নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯১

১৫ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮

[পূর্বকথা - দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে অর্জুন অনায়াসে লক্ষ্যভেদে সক্ষম হলেন .......রাজা দ্রুপদ পুরোহিত পাঠিয়ে পঞ্চপাণ্ডবদের আমন্ত্রণ জানান....যুধিষ্ঠির বলেন মায়ের বচনানুসারে দ্রৌপদীকে পাঁচভাই বিবাহ করতে চান....যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে...দ্রুপদরাজ যখন তার কন্যার বিবাহ নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত, সে সময় অন্তর্যামী সর্বজ্ঞ মুনিরা পান্ডবদের বিবাহের উদ্দেশ্যে সেখানে উপস্থিত হলেন, তারা দ্রৌপদীর পঞ্চস্বামী হওয়ার কারণ জানালেন....দেবতারা এসে বল্লেন পঞ্চপান্ডবের জন্যেই কৃষ্ণার জন্ম....রাজা দ্রুপদ বিবাহে সম্মত হলেন .... ]

পঞ্চ পান্ডবের সহিত দ্রৌপদীর বিবাহঃ



পাঞ্চাল নরেশ দ্রুপদ বিবাহের আজ্ঞা দিলেন। সকল দেবতারা, মুনিরা সভায় আসতে লাগলেন।

পঞ্চপান্ডবকে পাঁচটি সিংহাসনে বসান হল। প্রতি জনকে হরিদ্রা(হলুদ), পিটালি(জলে গোলা চালগুঁড়ো), গন্ধ(সুগন্ধি) দেওয়া হল। পঞ্চতীর্থের জলে তাদের স্নান করান হল। ইন্দ্রের উপহার দেওয়া বিভূষণে পঞ্চপান্ডব সেজে উঠলেন। সকল মাঙ্গলিক কর্ম সম্পন্ন হলে তারা বিবাহস্থলের রত্নবেদীতে প্রবেশ করলেন।

সুন্দরী দ্রৌপদী পঞ্চপান্ডবকে সাতবার প্রদক্ষিণ করে সিংহাসনে বসলেন। পঞ্চভায়ের হাতের সাথে তার হস্তবন্ধন হল।
কৃষ্ণার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী যুধিষ্ঠিরের হাতে, তর্জনীতে বৃকোদর ভীম, মধ্যাঙ্গুষ্ঠে পারথ অর্জুন, অনামিকায় নকুল ও কনিষ্ঠা অঙ্গুলীতে সহদেব বাধা পরলেন।

দুন্দুভি বেজে উঠল। বিদ্যাধরী নাচতে শুরু করল। সকল নরনারী মঙ্গলময় উলুধ্বনি দিতে লাগল।

কৃষ্ণ নারায়ণ আনন্দে পাঞ্চজন্য বাজান। লক্ষ লক্ষ শঙ্খ বাদ্য বাজতে থাকে।
দেবতা-ঋষিরা দ্রৌপদীসহ পঞ্চপান্ডবকে কল্যাণ আশীর্বাদ করতে লাগলেন। দ্বিজ-ব্রাহ্মণদের প্রচুর দক্ষিণা দেওয়া হল।

এভাবে শুভ কার্য সম্পন্ন করে প্রভাতে যে যার রাজ্যে ফিরে গেল। মুনিরা, ব্রাহ্মণরা নিজেদের স্থানে ফিরে গেলেন।

