নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭১

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪২

[ পূর্বকথা : বিশ্বামিত্র মুনি বশিষ্ঠ মুনিকে বিপদে ফেলতে বশিষ্ঠের যজমান ইক্ষ্বাকুবংশের রাজা কল্মাষপাদকে রাক্ষসে পরিনত করে বশিষ্ঠের পুত্র শক্ত্রিকে ও তার অন্য শতপুত্রকে হত্যা করান। শক্ত্রির পুত্র পরাশর পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাইলে বশিষ্ঠ তাকে শান্ত হতে বলেন...]



কৃতবীর্য্য-চরিত ও ভৃগুপুত্র ঔর্ব্বের বৃত্তান্তঃ



মুনি বশিষ্ঠ তাঁর পৌত্র পরাশরের পিতৃহত্যার প্রতিশোধ প্রতিহত করতে পূর্বের এক বৃত্তান্ত বলেন –



পুরাকালে কৃতবীর্য নামে এক রাজা ছিলেন। ভৃগুবংশের ব্রাহ্মণরা তাঁর পুরোহিত ছিলেন। রাজা অনেক যজ্ঞ-ক্রিয়া করতেন এবং তাঁর পুরোহিত ভৃগু বংশীয়দের প্রচুর ধনধান্য দান করতেন। এভাবে সব দান করে রাজা স্বর্গে গেলেন।



রাজার মৃত্যুর পর তাঁর বংশধর ক্ষত্রিয়দের অর্থাভাব হল। তারা ভার্গবদের ধরে এনে তাদের কাছে ধন ফেরত চাইলেন। ভয়ে ব্রাহ্মণরা অঙ্গীকার করল যার কাছে যত ধন আছে সব দিয়ে দেবেন তারা। ব্রাহ্মণদের ছেড়ে দেওয়া হল। গৃহে এসে ভার্গবরা বিচার করল। রাজ ভয়ে কেউ সব ধন ফেরত দিলেন। কেউ কেউ আবার ধন মাটিতে পুঁতে রাখল। বাকি সব রাজার সামনে রাখা হল। অল্প ধন দেখে রাজা রেগে গেলেন। অনুচরের মাধ্যমে সব জানা গেল। ঘরের ভেতর ব্রাহ্মণরা ধন পুঁতে রেখেছে। সৈন্যরা গিয়ে সব ঘর ঘিরে ফেললো। তারা ঘর খুঁড়ে সব ধন বার করে আনল।



এত ধন লুকিয়ে রেখেছে দেখে ক্ষত্রিয়দের রাগ হল। রাজা রেগে ভার্গবদের হত্যার নির্দেশ দিলেন। ক্ষুব্ধ ক্ষত্রিয়রা সকল ভার্গব ব্রাহ্মণদের হত্যা করল। বালক, বৃদ্ধ, যুবা যত ছিল, এমন কি দুগ্ধপোষ্য বালকদেরও মারা হল। গর্ভবতী স্ত্রীদের উদর চিরেও ব্রাহ্মণ হত্যা করল দুষ্ট ক্ষত্রিয়রা। ব্রাহ্মণ নগরে হাহাকার পরে গেল। স্ত্রীরা সকলে দেশান্তরি হতে লাগল।



এক ভৃগুবংশীয় ব্রাহ্মণ পত্নী গর্ভবতী ছিলেন। তিনি সন্তান রক্ষার জন্য ঊরুদেশে গর্ভ গোপন করে রাখলেন। ক্ষত্রিয়রা জানতে পেরে সেই গর্ভ নষ্ট করতে এল। মহা ভয়ে ব্রাহ্মণী সেখানেই প্রসব করলেন। দশ সূর্যের সমান তেজী দীপ্তমান পুত্র প্রসূত হল, তাঁর তেজে ক্ষত্রিয়রা অন্ধ হয়ে গেল। কিছু ক্ষত্রিয় ভস্ম হল। ভয়ে ক্ষত্রিয়রা জোড়হাতে ব্রাহ্মণীর স্তব করল। ব্রাহ্মণী পুত্রকে বলে সবার চক্ষুদান করলেন। প্রাণ পেয়ে ক্ষত্রিয়রা পালিয়ে গেল।





