নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বচ্ছ বিনোদনের প্রতিশ্রুতি!

হীরক পাখি

মেহেদী হাসান আকিব

হীরক পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'এটাকামা\' নামক এলিয়েন কঙ্কালটির রহস্য

০৯ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫৫

প্রায় তের বছর আগে, ১৯ শে অক্টোবর ২০০৩ সালে অস্কার মুনজ নামের এক লোক চিলির ‘এটাকামা’ মরুভূমিতে খুঁজে পায় ভীষণ অদ্ভুত একটি জিনিস।

মিডিয়ার বদৌলতে চারদিকে খবরটি ছড়িয়ে পড়ল যে এলিয়েনের কঙ্কাল আবিস্কৃত হয়েছে! আর এই তথাকথিত এলিয়েন কঙ্কালটি 'এটাকামা' নামে পরিচিতি পেয়ে গেল। এটাকামা নামক কঙ্কালটি সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছয় ইঞ্চি লম্বা বল পয়েন্ট কলমের সমান একটি আস্ত কঙ্কাল। কঙ্কালটি দেখতে অবিকল মানুষের মত, তবে মাথাটা দেহের অনুপাতে বেশ বড় এবং সামনের দিকে ঝোঁকা। দেহের সাথে মাথার খুলির অনুপাত মানুষের চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশি এবং উপরের দিকে স্ফিত। চোয়ালের হার এবং অক্ষিকোটরের গঠনও বেশ অস্বাভাবিক। কঙ্কালটি দেখতে আসলেই অনেকটা কাল্পনিক 'এলিয়েনের' মতোই। 

আবিষ্কারের দশ বছর পর কঙ্কালটি উন্মুক্ত করা হয় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য। পৃথিবীর বিখ্যাত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী ছয় মাস ধরে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় এটাকামা কঙ্কালটির উপর। প্রথমেই বিজ্ঞানীরা যেটা দেখেন সেটা হলো কঙ্কালটি আসল না নকল। তারা বুকের পাজরের অস্থিতে অস্থিমজ্জার প্রমান পান এবং সিটিস্ক্যানে পরিস্কার ভাবে হাড়-এর বৈশিষ্ট্য যাচাই করেন। সিটিস্ক্যানে তারা কঙ্কালটির বক্ষ কোটরে ফুসফুস এবং হৃদপিন্ডও দেখতে পান। তারা বুঝতে পারেন, গোটা প্রাণীটিই কোনো না কোনো ভাবে মমিতে পরিনত হয়েছে। এভাবে, শুরুতেই তারা নিশ্চিত করেন যে কঙ্কালটি নকল নয়, আসল।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে কঙ্কালটি হয়ত অপরিণত গর্ভপাতে নষ্ট হওয়া মানব শিশু যা কোনো কারণে মমিতে পরিনত হয়েছে; অথবা কঙ্কালটি কোনো শিম্পাঞ্জি বা বানরের; অথবা এলিয়েনেরও হতে পারে! একটা অপরিপূর্ণ মানব শিশু বা ফিটাস এর কঙ্কাল এর দৈর্ঘ্য ছয় ইঞ্চি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

তবে কঙ্কালটির এক্স-রে রিপোর্ট অনুযায়ী ওটা কোনো ফিটাসের কঙ্কাল হতে পারে না। কঙ্কালটির অস্থি এবং অস্থিসন্ধি সম্পূর্ণ ভাবে সুগঠিত এবং পরিপক্ক, এবং সেই সাথে নিচের পাটিতে দাঁতও রয়েছে! গর্ভাবস্থায় একটা মানব শিশুর হাঁটু থাকে তরুনাস্থি দিয়ে গঠিত। ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৬-৭ বছর পর এই তরুনাস্থি শক্ত অস্থিতে পরিনত হয়। এক্স-রে’তে দেখা এটাকামার হাঠুর গঠন সম্পূর্ণ ভাবে মিলে যায় ৬ থেকে ৮ বছরের মানুষের হাঠুর গঠনের সাথে। অর্থাৎ এটাকামা কোনোভাবেই ফিটাস (গর্ভের শিশু) ছিল না। সে ছিল হেঁটে-চলে বেড়ানো ৬ থেকে ৮ বছরের কোনো মানুষ (অথবা এলিয়েন?) যার উচ্চতা ছিল মাত্র ৬ ইঞ্চি! আর বিজ্ঞানীদের বিস্ময় এখানেই। কেননা, ৬ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে কোনো মানুষ বাঁচতে পারে না। চিকিত্সা বিজ্ঞানের ইতিহাসে ডোয়ারফিজম রোগে ভোগা সবচেয়ে ছোটো যে মানুষটির সন্ধান পাওয়া যায় তার উচ্চতা ছিল ১ ফুট ৮ ইঞ্চি। অতএব, সব দিক বিচার করে বিজ্ঞানীগণ মনে করেন এটাকামা হয়ত অন্য কোন জেনেটিক মিউটেশন জনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

এক্স-রে তে দেখা যায়, এটাকামার পাঁজর এর হাড়ের সংখ্যা মাত্র দশ জোড়া; যেখানে মানুষের থাকে ১২ জোড়া। এটাকামার হাত পা এবং দেহের অন্যান্য অংশের গঠন স্বাভাবিক মানুষের মত হলেও মস্তিষ্কের গঠন একেবারেই মানুষের সাথে বিসাদৃশ্য! কেন এমন তার উত্তর আপাতত বিজ্ঞানীদের জানা নেই! 

তাহলে কি এটাকামা কোনো নতুন ধরনের মানুষরুপী প্রাণী ছিল যারা বসবাস করত ১০০ থেকে ১০০০ বছর পূর্বে এই পৃথিবীতেই। যদি তাই হয়, তাহলে তো আরো এটাকামার মত কঙ্কাল পাওয়ার কথা। বিজ্ঞানীরা আসলে এখন তাই খুঁজছে। তারা যদি আরো কয়েকটি এটাকামার মত কঙ্কাল আবিষ্কার করে তাহলে হয়ত উপরের প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে। আর যদি না খুঁজে পায় তাহলে কি ধরে নেয়া হবে যে এটাকামা আসলে ভিন দেশের কোনো এলিয়েনেরই কঙ্কাল?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.