নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭৬

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩১

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরের আয়োজন চলছে... দ্রুপদের আমন্ত্রণে সকল দেশের রাজারা যেমন এলেন, দেবতারাও উপস্থিত হলেন...দ্রৌপদী সভায় উপস্থিত হলেন, সকল রাজারা ধনুকে গুণ পরিয়ে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে শুরু করল কিন্তু কেউই লক্ষ্যভেদে সক্ষম হল না...রাজারা ক্রুদ্ধ হল...তারা ভানুমতীর স্বয়ম্বরের কথা আলোচনা করতে থাকে... ]



ভানুমতীর স্বয়ম্বরঃ



মুনি বলেন - অবধান করুন মহারাজ জন্মেজয়-

প্রাগ্‌জ্যোতিষের(কামরূপের) রাজা ভগদত্তের কন্যা ভানুমতী। রাজা কন্যার স্বয়ম্বরের আয়োজন করেন। সকল রাজারা নিমন্ত্রিত হয়ে এলেন। দুর্যোধন ও তাঁর শতভাই, ভীষ্ম, কর্ণ, দ্রোণ, কলিঙ্গ, কামদ, মৎস্য, পাঞ্চালের রাজপুত্র, শাল্ব, শিশুপাল, কারুষার রাজা দন্ডবক্র(শিশুপালের ভাই), জয়দ্রথ, শল্য, মদ্র, কৌশল, রাজচক্রবর্তী জরাসন্ধ মহাতেজা প্রমুখ আশি সহস্র রাজা স্বয়ম্বরে এলেন।

রাজা ভগদত্ত রাজাদের জানালেন উচ্চে মৎস লক্ষ্য স্থাপন করা হল। এই রইল ধনুর্বাণ। যিনি লক্ষ্যভেদ করবেন তিনিই কন্যা ভানুমতীকে পাবেন।

ভানুমতীকে সভায় আসতে বললেন। সূর্যের প্রকাশে আঁধার যেমন ঘোচে, তেমনি ভানুমতীর প্রকাশ ঘটল। তাকে দেখে সকল রাজা মোহিত হলেন। ষোড়শ কলায় যেন চন্দ্রের শোভা।

একে একে রাজারা উঠে ধনুকে গুণ পরাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু কারো শক্তিতে কুলালো না। মহারাজ জরাসন্ধ ধনুক নিয়ে বহু পরিশ্রমে তাকে নুইয়ে গুণ পরালেন। শেষে বাণ লাগিয়ে লক্ষ্য স্থির করেও লক্ষ্যভেদ করতে পারলেন না। লক্ষ্য স্পর্শ করে বাণ মাটিতে পরল। জরাসন্ধ ধনুক বাণ ফেলে দিলেন। এভাবে কোন রাজাই লক্ষ্যভেদ করতে পারলেন না।



সকল রাজাদের বিমুখ দেখে চিন্তিত প্রাগ্‌জ্যোতিষের রাজা ভগদত্ত যোড়হাতে রাজাদের বলেন – কেউই আপনারা লক্ষ্যভেদ করতে পারলেন না এখন আপনারাই বলুন আমি কন্যার বিবাহ কিভাবে দেব।



রাজারা বলেন – আমাদের শক্তিতে এ লক্ষ্যভেদ সম্ভব হল না। যার শক্তি আছে সেই এই কন্যাকে পাবে। অন্যরা কিছু বলতে পারবে না।



এই শুনে ভগদত্ত বলেন – সভায় যত অস্ত্রধারী আছেন-ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র তাদের মধ্যে যিনিই লক্ষ্যভেদে সক্ষম হবেন কন্যা ভানুমতী তাঁরই হবেন।



মহারাজ বারবার সকলকে অনুরোধ করলে মহাবীর বৈকর্ত্তন কর্ণ উঠে এলেন। ধনুক আকর্ণ টেনে টঙ্কার ধ্বনি দিলেন। লক্ষ্যের উদ্দ্যেশে বাণ স্থাপন করে মহা পরাক্রমে তা ছুঁড়লেন। একবাণে মৎসচক্রচ্ছেদ করে ফেললেন। দেখে ভানুমতী খুশি হলেন। তিনি কর্ণের গলায় মালা দিতে গেলেন। কিন্তু কর্ণ পিছু হটে গলা সরিয়ে নিলেন। দেখে অন্য রাজারা অবাক হলেন।



