নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার চিন্তা ভাবনার খোলা খাতা আপনাদের সবার ভালো লাগলে ভালো না লাগলে দুঃখিত

মুর্খদের সাথে তর্ক করতে ভাল্লাগেনা,মুর্খ দের এভয়েড করতে ভাল্লাগে

ধ্রুব অন্যকোথাও

আমাকে অমানুষ ডাকুন

ধ্রুব অন্যকোথাও › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতীত - দুঃস্বপ্ন ২

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:৩২

অতীত - দুঃস্বপ্ন (পর্ব -২)
-------
রাশিক এর ঘোর কাটে ফোনের আওয়াজে। শিহাব ফোন দিছে।
“হ্যা,শিহাব।কি খবর?”
“ভাইয়া, সোমার বাবা মা আসতেছেন পরশু দিন। আমি ওর সাথে বাজার করতে যাচ্ছি। আপনার জন্য কিছু লাগবে?”
রাশিক চিন্তা করে। কিছু জিনিস লাগতো কিন্তু কাউকে কিছু বলতে ওর ইচ্ছে করে না আর। তামান্নার কথা মনে পড়ে “কারোর থেকে কিছু নিবা না, দেওয়ার চিন্তা করবা সারাক্ষন”
রাশিক বলে, “অনেক ধন্যবাদ।কিছুই লাগবে না”।
সানিকা এর সারারাত ঘুম হয় নি।উইকেন্ডের সকাল। স্নো পড়তেছে। মাত্র বাংলাদেশ থেকে এসে এখনো খুব বেশি খাপ খাওয়াতে পারে নাই এইসব কিছুর সাথে। নতুন করে যেন নিজের শরীর কে এই পরিবেশের সাথে বেচে থাকা শিখাতে হচ্ছে। সানিকা খুবই সাধাসিধে শান্ত মেয়ে। খুব বেশি চাওয়া পাওয়া নেই। অল্প তেই খুশি থাকার চেষ্টা করতে থাকে। তবে কেন জানি আসার পর থেকে প্রচণ্ড ডিপ্রেশন চেপে ধরতেছে। প্রতিদিন মনে হয় ঘুম থেকে উঠে ফ্লাই করে দেশে চলে যাবে।
প্রতিবার থালা বাসন ধোয়ার সময় একবার দেশের কথা মনে পড়ে,রান্নার সময় মা এর কথা মনে পড়ে, চা খেতে গিয়ে যখন বিস্বাদ চা বানায় তখন ও দেশের বাসায় কাজ করা খালার কথা মনে পড়ে। এই যে ডাক দিলে খাবার, চা চলে আসতো ঘরে এটা খুব মিস করতেছে।
সারাদিন শুধু পড়ালেখা,ফেসবুকে দিন টা কাটতো। আর রাতের বেলায় শরীফের সাথে ফোনে ফোনে ভালোবাসার দেওয়া নেওয়া শুরু হতো। শরীফ ওর ক্লাসমেট ছিলো। এখন আমেরিকাতেই আছে। গার্লফ্রেন্ড হইছে সাদা চামড়ার। বিয়েও করে ফেলবে। মেয়ের বাড়ি মিশিগানের লেকের পাড়ে। ছবি গুলো অনেক সুন্দর। নীলাভ সবুজ পানির পাশে দাঁড়িয়ে শরীফ আর মেয়েটা চুমু খাচ্ছে এটা দেখে সানিকা ভিতরটা ভেংগে যেতে শুরু করে। এমন যেন একশ টা হাত ওর সারা শরীর ঘুরে এসে মুখের ভিতর ঢুকে ছুরি দিয়ে ওর কলিজা টা কে খুচিয়ে খুচিয়ে মারছে।এই অনুভূতি টা এক সপ্তাহ ছিলো।
বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে দিলো। শরীফ কে বাসাতেও পছন্দ করতো খুব সবাই। কিন্তু কিছুই আর হলো না। সানিকার স্টুডেন্ট ভিসা নেওয়াই ছিলো। দুই জায়গাতে এডমিশন হইছিলো। একটা ছিলো শরীফের কাছে আরেকটা ছিল দূরে।
