নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮৬

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে অর্জুন অনায়াসে লক্ষ্যভেদে সক্ষম হলেন ...অন্যান্য রাজা ক্রুদ্ধ হল... অর্জুনের সাথে তাদের যুদ্ধ শুরু হল ......যুদ্ধে বিমুখ হয়ে রাজারা পলায়ন করল...ভীমের যুদ্ধে রাজপরিবাররা আতঙ্কিত হল...অর্জুনের সঙ্গে দ্রৌপদী কুম্ভকারালয়ে গমন করলেন...পঞ্চপান্ডবরা গৃহে উপস্থিত হলে মা কুন্তী ঘরের ভিতর থেকে বললেন –যা এনেছ তা পাঁচভাই ভাগ করে নাও।...পরে ভুল বুঝে বিলাপ করতে থাকেন...বলরাম ও কৃষ্ণ কুন্তীর সাথে দেখা করতে এলেন...]







দ্রুপদ রাজার খেদ এবং ধৃষ্টদ্যুম্নের প্রবোধঃ



এদিকে দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেন যাজ্ঞসেনী দ্রৌপদীর শোকে ভূমিতে গড়াগড়ি দিয়ে অধোমুখে কাঁদেন। রাজাকে ঘিরে তার মন্ত্রীরাও কাঁদতে থাকে। পুত্ররাও অন্তপুরজনরাও শোক করতে থাকে। সে সময় ধৃষ্টদ্যুম্ন সেখানে উপস্থিত হল।

রাজা বলেন –তুমি একা কেন! আমার কৃষ্ণা কোথায়! হে হরি, বিধি আমার বাম হল কেন, কেন গুণবতী কন্যা কৃষ্ণাকে আমায় হারাতে হল! পুত্র, কন্যার কুশল সমাচার জানাও। সেই লক্ষ্যবেদ্ধা ব্রাহ্মণ কুমারেরই বা কি হল! তাকে তো সব রাজারা ঘিরে ধরেছিল। সে যুদ্ধে কার জয় হল। মুনিবর ব্যাসদেবই আমার সর্বনাশ করলেন। তার কথাতেই আমি কৃষ্ণার স্বয়ম্বর করেছিলাম। তিনিই লক্ষ্য নির্মাণ করে ধনুর্বান দিয়েছিলেন। বলেছিলেন পার্থ অর্জুন ছাড়া আর কেউ এই লক্ষ্যভেদ করতে পারবে না। আমার কর্ম দোষে মুনির সেই বাক্য মিথ্যে হয়ে গেল। বিপরিত ফল পেলাম। এখন বল পুত্র, কৃষ্ণাকে কোথায় রেখে এলে। কৃষ্ণাকে ছাড়া এখানে কোন মুখে এলে। হা কৃষ্ণা, হা কৃষ্ণা, আমার প্রাণপ্রিয় কন্যা!

এত কথা বলতে বলতে রাজা দ্রুপদ জ্ঞান হারালেন।



ধৃষ্টদ্যুম্ন বলে –আর কাঁদবেন না, রাজন! সবই মঙ্গল হয়েছে। পিতা দুঃখ ত্যাগ করুন। ব্যাসের বচন কখনও মিথ্যা হওয়ার নয়। মনে হচ্ছে তোমার মনের ইচ্ছে পূর্ণ হতে চলেছে।

শুনে দ্রুপদ ‘কহ, কহ’- বলে সব জানতে চাইলেন।



ধৃষ্টদ্যুম্ন বলে –সেই ব্রাহ্মণের অসীম তেজ। তাকে ঘিরে ধরা সব রাজাদের তিনি পরাজিত করেন। তার সঙ্গী হয় আরেক ব্রাহ্মণ। সে যেন বৃক্ষ হাতে আরেক ইন্দ্র। সব রাজারা যুদ্ধ ভঙ্গ দিয়ে পালাল। শেষে রাত্রে যাজ্ঞসেনী সেই দুজনের সাথে চলে গেল। পথে তাদের সাথে আরো তিনজন মিলিত হল। ভার্গবের কর্মশালায় তারা আশ্রিত ছিল সেখানে তারা চলে গেল। সেখানে এক পরমা সুন্দরী স্ত্রী ছিলেন তার রূপে বিনা দীপে ঘর আলোকিত। তিনি এদের জননী বুঝতে পারলাম। তিন ভাই কৃষ্ণাসহ সেখানে রয়ে গেলেন। অত রাত্রে বাকি দু’জন ভিক্ষা করতে চলে গেল। ভিক্ষান্ন কৃষ্ণা চক্ষের নিমেষে রান্না করল।

