নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮৩

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে ভাই ধৃষ্টদ্যুম্ন ক্ষত্রিয়দের বারবার লক্ষ্যভেদের জন্য অনুরোধ জানাতে লাগলেন...শেষে অর্জুন যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞায় লক্ষ্য ভেদ করতে উঠলেন... তিনি গুরুজনদের প্রণাম জানালেন...কৃষ্ণ বলরামকে বলেন তিনি অর্জুনকে সর্বপ্রকার সাহায্য করবেন ...অর্জুন অনায়াসে লক্ষ্যভেদে সক্ষম হলেন ...অন্যান্য রাজা ক্রুদ্ধ হল... অর্জুনের সাথে তাদের যুদ্ধ শুরু হল .... ব্রাহ্মণদের সাথেও ক্ষত্রিয়দের যুদ্ধ শুরু হল...]



কর্ণের সহিত অর্জুনের যুদ্ধঃ







অর্জুন ও কর্ণের ভীষণ যুদ্ধ হল, দেখে শ্রীরাম ও রাবণের যুদ্ধের কথা মনে পরে। সে যুদ্ধ যেন বৃত্র ও বৃত্রহা(বৃত্র অসুর সংহারক=ইন্দ্র), মাধব(মা-লক্ষ্মী+ধব-স্বামী= নারায়ণ) ও উমাধব(উমা-দূর্গা+ধব-স্বামী=শিব) কিংবা গজেন্দ্র-কচ্ছপের যুদ্ধ। নানা অস্ত্রে দু’জনেই দুজনকে তাড়িয়ে বেরালো।

দুর থেকে রাজারা দাড়িয়ে তা দেখতে থাকে।

রেগে বীর ধনঞ্জয় অতুল প্রতাপে এক বাণে শত শত সাপ সৃজন করলেন। মহাশব্দে আকাশ জুড়ে সাপ ধেয়ে আসে, দেখে রাজারা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়। হেসে কর্ণ গরুড় অস্ত্র ছাড়েন ফলে সুপর্ণ(গরুড়)এক গরাসে সব ভুজঙ্গ ধরে খায়। শত শত খগবর(গরুড়) আকাশে উড়ে ভুজঙ্গ খেয়ে পার্থকেও গিলতে আসে। পার্থও অগ্নি অস্ত্র মেরে সব পাখিদের পাখা পুড়ালেন। ঝাঁকে ঝাঁকে অগ্নিবৃষ্টি হতে থাকে কর্ণের উপর। দেখে কর্ণ জলধর অস্ত্রে বৃষ্টির মাধ্যমে বৈশ্বানর(অগ্নি) নির্বাপণ করে পার্থের উপরও মুষলধারায় জল বর্ষায়। ধনঞ্জয়ও সঙ্গে সঙ্গে দিব্যবাণ মারলেন। যা প্রচন্ড বায়ুর সৃষ্টি করে জলধর মেঘদের দুর করল। সেই সাথে মহাবাতে(বায়ু) রবির তনয় কর্ণও কেঁপে উঠল। সেও সঙ্গে সঙ্গে আকাশ অস্ত্রে বাত দুর করতে লাগল। এভাবে দুজনে দুজনকে নানা অস্ত্রাঘাত করতে থাকে- সূচীমুখ অর্দ্ধচন্দ্র পরশু(কুঠার), তোমর, জাঠা-জাঠি(পৌরাণিক লৌহযষ্ঠি যুদ্ধাস্ত্র), শক্তি শেল(শূল), মুষল মুদ্গর(গদা)। যার যত অস্ত্র জানা আছে শ্রাবণের বাধভাঙ্গা বর্ষার মত সব প্রয়োগ করতে থাকে। অস্ত্রের বর্ষণে সূর্যের তেজও ঢেকে গেল। দিনের দুই প্রহরেই অন্ধকার নেমে এল।

আকাশে যত অমর দেবতারা তা দেখে প্রশংসা করতে থাকেন। মর্তের রাজারা এই যুদ্ধ দেখে বিস্মিত হয়।



কর্ণও বিস্মিত হয়ে বলে –কহ বীর কেন তুমি ব্রাহ্মণের বেশ ধারণ করেছ। তুমি কি ছন্মবেশী সহস্রাক্ষ(ইন্দ্র), নাকি জগন্নাথ কিংবা বিরুপাক্ষ(বিরূপ অক্ষি যাঁর-শিব), নাকি ধনুর্বেদ, কিংবা রাম, নাকি তুমি জীবন্ত পান্ডবার্জুন। এতজন মধ্যে বল তুমি কোন জন। আমার সামনে অন্য কেউ এতক্ষণ প্রাণ নিয়ে দাড়াতে পারত না।