রাজা জরাসন্ধও ভানুমতীকে নিষেধ করতে লাগলেন। দেখে সূর্যপুত্র কর্ণ রেগে গেলেন। কর্ণ বলেন – আমি লক্ষ্যভেদ করাতে ভানুমতী আমায় মালা দিতে এলেন। বন্ধুর জন্য আমি তাকে বারণ করলাম। কিন্তু তুমি কোন সাহসে তাকে নিবারণ কর!



জরাসন্ধ বলেন – আমিও এই প্রসাদের অর্ধ ভাগীদার। আমি ঐ ধনুকে গুণ পরিয়েছিলাম। তাই তোমার প্রসাদের অর্ধেক আমারও প্রাপ্য। এই বলে তিনি অন্য রাজাদের সমর্থন চাইতে লাগলেন।



রাজারাও তাকে সমর্থন করে বলেন – ধনুকে গুণদাতারও অর্ধেক ভাগ আছে। ভানুমতীর স্বামিত্ব তাই দুজনেরই। এখন এই দুজনের মধ্যে যিনি বলবান তিনিই কন্যা ভানুমতীকে পাবেন।



শুনে কর্ণ জরাসন্ধকে বলেন – রাজন, মিথ্যে যুদ্ধের আহ্বান করলেন। বহু শক্তি প্রয়োগ করে ধনুক নোয়ালেন। কিন্তু লক্ষ্যভেদ করতে পারলেন না। এখন কন্যার লোভে অকারণে যুদ্ধ করতে চাইছেন। এর উচিত ফল আমার হাতেই আপনি ভোগ করবেন। এই ধনুকে শতবার আমি গুণ দিতে পারি। কিন্তু লক্ষ্যভেদে একবারও শক্তি আপনার দ্বারা সম্ভব হয়নি। আবার লক্ষ্য স্থানে রাখা হোক। দেখুন কত সহজে আমি ধনুকে গুণ পরিয়ে লক্ষ্যভেদ করি। না হয় আপনার ইচ্ছে হলে আসুন যুদ্ধ করি।



এত শুনে রাজা জরাসন্ধ কর্ণের দিকে তেড়ে গেলেন। দুজনে দুজনকে নানা অস্ত্রে আঘাত করতে লাগলেন। কর্ণ নানা অস্ত্র বর্ষণ করলেন। বৃহদ্রুথের পুত্র জরাসন্ধ তা নিবারন করতে লাগলেন। প্রাণপণে দুজনে ঘোর যুদ্ধে মেতে উঠলেন। মগধকুমার জরাসন্ধ ধনুক ফেলে গদা তুলে নিলেন। তিনি গদা যুদ্ধে বেশি পারদর্শি। তাঁর গদার আঘাতে কর্ণের রথ চূর্ণ হল। সারথি, তুরঙ্গ(ঘোড়া), রথ- সব নষ্ট হলে বীর কর্ণ লাফ দিয়ে মাটিতে নেমে এলেন। আবার আরেক রথে উঠলে সে রথও জরাসন্ধ চূর্ণ করলেন। বীর জরাসন্ধ মাথার উপর তাঁর গদা ঘোরাতে ঘোরাতে মার মার বলে ডাক ছারেন। কর্ণ বৃষ্টির মত বাণ মারতে থাকেন। গদায় লেগে তা মাটিতে পরে। এভাবে অনেক্ষণ যুদ্ধ হয়। রেগে কর্ণ দিব্যঅস্ত্র প্রয়োগ করলে জরাসন্ধের গদা খন্ড খন্ড হয়ে কেটে পরে যায়। তিনি আরেক গদা তুলে আক্রমণ করেন। কর্ণ সেটিও কেটে দেন। এভাবে জরাসন্ধের সবকটি গদা একে একে কাটা পরলে তিনি নিরস্ত্র হয়ে পরেন। শেষে মগধকুমার জরাসন্ধ কর্ণকে বলেন- আমি অস্ত্রহীন, অথচ তুমি অস্ত্রধারী। এখন তুমিও অস্ত্র ত্যাগ করে নিচে এসে আমার সাথে বাহুযুদ্ধ কর। শুনে কর্ণ তীর ধনুক ত্যাগ করে মাটিতে নেমে এলেন। এবার কর্ণ ও জরাসন্ধের বাহুযুদ্ধ শুরু হল। মুন্ডে মুন্ডে, বাহুতে বাহুতে, বুকে বুক ঠেলে, পায়ে পায়ে জড়িয়ে গড়াগড়ি দিয়ে সাঙ্ঘাতিক মল্ল যুদ্ধ হতে থাকে। পদাঘাতে, করাঘাতে, মুষ্টি প্রহারে দুজনের শরীরে দুজন আঘাত করতে থাকেন। মাথার মুকুট উড়ে গেল, রত্ন কন্ঠহার ছিঁড়ে গড়াগড়ি গেল। দুজনের সেই যুদ্ধে যেন বিরাম নেই। এমন যুদ্ধ পূর্বে সীতার জন্য রাম ও রাবণের হয়েছিল। কর্ণ ও জরাসন্ধকে দেখে মনে হল বসন্তকালে হস্তিনীর জন্য যেন দুই মত্ত দাঁতাল হস্তী মহারণে মেতেছে। সূর্যপুত্র কর্ণ, সূর্যের মতই তাঁর তেজ। তাঁর ক্রোধ মূর্তি যেন কালান্তক যমের রূপ। বাহুবলে তিনি জরাসন্ধকে তুলে মাটিতে আছড়ে ফেলেন। বুকে হাঁটু দিয়ে তাঁর গলা চেপে ধরেন।