মা জননী তাকে স্নেহ সম্ভাষণে বলেন –তুমি আগে দেবতা, ব্রাহ্মণ ও অতিথিদের অন্ন দাও। তারপর যা থাকবে তা অর্ধ ভাগ করে বৃকদরকে দাও। অবশিষ্ট অংশ পাঁচভাগ করে চারভাইকে দাও। একভাগ দু’ভাগ করে আমরা দুজন ভোগ করব।

দ্রৌপদী হৃষ্ট চিত্তে মার আজ্ঞা পালন করল। যদিও বৃকোদরজন প্রচন্ড ক্ষুধার্ত থাকায় অতিথিদের খাদ্যান্নের ভাগ দিতে চাই ছিলেন না। সে মহাক্রোধে কৃষ্ণাকে দেখছিল। শেষে মায়ের প্রবোধে সে শান্ত হয়। ভোজন শেষে সবাই আচমন করে শুতে গেল। সবার কনিষ্ঠজন শয্যা প্রস্তুত করল। সবার উপরে মায়ের শয্যা। তার পায়ের নিচে পাঁচভায়ের শয্যা। সবার চরণতলে কৃষ্ণা শয্যা পেতে হৃষ্ট মনে শুয়ে পরল।

শুয়ে শুয়ে পাঁচভাই অস্ত্র, রথ, হাতি প্রভৃতি সেনা বিষয়ক আলোচনা করতেই বুঝলাম তারা ব্রাহ্মণ নন।

মহাভারতের কথা সুধার–সাগর। কাশীদাস কহেন সদা শুনেন সাধুজন।

..............................



দ্রুপদ রাজপুরে পান্ডবদিগের আনয়নঃ





সব শুনে দ্রুপদরাজ আনন্দিত মনে উঠে বসে জেগে রাত্রি কাটালেন। আকাশে অরুণ আভার উদয় হতেই তিনি দ্বিজ পুরোহিতকে ডেকে বিনয়ের সাথে বলেন –শীঘ্র করে তুমি কুম্ভকার শালায় যাও। তারা কোন জাতের পরিচয় নাও।

রাজার আজ্ঞা পেয়ে পুরোহিত চললেন। ব্রাহ্মণকে দেখে পঞ্চভাই প্রণাম জানালেন।

দ্বিজমণি যুধিষ্ঠিরকে বলেন –তুমি সত্যশীল ধার্মিক মনে হচ্ছে। যা জিজ্ঞেস করব ঠিক উত্তর দিও। দ্রুপদরাজ তোমাদের পরিচয় যানতে চান। তার মনের ইচ্ছে ছিল তার প্রিয়তর সখা কুরুবংশের পান্ডুপুত্রের হাতে কন্যা দ্রৌপদীকে সমর্পণ করবেন। গৃহদাহে পঞ্চপান্ডবের মৃত্যুর গুজব তিনি মানতে পারেননি। তাই ব্যাসমুনির সাথে পরামর্শ করে এমন লক্ষ্য বানালেন যা কেবল পার্থ অর্জুনের পক্ষ্যে ভেদ সম্ভব। এখন তার মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কে তোমরা কিবা তোমাদের পরিচয় আমাকে জানাও।



ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বলেন –পরিচয় কিসের জন্য প্রয়োজন। পাঞ্চালরাজ তার কন্যার বিবাহ সম্বন্ধে জাতি কুল শীল গোত্র কিছুই নির্দেশ করেননি। তার পণ অনুসারে এই বীর লক্ষ্যভেদ করে কৃষ্ণাকে জয় করেছেন। অনুতাপের কোনও কারণ নেই, তার ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে।



পুরোহিত বলেন –তা আর কে লঙ্ঘন করবে। তবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে রাজাকে নিশ্চিন্ত করুন।



যুধিষ্ঠির বলেন –রাজাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন হীনজাতির মানুষ কি এমন লক্ষ্য বিদ্ধ করতে পারে!



