নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪২

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৫৬

[পূর্বকথা - যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন ....... মুনিরা হোম যজ্ঞের আয়োজন শুরু করেন.......দ্রুপদ ও অন্যান্য গণ্যমান্য রাজারা আসতে লাগলেন... কৃষ্ণদর্শনে লঙ্কার রাজা বিভীষণ উপস্থিত হলেন....কৃষ্ণের শত অনুরোধেও রাজাজ্ঞা বিনা তাকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হল না... ভীমের সাজাপ্রাপ্ত কিছু রাজাকে কৃষ্ণ প্রাণদান করেন.... অবশেষে কৃষ্ণ ও বিভীষণ সভায় এলেন...... কৃষ্ণ সকলকে বিশ্বরূপ দেখালেন....... সভার সকলে মূর্ছা গেল....... ]


শিশুপাল

সভায় রাজগণের প্রবেশঃ

ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞায় চার দ্বারে যত রাজারা অপেক্ষা করছিলেন সকলকে সভায় আসার অনুমতি দেওয়া হল।
সকল রাজারা রত্ন ভান্ডার দান করে সভায় প্রবেশ করতে লাগল।
সকলে ধর্মরাজকে প্রণাম করলে, রাজা তাদের বসার অনুরোধ করলেন। রাজারা যে যার স্থানে আসন গ্রহণ করে।
এভাবে পৃথিবীর সকল রাজা আসন গ্রহণের পর সভাকে দেখে মনে হল আরেক ইন্দ্রসভা বসেছে।

নারদমুনি সভা নিরীক্ষণ করে একান্তে বসে ব্যাসবেদকে বললেন –দেখুন এখানে যত রাজারা বসে আছে অল্পদিনের মধ্যেই এরা পরস্পর নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে সবাই মারা যাবে। কিছুদিনের মধ্যেই পৃথিবীর ভার লাঘব হবে।

নারদের একথা শুনে ব্যাসদেব চিন্তিত হলেন।
দুজনেই মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন। তাদের এই দুশ্চিন্তার কথা সভার আর কেউ জানতে পারল না।

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহেন, শুনেন পুণ্যবান।
…………………………………………………

শিশুপালের কৃষ্ণ নিন্দাঃ

বৈশম্পায়ন মুনি বলেন –হে পরীক্ষিত নন্দন জন্মেজয়, এবার রাজসূয় যজ্ঞের সুধারস কথা শুনুন।
যুধিষ্ঠির যজ্ঞ সমাপন করলেন। সকলকে যার যা যজ্ঞভাগ তা দান করে তুষ্ট করলেন।
সকলের সামনে দেবতা, পিতৃপুরুষ ও ভূমির পুজা করা হল।
কৃপাচার্যকে ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা দেওয়ার অনুরোধ করা হল, তিনিও দুহাতে আনন্দে অপরিমাণ দক্ষিণা দিতে লাগলেন।
যে রাজ্য থেকে যত ব্রাহ্মণ দ্বিজ এসেছে সেই রাজ্যের রাজার সকল ধন তাদের দান করা হল। তার উপর আবার যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞদান দেওয়া হল।
আনন্দে দ্বিজ ব্রাহ্মণরা আশীর্বাদ করতে করতে নিজ দেশে ফিরে গেল। এক একজন দ্বিজ দুই-চারটি রাখাল নিয়ে প্রচুর গরু ও বাছুর পেয়ে স্বদেশে রওনা দিল।
কেউ ঘোড়ায়, হাতির পিঠে চড়ে বা রথে চড়ে দেশে ফিরল। সকলের সাথে রত্নে পূর্ণ শকট চলল।

এবার গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের পাশে বসে বললেন –বহু দুরদুরান্ত থেকে ভারত শ্রেষ্ঠ মহারাজারা তোমার ভবনে এসে উপস্থিত হয়েছেন। দেখতে দেখতে এক বছর হল। যজ্ঞ পূর্ণ হয়েছে, এবার সবাইকে যোগ্যমত পুজো করে যজ্ঞভাগ দান কর। তারা এবার নিজ নিজ রাজ্যে ফিরুক। এনাদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ তার পূজা আগে করা চাই।

ভীষ্মের কথা শুনে যুধিষ্ঠির সহদেবকে ডেকে সব বললেন। আজ্ঞামাত্র সহদেব অর্ঘ্যপাত্র নিয়ে রাজার সামনে দাঁড়ালেন।

যুধিষ্ঠির পিতামহ ভীষ্মকে জিজ্ঞাসা করেন – হে পিতামহ, আপনিই বলুন কাকে আগে পূজা করব। কে সবার শ্রেষ্ঠ।

ভীষ্ম বলেন –বৃষ্ণিবংশে বিষ্ণুর অবতার জন্মালেন যে গোবিন্দ-কৃষ্ণ, যাকে মহেন্দ্র(ইন্দ্র) আদি সকল দেবতারা পুজা করেন। সবার আগে তার চরণে অর্ঘ্য প্রদান কর। তিনি তারাদের মাঝে চন্দ্র সমান অবস্থান করছেন। ভক্ত বৎসল সেই কৃপা অবতার-কৃষ্ণ। তার আগে আর কেউ অর্ঘ্য পাওয়ার নেই। এনার পর অন্যদের অর্ঘ্য দান কর।

একথা শুনে আনন্দ মনে বীর সহদেব অর্ঘ্য নিয়ে গোবিন্দের চরণ পূজা করতে লাগলেন।
হৃষ্টচিত্তে কৃষ অর্ঘ্যদান গ্রহণ করলেন। কৃষ্ণকে পুজো করে পাণ্ডুর পুত্রেরা খুবই আনন্দিত ও ধন্য হলেন।

