নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮৫

২৫ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:১৩

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে অর্জুন অনায়াসে লক্ষ্যভেদে সক্ষম হলেন ...অন্যান্য রাজা ক্রুদ্ধ হল... অর্জুনের সাথে তাদের যুদ্ধ শুরু হল .... ব্রাহ্মণদের সাথেও ক্ষত্রিয়দের যুদ্ধ শুরু হল...কর্ণও হার মানলো...যুদ্ধে বিমুখ হয়ে রাজারা পলায়ন করল...ভীমের যুদ্ধে রাজপরিবাররা আতঙ্কিত হল...]







অর্জ্জুনের সহিত দ্রৌপদীর কুম্ভকারালয়ে গমনঃ



মুনি বলেন –মহারাজ জন্মেজয় এরপর কি হল শুনুন।

যুদ্ধে জয়লাভ করলেন ভীম ও ধনঞ্জয়। সমস্ত দিবস গেল সন্ধ্যাকাল এল। ধীরে ধীরে তারা বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। তাদের পিছন পিছন দ্রুপদনন্দিনী চললেন। তাদের ঘিরে রইল সকল দ্বিজ-ব্রাহ্মণের দল।

ভীম ও অর্জুন মনে মনে চিন্তা করতে থাকেন কিভাবে এই ব্রাহ্মণের দলের থেকে বের হবেন।



যোড়হাতে কৃতাঞ্জলি করে তারা বলেন –আজকের মত সবাইকে বিদায়।



তাদের কথা শুনে ব্রাহ্মণরা বলে –এমন অপ্রিয় কথা বলবেন না। তোমাদের সঙ্গ আমরা ছাড়ছি না কখনও। নাজানি ক্ষত্রিয়েরা এরপর তোমাদের উপর কখন আক্রমণ করে। রাত্রে তোমাদের একা পেয়ে হত্যা করে দ্রৌপদীকে কেড়ে নিতে পারে। যতদিন এ দেশে ক্ষত্রিয়রা থাকছে ততদিন আমরা সবাই চারদিক থেকে তোমাদের ঘিরে রক্ষা করব।



পার্থ হেসে বলেন –সে ভয় আর করবেন না। আজ আপনারা বিশ্রাম নিন। কাল আবার মিলিত হব।

অনেক ভাবে বুঝিয়েও দ্বিজদের সঙ্গ ছাড়ান গেলনা। সেই ব্রাহ্মণদলের মধ্যে ধৌম্য ছিলেন। তিনি বুদ্ধি করে সকল ব্রাহ্মণদের নিভৃতে ভেবে বলেন –এই অচেনা দুজনের সাথে কোথায় চলেছ, কেউ কি এদের চেনো! এরা কোন জাতির, এরা কি দৈত্য নাকি দেবতা, হয়তবা রাক্ষস-কিন্নর। কার পুত্র এরা, কোন দেশে এদের ঘর কেউ জানি না। তবে এদের সাথে থাকার কি প্রয়োজন! এদের যেখানে ইচ্ছা যাক।

ধৌম্যের কথা শুনে সবার মনে ভয় হল। তারা পিছু নেওয়া ছাড়ল।



সেই দ্বিজদলের মধ্যে ধৃষ্টদ্যুম্নও ছদ্মবেশে ছিল। সে বোনের প্রতি মমতা ছারতে না পেরে বোনকে অনুসরণ করছিল। ব্রাহ্মণরা চলে গেলেও সে অন্ধকারে ভীমার্জুনের পিছু নিল।



যুধিষ্ঠিরও নকুল সহদেবকে নিয়ে অন্যপথে সেই গৃহে ভাইদের সাথে মিলিত হলেন।



এদিকে কুম্ভকারের গৃহে ভোজকন্যা কুন্তীদেবী সারাদিন পুত্রদের অপেক্ষায় বসে রইলেন। রাত উপস্থিত কিন্তু পুত্রদের দেখা নেই। তাঁর হৃদয় ব্যাকুল হল, তিনি কাঁদতে লাগলেন। কি কারণে পুত্ররা এখনও ফিরল না। ভীম নিশ্চয়ই কারো সাথে ঝগড়া করেছে। চারদিকে সৈন্যের কোলাহল শোনা যাচ্ছে। সকলে ‘দ্বিজ মার’ রব তুলেছে। ভীমতো যুদ্ধ ছাড়া কিছুই বোঝে না। আজও নিশ্চয়ই কারো সাথে তাঁর বিবাদ হয়েছে। সেই কারণেই হয়ত ক্ষত্রিয়রা দ্বিজ মারতে বেরিয়েছে। এসব ভেবে কুন্তীদেবী বহু বিলাপ করতে থাকেন।





