নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১২৬

১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫৩

[পূর্বকথা -একদিন নারদমুনি ইন্দ্রপ্রস্থের সভায় উপস্থিত হলেন এবং নানা উপদেশ দিয়ে লোকপালদের সভা-বর্ণনা করলেন এবং সব শেষে জানালেন পান্ডুর মনের ইচ্ছে পাণ্ডবরা রাজসূয় যজ্ঞ করে পিতাকে রাজা হরিশচন্দ্রের মত ইন্দ্রের স্বর্গে যেন স্থান করে দেয়....যুধিষ্ঠির পরামর্শের জন্য কৃষ্ণকে আহ্বান জানালেন....কৃষ্ণ প্রথমে জরাসন্ধ বধের কথা বলেন ]



জরাসন্ধের জন্ম বৃত্তান্তঃ

ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির বলেন –হে নারায়ণ, বলুন শুনি জরাসন্ধ নাম হল কেন তার! কি ভাবেই বা সে এত বলবান হয়ে উঠল! তোমাকে হিংসা করেও সে রক্ষা পাচ্ছে কি ভাবে!

কৃষ্ণ গোবিন্দ বলেন –শুনুন তবে সে সব কাহিনী।
মগধের রাজা ছিলেন বৃহদ্রথ। তিনি অগণিত সৈন্য, সামন্ত, গজ, বাজী(ঘোড়া), রথের অধিকারী। তেজে তিনি সূর্যের সমান, ক্রোধে যেন যম আর ধনে যক্ষপতির সমান। রূপে কামদেব আর ক্ষমা গুণে ক্ষিতি ধরিত্রী।
কাশীরাজের দুই কন্যার সাথে তার বিবাহ হয়। পুত্র কামনা করে রাজা পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করেন। কিন্তু যৌবনকাল গেল কোন পুত্র হল না। তখন নিজেকে ধিক্কার দিয়ে তিনি রাজ্য ত্যাগ করে স্ত্রীদের নিয়ে বনবাসে গেলেন।
গৌতমমুনির পুত্র চণ্ডকৌশিক ঋষি, যিনি পরম তপস্বী সর্বদা বনে বাস করেন। বহু দেশ ভ্রমণ করে একদিন বৃক্ষতলে রাজা ঋষির দেখা পেলেন। স্ত্রীদের নিয়ে তিনি পরম ভক্তিভরে মুনির পূজা করলেন।
খুশি হয়ে মুনি জিজ্ঞাসা করেন –রাজা, কোথায় চলেছেন!
রাজা বৃহদ্রথ করজোড়ে বলেন –আমার দুঃখের কথা কি বলব! রাজা হয়ে বহু সৎ কর্ম করেছি। প্রজাদের সন্তানের মত পালন করলাম। কিন্তু পুত্রহীন হয়ে ধন-জনে আর মন নেই আমার। চারদিক শূন্য দেখছি। তাই রাজ্য ত্যাগ করে বনে বাস করছি। এখন ভাবছি সন্ন্যাস নিয়ে তপস্যা করব।
রাজার কথা শুনে গৌতমনন্দন চন্ডকৌশিক চিন্তিত হয়ে ধ্যানে বসলেন। সে সময় দৈবের প্রভাবে সেই আমগাছ থেকে একটি আম মাটিতে পড়ল। আমটি তুলে ঋষি সেটি হৃদয়ে ধারণ করলেন।
পরে আনন্দিত মনে আমটি রাজার হাতে তুলে দিয়ে বলেন –এই ফলটি আপনার প্রধান ভার্যাকে খেতে বলবেন। গুণবান পুত্র তার উদরে জন্মাবে। এবার আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে, নিজ রাজ্যে ফিরে যান।
মুনির বাক্যে রাজা খুশি হয়ে রাজ্যে ফিরে এলেন। আমটি স্ত্রীদের হাতে দিলে দুই বোন সেটিকে দুভাগে ভাগ করে খেলেন। এক সময় দুই রাণীই গর্ভবতী হলেন। তারা একসাথে পুত্র প্রসব করলেন। দুইজনে আনন্দে পুত্রের মুখ দেখতে চাইলেন।