দূরেরটাতেই চলে গেলো সানিকা।
সানিকার সাথে শরীফের শেষ কথা গুলো ছিল এরকমঃ
তোমার সাথে প্রেম করেছি ঠিক আছে।কিন্তু এমন তো না আমরা বিবাহিত ছিলাম। আমাদের ভিতরে তো তেমন কিছুই হয় নাই যে আমাদের সারাজীবন একসাথে থাকা লাগবে। ওগুলো আসলে ক্ষনিকের আকর্ষন আর শরীরের বেপার। আমার চেয়ে কত ভালো ছেলে আসবে তোমার জীবনে।দেখবা খালি।
কয়দিন পরে অবশ্য শরীফের এনগেজমেন্ট এর ছবি আসে। এক বছরের প্রেমের ফসল আজকে তুললাম।
তার মানে সানিকার সাথে “সম্পর্ক”থাকার সময়ে এসব করেছে শরীফ। নাবিলার বেপার টা মনে পড়ে যায় সানিকার। নাবিলা তার রুমমেট কত রকমের কত ছেলের সাথে কত জায়গায় গিয়েছে, আর সে এত ভালো থেকে তার কি লাভ টা হইলো? মাত্র একটা ছেলের সাথে প্রেম করেছে।তাও হইলো না কিছু।
এখন একটা হাজব্যান্ড যোগাড় করতে না পারলে যে কি হবে ওর।
একা জীবন টার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবো কি? এগুলো ভাবতে ভাবতে সানিকা বিছানা থেকে উঠে। বাসার চারিদিক সাদা হয়ে আছে। কি যে করবে সারাদিন বুঝে উঠতে পারছেনা।হঠাত করে সানিকার রুমমেট এক সাদা বিদেশী মেয়ে এসে খুব এক্সাইটেড ভাবে বলে “দেখো দেখো।কি সুন্দর স্নো পড়ছে।চলো আমরা বের হই।”
সানিকার এখনো ইংরেজী বুঝতে কষ্ট হয়। নাটক সিনেমা দেখে অনেক খানি বুঝে কিন্তু বিভিন্ন এলাকার টান গুলো বুঝতে কষ্ট হয়।
“স্যরি,বুঝি নি।”
মেয়েটা বুট পড়ে রেডি হইতে থাকে।
“আমি এরিজোনা থেকে এসেছি।ওইখানে নর্থ ছাড়া কোনো স্নো নাই। এরকম স্নো আমি এত কাছ থেকে দেখি নাই। তুমি কোত্থেকে আসছো?ওইখানে স্নো হয়?আমার সাথে চলো বের হই।”
সানিকা বলে “না,আমাদের ওইখানেও স্নো হয় না।চলো বের হই”।
শীতের কাপড় পড়ে দুইজনেই বের হয়। স্নো বল ফাইট থেকে শুরু করে স্নো এর ভিতর শুয়ে থাকলো,দৌড়াদৌড়ি,হাটাহাটি সবই করলো। মাঝপথে ওদের তিন নাম্বার রুমমেট যোগ দেয়।আফ্রিকান এই মেয়েটাও কোনোদিন স্নো দেখে নাই।
ঘন্টা খানিক এভাবে চললো। এরপর মেয়ে গুলো বললো “চলো পাবে যাই”।
সানিকা ইতস্তত করে, “পাবে গেলে কি মদ খেতে হবে?”
“তোমার ইচ্ছা না করলে খাবা না।কেউ কিছু বলবে না।সাধারন খাবারও পাওয়া যায় ওইখানে।”
সানিকা ওদের সাথে যায়। বেশ ভালো লাগে। এতদিনে এসে আমেরিকা ওর কাছে জমজমাট লাগা শুরু করে। নতুন অনেকের সাথে পরিচয় হয়। একটা ছেলেকে একটু করে ভালোও লেগে যায়। ওরা ফোন নাম্বারও আদান প্রদান করে। ছেলেটা এখানেই পিএইচডি করছে।
সানিকা স্বপ্নের মতো একটা দিন কাটায় বাসায় ফিরে।
ফেসবুকে শরীফের মেসেজ।
