নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪৮

০২ রা জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:২৯

[পূর্বকথা - যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন এবং যথাযথ ভাবে যজ্ঞ সমাপন করেন....শিশুপাল কৃষ্ণকে অপমান শুরু করলে কৃষ্ণ সুদর্শন চক্রে তার প্রাণ হরণ করেন .... সকল রাজারা নিজ দেশে ফিরলেও দুর্যোধন থেকে যায় ও পাণ্ডবদের হিংসা করতে থাকে ... শেষে মামা শকুনির সাথে পরামর্শ করে পিতা ধৃতরাষ্ট্রকে বাধ্য করে পাণ্ডবদের পাশা খেলায় আমন্ত্রণের জন্য ...]


যুধিষ্ঠিরের সহিত শকুনির দ্যূতক্রীড়া ও শকুনির জয়ঃ

পরদিন প্রভাতে পাণ্ডুর পাঁচ পুত্র আনন্দিত মনে নব নির্মিত সভায় প্রবেশ করলেন। একে একে সকলের সাথে কুশল সম্ভাষণ করে তারা কনক সিংহাসনে বসলেন। শকুনি তখন তার পাশা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হল।

শকুনি বলে – হে ধর্ম নৃপমণি মহারাজ যুধিষ্ঠির পুরুষদের মনোরম দ্যূতক্রীড়ার সূচনা করুন।

যুধিষ্ঠির বলেন –পাশা খেলা সব অনর্থের মূল। এ খেলার মাধ্যমে ক্ষত্রিয়ের পরাক্রম প্রদর্শন হয়না। এ খেলায় কপটতা আছে। এই অনীতি ক্রীড়ায় আমার মনের সায় নেই।

শকুনি বলে –রাজা, পাশা খেলায় বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। ক্ষত্রিয়ের ধর্ম পাশা খেলা অথবা যুদ্ধ করা। যুদ্ধে জাতি অজাতির বিচার চলে না। সেখানে হীন জাতীর প্রহারও সইতে হয়। কিন্তু পাশা সম মন ও সম বুদ্ধির সমর। মুনিরাও বলেন ক্ষত্রিয়েরা পাশা খেলতে পারে।

যুধিষ্ঠির বলেন –পাশা শঠতার খেলা। মামা আপনি অধর্ম করে আমায় জেতার চেষ্টা করবেন না।

শকুনি বলে –রাজন এত ভয়! তবে আপনি নিজ স্থানে ফিরে যান। পণ্ডিতে পণ্ডিতেই এ ক্রীড়া সম্ভব। আপনার যদি দ্যূতক্রীড়ায় মন না চায় তবে এখনই গৃহে ফিরে যান।

যুধিষ্ঠির বলেন –আমায় যখন ডেকে পাঠিয়েছেন, তখন আমি খেলব। সত্যের পথ থেকে সরে যাব না। এ সভায় কার সাথে আমার খেলা! পণ কে দেবে! মেরুতুল্য সম্পদ আমার, চার সমুদ্রের সমান রত্ন আমার ভান্ডারে।

দুর্যোধন বলে –আমার হয়ে মাতুল শকুনি খেলবেন। মামা যত রত্ন হারবে সব আমি দেব।

এভাবে সভার মাঝে শকুনি ও যুধিষ্ঠির পাশা খেলতে বসল। মনে অসন্তোষ নিয়ে ধৃতরাষ্ট্র, ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচার্য এবং বিদুর ও অন্যান্য সভাসদরা ক্রীড়া দেখতে লাগল।

ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির বলেন –আমি পণ রাখছি আমার ইন্দ্রপ্রস্থের সকল রত্নের ভান্ডার। হে দুর্যোধন সে পরিমান ধন কি তোমার আছে! কোথা থেকে সে পণ তুমি দেবে!

দুর্যোধন বলে –আমারো অনেক সম্পদ আছে। আমাদের জিতলে অবশ্যই সব আমি তোমায় সমর্পণ করব।

সারি নির্ণয় করে শকুনি তখন পাশা ফেলল এবং এক কটাক্ষে সব রত্ন জিতে নিল।

ক্রোধে যুধিষ্ঠির পুনরায় পণ করলেন – আমার কোটি কোটি সব মহা বলশালী অশ্ব বাজি রাখছি।

শকুনিও সাথে সাথে হেসে পাশা ফেলে বলে –এই সব জিতে নিলাম। এবার কি পণ করতে চান!