সেই সময় পঞ্চপান্ডবরা গৃহে উপস্থিত হলেন।

বৃকোদর ভীম হৃষ্টচিত্তে মাকে ডেকে বলেন –আজ মা, সমস্তদিন দুঃখ পেলে। উপবাসে মহাক্লেশে দিন কাটালে। আজ অনেক কলহ হয়েছে, সেজন্য ফিরতে আমাদের রাত হয়ে গেল। রাতে কি ভিক্ষা মিলল এসে দেখ, মা!



কুন্তীদেবী ঘরের ভিতর থেকে বলেন –যা এনেছ তা পাঁচভাই ভাগ করে নাও। তোমাদের কন্ঠস্বর শুনেই আমি সুখি। আজ এই আনন্দে আমার ক্ষুধা ডুবে গেছে। আমার সোনারচাঁদ বাছাধনরা আমার কাছে এস। তোমাদের ছুঁয়ে দেখি।

এই বলতে বলতে কুন্তীদেবী ঘর থেকে বার হলেন। একে একে সবার শিরে চুম্বন করলেন।

সবার পিছনে তিনি দ্রুপদনন্দিনীকে দেখতে পেলেন। পূর্ণ শশধরমুখী(চাঁদের মত মুখ), গজেন্দ্রগামিনী দ্রৌপদীকে দেখে অবাক হয়ে কুন্তী পাঁচপুত্রকে জিজ্ঞেস করেন –কে এই সুন্দরী সবার পিছনে দাঁড়িয়ে।



ভীম বলেন –মা, এ দ্রুপদকন্যা। একচক্রানগরে যার কথা শুনেছিলে। এর জন্যই বহু বিরোধ হল। তোমার আশির্বাদে যদিও জয়লাভ করেছি। এই ভিক্ষার জন্যই এত রাত হল, মা! যদিও অন্য ভিক্ষা করলে খাদ্যান্ন মিলত।



কুন্তী অনুতাপ করে বলেন –আগে যা বলেছি, কিছু না জেনেই বলে ফেলেছি। কেন এমন বললে পুত্র, কি কাজ করলে! কন্যা এনে কেন ভিক্ষা যে বললে! ভিক্ষে ভেবে বললাম পাঁচজনে ভাগ করে খাও। এখন কি ভাবে আমার সে বাক্য তোমরা লঙ্ঘ করবে! মায়ের বচন বেদের সমান।

এত বলে কুন্তীদেবী বিলাপ করতে লাগলেন।



শেষে তিনি দ্রৌপদীর হাত ধরে যুধিষ্ঠিরের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন –তুমি সর্বধর্ম জ্ঞানী। তুমি এর বিচার কর। আমি যা বলেছি তুমি শুনেছ। পুত্র হয়ে আমার বাক্য কি ভাবে লঙ্ঘন করবে! কিন্তু তা লঙ্ঘন না করলে কথাটার বিপরীত অর্থ হবে। আমার আজ্ঞা লঙ্ঘন যেমন সম্ভব নয় তেমনি দ্রুপদকন্যার সাথেও যেন কোন ধর্মচ্যুতি না ঘটে দেখ। সব বিচার বিবেচনা করে তুমি বিধান দাও।

এই বলে মাতা কুন্তী কাঁদতে থাকেন।



মায়ের কথা শুনে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের ব্যাসের বলা কথাগুলি মনে পরল। একচক্রানগরে ব্যাস মুনি বলেছিলেন –পূর্বে এক দ্বিজ কন্যাকে শূলপাণি(শিব) বলেছিলেন তাঁর পঞ্চস্বামী হবে। সেই কন্যাই কৃষ্ণা নামে এখন জন্মেছেন।

