নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুখ ফেরানো মুখ

দীপঙ্কর বেরা

আমি ভাষা বাংলা ভালোবাসি

দীপঙ্কর বেরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালীর ঐতিহ্য

২৩ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৪০

বাঙালীর ঐতিহ্য নিয়ে কিছু বলার আগে ভেবে দেখা দরকার আমরা সে অর্থে এখনো কতটা আর বাঙালী আছি। ভবানী প্রসাদ মজুমদারের ভাষায় 'জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।'
আচ্ছা বাঙালীর নিজস্ব ঐতিহ্য কি? দুর্গাপূজা ও অন্যান্য পূজাতে পরবে ভক্তি অঞ্জলি আলিঙ্গন, উৎসব, কীর্তন, তুলসীমঞ্চ, যাত্রা, নাটক, লালন গম্ভীরা চৌ লোকগীতি ভাটিয়ালি ইত্যাদি গান, রবীন্দ্রনাথ শরৎ থেকে শুরু করে বিপুল সাহিত্যসম্ভার, বিজ্ঞান চর্চা, পরচর্চা গসিপ, হাত পা ছড়িয়ে আও আও করে কত কথা বলে ফেলা, ছোট ছোট দেবালয়ের স্থাপত্য কীর্তি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখন এইসব ঐতিহ্যের বাঙালী চর্চা কতটা সরে গেছে তার কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক।
প্রথমত দুর্গাপূজা ও অন্যান্য পূজোতে পরবে শ্রদ্ধা ভক্তি ও অঞ্জলি কোলাকুলি উধাও। থিম ও আড়ম্বরে যা পুরোটাই ঢাকা পড়ে গেছে। তার সাথে পূজোর পাঁচ সাত দিন আগে থেকে বিসর্জন পর্যন্ত যে মাইকাসুর বিকট বিক্রমে ব্যাণ্ড পার্টি সহযোগে বাজতে থাকে তাতে বাঙালী ঐতিহ্যের ত্রাহি ত্রাহি রব ওঠে 'ছেড়ে দে না কেঁদে বাঁচি'। যদিও এই ঐতিহ্য বাঙালি অন্য কোন ভাবধারা থেকে আমদানি করে নি তবু বাঙালীর এ ঐতিহ্যে বাঙালীয়ানা থাকে না।
শুধু পূজো নয় নানান কারণে অকারণে বিকারণে ডিজে সহযোগে যে মাইকাসুর চলে তাতে মনে হয় বাঙালী কি সত্যিই গান ভালোবাসে? নাকি তা কেবল বাঙালীর হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার জন্যে গাওয়া হয়েছে? দিন নেই রাত নেই মাইকাসুর উপস্থিত।
এবার আসা যাক উৎসব। বাঙালী ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এত উৎসব আছে বলে তো মনে হয় না। সারা বছর নানা রকমের দেবদেবীর পূজো। সেইসাথে বিয়ে অন্নপ্রাশন জন্মদিন শ্রাদ্ধ এবং মেলা উদযাপন ইত্যাদি লেগেই আছে। আর সব কিছুর সাথে যুক্ত লাউড স্পীকার। উচ্চগ্রামে এ পাড়ায় ওপাড়ায় নয়তো রাস্তার ধারে মিছিলে ময়দানে। বাজতেই আছে বাজতেই আছে।
কিছু যাত্রা নাটক এখনো চলে তবে তা কমতে শুরু করছে। কেন না বাঙালীর ঠুনকো ভাবনায় ক্রমে গম্ভীর জীবনযাত্রা ঢুকে পড়েছে। চায়ের দোকানে আর সেই আলোচনা নেই। সবাই সতর্ক। এ পাড়ার বৌদি ও পাড়ায় পিসির সাথে কুচকাচালি পরচর্চা অথবা পরনিন্দা সেভাবে আর প্রাণ খুলে হয় না। কেন না প্রত্যেকের মধ্যে বিদেশী চর্চায় নিজের সংসার এবং শুধু নিজের নিজের গুছিয়ে নেওয়ার ভাবনা ঢুকে পড়েছে। বিয়ের আসরে যে আত্মীয়তার বাঁধনে খুঁনসুটিগুলো ছিল তাতেও এসে পড়েছে সতর্কতা।
স্বার্থের এত সতর্কতা বাঙালি মানসিকতায় আদৌ ছিল না। পুরান পাঁচালি লোক আখ্যানের সাথে সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামে ও সাহিত্যে বিজ্ঞানে শিক্ষায় মননশীলতায় যে বাঙালির পরিচয় পাই বর্তমানের বাঙালি ঐতিহ্যের সাথে যার কোন মিল নেই।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফাস্টফুডের সারি সারি দোকান দেখে মনে পড়ে যায় এখন আর কোন অনুষ্ঠানে বাঙালির অন্ন ব্যঞ্জন আর চোখে পড়বে না। বিভিন্ন বিদেশীয়ানী পদে বাঙালীর নিজস্ব ঐতিহ্য আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। বাঙালী গৃহস্থ আজ নিজে নিজেই ভাবছে 'ছ্যা ছ্যা, এই হল বাঙালী! বাদ দাও! বাদ দাও! 'রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করো নি?'
ছাতার মত গজিয়ে ওঠা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আর কোট টাই এর দৌলতে বাংলা ভাষা এমনিতেই অনেকটা পিছিয়ে পড়ছে। গুড মর্নিং আর গুড নাইটের দৌরাত্ম্যে 'কেমন আছো?' এ জাতীয় হৃদয় কথা হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেকেই ভুলে গেছে।
এবং এত সবের ভিড়ে জ্ঞানে পাণ্ডিত্যে মননশীলতা চিন্তা চেতনায় বাঙালি এখনও তার ছাপ রাখছে। তবে তা বাঙালি হিসেবে। বাঙালি ঐতিহ্য যদিও তার থেকে অনেকটাই সরে যাচ্ছে। তবে আশার কথা গাঁয়ে গঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় আজও বাঙালিয়ানা আছে। তার ঐতিহ্যে সে আবহমান প্রবাহিত হয়ে যাবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:১৯