“হাই”
সানিকার বুক কেপে উঠে।কি করবে,কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। মেসেজ আইকনে শরীফ আর তার ওয়াইফের ছবি আবার ওইদিকে এত রাতে তাকে মেসেজ দিচ্ছে।
সানিকা লিখে
“হাই?”
“কি খবর?”
“এইতো”
“তুমি নাকি আমেরিকাতে আসছো?বিয়ে করে আসলা নাকি?”
“নাহ,একাই”
“কোথায় আসলা?”
“এইতো আসছি আর কি এক জায়গায়,তুমি জেনে কি করবা?”
“নাহ,জেনে রাখি”
“নাহ”
“আমার প্রতি রাতে তোমার কথা মনে পড়ে।তোমার কি আমার কথা মনে পড়ে?”
সানিকার অভিমানে চোখে পানি চলে আসে। আবার বুকের ভিতরেও ধুকধুক করতে থাকে। কথা পরের টা খুব সাবধানে বলতে হবে।
শরীফ মেসেজ দিতে থাকে
“আমার ওয়াইফ তোমার চেয়ে অনেক সুন্দরী কিন্তু কথা বলার কিছু নাই।একদম বিরক্তিকর।”
সানিকার রাগ উঠতে থাকে এখন।আবার মনে মনে একটু আশাও দেখা যায়।
শরীফের মেসেজ আসতে থাকে
“তোমার সাথে কথা বলার আনন্দ টাই অন্যরকম ছিলো। কতকিছু জানতা তুমি। টিভি সিরিজ থেকে শুরু করে বই সবকিছু নিয়ে কথা বলা যাইতো।একটা মনের মিলের বেপার ছিলো।সবকিছু আমরা একইভাবে চিন্তা করতাম”
সানিকার চোখে পানি টপটপ করে পড়তেই থাকে।এগুলো কেন বলতেছে শরীফ? কেন?
কিন্তু রাগ টাও ভিতরে ঘুরতে থাকে।
শরীফের মেসেজ আসে,
“সুন্দর হলেও কি আর। তোমার মতো না আসলে।কি বেপার উত্তর দিচ্ছো না কেন?”
“কি উত্তর দিবো?”
সানিকার মন ট একটু কেমন জানি হয়ে আসে। একটু আশা দেখে মনে হচ্ছিলো।
শরীফ এরপরের মেসেজ টা সবকিছু শেষ করে দেয়
“তুমি খুব স্পেশাল কিছু জিনিস করতে পারতা। যেটা আসলে আমি আর পাচ্ছিনা।”
এরপরে একটা পূর্নাংগ শিশ্নের ছবি পাঠায় শরীফ।
সানিকা হতভম্ব হয়ে যায়।
“এটার কথা মনে আছে?কিভাবে চুষে দিছিলা গাড়িতে?আমি ভুলতে পারতেছিনা”
সানিকার চোখের পানি বন্ধ হয়ে যায়।
“আমি তোর বেশ্যা না,খানকির পোলা।”
সানিকা এরপর ব্লক করে দেয় শরীফ কে। সব প্লাটফর্ম থেকেই ব্লক করে ওকে। সানিকা ভাবতে পারেনা এই ৭/৮ বছরের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত এই ব্লোজবে পরিসমাপ্তি।এটাই তার ৭/৮ বছরের সম্পর্কের লিগেসি। একমাত্র জিনিস যেটা শরীফ মনে রাখছে? জাস্ট ব্লোজবের জন্য সানিকা কে শরীফের মনে লেগে আছে?
এ কেমন জীবন?
সানিকা উঠে দাঁড়ায়। আজকের ছেলেটাকে টেক্সট করে। ওর সাথে কথা বলা শুরু করে। আর পিছে তাকাবে না সানিকা, ঠিক করে। অতীত কে মাঝে মাঝে গুলি করে মারা দরকার, নাহয় অতীত উঠে এসে পিঠে ছুরি মারার ক্ষমতা রাখে।