এত শুনে ধনঞ্জয় হেসে বলেন –আমার তোমায় পরিচয় জানিয়ে কি হবে! আমার পরিচয় জেনে তোমারই বা কি কাজ! আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ, তুমি মহারাজ। আমায় একা পেয়ে তোমরা লাখ লাখ জন ঘিরে ফেললে, এখন হেরে, শক্তি হারিয়ে পরিচয় জানতে এসেছ। যদি প্রাণভয় পাও তো পালাতে পার। কাতরজনকে আমি আঘাত করি না।



অর্জুনের একথায় আরুণি-কর্ণ রেগে গেল। অরুণ নয়ন, অরুণ অঙ্গজ বীর অরুণ প্রতাপে অরুণ সদৃশ বাণ আকর্ণ টেনে অর্জুনের উদ্দেশ্যে ছাড়ল। অর্ধপথে যদিও পার্থ তা ভেঙ্গে খান খান করলেন। এভাবে কর্ণ যত অস্ত্র ছোড়েন সব তা কেটে ফেলেন কিরীটী-অর্জুন। এবার চার বাণে অর্জুন কর্ণের রথের চার হয়(ঘোড়া) কাটলেন, সেই সাথে সারথিকেও।

এভাবে যুদ্ধের মাঝে কর্ণকে বিরথী হতে দেখে রাজারা হাহাকার করতে থাকে। কর্ণকে রক্ষার জন্য সকলে অর্জুনকে ঘিরে ফেলে। অর্জুনও তাদের উপর অস্ত্র বর্ষণ শুরু করেন। বর্ষার ঘন মেঘে যেন পুনরায় বর্ষা শুরু হল। সূর্যের তেজ আবার ঢেকে গেল। সবার অঙ্গে পার্থ এত প্রহার করলেন যে সকলেই পরাস্থ হল। কারো কুন্ডলসহ মুন্ড কাটা গেল। কারো নাক কাটা গেল। কারোবা ধনুক হাতেই বাম হাত কাটা পরল। কেউবা বুকের আঘাতে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। ভাদ্র মাসের ঝড়ে যে ভাবে পাকা তাল পরে সে ভাবেই পার্থের আঘাতে রাজারা পরতে লাগল। পার্থ ভীষণ দর্শন পর্বতাকারে মুষলমুদ্গর মুন্ডে মারেন। নব মেঘ ঘট যেন ভূমিতলে শোভে। এভাবে পার্থের নির্ঘাতে সব গড়াগড়ি করে। লক্ষ লক্ষ তুরঙ্গ, সারথী, রথ, রথী, অর্বুদ অর্বুদ পাদাতিক সব পড়ে গেল।

অনন্ত ফনীন্দ্র(নাগরাজ বাসুকি) যেমন সিন্ধুজল মন্থন করেন, তেমনি দুইভাই পার্থ ও ভীম মিলে রাজাদের বিনাশ করলেন। রক্তের নদী বয়ে গেল। চারদিকে হাহাকার পরে গেল।

যে সব রাজারা প্রাণে বাঁচল তারা বিস্মিত হয়ে বুঝে গেল এই দুইজন সামান্য মানুষ নন।



এভাবে রাজাদের নিবৃত্ত করে দুইভাই দুজনকে আনন্দে আলিঙ্গন করলেন। চারদিক থেকে দ্বিজ-ব্রাহ্মণরা এসে জয়ধ্বনি দিতে লাগল ও তাদের আশীর্বাদ করল।

মহাভারতের কথা অমৃতের ধার, ইহলোক পরলোকের হিত ও উপকার। কাশীরাম দাস কহেন পাঁচালির ছন্দে, সজ্জন–রসিক-সাধুর জন্য মকরন্দে(পুষ্পমধু)।

..............................





যুদ্ধে বিমুখ হইয়া রাজাদিগের পলায়নঃ



চারদিকে দশ দশ যোজন(চার ক্রোশ পরিমাণ দৈর্ঘ্য) পথ রাজাদের দৌড় করান হল। আড়ে দীর্ঘে শত ক্রোশ রক্তে কাদা হল।

রাজারা প্রথমে ‘দ্বিজ মার’ রব তোলে। সেই ভয়ে ব্রাহ্মণরা উর্দ্ধশ্বাসে পালায়। দন্ড, কমন্ডলু পড়ে থাকে। কারো চর্ম পাদুকা খুলে যায়, কাঁধ থেকে ছাতা পরে যায়। কারো মৃগচর্ম খুলে পরে, কারো বা পৈতে ছিঁড়ে যায়। পিছনে না চেয়ে বায়ুবেগে লক্ষ লক্ষ ব্রাহ্মণ প্রথমে পালাল।

