নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪৭

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪০

যুধিষ্ঠারাদির জন্মঃ



যম বা ধর্মদেব



মুনি বলেন -গান্ধারী যখন এক বছর গর্ভধারণ করলেন সেই সময় কুন্তী দূর্বাসার দেওয়া মন্ত্র জপ করে ধর্মকে আহ্বান জানালেন। সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম কুন্তীর কাছে এলেন। ধর্মের সঙ্গে সঙ্গমের ফলে কুন্তী গর্ভবতী হলেন। পরম সুন্দর এক পুত্র প্রসব করলেন সতী কুন্তী। ইন্দ্র-চন্দ্র সমান তার কান্তি, তেজ সূর্যের মত। তার আগমনে শতশৃঙ্গ পর্বত উজ্জ্বল হয়ে উঠল। দিন দুই প্রহরে পূণ্য তিথিতে, অতি শুভক্ষণে কুন্তীর পুত্র জন্মাল। সে সময় আকাশ থেকে দৈববাণী হল- সকল ধার্মিক শ্রেষ্ঠ এই পুত্র সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয়। ইনি হবেন মহারাজা। জগতের লোক তাকে পূজা করবে।



যুধিষ্ঠির



এত শুনে পান্ডু কুন্তীকে ডেকে বললেন –আকাশবাণী বলে দেবতারা জানালেন ধার্মিক, সুবুদ্ধি, শান্ত হবে এ নন্দন। কিন্তু ক্ষত্রিয়দের মধ্যে বলিষ্ঠকেই শ্রেষ্ঠ বলা হয়। ধার্মিক ব্রাহ্মণদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়। সে কারণে রাণী পুনরায় অন্য কোন দেবতার স্মরণ কর যাতে বলবান পুত্র হয়।





পবনদেব



রাজার কথায় কুন্তী চিন্তিত হলেন। দেবতাদের মধ্যে বলিষ্ঠ হলেন পবন। মন্ত্র জপে কুন্তী বায়ুকে স্মরণ করলেন। সাথে সাথে পবন সেখানে উপস্থিত হলেন। তাদের মিলনে যে পুত্র জন্মাল, জন্মমাত্র তার বিক্রমে জগত কেঁপে উঠল।

পুত্র প্রসব করে কুন্তী তাকে কোলে নিতে গেলেন। কিন্তু পর্বতের মত ভারি সদ্যজাতকে নারাতে পারলেন না। অনেক কষ্টে মাটি থেকে তুললেন, কিন্তু সহ্য করতে নাপেরে হাত খুলে গেল। পর্বতে পুত্র পরতেই পর্বত কেঁপে উঠল। শিলা, বৃক্ষ, গিরি, শৃঙ্গ চূর্ণ হল। বালকের চিৎকারের শব্দে বনবাসী জীবেরা আতঙ্কিত হল। বাঘ, সিংহ, মহিষাদি যত পশু ছিল, সবাই ভয়ে অন্য বলে চলে গেল।



বালক ভীম



এ সময় আবার দৈববাণী হল– কুন্তী ও পান্ডু এই তোমাদের পুত্র। যত বলিষ্ঠ আছে পৃথিবীতে সবার থেকে এই শ্রেষ্ঠ মহাবলধর-নির্দয়, নিষ্ঠুর এই দুষ্টজন রিপু, অস্ত্রেতে অভেদ তার বজ্রসম বপু।



সব দেখে শুনে পান্ডু বিস্মিত হলেন। কুন্তীও এই পুত্রকে দেখে আশ্চর্য মানলেন।



ভীম



এভাবে দুই পুত্রের জন্ম হল। একজন ধার্মিক, অন্যজন নির্দয়।



পান্ডু কুন্তীকে পুনরায় অনুরোধ করলেন সর্বগুণযুক্ত এক পুত্রের জন্য।

কুন্তী বলেন- কি ভাবে তা হবে! কোন দেবতাকে আরাধনা করলে তার স্বামীর ইছা পূর্ণ হবে।

পান্ডু তখন মুনিদের জিজ্ঞাসা করলেন এমন সর্বগুণযুক্ত কোন দেবতাকে আরাধনা করলে তিনি তেমন পুত্র পাবেন।



মুনিরা বলে –সর্বগুণযুক্ত হলেন দেবরাজ ইন্দ্র। তার সেবা করলে রাজার কামনা পূর্ণ হবে। মুনিরা আরো জানালেন ইন্দ্র বিনা তপস্যায় তুষ্ট হবেন না। তাই পান্ডুকে তার তপস্যা করতে হবে।



ইন্দ্রদেব



এত শুনে পান্ডু উর্দ্ধবাহু, একপদে দাঁড়িয়ে সারা বছর বায়ু সেবন করে ইন্দ্রের তপস্যা করলেন। তপে সন্তুষ্ট হয়ে বাসব/ইন্দ্র সেখানে উপস্থিত হলেন।