কিন্তু চেদিরাজ দমঘোষের পুত্র শিশুপাল তা সহ্য করতে পারল না। রাজসূয় যজ্ঞ পূর্ণ হওয়ার পর কৃষ্ণের পূজা দেখে শিশুপালের অঙ্গ ক্রোধে অবশ হল। জ্বলন্ত আগুনে যেন ঘি ঢালা হল। ভীষ্ম, যুধিষ্ঠির সকলকে রাগে সে গালি দিতে লাগল।

চিৎকার করে সে বলে ওঠে –ওহে ভীষ্ম, এ তোমার কেমন বিচার! সভাতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এত রাজা ও রাজকুমাররা থাকতে তাদের ছেড়ে তুমি এই বৃষ্ণিবংশের গোপালকে প্রথম পূজার আদেশ দিলে! পান্ডবরা তো সহজ বালক বুদ্ধি ধরে, তারা কি করে জানবে কাকে আগে পুজা করতে হয়। দামোদর কৃষ্ণ কোথাকার রাজকুমার যে আগে তার পুজো হল! সে কিভাবে আগে পুজোর যোগ্য হল শুনি!
হে ভীষ্ম এখনই এই সভা মাঝে এর উত্তর আমি চাই। দ্রুপদের মত বড় রাজাকে ছেড়ে কেন কৃষ্ণের পূজা আগে হল! বিশেষত যখন বসুদেব মহামতিও এখানে উপস্থিত আছে। তখন পিতাকে ছেড়ে পুত্রের পূজার আজ্ঞা দিলে কেন! এ তোমাদের কোন রীতি!
যদি বল আচার্যরূপে সে প্রথম পুজো পেল, তাহলেও বলব দ্রোণকে তো সে হিসাবে আগে পুজো করতে হত।
আর ঋষি বা গুরু ভেবে যদি এ পুজো হয় তবে শ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন এখানে উপস্থিত, তাকে এ সম্মান দেওয়া আগে দরকার।
রাজক্রমে পূজতে চাইলে দুর্যোধনকে ছেড়ে দামোদরের পূজা কেন আগে হল!
যোদ্ধাবীরকেই যদি আগে দান দিতে চাইলে, তাহলে কর্ণবীরের নারায়ণের আগে স্থান। শ্রী পরশুরামের প্রিয় শিষ্য এই কর্ণ মহাবীর। সে নিজ শক্তিতে পৃথিবীর অন্য রাজাদের শাসন করছে।
এছাড়া অশ্বত্থামা, কৃপসেন, ভীষ্মক, আমি-আমাদের ছেড়ে গোপালকে আগে কেন অর্ঘ্য দান করা হল!
প্রিয়বন্ধু বলে যদি কৃষ্ণকে আগে অর্ঘ্য দেওয়া হল তবে কেন আমাদের নিমন্ত্রণ করা হল। পৃথিবীতে ক্ষত্রিয়দের এমন অপমান আগে আর কেউ করে নি। অর্থ গর্বে, শক্তিতে মত্ত হয়ে তোমরা আমাদের অপমান করছ! আমরা তোমাদের ভয়ে বা কোন লোভে এখানে আসিনি। ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির ধর্মকার্য করতে চেয়েছেন সে কারণে আমরা সবাই উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু এখন দেখছি আমাদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আসলে অপমান করার জন্য। এভাবে তোমাদের ধর্মকার্য শেষ করলে!
হে গোপাল, তুমিই বা সবাইকে মুখ দেখাচ্ছ কিভাবে! একটুও লজ্জা হল না এভাবে সবার আগে অর্ঘ্য গ্রহণের! শুনী(কুকুর) যেমন নির্জনে পেলে গবীকে(গাভী) খায়, তুমিও তাই করলে! কোন তেজে তুমি আমাদের মত রাজাদের অমান্য করলে! এসভায় তোমার পূজা তো দেখছি নপুংসকের বিবাহের মত হল। অন্ধের কাছে অন্ধ যেমন পথ জানতে চায়, সভায় তোমার পূজাও তেমনি হল।
এই ভীষ্ম যেমন দুষ্ট, কৃষ্ণটাও তাই আর এই যুধিষ্ঠির রাজাও দুষ্ট। এই দুষ্টজনের মাঝে আমি কখনও থাকব না। যে সভায় সুজনের অপমান হয় সেখানে জ্ঞানবান লোক থাকতে পারে না।
এই বলে শিশুপাল উঠে চলে গেল। তার সাথে কিছু দুষ্ট রাজাও চলল।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
.....................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪১ Click This Link

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:০১

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লেগেছে। চালিয়ে যান।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী!

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৩৩

রাতুল_শাহ বলেছেন: শুনী মানে কুকুর?

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৪

দীপান্বিতা বলেছেন: হ্যা, শুনী মানে কুকুর

৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৩২

জুন বলেছেন: মহাভারত যেন সত্যই মহাভারত দীপা।
বিশাল বড় কিছুকে বোঝাতে অনেকে যেমন বলে থাকে " এ যেন মহাভারতের কিচ্ছা " :`>
ভালোলাগা রইলো ।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, জুন! :)

৫| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:১১

আহমেদ জী এস বলেছেন: দীপান্বিতা ,




জটিল , বড়ই জটিল ! ভগবানের লীলা বোঝা ভার !

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আহমেদ জী এস! --- সত্যি ভগবানের লীলা বোঝা ভার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.