নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭৭

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৪

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে সকল রাজারা ধনুকে গুণ পরিয়ে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে শুরু করল কিন্তু কেউই লক্ষ্যভেদে সক্ষম হল না...রাজারা ক্রুদ্ধ হল...তারা ভানুমতীর স্বয়ম্বরের কথা আলোচনা করে, সেখানেও এমনই ব্যবস্থা ছিল কিন্তু কর্ণের সাহায্যে দুর্যোধন ভানুমতীকে পান।]



শ্রীকৃষ্ণ-বলরামের কথোপকথনঃ





জন্মেজয় পুনরায় দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় আর কি কি হল জানতে চাইলেন। মুনি বলেন শুনুন তবে – রাজারা দ্রুপদকে কটু কথা বলতে থাকেন। উপহাস করে নৃপের দল দ্রুপদকে বলে- মিথ্যে স্বয়ম্বরের জন্য আমাদের নিমন্ত্রণ করলেন। আমাদের মধ্যে কারো এ লক্ষ্যভেদ সম্ভব নয় আপনি জানতেন। এখন আপনি তাকেই ডেকে নিন, যাকে আপনি নির্বাচন করে রেখেছেন সেই লক্ষ্যভেদকারীকে।



রাজাদের এই বাক্য শুনে দ্রুপদকুমার ধৃষ্টদ্যুম্ন সভার মাঝে সকলকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন –সভায় যে ক্ষত্রিয়রা আছেন তাদের মধ্যে যিনি লক্ষ্যভেদ করবেন কৃষ্ণা তাঁরই হবেন। তিনি রাজা হোন বা না হোন তাতে কিছু এসে যায় না। সেই লক্ষ্যভেদকারী শক্তিমানের গলাতেই দ্রৌপদী মালা দেবেন।

ধৃষ্টদ্যুম্ন এই বলে বারবার সভার মানুষদের আমন্ত্রণ জানাতে লাগলেন।



সে সময় বলরাম কৃষ্ণের দিকে তাকান। কৃষ্ণ তাঁর মনের ভাব বুঝে বলেন – আমাদের এখানে কোন কাজ নেই। সভায় উঠে কেবল লজ্জাই পাব।



বলরাম বিরক্ত হয়ে বলেন – তা হলে আর কি কারণে এখানে বসে থাকা। দ্রুপদ দেখছি ব্যর্থ স্বয়ম্বর করেছেন। এক লক্ষ রাজাকে নিমন্ত্রণ করে কুড়িদিন সকলকে আদরযত্নে রাখলেন কিন্তু কেউই এই ধনুক নোয়াতে পারল না। তোমার মত বীরও যখন একাজে বিমুখ তখন সংসারে আর কারো পক্ষে এ লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদীকে পাওয়া সম্ভব নয়। অকারণে আর এখানে থেকে কি হবে পনেরোদিন হয়ে গেল দ্বারাবতী(দ্বারকা) ছেড়ে আছি।



গোবিন্দ(কৃষ্ণ) বলেন – আজকের দিনটা থেকে যাও। এই লক্ষ্যভেদ করার জন্য কি কৌতুক করি দেখ। এতক্ষণ কারো ক্ষমতা হল না এই লক্ষ্যভেদের। তবে একজনের পক্ষে এটা অবলীলায় সম্ভব। যিনি মনুষ্যলোকে শ্রেষ্ঠ ও মহা পরাক্রমী।



শুনে বলরাম বিস্মিত হয়ে বলেন – বল কৃষ্ণ তিনি কে যার তিনলোকের শ্রেষ্ঠ বল। মনুষ্য মধ্যে তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কে আছে। আমার ও তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষও আছে যেনে যেমন আশ্চর্য লাগছে তেমনি হাসিও পাচ্ছে। লক্ষ্মীস্বরূপা অবর্নিতরূপা, চন্দ্রের মত মুখশ্রী, জাতিতে পদ্মিনী এমন সুন্দরী কন্যা দ্রৌপদীকে পাওয়ার জন্য আমাদের চেয়ে ক্ষমতাবান পুরুষ আর কে আছে।