তারপর ক্ষত্রিয়ের সাথে ব্রাহ্মণের আবার সাঙ্গাতিক যুদ্ধ হল। সেই যুদ্ধে রাজাদের বর্ণনাতিত অপমান হল। কোথায় রথ, কোথায় গজ, কোথায় গেল ভৃত্যগণ! যেদিকে প্রাণ নিয়ে পালান যায় রাজারা পালাল। পশ্চিম দিকের রাজারা পূর্ব দিকে পালাল, উত্তরের রাজা দক্ষিণে গেল।

পথাপথ জ্ঞান নেই, হুড়াহুড়ি, ঠেলাঠেলি, একজনকে চাপা দিয়ে বলবন্তজন আগে যেতে চায়। বলদ, উট, ঘোড়া, হাতি, সেনা, রথ, রথী, সারথী সকলে ভয়ে পালাল। রথের উপরের আরূঢজনের যে অবস্থা হল তা বলার নয়। চাপাচাপি ঠেলাঠেলিতে অর্ধেক সৈন্য মরল। স্থানে স্থানে স্তূপাকারে তারা পরে রইল। কারো এক পা কাটা গেল, কারো দুই হাত, বুকের আঘাতে কেউ বা কুঁজ হয়ে গেল। সর্বাঙ্গ দিয়ে রক্তেরধারা বইল। মুক্ত কেশ, ভগ্ন দেহ, কারো বা কান কাটা –সেই অবস্থায়ও কেউ কেউ প্রাণ নিয়ে পালাল, জলে পরে সাঁতরাতে থাকল।



ক্ষত্র দেখে ব্রাহ্মণ পালায় উভরড়ে(দ্রুতবেগে)। দ্বিজ দেখে ক্ষত্রিয় লুকায় ঝাড়ে ঝোড়ে। এভাবে দ্বিজের ক্ষত্রিয় ভয়, ক্ষত্রের দ্বিজ ভয় হল। দ্বিজ ক্ষত্র বেশ ধরে, ক্ষত্র হয় দ্বিজ। ক্ষত্রিয়েরা ধনুর্বাণ, গদাশূল সব ফেলে, মাথার মুকুট খুলে চুল মুক্ত করল। হাতে তুলে নিল ছাতা, দন্ড ও কমন্ডল। ব্রাহ্মণরা হাতে ধনুর্বাণ তুলে নিল। প্রাণ ভয়ে কেউ জলে ডুব দিয়ে বসে থাকে, কেউ বা কাঁটাবনে, কেউ বা বৃক্ষের ডালে উঠে বসল। মড়ার ভিতর কেউবা মরা সেজে পরে রইল। দুরদুরান্ত পর্যন্ত কেউ ভয়ে স্থির হয়ে থাকতে পারল না। রাজ্যেও ভাঙচুর হল। ঘর, দেউল, প্রাচীর, বৃক্ষলতা, প্রাসাদ, মন্দির চূর্ণ হল। পাঞ্চাল রাজ্যের বৃক্ষ ঘর বাড়ি সব নষ্ট হল। রক্ষা পেল কেবল দ্রুপদ নগর।



মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীদাস কহে সাধুজন করেন পান।

...................................

উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে

......................................

আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮২

Click This Link



মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪

শায়মা বলেছেন: মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীদাস কহে সাধুজন করেন পান।

আবারও ভালো লাগা আপুনি!

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৬

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, শায়মা!

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০১

গোকুল নাগ বলেছেন: অসাধারন সিরিজ
ভালো থাকবেন এবং পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় আছি

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, গোকুল নাগ!

৩| ১০ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ২:৪৯

ডি মুন বলেছেন:

+++

যুদ্ধের ঘটনা ভালো লাগল।

রেগে বীর ধনঞ্জয় অতুল প্রতাপে এক বাণে শত শত সাপ সৃজন করলেন। মহাশব্দে আকাশ জুড়ে সাপ ধেয়ে আসে, দেখে রাজারা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়। হেসে কর্ণ গরুড় অস্ত্র ছাড়েন ফলে সুপর্ণ(গরুড়)এক গরাসে সব ভুজঙ্গ ধরে খায়। শত শত খগবর(গরুড়) আকাশে উড়ে ভুজঙ্গ খেয়ে পার্থকেও গিলতে আসে।

B:-) B:-)

কি ভয়াবহ !

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ডি মুন!

৪| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৭

আরজু পনি বলেছেন:

আপনার পোস্ট পড়তে এলেই প্রিয় ব্লগার দূর্যোধনকে মিস করি :|
সাথে নতুন কিছু শব্দও পাই ।

এভাবে সিরিজ চালিয়ে যাওয়া সত্যিই দারুণ প্রশংসার ।


অনেক শুভকামনা রইল, দীপা।

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আরজুপনি!

৫| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ক্লাসিক যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে :)

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রোফেসর শঙ্কু!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.