেখলো। আর কিছুই না।
কয়দিন পর তামান্না সুইসাইড করে গলায় দড়ি দিয়ে। ল্যাবের সিলিং থেকে।
রাশিক এর ঘোর কাটে ফোনের আওয়াজে। শিহাব ফোন দিছে।
(বাকি অংশ পর্ব ২ এ)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: হায় হায়---
তারপর----
২য় পর্ব দিয়ে দিন।

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ভাল লাগলো।

২৪ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৬

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ, ২য় পর্ব পড়ে নিবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.