সব ভেবে যুধিষ্ঠির মাকে আশ্বাস দেন –তোমার বচন লঙ্ঘন হবে না, মা।



অর্জুনের মন বোঝার জন্য ধর্মপুত্র তাঁর কাছে গিয়ে বলেন –অনেক বড় কাজ করে, বহুকষ্টে লক্ষ্যভেদ করে, রাজাদের হারিয়ে এই দ্রুপদকন্যা তুমি লাভ করেছ। শুভ কার্যে দেরি করা উচিত নয়। ধৌম্য ও অন্যান্য ব্রাহ্মণদের ডেকে এখনই এই শুভক্ষণে তুমি দ্রৌপদীকে বিবাহ কর।



কৃতাঞ্জলি হয়ে ধনঞ্জয় কহেন –সব জেনে আপনি এমন কথা কি ভাবে বলছেন। বেদ লঙ্ঘন সম্ভব নয়। দুরাচার বলে লোকে নিন্দা করবে। আমার আগে বিবাহ আপনার হবে। প্রথমে আপনার, তারপর ভীমের, তারপর আমার বিবাহ সম্ভব শাস্ত্রমতে।



পার্থের বাক্য শুনে ধর্মপুত্র হৃষ্টচিত্তে ভাইকে আলিঙ্গন করে শিরে চুম্বন করেন।



তারা যখন গৃহে প্রবেশ করছেন সে সময় বলরাম ও হৃষীকেশ(কৃষ্ণ) সেখানে উপস্থিত হলেন।



মহাভারতের কথা অমৃত সমান, শুনলে অধর্ম খন্ডে ও বৈকুন্ঠে(বিষ্ণুলোকে) প্রয়াণ হয়।

.................................







কুন্তীর নিকট শ্রীকৃষ্ণের আগমনঃ



বলরাম ও কৃষ্ণ কুন্তীকে প্রণাম করে নিজেদের পরিচয় জানান। পরিচয় জানতে পেরে শূরসেন-কন্যা কুন্তীদেবী দুজনকে কাছে টেনে আদর করতে করতে কেঁদে ফেলেন।

কুন্তী বলেন – কোথায় ছিলি তোরা, আমার চোখের মণি, অন্ধের নড়ি! বার বছর হয়ে গেল তোদের মুখ দেখতে না পেয়ে কেঁদে দুর্বল হয়েছি। আজকের রাত্রি আমার জন্য সুপ্রভাত নিয়ে এলো। বার বছরের কষ্ট আজ মিটল। হে প্রিয় পুত্ররা সবার কুশল সমাচার দাও। আমার প্রিয় ভাই বাসুদেব ও তোমাদের মা কেমন আছেন! বার বছর কোন খবর জানি না। কে বেঁচে আছে কেইবা মারা গেছে-কোন খবর পাই না। তোমাদের পিতাও কম নির্দয় নন। বার বছর আমি এই অরণ্যে ঘুরে মরছি, কিন্তু কেউ আমার খবর নেওয়ার চেষ্টা করেনি।



কৃষ্ণ বলেন –দেবী! মনস্তাপ ত্যাগ করুন। গৃহদাহে আপনারা মারা গেছেন শুনে পিতা দুঃখে সাতদিন অন্নজল স্পর্ষ করেন নি। আমাকে পাঠিয়েছিলেন কি ঘটেছে জানতে। বিদুরের সাথে দেখা করে সব বুঝতে পেরে কিছুটা স্বস্তি পাই। বার বছর আপনারা অরণ্যে কষ্ট পাচ্ছেন, পিতাও আপনার কথা ভেবে অশ্রুজলে ভাসছেন। কিন্তু বিধির লিখন খন্ডন সম্ভব নয়। আর শোক করবেন না, দুঃখের শেষ হয়েছে। কাল বা পরশু নিজের দেশে ফিরে চলুন।





কুন্তীকে প্রণাম জানিয়ে তারা ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের কাছে এলেন। যোড়হাতে প্রণাম জানাতেই যুধিষ্ঠির দ্রুত উঠে এসে তাদের আলিঙ্গন করেন। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে তারা অশ্রুজলে ভাসতে থাকেন। কেউ কাউকে ছারতে চান না। বহুক্ষণ তাদের মুখে কথা ফোটে না।

