নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯৮

০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:১২

[পূর্বকথা - ইন্দ্রপ্রস্থে দ্রৌপদীকে নিয়ে পঞ্চপান্ডব সুখে বাস করতে লাগলো... একদিন অর্জুন বাধ্য হলেন যুধিষ্ঠির ও দ্রৌপদী একসাথে অবস্থান কালে গৃহে প্রবেশ করায়...তিনি নিজেই বারো বছরের বনবাসে যান... উলুপী ও চিত্রাঙ্গদার সাথে তার বিবাহ হয়... পরে প্রভাস তীর্থে এলে গোবিন্দ শুনে শীঘ্র সেখানে এসে পার্থকে আলিঙ্গন করলেন এবং দ্বারকায় নিয়ে আসেন..সেখানে সুভদ্রাকে দেখে অর্জুনের ভাল লাগে, সুভদ্রাও অর্জুনের প্রেমে পাগল হন এবং সত্যভামাকে তার মনের কথা জানান... সত্যভামা অর্জুনকে সুভদ্রা বিবাহের কথা বলেন...কথা প্রসঙ্গে পারিজাত হরণের কথা ওঠে...]

পারিজাত হরণ বৃত্তান্তঃ

রুক্মিণী, কৃষ্ণ, সত্যভামা ও গরুড়

মুনি বলেন –হে, কুরুবংশ চূড়ামণি! শুনুন পারিজাত হরণের অপূর্ব কাহিনী।
একদিন নারায়ণ রৈবতক পর্বতে বিহার করছিলেন। সে সময় নারদ সেখানে এসে বীণা বাজিয়ে কৃষ্ণের গুণগান করতে লাগলেন। বীণায় একটি পারিজাত পুষ্প বাঁধা ছিল। তিনি সেটি কৃষ্ণের হাতে উপহার দিলেন।
পরম সুন্দর সে পুষ্প দেবেরও দুর্লভ। বহু যোজন পর্যন্ত তার সৌরভ ছড়িয়ে পরে। দেখে হৃষীকেশ কৃষ্ণ আনন্দিত হলেন। তিনি সেটি স্ত্রী রুক্মিণীকে পরিয়ে দিলেন। একে রুক্মিণীদেবী্ ত্রৈলোক্যমোহিনী, পারিজাত অঙ্গে দিতে তিনি আরো মোহময়ী হয়ে উঠলেন।

রুক্মিণী, কৃষ্ণ ও নারদ

নারদ কিছুক্ষণ কথোপকথন করে বিদায় নিলেন। ব্রহ্মার এই পুত্রটি কলহে আনন্দ পান।
মুনি পথে যেতে যেতে চিন্তা করেন -সত্যভামার কাছে গিয়ে পারিজাতের কথাটা বলি, দেখি সত্রাজিতের কন্যা কি বলে!
এই ভেবে নারদ দ্রুত দ্বারকায় সত্যভামার গৃহে গেলেন। মুনিকে দেখে সত্যভামা তাকে স্বাগত জানিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য করে বসার আসন দিলেন।

সত্যভামা হেসে বলেন –এতদিন কোথায় ছিলেন, মুনিবর!

নারদ মুনি করুন মুখে বলেন –আজ ইন্দ্রের নগরে গেছিলাম। তিনি পারিজাত পুষ্প দিয়ে আমার পূজা করেন। সে পুষ্প দেবতাদের কাছেও দুর্লভ, মানুষ তো দেখেই নি। ইদ্র তা গর্ব করে আমায় দিলেন।
পুষ্প দেখে আমি মনে মনে ভাবলাম ইন্দ্র ছাড়া উপেন্দ্রের(ইন্দ্রের কনিষ্ঠ ভ্রাতা/বিষ্ণুর বামনাবতার) কাছেই এ পুষ্প শোভা পায়। সে কারণে পুষ্প এনে কৃষ্ণকে দিলাম।
পুষ্প দেখে গোবিন্দও আনন্দিত হলেন। তখনই তিনি রুক্মিণীকে ডেকে এনে স্বহস্তে পারিজাত পুষ্প তাকে পরিয়ে দিলেন। সে পুষ্প ধারণ মাত্র ভীষ্মক কন্যা নিজেকে রূপে ত্রৈলোক্য বিজিতা মনে করছেন।
কিন্তু আমি তো এতদিন জানতাম তুমিই কৃষ্ণের সবচেয়ে প্রিয় প্রেয়সী ছিলে। এখন জানলাম রুক্মিণীই তার প্রিয় পাটরাণী।

মুনির মুখে এত কথা শুনে সত্যভামা পুতুলের মত স্থির হয়ে গেলেন। রাগে তিনি কন্ঠের হার ছিঁড়ে ফেললেন। অঙ্গের সব অলঙ্কার খুলে ফেললেন। খোঁপা খুলে ফুলের মালা ছিড়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে হাহাকার করতে লাগলেন।

সত্যভামাকে কষ্ট পেতে দেখে নারদ মুনি মনে মনে হেসে আবার রৈবতক পর্বতের দিকে বেগে রওনা দিলেন।
সেখানে রুক্মিণীর গৃহে কৃষ্ণ তখন ভোজন করছিলেন। সে সময় নারদ সেখানে উপস্থিত হলেন।