মা.হাসান বলেছেন: চৌরঙ্গির ওখানে বিড়লা প্লানেটোরিয়ামে শো দেখলাম কদিন আগে। দিনে আটটা শো- ৩টা হিন্দি, ৩টা ইংরেজি আর দুটো বাংলা। দিনের প্রথম শো হিন্দিতে। অনুপম রায়ও গান গায় বাংলা আর হিন্দিতে মিশিয়ে (খুব ভালো গান, এবিষয়ে দ্বিমত করবো না) । পূর্ব বাংলায় সার্কাস-যাত্রা উঠে গেছে অনেক বছর। পাড়ায় পাড়ায় নাটকের বিষয়টা বর্তমান প্রজন্ম জানেও না। বিয়েতে খাবার মেনু রোস্ট-বিরিয়ানি, শেষ মাছ দেখেছি ১৭ বছর আগে। এর মাঝে বিখ্যাত একজন আবার মেয়ের বিয়েতে বার্গার দিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। বাঙালিয়ানার মাঝে বাকি আছে শুধু পরচর্চা, তাও চায়ের আড্ডায় না, ফেসবুকে। যাদুঘরে বাঙালি কর্নার খোলার বেশি দেরি নেই।

২৪ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:২৯

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: সঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:২৫

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: বাঙ্গালীর ঐতিহ্য এখন ইতিহাস।

২৪ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৩০

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৯ সকাল ৭:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: ঐতিহ্য সব সময় এক রকম থাকতে পারে না।

২৪ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৩১

দীপঙ্কর বেরা বলেছেন: পালটায় । তবে অনুসরণ করতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.