যুধিষ্ঠির বলেন –আমার অগণিত রথ আছে, সে সব নানা রত্নে বিভূষিত। মেঘের মত তাদের গর্জন। তাই পণ রাখছি।

শকুনি হেসে পাশা ফেলে বলে – দেখুন সে সবও জিতে নিলাম। এবার অন্য পণ রাখুন।

ধর্মরাজ বলেন –আমার ইষদন্ত মহাকায় দুর্নিবার হস্তিবৃন্দ পণ রাখছি।

এবারও শকুনি বলে ওঠে –জয় করলাম।

যুধিষ্ঠির বলেন – নানা রত্নে সজ্জিতা সহস্র সুন্দরী দাসী আছে, যারা ব্রাহ্মণের সেবায় ব্রত, তাদের পণ দিচ্ছি।

শকুনি পাশা ফেলে হেসে ওঠে –ওহে এবার আর কিছু পণ রাখ। তারাও আমার হল।

ধর্মপুত্র বলেন –আমার অগণন গন্ধর্ব অশ্ব আছে, যাদের সাথে সারা ভুবন ভ্রমণ করলেও এতকুটু কষ্ট হয় না। চিত্ররথ গন্ধর্ব আমায় উপহার দেন। এবার তাদের পণ রাখছি।

হেসে সুবলপুত্র শকুনি বলে –অশ্ব সব জিতে নিলাম।

যুধিষ্ঠির বলেন –আমার যত দুর্ধর্ষ যোদ্ধা সৈনিক আছে তাদের পণ দিচ্ছি।

গান্ধার নন্দন শকুনি সামান্য হেসে সে সবও জয় করল।

এভাবে কপট শকুনি একে একে সব জয় করতে থাকে। অন্যদিকে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির সব ধন একে একে হারাতে লাগলেন।
................................................

ধৃতরাষ্ট্রের প্রতি বিদুরের উক্তিঃ

সব দেখে শুনে বিদুর ব্যাকুল হয়ে উঠলেন।
বিদুর রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে বলেন –হে রাজন, আমার কথা আপনার একটুও মন নেয় না! মৃত্যুকালে যেমন রূগী ওসুধ খেতে চায় না।
হে অন্ধরাজা আপনি এখনও স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন! জন্মমাত্র যখন আপনার এই পুত্র খর(গর্দভ)শব্দ করেছিল তখনই আমি বলেছিলাম কুরুকুলের ক্ষয় করতে এর জন্ম। একে ত্যাগ করুন। আমার কথা শুনলেন না। এখন তার ফল সে দেখাচ্ছে। সংহার রূপে এ আপনার ঘরে আছে। স্নেহে অন্ধ হয়ে এর দোষ আপনি দেখতে পান না। দেব গুরু নীতি রাজা আমি আপনাকে বলি। মধুর কারণে মধুলোভীরা বৃক্ষোপরে ওঠে। মধুর নেশায় তারা পতনের ভয় ভুলে যায়। আপনার এ পুত্র দুর্যোধনও সেরূপ আজ মত্ত। এভাবে মহারথীদের সাথে শত্রুতা করছে। আজ আমার কথা না শোনার ফল পরে আপনি বুঝবেন। এর মত কংসভোজ জন্মেছিল। সে দুষ্টও মত্ত হয়ে পিতার বংশ নাশ করেছে। সকলে তাকে ত্যাগ করে। শেষে গোবিন্দের হাতে তার সংহার হয়।
হে রাজন, গোবিন্দের সাথে সখ্যতা রাখলে সপ্তবংশ সুখে থাকবেন। আমার বাক্য শুনুন মহারাজ! এখনই পার্থ অর্জুনকে আজ্ঞা দিন, সে দুর্যোধনকে পরাজিত করে বন্দি করুক। তারপর নির্ভয়ে পরম সুখে রাজকার্য করুন। এভাবে কাকের হাতে ময়ূরের অপমান হতে দেবেন না। এতো শিবার(শেয়াল) হাতে সিংহের অপমান। এভাবে শোক সিন্ধুর মাঝে নিজের পতন ঘটাবেন না। যে পক্ষী অমূল্য রত্ন প্রসব করে মাংস লোভে বিজ্ঞজনরা কখনই তাকে খায় না। রাজা, সোনার বৃক্ষ যত্ন করে রোপণ করে রক্ষা করলে পরে দিনে দিনে সুন্দর পুষ্প পেতেন।
হে নরপতি যা হয়ে চলেছে এখনই তা বন্ধ করুন। নিজ পুত্রদের কেন যমের অতিথি করছেন! এই পঞ্চপাণ্ডবের সাথে কার যুদ্ধ করার ক্ষমতা আছে শুনি! পাণ্ডবদের আজ যে শক্তি, যে ক্ষমতা – দিক্‌পাল সহ বজ্রপাণি ইন্দ্র এলেও পরাজিত হবেন।
হে ভীষ্ম, হে দ্রোণ, হে কৃপ-কেউ তো আমার কথা শুনুন! সবাই মিলে নত মস্তকে এই অন্যায় হতে দেখে যাচ্ছেন!
হে বীর, এভাবে অগাধ সমুদ্রে অবহেলায় নৌকা ডোবাবেন না। এভাবে তো সবাই মিলে দেখছি যম গৃহে যেতে চলেছেন।
অক্রোধী, অজাতশত্রু আমাদের এই যুধিষ্ঠির রাজন। কিন্তু যখন ভীম ও ধনঞ্জয় অর্জুন ক্রুদ্ধ হবে, সেই যুগল যখন ক্রোধে সংহার শুরু করবে তখন কে প্রবোধ দেবে তাদের!
হে অন্ধরাজা, পাশার ছলনায় সব নেবার কি ছিল। আজ্ঞামাত্র তো ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির সব আপনাকে নিবেদন করত। এই শকুনিকে আমি ভাল মত চিনি। কপট, কুবুদ্ধি, খলচূড়ামণি। কোথায় পর্বতপুরে এর নিবাস, কিন্তু সর্বনাশ করতে এখানে পরে আছে। একে এক্ষুনি বিদায় করুন, নিজ গৃহে ফিরে যাক।
হে শকুনি উঠে এস, পাশা ত্যাগ কর।