এক চক্ষু, নাসা, কর্ণ, একপদ, এক হাত-অর্ধেক অর্ধেক অঙ্গ দেখে রাণীরা বিস্মিত হলেন। বুকে কিল মেরে তারা হাহাকার করে উঠলেন-দশ মাস গর্ভব্যথা বৃথা বহন করলাম! পুত্র দর্শন করে তারা যেমন নিরাশ হলেন, তেমনি ঘৃণা পেলেন। দাসীদের আজ্ঞা দিলেন সন্তানদের ফেলে দেওয়ার জন্য। দাসীরা সন্তান দুটি আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিল।
সে সময় সেখানে জরা নামে এক রাক্ষসী উপস্থিত হল। সে সদা শোণিত(রক্ত) মাংস আহার করত। তার দ্বারাই সংসারে গর্ভপাত শাসিত হত। রাজগৃহে গর্ভপাত শুনে সে এসেছে। অর্ধ অর্ধ অঙ্গ দেখে সে বিস্মিত হয়ে দুইহাতে দুই অংশ তুলে নারাচারা করে দেখতে থাকল। হঠাৎ দুই অঙ্গ একত্র হয়ে শিশুটি মুখে হাত ভরে উঙা উঙা রবে চিৎকার করে কান্না জুড়ল।

আশ্চর্য হয়ে জরা ভাবে একে খেয়ে পেট ভরবে না, কিন্তু রাজাকে ফেরত দিলে তিনি আনন্দিত হবেন। এই ভেবে শিশুটিকে কোলে নিতেই শিশু মেঘ গর্জনে নিস্বন(শব্দ) করতে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে জরা নিশাচরী নারী মূর্তি ধারণ করে রাজার কাছে গিয়ে তার কোলে পুত্রকে তুলে দিল এবং সকল কথা জানাল।
পুত্রকে ফিরে পেয়ে রাজা বৃহদ্রথ উল্লাসিত হলেন। তিনি জরাকে জিজ্ঞেস করেন –কে তুমি, কোথায় তোমার বাস, কিবা নাম তোমার। কার কন্যা, কার স্ত্রী, কোথায় থাকা হয়! আমার প্রতি তোমার এত স্নেহ! এমন খুশি ত্রিভুবনে এর আগে আমায় কেউ দিতে পারে নি।
রাজার কথা শুনে নিশাচরী বলে –সৃষ্টি অধিকারী আমার নাম গৃহদেবী দিয়েছিলেন। দানব বিনাশের ফলে আমার সৃজন হল। আমি সবার ঘরেই বাস করি। আমাকে সপুত্রা নবযৌবনা করে যে জন গৃহের ভিত্তিতে এঁকে রাখে তার ঘর ধন-ধান্য-জায়া-সুতে সর্বদা পরিপূর্ণ হবে। আপনার গৃহেও রাজন আমি নিত্য পূজা পাই। তাই তোমার এ পুত্রকে আমি রক্ষা করলাম। আমার এই উদর সমুদ্র শোষণ করতে পারে। সুমেরু সদৃশ মাংস খেয়েও আশ মেটে না। তবে তোমার গৃহ পূজায় আমি বশিভূত তাই তোমার ঔরস রক্ষা করলাম।
এই বলে রাক্ষসী নিজ স্থানে ফিরে গেল।
পুত্র ফিরে পেয়ে রাজা আনন্দিত হলেন। জাত কর্ম বিধিমত করা হল। ব্রাহ্মণরা অনুমান করে পুত্রের নামকরণ করল – জরা একে সন্ধি করেছে তাই পুত্রের নাম হল জরাসন্ধ।
জরাসন্ধ শুক্লপক্ষের চাঁদের মত অবিরাম বাড়তে লাগল। পুত্র যৌবনপ্রাপ্ত হলে বৃহদ্রথ পুত্রের হাতে রাজ্যভার দিয়ে স্ত্রীদের নিয়ে ব্রহ্মচারী হলেন।
মহাবলী জরাসন্ধ নিজ বাহুবলে ভূমণ্ডল শাসন করতে লাগল। তার দুই দুর্ধর্ষ সেনাপতি হংস ও ডিম্বক তার সহায়। এই তিনজন ধিরে ধিরে সংসারে অজেয় হয়ে উঠল। তার উপর তার জামাই হল কংস রাজা। আমার হাতে ভোজপতি যখন হত হলেন সেখান থেকেই বার্হদ্রথ জরাসন্ধ গদা প্রহার করল। শত যোজন পার হয়ে সে গদা হঠাৎ এসে মথুরায় আঘাত করে মথুরায় সাংঘাতিক ভূমিকম্প করে। এরপরও আঠারোবার ত্রয়োদশ অক্ষৌহিণী সাজিয়ে সপরিবারে জরাসন্ধ মথুরা আক্রমণ করে।