শুনে পুরোহিত দ্রুপদকে গিয়ে সব জানালেন। দ্রুপদরাজ চিন্তিত হলেন। পুত্রদের সাথে অলোচনা করে ছয়টি রথ নিয়ে পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্নকে সেই ব্রাহ্মণের গৃহে পাঠালেন।



পাত্রপক্ষের জাতি পরীক্ষার জন্য দ্রুপদ বিভিন্ন উপহার সাজালেন-পাশা ক্রীড়া উপকরণ, বেদ-বিদ্যা-পুরাণ, ধান-যব-নানা শষ্যবীজ, ধনুকসহ নানা অস্ত্র তূণ প্রভৃতি অস্ত্রাদি। নট-নটীরা নৃত্যগান শুরু করে দিল। চারদিকে অশ্ব-গজ-যান সুসজ্জিত হল।



রথ নিয়ে ধৃষ্টদ্যুম্ন কুম্ভকার গৃহে গিয়ে সবিনয়ে জানায় দ্রুপদরাজ আদর করে তাদের রাজপ্রাসাদে নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন। শুনে যুধিষ্ঠির দেরি করলেন না। পাঁচভাই পাঁচটি রথে উঠলেন। অন্য রথটিতে কৃষ্ণার সাথে ভোজকন্যা পঞ্চপান্ডব জননী কুন্তী উঠলেন। সুমঙ্গলধ্বনি বেজে উঠল। রাজসভায় প্রবেশ পথের দুধারে অনেক ধনরত্ন রাখা হয়েছিল কিন্তু পাঁচভাই সে সবের দিকে দৃষ্টিপাত মাত্র না করায় পাত্রমিত্রেরা বুঝল এরা সামান্য মানুষ নন। তাদের বিক্রম ও ব্যক্তিত্ব দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে আলোচনা করে এরা ছদ্ম দ্বিজ মনুষ্য হয়ত নন।



যেখানে দ্রুপদরাজ রত্ন সিংহাসনে পাত্রমিত্র বেষ্টিত হয়ে বসে ছিলেন সেখানে পাঁচভাই এসে উপস্থিত হলেন। রাজা উঠে এসে তাদের সাদর সম্ভাষণ করলেন। অন্তপুরের নারীরা হুলুধ্বনি দিয়ে কুন্তীসহ কৃষ্ণাকে ভিতরে নিয়ে গেল।



মহাভারতের কথা শ্রবণে মঙ্গল, কাশীরাম কহে লভেন ভারতের ফল।

...................................

উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে

......................................

আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮৫



Click This Link



মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:০২

ঢাকাবাসী বলেছেন: খুব সুন্দর।

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী!......মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা নেবেন......

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: প্রতিবারের ন্যায়ই চমৎকার।

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, দিশেহারা রাজপুত্র!

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মহাভারতের কথা শ্রবণে মঙ্গল, কাশীরাম কহে লভেন ভারতের ফল।

০৫ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:২০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, সেলিম আনোয়ার!

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১৭

এনামুল রেজা বলেছেন: সব পর্ব না পড়া হলেও মাঝেমধ্যে পড়তে পারছি মহাভারতের প্রাঞ্জল গল্পরুপ।
সুযোগ করে দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

০৫ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:২০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, এনামুল রেজা!

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:০৫

তুষার কাব্য বলেছেন: কয়েক টা পর্ব মনে হচ্ছে মিস করে গেছি পাহাড়ে থাকায় ! আবার ফিরে আসলাম :)

শুভকামনা নিরন্তর ।

০৫ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, তুষার কাব্য!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.