বিদুরের এত কথা শুনে দুর্যোধন ক্রোধিত হল, যেন আগুনে ঘৃত ঢালা হল।
দুর্যোধন গর্জন করে বলে –আমরা তোমার কথা শুনব না। কার হয়ে তুমি এত কথা সভা মাঝে বলছ! তুমি সর্বদা পিতা ধৃতরাষ্ট্রের হানি চেয়েছ। সবাই যানে পান্ডুর ছেলেরা তোমার অতি প্রিয়। আমি আমার ধারে কাছে শত্রুহিতকারীদের রাখতে চাই না। তুমি এই সভা থেকে উঠে যেখানে খুশি যেতে পার। এখানে থাকার যোগ্য তুমি নও। কুজনকে যত্ন করে রাখলেও সে অসৎ পথে গমন করবেই। সভার মাঝে তুমি যে সব কথা বললে অন্য কেউ হলে আজ তার প্রাণের আশা থাকত না। আমি তোমায় যত সম্মান করি, তুমি ততই আমায় আনাদর কর, জ্ঞানহীন ভাব। সভা মাঝে এমনভাবে কথা বলছ যেন তুমি এখানকার প্রভু! কেউ তোমার মত এমন কদর্য আচরণ করবে না।

বিদুর বলেন –আমি তোমায় কিছু বলছি না। হে ধৃতরাষ্ট্র আপনার দুঃখ দেখে আমার হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে। দুর্যোধন তোমায় আর কি বলব। ধৃতরাষ্ট্র আমার কোন কথাই শুনলেন না। হতায়ু(আয়ু যার শেষ) জন কখনও হিতের কথা শোনে না। তুমি আমায় কি কথা বলতে আসছ! নিজের সমকক্ষ কাউকে এসব কথা বল।

এত বলে ক্ষত্তা বিদুর চুপ করে গেলেন।

সুবলপুত্র শকুনি আবার পাশা খেলা শুরু করল।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
.....................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪৭ Click This Link

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৪৩

শায়মা বলেছেন: শকুনীমামার বুদ্ধি দেখে তো আমি অবাক!
দীপান্বিতামনি! অনেক অনেক ভালো লাগা!

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:১৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, শায়মা! :)

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫

রাতু০১ বলেছেন: শুভকামনা দিপা।ভালো লাগা।

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:১৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, রাতু০১!

৩| ০২ রা জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৯

জুন বলেছেন: মহাভারতের এ অংশটুকু কাহিনী হলেও আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক । এরপরই কি মহা প্রস্থানের পথে দীপান্বিতা ?
ভালোলাগা রইলো ।
+

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:১৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, জুন!

এরপর দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ --- মহা প্রস্থান আরও কিছু পরে, শেষের দিকে :)

৪| ০২ রা জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪২

পারভেজ রশীদ বলেছেন: বেশ ভাল ।শুভ কামনা।

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:১১

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, পারভেজ রশীদ!

৫| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৩৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: দীপান্বিতা ,




এই পাশা খেলা থেকেই তো দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের সূচনা ?
সাথে আছি ।

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:১০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আহমেদ জী এস!

ঠিক বলেছেন এরপর দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের সূচনা

৬| ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৩৭

বারিধারা বলেছেন: 'সত্যবাদী যুধিষ্ঠির' কথাটার মর্মার্থ কি? পঞ্চপান্ডবের মধ্যে কি যুধিষ্ঠির একাই সত্যবাদি? বাকি সব মিথ্যাবাদি? তাহলে তারা ধর্মপুত্র হল কি করে? আর যুধিষ্ঠিরকে সত্যবাদী হিসেব প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাও হাস্যকর। নিজের সত্যবাদিতাকে পুঁজি করে যুধিষ্ঠির যেভাবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দ্রোণাচার্যের সাথে প্রতারণা করল, সেরকম নজীর এই কাহিনীর 'ভিলেন' কৌরব পক্ষের কেউও তৈরি করতে পারেনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.