গোবিন্দ বলেন –কহ মুনি, কি সমাচার! পুনরায় কি কারণে এলেন।

মুনি বলেন –অবধান করুন শ্রীমধুসূদন, আমি দ্বারকায় গেছিলাম। সত্যভামা তখন আপনার কথা জিজ্ঞেস করলেন। কথাপ্রসঙ্গে পারিজাত প্রসঙ্গ এল। কিন্তু এমন হবে সে তো আমি জানতাম না! রুক্মিণীকে পারিজাত পুষ্প দিয়েছেন শুনে সেখানেই তিনি মূর্ছিত হয়ে পরে উচ্চস্বরে হাহাকার শুরু করেছেন। যত বসন ভূষণ ছিল সব ছিড়ে ফেলছেন। হাত দিয়ে কপালে আঘাত করে যাচ্ছেন। সব সখিরা প্রবোধ দিতে গেলে তা না শুনে আরো রেগে দ্বিগুণ হচ্ছেন। ‘প্রাণ যাক্‌, প্রাণ যাক্‌’ বলে ডাক ছারছেন দেখে দ্রুত আপনাকে সব জানাতে এলাম।

সব শুনে গোবিন্দ বিস্মিত হলেন। কি করবেন ভেবে পেলেন না।
পারিজাত পুষ্পের জন্যই এই গণ্ডগোল বুঝে তিনি রুক্মিণীকে ডেকে বলেন –আমায় ক্ষমা কর, বিদর্ভি(রুক্মিণী)! তুমি সত্যভামার চরিত্র যান। রাগে সে নিজের প্রাণও নিতে পারে। তাই তোমার পারিজাত পুষ্পটি তুমি সত্যভামার জন্য দাও।

শুনে রুক্মিণী খুবই দুঃখ পেলেন।
অধোমুখে গোবিন্দকে বলেন –হে মুরারি! একবার পুষ্পরাজ দিয়ে পুনরায় চেয়ে নিচ্ছ, এমনই দুর্ভাগা আমি! আমায় পুষ্প দিলেন বলে সে হিংসায় জ্বলছে। সে সেই হিংসায় জ্বলে মরুক, আমি পুষ্প দেব না।

রুক্মিণীর কথায় শ্রীহরি চিন্তিত হয়ে নারদকে জিজ্ঞেস করেন –এর বৃত্তান্ত বল। এই পুষ্প আপনি কোথা থেকে পেলেন।

নারদ বলেন –স্বর্গে এই পারিজাত বৃক্ষটি আছে। ইন্দ্রের রক্ষকরা এর রক্ষা করছে। এই পারিজাত বৃক্ষের পুষ্পই নন্দন বনকে শোভিত করে। আপনি সহস্রলোচনের(ইন্দ্র) কাছে আরো পুষ্প চেয়ে পাঠান। আপনার নাম শুনে অবশ্যই তিনি দেবেন।


সাগর মন্থনের ফলে পারিজাতপুষ্প বৃক্ষের উৎপত্তি

গোবিন্দ বলেন –মুনি আপনি যান সেখানে ইন্দ্রকে গিয়ে বলুন, ক্ষীরোদ সাগর মন্থন করে এই পুষ্প বৃক্ষের উৎপত্তি হয়েছে, একা তিনি কেন তা ভোগ করবেন! আমার ভাগের যতটা আছে তা আমায় দিয়ে দিন। ভাল ভাবে না দিলে কষ্ট আছে জানিয়ে দেবেন। প্রথমে চাইবেন, না দিলে এই কথাগুলো শোনাবেন।

এই বলে নারায়ণ নারদকে ইন্দ্রের কাছে পাঠালেন এবং নিজে সত্যভামার জন্য দ্বারাবতী রওনা দিলেন।

পারিজাতপুষ্প

মহাভারতের কথা অমৃত-লহরী, কাশীরাম কহেন সাধুজন পান করেন কর্ণ ভরে।
...................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৯৭ Click This Link

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪

জুন বলেছেন: হে দীপান্বিতা নারদ মুনির পেটে পেটে কত প্যাচ বাপরে বাপ ।
মজা লাগলো এ পর্বটিও :)
+

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, জুন! :)

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪

রিকি বলেছেন: নারায়ণ নারায়ণ !!!!! ;)

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, রিকি! ... নারদ, নারদ! ;)

৩| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২৫

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
জুন বলেছেন: হে দীপান্বিতা নারদ মুনির পেটে পেটে কত প্যাচ বাপরে বাপ ।
মজা লাগলো এ পর্বটিও :)
+

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায়!

৪| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২

আবু শাকিল বলেছেন: অনেক পর্ব মিছড হয়ে গেছে =p~ =p~

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আবু শাকিল! ... আশাকরি আস্তে আস্তে পড়ে নেবেন...

৫| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:২৫

ঢাকাবাসী বলেছেন: সমাপ্তিটা হঠাৎ হল নাকি? ভাল লেগেছে।

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী!... না বেশ কিছুটা চলবে, নতুন পর্ব এসেছে...

৬| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৫১

তুষার কাব্য বলেছেন: বেশ কিছুদিন পর আসলাম ।

চমৎকার লাগলো পর্বটি ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, তুষার কাব্য!

৭| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

রাতুল_শাহ বলেছেন: অনেকদিন পর আসলাম।

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪

দীপান্বিতা বলেছেন: কেমন আছেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.