শিহাব গাড়ি চালাচ্ছে।সূর্যাস্তের আলো গাড়ির জানালা দিয়ে চুইয়ে পড়ছে । গাড়িতে পিছনে সোমার বাবা এবং মা বসে আছেন। সোমা শিহাবের সাথে না এসে ল্যাবে গিয়েছে।ইমার্জেন্সি কাজে।যদিও সেটা শিহাবের বিশ্বাস হয় নি।তার বাবা মা এর সাথে একলা টাইম কাটানোর ব্যবস্থা করছে সোমা। চুপ করে। শিহাব বরফ ঠান্ডা স্লাশি খাচ্ছে। বেসিকালি বরফের গুড়ো। এগুলো খাচ্ছে কারন শিহাবের মেজাজ প্রচন্ড রকমের খারাপ। এই দুই বুড়ো বুড়ি মেজাজ টা খারাপ করে দিছে। এই এক সপ্তাহ উনাদের কে নিয়ে ল্যাবের কাজ বাদ দিয়ে দিনে রাতে ঘুরছে। পাহাড়,নদী,লেক,রেস্টুরেন্ট, দাওয়াত সবখানেই নিয়ে গেছে আর নিয়ে আসছে।
কিন্তু বিয়ের জন্য ইনকোয়ারি করতেছে কিন্তু পিসড অফ করে দিচ্ছে।
“বাবা মা এর রোজগার কত? আত্মীয় স্বজনেরা কি করে? এই বাজে স্টেট থেকে মুভ করে কবে নিউ ইয়র্কে আসবা? বিয়ে, বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে কি চিন্তা সোমার?
সোমার সমান থাকতে আমার এম এ ডিগ্রি শেষ, বাচ্চাও ছিলো একটা।”
শিহাব এক বাক্যে উত্তর করে যাচ্ছিলো প্রতিটা কথার। প্রতিটা উত্তর দিয়ে শিহাব নখ দিয়ে স্টিয়ারিং হুইল জোরে খামচে ধরছিলো।দাগ পড়ে যাচ্ছে সেইখানে।রাগ উঠলে শিহাব এই কাজ টা করতে থাকে। অজস্র খামচির দাগ স্টিয়ারিং হুইল আর তার আশপাশে।শিহাবের বাবা তেমন কিছু করেন না। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরে নিজেকে আরো অদৃশ্য মনে হতে থাকে শিহাবের নিজেকে। যেনো শিহাব কেউ না। শিহাবের প্রশ্নের প্রতিটা উত্তরে সোমার বাবা মা এর রিএকশন গুলো, দীর্ঘশ্বাস গুলো শিহাবের কানে আসতে থাকে। সে বুঝতে থাকে কত বড় ভুল করেছে সে। কেন সোমার সাথে প্রেম করতে হলো তার?
এয়ারপোর্ট থেকে আর ১০ মিনিট দূরে, তখন সোমার বাবা আবার মুখ খুলেন।
“সোমা কে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারলে খুব ভালো লাগতো। নিউ ইয়র্কে আমাদের সব আত্মীয়। পুরা বাংলাদেশের মতো পরিবেশ। একটু নিশ্চিন্ত হতে পারতাম।
শিহাব আবার খামচে ধরে স্টিয়ারিং হুইল। রাগে দুঃখে হতাশায় মুখ টা কালো হয়ে গেছে। রিয়ারভিউ দিয়ে তাকায় দেখে সোমার বাবাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
কথা বলা শুরু করে আবার সোমার বাবা,
“পরশু দিন ওই আমার বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম তাদের কে আমার খুব ভালো লাগছে। অন্য অনেকে আছে অতিথি আসলে এক পর্যায়ে মুখ কালো করে ফেলে। কিন্তু ওরা পুরো সময়ে হাসিমুখে আমাদের আপ্যায়ন করলো।কি যে ভালো। ওরকম কারো সাথে সোমার বিয়ে দিতে পারলে খুব ভালো হতো। বিয়েশাদী অবশ্য আল্লাহর হাতে। “
এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আবার সবাই চুপ। এয়ারপোর্টে নেমে শিহাব লাগেজ নামায় দিলো উনাদের। উনারা বিদায় নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো।
শিহাব কিছুক্ষন গাড়িতে চুপচাপ বসে থাকলো। সোমাকে টেক্সট দিলো, উনারা এয়ারপোর্টে। আমি আজ রাতে আর আসবো না।আমার বাসায় থাকবো।”
গান ছাড়লো।
মবি এর “শট ইন দা ব্যাক অফ দা হেড”
Instrumental….
গাড়ি নিয়ে রওনা হলো। অন্ধকার হয়ে গেছে চারিদিকে। পুরান গাড়ির হেডলাইট দুর্বল। শিহাবের চোখ ঝাপসা হয়ে আসতে থাকে। এত টা অপমান কোনোদিন ওর লাগে নাই। পুরো গা যেন ময়লা হয়ে গিয়েছে।বাসায় গিয়ে ডলে ডলে এত অপমান আর লজ্জা ধুয়ে ফেলতে হবে সব।
শিহাবের হঠাত ইচ্ছা করলো বাবা মা কে ফোন দিয়ে গালাগালি করতে। কেন এরকম লুজার বানাইছে আমাকে? শিহাবের এক্স গার্লফ্রেন্ড এটা করতো। শিহাবের একবার রেজাল্ট খারাপ হলো তখন তার এক্স গার্লফ্রেন্ড বললো তোর মা কে এখুনি ফোন কর। আর বল “আমাকে লুজার বানাইছেন কেন? নিজেরা লুথা বলে আমাকেও বানাতে হবে নাকি?”
প্রেমের টানে ব্যক্তিত্বহীন হয়ে শিহাব কল দিয়ে এসব বলে। এটা দেখে এক্স গার্লফ্রেন্ড বলে “আমি বলছি বলে কি কল দেওয়া লাগবে? অকৃতজ্ঞ সন্তান তুই”
শিহাব ফোন রেখে দেয়।
সোমা কে কল দেয়। সোমা কেটে দেয়। টেক্সট দেয়।
“আমি অনেক ব্যস্ত। কথা বলতে পারবো না”
শিহাব টেক্সট দেয় “ ওকে। তবে আমাকে কল দিও না আর কোনোদিন। আমাদের ভিতর আর কিছু নাই”
এটা লিখে শিহাব ফোন রেখে গাড়ির সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে বিশাল এক হরিন।শিহাবের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো আত্মার গভীরে সব দেখে ফেলছে। গাড়ি থেকে মাত্র ৫-৬ ফিট দূরে। কড়া ব্রেক দেয় শিহাব। কিন্তু কাজ হয় না। গাড়ি টা ঘুরানোর চেষ্টাও চলে। গাড়িটা হালকা ঘুরে যায় কিন্তু তাও হরিনের গায়ে সজোরে গিয়ে ধাক্কা লাগে শিহাবের গাড়ির। নিয়ন্ত্রন হারিয়ে গাড়িটা ঘুরে হাইওয়ের পাশে খাদে পড়ে যায়। শিহাবের আর কিছু তখন মনে নাই।
শিহাবের ঘুম ভাঙ্গে হাসপাতালে। রাশিক তার পাশে বসা।
শিহাব উঠতে গেলে রাশিক দৌড় দিয়ে ডাক্তার আর নার্স ডেকে আনে।ওরা শিহাব কে থিতু করে।
শিহাবের সারা শরীর ব্যান্ডেজ এ মোড়ানো।
শিহাবের সময় লাগে স্বাভাবিক হতে।
স্বাভাবিক হওয়ার পর প্রথম প্রশ্ন ছিল “সোমা কই?”
রাশিক গম্ভীর ভাবে বলে “নেই”
“মানে?”
“নিউ ইয়র্ক চলে গেছে গতকাল,ব্যাগ বোচকা সব নিয়ে।”
শিহাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে “অবাক হলাম না”
রাশিক বলে “অবাক হইও না। আমরা ছেলেরা একরকম ভয়ানক।মেয়েরা অন্যরকম।একটা ঘটনা বলি।