পান্ডুকে তিনি বর প্রার্থনা করতে বললেন। তার সর্বগুণসম্পন্ন পুত্র হবে আশির্বাদ করলেন। বর দিয়ে ইন্দ্র অন্তর্ধান হলেন।



তপস্যা শেষ করে পান্ডু কুন্তীর কাছে গিয়ে আনন্দের সঙ্গে জানালেন তুষ্ট হয়ে পুরন্দর/ইন্দ্র তাকে বর দিয়েছেন স্ববাঞ্ছিত ফল রাজা পাবেন, সর্বগুণ সম্পন্ন পুত্র তার হবে। তপস্যা করে পান্ডু ইন্দ্রকে প্রসন্ন করেছেন, এখন কুন্তী তাকে মুনিমন্ত্রে স্মরণ করুন।



স্বামীর আজ্ঞায় কুন্তী ইন্দ্রকে স্মরণ করলেন। দেবরাজ উপস্থিত হলেন। সঙ্গম করে ইন্দ্র বর দিলেন তার ঔরসে তার সমান পুত্র হবে।



পুত্রের জন্মমাত্র দৈববাণী হল- সুরাসুরে এই পুত্র হবেন মহাবীর। অদিতির যেমন নারায়ণ, তেমনি কুন্তীর এই নন্দন। পরাক্রমে সে হবে কার্ত্তবীর্য্যার্জ্জুন। তিনলোকে বিখ্যাত হবে পুত্রের গুণ। পৃথিবীর লক্ষ্য রাজাকে বাহুবলে জয় করে যুধিষ্ঠিরকে পৃথিবীর রাজারূপে অভিষেক করবে। ভাইদের নিয়ে তিনবার অশ্বমেধ করবে। ভৃগুরামের মত ধনুর্ভেদ শিখবে। দিব্যমন্ত্রে, দিব্যঅস্ত্রে পারদর্শি হবে। পৃথিবীর এমন কিছু নেই যা এই পুত্রের জ্ঞাতব্য নয়। পিতৃলোককে এই পুত্রই উদ্ধার করবে। খান্ডব দহন করে এ বৈশ্বানর অগ্নিকে তুষ্ট করবে।



যখন আকাশ থেকে এই দৈববাণি হচ্ছে তখন অমর/দেবতা, কিন্নর সবাই এলেন পুত্র দর্শন করতে। ইন্দ্রসহ সকল দেবতারা-চন্দ্র, সূর্য, পবন, শমন, হুতাশন, গন্ধর্ব, কিন্নর, সিদ্ধ ঋষিগণ, যত অপ্সরা, অপ্সর, একাদশ রুদ্র, ঊনপঞ্চাশ পবন, অশ্বিনীকুমারা আর বিশ্বাবসুগণ, যত অমররা এলেন, মহাকলোবর শুরু হল শূণ্যে। দক্ষ, আদি প্রজাপতিরাও এলেন। দেবাঙ্গনারা নৃত্য-গীত করলেন, গন্ধর্বরা গান করলেন, বিদ্যাধরীরা নাচলেন, ঝাঁকে ঝাঁকে পুষ্পবৃষ্টি হল। দেবতারা, ঋষিরা আশির্বাদ করলেন।



অর্জুন



সব দেখে পান্ডু ও কুন্তী আনন্দিত হলেন। সকল দুঃখ তাদের নাশ হল পুত্রের গুণ শুনে।



অনেকদিন পর একদিন পান্ডু একান্তে কুন্তীকে ধিরে ধিরে বললেন তার পুত্রকামনা এখনও পূর্ণ হয়নি। যদিও কুন্তীকে পুনরায় বলাও অন্যায়। কারণ চতুর্থ পুরুষে নারী হয় স্বৈরিণী এবং পঞ্চম পুরুষ হলে তাকে বারাঙ্গনা বলা চলে। তাই রাজা যদিও কুন্তীকে আর বলতে পারেন না পুত্রের জন্য, তবু তার পুত্র কামনা মনে থেকেই গেল।

.......................................

উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে

......................................

আগের পর্ব:



কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪৬

Click This Link

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

রাতুল_শাহ বলেছেন: অনেক দিন পর লেখা দিলেন।

আগের পর্বগুলো ভুলে গেছি।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৭

দীপান্বিতা বলেছেন: সত্যি, আমি নিজেও ভুলে যাচ্ছি...আবার জোর কদমে লেখা শুরু করতে হবে......ধন্যবাদ, রাতুল!

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৯

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
ভালো লাগলো, দিদি।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আশরাফুল ইসলাম দূর্জয়!

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৭

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: আপু খুব চমৎকার লাগে আপনার এই মহাভারত পর্বটা , আমার কাছে মহাভারত পিডিএফ ফরম্যাটে আছে , কিন্তু অনেক বড় আর জটিল , তাই আর পড়া হয়নি ।
আপনি সহজ ভাবে লিখেন ।

কিন্তু কিচ্ছু ই মনে থাকে না আগের পর্ব সব ভুলে গিয়েছি ।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০১

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, অদ্বিতীয়া!...মহাভারত এত্ত বড় যে মাঝে মাঝেই গুলিয়ে যায়, তবু ভাল লাগে যানতে..