জরাসন্ধের বিপদ বুঝে অন্য রাজারা এগিয়ে এসে হাহাকার করে কর্ণকে নিবৃত্ত করেন। হেরে অপমানিত হয়ে মগধরাজ জরাসন্ধ মনের দুঃখে নিজের দেশে ফিরে গেলেন। তখন ভানুমতীকে নিয়ে কর্ণ বন্ধু দুর্যোধনের কাছে গেলেন। আনন্দিত হয়ে দুই বন্ধু পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন। এভাবে ভানুমতীর সাথে দুর্যোধনের বিবাহ হল। ভানুমতীকে নিয়ে তারা নিজ দেশে গেলেন।

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীদাস কহে সদা শুনে পূণ্যবান।

....................................

উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে

......................................

আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭৫



Click This Link





মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: ছোট কিন্তু ভাল হয়েছে। স্বয়ম্বর সভায় রাজাদের ছবি দিতে পারতেন মনে হয়।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী! ......ছবির জন্য পুরোই গুগুল মামার দিকে তাকিয়ে থাকি...সব সময় সঠিক ছবি পাই না...পেলে দেওয়ার চেষ্টা করব...ধন্যবাদ :)

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর +

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, সেলিম আনোয়ার!

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৭

শায়মা বলেছেন: +++

একশো টা + দিলেও তোমার সিরিজের যথার্থ মূল্যায়ন হবেনা আপুনিমনি!!!!!!!

অনেক ভালো থেকো।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০২

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, শায়মা!... কি যে ভাল লাগছে!...আপনাদের উৎসাহেই এ লেখা এগিয়ে চলেছে...... কিছুদিন ডুব মারব, তাই একটু তাড়াতাড়ি পোস্ট করে রাখছি ;)

৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:১১

তুষার কাব্য বলেছেন: চমত্কাত সিরিজ চলছে ।শায়মা আপুনির সাথে একমত ।

শুভকামনা জানবেন ।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, তুষার কাব্য!...আপনিও আমার শুভকামনা নেবেন...

৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৩

দীপংকর চন্দ বলেছেন: মহাভারতের অনেক সুক্ষ্ণ বিবরণ উঠে আসছে আপনার লেখায়!

অনেক অনেক ভালো লাগা স্বাভাবিকভাবেই।

অনিঃশেষ শুভকামনা জানবেন দীপান্বিতা।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, দীপংকর চন্দ! আপনার শুভেচ্ছা অনেক অনুপ্রেরণা দেয়...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.