পিতৃপিতামহের হত্যার কাহিনী শুনে ভৃগুকুমার মহা ক্রুদ্ধ হলেন - দুষ্ট ক্ষত্রিয়রা অবিচার করে দ্বিজ ব্রাহ্মণদের মারল। বিধাতার এই দুষ্কর্ম জানি। সেজন্য ত্রিভুবন আমি বিনাশ করব।



এত চিন্তা করে মুনি ঘোর তপস্যা শুরু করলেন। অনাহারে ষাট হাজার বছর তপ করেন। তাঁর তাপে ত্রিভুবন তপ্ত হয়ে উঠল। সকলে হাহাকার করতে লাগল। দেবতারা মিলে যুক্তি করলেন। তাকে নিবারণ করতে তাঁর পিতৃব্যদের পাঠান হল।

ঔর্ব্ব সর্বলোক বিনাশে উদ্যত দেখে পিতৃগণ এসে বলেন – এত ক্রোধ কেন কর, বৎস! আমাদের জন্য বৃথা দুঃখ করছ। আমাদের মারার শক্তি কারও ছিল না। কর্মের লিখনে কাল উপস্থিত হয়ে ছিল। আমরা স্বর্গারোহণে উৎসুক ছিলাম, কিন্তু আত্মহত্যায় স্বর্গলাভ সম্ভব নয়, সেজন্য স্বেচ্ছায় ক্ষত্রিয়ের হাতে মরেছি। আপন মনে এদের ক্ষমা করে দাও। শম(শান্তি), তপ(তপস্যা) ও ক্ষমা ব্রাহ্মণের ধর্ম। আমরা কেউ তোমার এ ক্রোধ কর্মের সমর্থন করি না।



পিতৃগণের কথা শুনে ঔর্ব্বমুনি বলেন – আপনারা যা বললেন, তা আমি জানি। আগেই আমি প্রতিজ্ঞা করেছি তপস্যা করে সৃষ্টি ধ্বংস করব। বিশেষ করে ক্ষত্রিয়দের মারব। দুষ্টের দমন না করলে সংসার নষ্ট হবে। দুষ্টলোককে যদি শাস্তি না দেওয়া হয় তবে সমাজের অন্য লোকও সে পথে যায়। ক্ষত্রিয়দের কুকর্মের শেষ নেই। অল্প দোষে এত ব্রাহ্মণ মারল। আমি গর্ভে থাকতে, এত গর্ভবতীদের গর্ভ নষ্ট করল যে, মা আমায় ঊরুতে লুকাল। এসব কথা ভেবে আমার হৃদয় খান খান হয়। এমন দুষ্টদের শাস্তি না দিলে তারা দুষ্টাচার কোনদিন ত্যাগ করবে না। শক্তি থেকেও যদি শাস্তি না দিই তবে কাপুরুষ বলবে সংসারে। সে জন্য আমার ক্রোধ নিবৃত্ত হবার নয়। এদের উচিত শাস্তি দিতে পারলেই আমি শান্ত হব।



পিতৃগণ পুনরায় ঔর্ব্বমুনিকে বোঝালেন – ক্রোধ নিবৃত্ত করে, মন শান্ত কর। ক্রোধের মত মহাপাপ সংসারে আর কিছু নেই। তপ-জপ-জ্ঞান ক্রোধকে সংহার করে। বিশেষ করে তপস্বীর ক্রোধ চন্ডালের মত। এসব ভেবে আমরা চিন্তিত। তুমি বাপু, এবার ক্রোধ সংবরণ কর। আমরা সবাই তোমার পিতৃগুরুজন। আমাদের বাক্য লঙ্ঘন করো না। ক্রোধ নিবৃত্ত করার শক্তি যদি না পাও, এক উপায় বলছি শোন। ত্রিলোকের প্রাণ জলের মধ্যে। জল বিনা সংসার বাঁচে না। সে কারণে জলের মধ্যে তোমার ক্রোধানল ত্যাগ কর। জলকে হিংসা দিলে, সে হিংসা সবাই পাবে।



ঔর্ব্ব তখন বলেন – পিতৃগণের বাক্য লঙ্ঘন করব না।

তিনি সমুদ্রে তাঁর ক্রোধ ত্যাগ করলেন। এখনও সেই মুনির ক্রোধানলের তেজে দ্বাদশ যোজন নিত্য পোড়ে সিন্ধু মাঝে।



বশিষ্ঠ বলেন – এই হল পূর্বের কাহিনী। এত অপরাধ ক্ষমা করলেন ঔর্ব্বমুনি।

....................................

উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে

......................................

আগের পর্ব:



কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭০



Click This Link

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৭

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ভাল লাগলো মহাভারত ।+

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, সেলিম আনোয়ার! .........নতুন বছরের শুভেচ্ছা নেবেন :)

২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৯

তুষার কাব্য বলেছেন: চমত্কার একটা সিরিজ চলছে....সাথেই আছি.. :)

নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১২

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, তুষার কাব্য! ...আপনাকেও নতুন বছরের অনেক শুভকামনা

৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১০

ঢাকাবাসী বলেছেন: চমৎকার লাগল। নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১১

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী! ...আপনাকেও নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা

৪| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:০৫

মোহাম্মদ শামসাদ বলেছেন: nice

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৫| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৩

আবু শাকিল বলেছেন: চমৎকার সিরিজ লিখে যাচ্ছেন।
ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম।

হ্যাপি নিউ ইয়ার :)

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আবু শাকিল! ...আপনাকেও হ্যাপি নিউ ইয়ার :)

৬| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৪

ডি মুন বলেছেন:

এক ভৃগুবংশীয় ব্রাহ্মণ পত্নী গর্ভবতী ছিলেন। তিনি সন্তান রক্ষার জন্য ঊরুদেশে গর্ভ গোপন করে রাখলেন। ক্ষত্রিয়রা জানতে পেরে সেই গর্ভ নষ্ট করতে এল। মহা ভয়ে ব্রাহ্মণী সেখানেই প্রসব করলেন। দশ সূর্যের সমান তেজী দীপ্তমান পুত্র প্রসূত হল, তাঁর তেজে ক্ষত্রিয়রা অন্ধ হয়ে গেল।

--------- B:-) B:-)


আমি বিদ্রোহী ভৃগু
ভগবান বুকে এঁকে দেব পদচিহ্ন ।


"বিদ্রোহী" মনে পড়ে গেল এ পর্বটা পড়তে পড়তে। চমৎকার

+++++

নতুন বছরের শুভেচ্ছা আপুমনি

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

দীপান্বিতা বলেছেন: আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন! আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!
....

ধন্যবাদ, ডি মুন! ...আপনাকেও নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা :)

৭| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১৪

আরজু পনি বলেছেন:

আমি কখনোই এতো ধৈর্য্য নিয়ে এতোদিন ধরে এভাবে সিরিজ চালাতে পারতাম না । আপনাকে সাধুবাদ দিতেই হয়...কী দারুন করে বলে যাচ্ছেন এতো কঠিন মহাভারতকে কথাচ্ছলে...খুব ভালো লাগা রইল, দীপা ।

নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা ।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আরজুপনি! ...আপনাকেও নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা :)...আপনাদের উৎসাহেই এখনও এলেখা চলছে...মূল গ্রন্থে হাজারের উপর পৃষ্ঠা, আমি এখনও ২০%ও লিখে উঠতে পারিনি, যানিনা কতদুর সম্ভব, তবে চেষ্টা করে যাব :)

৮| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৩০

জুন বলেছেন: ঔর্ব্বমুনি ঠিকই বলেছেন দুষ্টের দমন না করলে সংসার নষ্ট হবে। দুষ্টলোককে যদি শাস্তি না দেওয়া হয় তবে সমাজের অন্য লোকও সে পথে যায়। এটা বর্তমান বিশ্বের জন্য সর্বব্য ভাবে প্রযোজ্য দীপান্বিতা।
শেষ করো তারপর এক সাথে পুরোটা নিয়ে যাবো :)
+

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, জুন! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.