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯

ঢাকাবাসী বলেছেন: খুব ভাল লাগল। চমৎকার লেখেন আপনি।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০১

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী!

৫| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১৮

জুন বলেছেন: দীপান্বিতা এত দিন পর আমাদের কথা মনে পড়লো তোমার ?
হু পান্ডুরাজ এর ছেলে লাভের গল্প পড়লাম । তুমি এত সুন্দর করে লিখ যে মহাভারতের মত জটিল বিষয়টিও সহজ সরল হয়ে পরে।
অনেক শুভকামনা তোমার জন্য, ভালো থেক অনেক অনেক :)

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৬

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, জুন! :)...খুব কুঁড়ে হয়ে গেছি...কতদিন যে মহাভারত টাইপই করতে বসি না! আজ খাতাপত্র নিয়ে বসেছি............ আপনাদের মন্তব্য যে আমাকে কি পরিমান অনুপ্রেরণা যোগায় বলে বোঝাতে পারবো না!

৬| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দারুণ পোস্ট!

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৭

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রোফেসর শঙ্কু!

৭| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৭

মনজুর মোরশেদ বলেছেন: অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়ে ভাল লাগলো। মহাভারতের নায়ক যদিও যুধিষ্ঠির কিন্তু সবচেয়ে উজ্জ্বল পুরুষ হলেন অর্জুন । অর্জুন বীর, কি্ন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে তার জয় এমনই অবধারিত যে রোমাঞ্চ হয় না।আমার কাছে মহাভারতের প্রতিনায়কের চরিত্রগুলো অনেক বেশি interesting মনে হয়।আশা করি আগামী লেখগুলিতে এদের নিয়ে কিছু লিখবেন ।

শুভেচ্ছা রইল।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৭

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, মনজুর মোরশেদ! ...... আমারও তাই মনে হয়...... ছোট থেকে কর্ণের গল্প এমন ভাবে শুনে এসেছি! ......কর্ণকে সেই ছোট্ট অপু ভালবাসতে শিখিয়েছে......আমি মহাভারত খুঁটিয়ে পুরটা পড়ে উঠতে পারি নি, যেটুকু পড়ি ততটাই লিখি, তো পড়ে অবাক হচ্ছি যে, যে চরিত্রগুলো এত পরিচিত সেগুলি ছাড়াও আরো অনেক আকর্ষণীয় চরিত্র ও গল্প মহাভারতে আছে, তবে আকারে বড্ড বড় বলে কেমন যেন ছড়িয়ে যাচ্ছে, আমি ঠিক যা পড়ে বুঝছি সেটাই লেখার চেষ্টা করছি...

৮| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৬

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
চমৎকার ভাষায় লিখেছেন। সাথে ছবি এড করায় আরও আকর্ষণীয় হয়েছে :)

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, নাজিম-উদ-দৌলা! :)

৯| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৫

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

পোস্টের লেখা আর উপস্থাপনায় মুগ্ধ +++++++++++++++ থাকল রাশি রাশি।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৯

দীপান্বিতা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, কান্ডারী অথর্ব! :)

১০| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৬

আরজু পনি বলেছেন:

মহাভারত পড়ার চেষ্টা করে বিফল হয়েছিলাম ।

পরবর্তীতে ব্লগে আসার পর দীপার কথাচ্ছলে মহাভারত আর প্রিয় ব্লগার দূর্যোধনই আমার মহাভারত নিয়ে কৌতুহলকে নিবৃত করতে অনেক সহায়তা করেছে ।


এই যে চালিয়ে যাচ্ছেন অসাধারণ দক্ষতায়, কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে পারছি না ।
দুঃখিত এই জন্যে যে, নিয়মিত আসতে পারি না অনেক সময়ই ।।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৩২

দীপান্বিতা বলেছেন: আমি সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি যে এত বড় একটা কাজে হাত দিয়েও সে ভাবে করে উঠতে পারছি না......আমার জ্ঞান খুবই সামান্য, এক সময় খেলাচ্ছলে লিখতে শুরু করি, এখনও লিখতে বসে আনন্দ পাই কিন্তু সময় দিতে পারছি না বলে খুবই দুঃখিত!......সামু ব্লগে এসেই জেনেছি বাংলায় ইন্টারনেটে লেখা যায়, এই ব্লগে এসেই কত বিষয় নিয়ে জ্ঞানার্জন করেছি!...এই ব্লগেই কিছু অসাধারণ মানুষকে চোখে না দেখেও, তাদের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি ভেবে নিজেকে ধন্য মনে হয়......এখানে এলেই ইমনভাইকে এমনভাবে মনে পরে, কি বলবো!......অবশ্যই আবার নিয়মিত লেখার চেষ্টা করবো, আশা রাখি...... অনেক ধন্যবাদ, আরজুপনি!

১১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৪

নুরুজ্জামান মানিক বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, নুরুজ্জামান মানিক!...... পরের পর্ব এসে গেছে :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.