হংস সেনাপতি মহাবীর বলভদ্রের হাতে প্রচন্ড আঘাত পেলে চারদিকে হংসের মৃত্যুর খবর ছড়ায়। ভাই ডিম্বক ভায়ের মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে যমুনায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। কিন্তু হংস তখন জরাসন্ধের সাথে বসে পরামর্শ করছিল। ভায়ের আত্মহত্যার খবর শুনে সে দৌড়ে গেল এবং সেও যমুনার জলে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেল। এভাবে জরাসন্ধের প্রধান দুই হাত হংস ও ডিম্বকের মৃত্যু হয়েছে।
এখন আছে কেবল অত্যাচারী জরাসন্ধ। অনেক চিন্তা করে তার সাথে লড়তে হবে। মল্লযুদ্ধ ছাড়া তাকে হত্যা করা সম্ভব নয়। একমাত্র বৃকোদর ভীমের পক্ষেই তা সম্ভব। আমার মনের ইচ্ছে যদি আপনারা মানেন তবে বলি ভীমার্জুনকে আমার সাথে দিন।

কৃষ্ণের কথা শুনে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির স্নেহনয়নে ভীমার্জুনকে একদৃষ্টে দেখতে থাকেন। তিনি উপলব্ধি করলেন তার দুই ভাই কৃষ্ণের সাথে হৃষ্টচিত্তে যেতে চায়। তখন তিনি মধুর বাক্যে কৃষ্ণকে বলেন –আপনি কেন অনুনয় করছেন, যদুরায়! আপনি ছাড়া পাণ্ডবদের কে আর আছে! আজ পান্ডববন্ধু রূপে আপনি ত্রিভুবন খ্যাত। আপনার নাম নিলে ত্রিজগতে আর ভয় থাকে না। আপনি যার সহায় তার আর কি ভয় থাকতে পারে!
এই বলে তিনি দুইভায়ের হাত গোবিন্দের করে সমর্পণ করলেন।

মহাভারতের কথা অমৃতের ধার, কাশীরাম দাস কহেন রচিয়া পয়ার।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
.....................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১২৫ Click This Link

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:০১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার লেখনি।






ভালো থাকবেন নিরন্তর।

১১ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:১০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, দেশ প্রেমিক বাঙালী!

২| ১১ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২১

নিয়েল হিমু বলেছেন: মহাভারত বইটা কি অনেক বড় ?

১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩

দীপান্বিতা বলেছেন: বিশাল, হিমু! :)

৩| ১১ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১

এস বি সুমন বলেছেন: চালিয়ে যান, ভাল লাগল।

১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, এস বি সুমন!

৪| ১১ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:২৮

মুসাফির নামা বলেছেন: গল্পগুলো সুন্দরই।

১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, মুসাফির নামা!

৫| ১২ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:০৫

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
আপনার সহজ,সরল সাবলীল লেখায় মহাভারতের জটিল কাহিনীকে সহজ মনে হচ্ছে।

ধন্যবাদ আপনার আন্তরিক প্রচেষ্ঠাকে...... :)

১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায়!

৬| ১২ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৫৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: দীপান্বিতা ,




দুটি দেহাংশ জোড়া লাগিয়ে "জরাসন্ধ" । তাই জরাসন্ধ বধেও লাগা উচিৎ দুটি দেহ ।
আর তাতে ভীম + অর্জুন = ভীমার্জুন ই যথার্থ ।

১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আহমেদ জী এস! দুটি দেহাংশ জোড়া লাগিয়ে "জরাসন্ধ" । তাই জরাসন্ধ বধেও লাগা উচিৎ দুটি দেহ ।
আর তাতে ভীম + অর্জুন = ভীমার্জুন ই যথার্থ
-বা: দারুণ বলেছেন :)

৭| ১৩ ই মে, ২০১৬ রাত ২:২৯

রাঙা মীয়া বলেছেন: চমৎকার :D

১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, রাঙা মীয়া!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.