আমার তখন ভয়ংকর কাজের চাপ।তোমার ভাবির সাথেও টুকটাক গেঞ্জাম চলতেছে। ল্যাবে আসছি। সেই সকালে আসছি মাঝখানে টেক্সটিং হইছে তোমার ভাবীর সাথে কিন্তু কথা হয়নাই।রাতের বেলা হঠাত ফোন।”
কান্নামাখা কন্ঠে তোমার ভাবি বলে “আমি এয়ারপোর্টে যাচ্ছি।দেশে চলে যাবো। তোমার সাথে এভাবে আর থাকা যাবে না।”
“আমি বোকা হয়ে যাই।দৌড় দিয়ে গাড়ি নিয়ে ১ ঘন্টা দূরে এয়ারপোর্টে যাই। ওইখানে তন্নতন্ন করে ওকে খুজি। এরপর আমাদের বাসায় যাই। বাসা লন্ডভন্ড। আমার পরিবারের সব ছবি টুকরো টুকরো করে ছিড়া।আমি ওকে না পেয়ে চলে যাই বাসা থেকে।ল্যাবের মেঝেতে ঘুমাই।পরের দিন মিটিং এ দেখি তোমার ভাবীর কল। ও স্যরি বলতেছে।কারন ও আসলে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আসলে ক্লজেটে লুকিয়ে ছিলো।ওইদিকে ওর বাবা মা বোন দুলাভাই সবাই ওর কথা শুনে আমাকে ফোনে করতেছে আর বকতেছে”।
এটা বলে রাশিক হাসে।
“কিছুই করার নাই।তা তোমার এক্সিডেন্ট কেমন হলো?”
“হরিনের সাথে লেগে। এরকম বিশাল হরিন আমি আগে দেখিই নাই। কেন জানি মনে হচ্ছে হরিন টার সাথে এক্সিডেন্ট করায় আমার জীবন নতুন করে শুরু হলো।”
রাশিক বলে “আমারও এরকম এক্সিডেন্ট দরকার যাতে মনে হয় নতুন কিছু শুরু হলো জীবনে। রিস্টার্ট এর মতো।”
দুইজনেই জানালা দিয়ে বাইরে সূর্য ডুবতে দেখে।
------------
রাশিক পরে আর কোনোদিন বিয়ে করে নাই। এখনো ওর রাতে ঘুম ভাংগে দুঃস্বপ্ন দেখে। সেই বাচ্চা টা এখনো রাশিকের স্বপ্নে এসে জিজ্ঞেস করে “বাবা আমাকে খুন করলে কেন?”
শিহাব দেখে বিশাল এক হরিন ওর গাড়িকে পিছন থেকে আক্রমন করার জন্য ছুটে আসছে।
সোমা নিউ ইয়র্কের রাস্তার ফকির দের মাঝে প্রায়ই সারা গায়ে ব্যান্ডেজ দেওয়া শিহাব কে দেখে।
অতীতের দুঃস্বপ্ন গুলোই আমাদের ভবিষ্যতের পথ দেখায়। এরা কোনোদিন সাথ ছাড়ার নয়…

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২০

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর একটা পোষ্ট দিয়েছেন। পোষ্টটা পড়ে ভালো লেগেছে।
আপনি একজন অভিজ্ঞ মানুষ।

২৪ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৫

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং মূল্যবান মন্তব্যের জন্য

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২৯

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: গল্পটা দুর্দান্ত হয়েছে।+++

২৪ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৫

ধ্রুব অন্যকোথাও বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.