শেষে রাম ও কৃষ্ণ বসে পাঁচ ভাইয়ের পূর্বের কষ্টের সকল কথা শোনেন। যুধিষ্ঠির বলতে থাকেন জতুগৃহ কিভাবে পুড়ল, বিদুরের মন্ত্রণায় কেমন ভাবে তারা উদ্ধার পেলেন, রাক্ষসের হাত থেকে কিভাবে রক্ষা পেয়ে বনে বনে দেশে দেশে তপস্বীর বেশে বার বছর কষ্ট করলেন। একে একে সব ঘটনার বিবরণ দিলেন।



সব শুনে দেবকীনন্দন আশ্বাস দিয়ে বলেন –দুষ্ট ধৃতরাষ্ট্র ও তার নষ্ট পুত্ররা যে অন্যায় করছে তার ফল অবশ্যই তারা পাবে। যদি ভাল ভাবে তারা রাজ্যপাট ভাগ করে না দেয় তবে সকলে মিলে তাদের সংহার করব।



যুধিষ্ঠির বলেন – হে, দামোদর[কৃষ্ণ=দাম-দড়ি+উদর-কোমরঃশৈশবে দূরন্তপনার জন্য মা যশোদার হাতে কোমরে দড়ি দিয়ে রাখা হত]! কিভাবে জানলেন আমরা এই কুম্ভকারের ঘরে আছি!



শ্রীকৃষ্ণ বলেন –যা কান্ড ভীমার্জ্জুন করল পৃথিবীতে আর কারো পক্ষে এমন করা অসম্ভব। তাতেই তোমাদের চিনতে পেরেছি এবং এখানে আশ্রয় নিয়েছ বুঝতে পেরেছি। অগ্নি যেমন গুপ্ত থাকলেও প্রকাশ পায়, তেমনি তোমাদের বিক্রম তোমাদের চিনিয়েছে।



যুধিষ্ঠির বলেন –আজ আমাদের সৌভাগ্য যে স্বচক্ষে জগন্নাথ দর্শন করলাম। কেবল একটি ভয় হচ্ছে সবাই যানতে পারে আমরা এই কুম্ভকারের ঘরে আছি। বিশেষ করে তোমার আগমন গোপন থাকবে না। এই বার্তা তো দূর্যোধনও পেয়ে যাবে।



গোবিন্দ বলেন –রাজা কাকে ভয় করছ! শত দুর্যোধনই বা তোমার কি ক্ষতি করতে পারে! স্বর্গ-মর্ত-পাতালের সাহায্য নিয়েও যদি সে আসে তবু মুহুর্তে চক্ষের নিমেষে তাকে নিবারণ করব আমরা। সপ্তবংশ সহ আমি যজ্ঞসেনের সখা আর সবাইকে জয় করতে পারে ভীমার্জ্জুন একা।



যুধিষ্ঠির বলেন –তাকে ভয় নয় কিন্তু জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্রকে বড়ই ভয় পাই। আজ এখানেই বাস করব। কাল কি করব সকালে ঠিক করতে হবে।

এতসব বলে তারা পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন। তারপর রাম ও নারায়ণ বিদায় নেন।

মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম কহেন সদা শুনে পূণ্যবান।

...................................

উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে

......................................

আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮৪





Click This Link

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬

জুন বলেছেন: মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীরাম কহেন সদা শুনে পূণ্যবান। দীপান্বিতা :)
+

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, জুন!

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:১৬

আছিফুর রহমান বলেছেন: ভাল লাগলো, সামুর মনে হয় সবচেয়ে দীর্ঘ নিয়মিত সিরিজ ব্লগ

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আছিফুর রহমান!

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩

গোল্ডেন গ্লাইডার বলেছেন: জানলাম B-))

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ ......

৪| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
//অগ্নি যেমন গুপ্ত থাকলেও প্রকাশ পায়, তেমনি তোমাদের বিক্রম তোমাদের চিনিয়েছে।//

-কথাগুলো মনে ধরলো :)


চলতে থাকুক মহাভারত.... বাড়তে থাকুক সামু’র সংগ্রহ!

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, মাঈনউদ্দিন মইনুল!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.