বলরাম ও কৃষ্ণ নারায়ণ দ্বারাবতী(দ্বারকা) ফিরলেন।
যাওয়ার পথে যদুমণি কৃষ্ণের বিদুরের কথা মনে পরল, তিনি নিজেই পঞ্চপান্ডবের সংবাদ তাকে দিতে গেলেন।
কৃষ্ণকে দেখে বিদুর আনন্দাশ্রুতে ভাসলেন। পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে পূজা করে কৃষ্ণকে সিংহাসনে বসালেন।
অভিমান করে বিদুর কৃষ্ণকে বলেন –বার বছর এদিকে আসেন নি। আজ হস্তিাপুরের বড়ই সৌভাগ্য জগন্নাথ স্বয়ং এলেন। পান্ডবদের কোন সংবাদ যদি পেয়ে থাকেন দয়া করে আমায় বলুন। কোন দেশে, কি ভাবে তারা আছেন। তারা বেঁচে গেছেন না মারা গেছেন জানান। কেবল ভরসা আছে তারা ধর্মবন্ত। হায় কুন্তী দেবী, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরকে না দেখেও আমি এ পাপ শরীর নিয়ে বেঁচে আছি।
এত বলে বিদুর মাটিতে লুটিয়ে পরলেন। কৃষ্ণ দুই হাতে তুলে তাকে বসালেন।
কৃষ্ণ হেসে বিদুরকে বলেন –খুল্লতাত(কাকা), ভাল সংবাদই আমি আপনাকে দিতে এসেছি। পঞ্চপান্ডবের বিবাহ হল ত্রৈলোক্যবাসীর সাক্ষাতে। এক লক্ষ রাজাসহ সকলে সদলবলে এসেছিলেন। গতরাত্রে যাজ্ঞসেনীর বিবাহ হল। পঞ্চপান্ডবের ভার্য্যা হলেন তিনি একাকিনী। আমিও সকুটুম্ব উপস্থিত ছিলাম। শুভ কাজ সম্পন্ন করে এখন দ্বারকায় ফিরছি।
সকল কাহিনী শুনে বিদুর আনন্দিত হয়ে গোবিন্দের চরণ স্পর্ষ করে বলেন –এখানে একথা আর কাউকে এখনি বলবেন না, শ্রীহরি! দুষ্ট লোকে শুনে কুকথা ছরাবে।
হেসে কৃষ্ণ বলেন –কাকে ভয় পাচ্ছেন। এরাই তো পান্ডবদের ভয়ে পালিয়ে এসেছে। এই পৃথিবীতে ভীমার্জুন পরাক্রমী বীর তারা অবহেলায় এক লক্ষ রাজাকে জয় করেছেন।
বিদুরকে প্রবোধ দিয়ে কৃষ্ণ ভগবান দ্বারকায় ফিরে গেলেন। বিদুর ও দ্রুত ধৃতরাষ্ট্রের কাছে গেলেন।
আননদ মনে বিদুর ধৃতরাষ্ট্রকে বলেন –আজ শুভরাত্রি হল, দ্রুপদ নন্দিনী কৃষ্ণা কুরুকুলে এলেন।
শুনে ধৃতরাষ্ট্র আনন্দিত হয়ে বলেন –সব কাজ ফেলে এখনই দুর্যোধনকে আর পুত্রবধূকে ঘরে নিয়ে আস।
বিদুর বলেন –দূর্যোধন নয়, যুধিষ্ঠির দ্রুপদকন্যাকে বরণ করেছেন।
ধৃতরাষ্ট্রের বুকে যেন শেল বিঁধল। তবু তিনি মুখে হাসি এনে কষ্ট করে বলেন –আমার কাছে দুর্যোধনের চেয়েও বড় যুধিষ্ঠির। তার শুভবার্তা শুনে আমার মন আনন্দে পূর্ণ হল। তারা এখন কোথায় আছে, বিদুর! কেইবা তোমায় এ সংবাদ জানাল।
বিদুর বলেন –কৃষ্ণার জন্য স্বয়ম্বরের লক্ষভেদ রাখা হয় যা ইন্দ্রের পুত্র অর্জুন ভেদ করেন। বিদুর রাজার মন বুঝে বুঝে ধিরে ধিরে সকল সংবাদ জানাতে লাগলেন। কৃষ্ণাকে নিয়ে রাজাদের মধ্যে প্রচুর যুদ্ধ হয়। ভীমার্জুন সবাইকে পরাজিত করে। দেবতা ও মুনিরা এক হয়ে পঞ্চপান্ডবের সাথে কৃষ্ণার বিবাহ দিলেন। যদুবংশের সকলকে নিয়ে শ্রীপতি কৃষ্ণ সেই বিবাহে উপস্থিত ছিলেন। তিনি স্বয়ং এ সংবাদ আমায় দিয়ে দ্বারকায় ফিরে গেলেন।
এত বলে বিদুর নিজের স্থানে ফিরে গেলেন। অধোমুখে অন্ধ রাজা ধ্যান করতে বসলেন।

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।
...................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে

পঞ্চতীর্থ - কাশীস্থ পাঁচটি পূণ্যস্থান-জ্ঞানবাপী, নন্দিকেশ্বর, তারকেশ্বর, মহাকালেশ্বর ও দন্ডপাণি
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯০ Click This Link

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: মুগ্ধগো দিদি, এত ঝরঝরে লেখা ! তোমার লেখার জন্য যে মুখিয়ে থাকি -----

২২ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, লাইলী আরজুমান খানম লায়লা!

২| ১৫ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

মোঃমোজাম হক বলেছেন: মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান :)

সবই অজানা ছিল

২২ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, মোঃমোজাম হক!

৩| ১৫ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩

জুন বলেছেন: সত্যি মহাভারত ।
লিখতে থাকো, পড়লাম দ্রৌপদির বিয়ের ঘটনা :)

২২ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০১

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, জুন!

৪| ১৫ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩৮

রিকি বলেছেন: বরাবরের মত ভাল লাগা রইল দিদি...চলতে থাকুক মহাভারতের কথাচ্ছলে আলোচনা..পোস্টে ২য় লাইক :)

২২ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, রিকি!

৫| ১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:২১

দীপংকর চন্দ বলেছেন: ভালো লাগা অনেক দীপান্বিতা।

সাবলীল এবং অনুপুঙ্খ বর্ণনা!!

অনিঃশেষ শুভকামনা।

অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়।

২২ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, দীপংকর চন্দ!

৬| ২০ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৬:২০

টয়ম্যান বলেছেন: আপনার এই সিরিজটা আমার খুব ভালোলাগে আপু

২২ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৫৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, টয়ম্যান!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.