গোবিন্দ বলেন – শুনুন, এই লক্ষ্যভেদ একমাত্র পার্থের(অর্জুন) পক্ষেই সম্ভব। যিনি ইন্দ্রের পুত্র ও মধ্যম পান্ডব।



শুনে বলরাম বলেন – তবে কৃষ্ণ এখানে আর থাকা কেন! এই তিনলোকে কারো পক্ষে যে কাজ অসাধ্য তা যে করতে পারেন সেও বারো বছর মৃত। আশ্চর্য লাগছে তোমার কথা শুনে। তুমি কি উপহাস করছ! পান্ডুর যে সন্তানটি আগুনে পুড়ে মারা গেল সে এসে কি ভাবে এ লক্ষ্যভেদ করতে পারে!



কৃষ্ণ বলেন – পান্ডুর পুত্রেরা পুড়ে মারা যান নি। তারা মহা বীর্য্যবন্ত, এ সংসারে অবধ্য। দেবতাদের আশির্বাদে কুন্তীর এই পাঁচটি কুমারের জন্ম, তাদের অনেক কাজ এখনও বাকি। তাদের মারার শক্তি কারো নেই। অনেকদিন তারা বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আছেন। আজ তারা এই সভার মধ্যেই আছেন।



শুনে বিস্মিত হয়ে বলেন রোহিনীপুত্র বলভদ্র(বলরাম)- অদ্ভূত কথা বললে শুনে আশ্চর্য হচ্ছি। পঞ্চপান্ডব অগ্নিতে পুড়ে মরল একথাই জগতে সবাই জানে। এতকাল কোন দেশে তারা রইল। কোথায়, কোন বেশে তারা এখন আছে! পার্থ কেন লক্ষ্যভেদ করতে উঠে দাঁড়াচ্ছে না।



কৃষ্ণ বলেন–ভাল করে ব্রাহ্মণের দলটিকে লক্ষ্য করুন যুধিষ্ঠিরকে চিনতে পারবেন। এখনই ধনঞ্জয়(অর্জুন) লক্ষ্যভেদ করতে কি ভাবে উঠবেন। তাদের তো এখনও আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। যখন দ্রপদ ব্রাহ্মণদের লক্ষ্যভেদে আমন্ত্রণ জানাবেন, তখনই অর্জুন উঠবেন।



সব শুনে বলরাম ভাল করে চেয়ে দেখেন পিঙ্গল(অগ্নিবর্ণ) মলিন বস্ত্রে বিরস বদন, তেলবিনা তাম্রবর্ণ বড় চুল, সাথে তালপাতার ছাতা, কাঁধে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যুধিষ্ঠিরকে।

তিনি দুঃখিত হয়ে কৃষ্ণকে বলেন – ধর্মশ্রেষ্ঠ যুধিষ্ঠির, সকলের মাঝে বিখ্যাত, তাঁর এমন গতি হল কেন। অনাহারে মহাক্লিষ্ট দুঃখিত শরীর। অন্যদিকে রাজা দুর্যোধন তার অতুল বৈভব নিয়ে সভা মাঝে দ্বিতীয় দেবরাজ ইন্দ্রের মত বসে।



গোবিন্দ বলেন –অবধান করুন, দুর্যোধন পাপাত্মা। পাপেতে পাপীর ধনবৃদ্ধি হয় সহজে, কিন্তু শেষে সমূলে তাঁর বিনাশ ঘটে। কালে অবশ্যই জয়লাভ করেন ধার্মিক জন। সুখ ও দুঃখ তো কালের লিখন।

কৃষ্ণের একথা শুনে যদুবীরেরা সবাই লক্ষ্যভেদের ইচ্ছে ত্যাগ করলেন।



মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীদাস কহে সদা শুনে পুণ্যবান।

....................................

উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে

......................................

আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭৬

Click This Link







মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০৫

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: দিদি ! ব্লগে এসেই তোমার লেখা !! পড়লাম মনোযোগ দিয়ে --
বসন্তের শুভেচ্ছা মন থেকে
ভাল থেক সব সময়

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, লাইলী আরজুমান খানম লায়লা!......আপনাকেও বসন্তের অনেক শুভেচ্ছা :)

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬

সৌম্য বলেছেন: অনেক বছর পরে ব্লগে আসলাম, মাঝে পাসওয়ার্ডই ভুলে গেছলাম। ফিরে এসেই দেখি আপনার কথাচ্ছলে মহাভারত সিরিজ।
মনে হলো সব আগের মতই আছে।
কেমন আছেন আপু।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১১

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, সৌম্য!......ভাল আছি :)... আপনার কি খবর!...হ্যাঁ, সব আগের মতই আছে... সবাই ভাল থাকি, বন্ধু থাকি :)

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ভালো লাগা।
বিস্তারিত জানা যাচ্ছে আপনার সিরিজ থেকে ভালো থাকবেন।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, দিশেহারা রাজপুত্র!

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

ঢাকাবাসী বলেছেন: চিরাচরিতভাবেই ভালো লাগল।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী!

৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪

বিদগ্ধ বলেছেন: ~~ঢাকাবাসী বলেছেন: চিরাচরিতভাবেই ভালো লাগল।~~


গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজটি চালিয়ে যাবেন।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, বিদগ্ধ!

৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১

তুষার কাব্য বলেছেন: পড়ে ফেললাম কথোপকথন । চমৎকার সিরিজ চলছে।

শুভকামনা ।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, তুষার কাব্য!

৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৯

শাহরীয়ার সুজন বলেছেন: আমি ব্লগে আসার পর থেকেই আপনার এই সিরিজের দারুণ ভক্ত হয়ে গেছি। সত্যিই খুব ভালোলাগে। তবে একটা পর্ব পড়ার পর আরেকটার জন্য অনেক দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়। সেটা খুব একটা ভালো লাগেনা।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, শাহরীয়ার সুজন! ...শুনে খুশি হবেন, এখন কিছু পর্ব দ্রুত দিচ্ছি...তবে তারপর হয়ত কিছুদিন পোস্ট দিতে পারব না...তার জন্য এখনই ক্ষমা চেয়ে রাখলাম...

৮| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:০১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: যাই হোক দ্রৌপদী পাচ স্বামী এপন্ডব পুত্ররাই হয়ে ছিলেন সেটা জানি তবে কিভাবে? সেই ব্যাপারটি বোধ হয় আগামী পোস্টে পাবো । অপেক্ষায় থাকলাম ।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, সেলিম আনোয়ার! ...আমিও ভেবেছিলাম এই পর্বে সব থাকবে, কিন্তু তা নয়...বেশ কয়েক পর্ব পরে পুর পর্ব শেষ হবে...সঙ্গে থাকবেন...

৯| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৫

দীপংকর চন্দ বলেছেন: মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীদাস কহে সদা শুনে পুণ্যবান।

অনেক অনেক ভালো লাগা দীপান্বিতা।

অনেক সুন্দর ভাবে বর্ণিত হচ্ছে ঘটনা।

দারুণ কাজ!

অনিঃশেষ শুভকামনা থাকছে। সবসময়।

ভালো থাকবেন। অনেক।

১০| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

দীপংকর চন্দ বলেছেন: আর একটা কথা দীপান্বিতা।

কথাটা কিছু কিছু জায়গায় এভাবেও পাওয়া যায়,

যেমন: মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস ভনে শুনে পূণ্যবান ॥

অথবা: মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।

শুভকামনা পুনরায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.