নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪৯

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:০৬

[পূর্বকথা - যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের অনুমতি নিয়ে রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন এবং যথাযথ ভাবে যজ্ঞ সমাপন করেন....শিশুপাল কৃষ্ণকে অপমান শুরু করলে কৃষ্ণ সুদর্শন চক্রে তার প্রাণ হরণ করেন .... সকল রাজারা নিজ দেশে ফিরলেও দুর্যোধন থেকে যায় ও পাণ্ডবদের হিংসা করতে থাকে ... শেষে মামা শকুনির সাথে পরামর্শ করে পিতা ধৃতরাষ্ট্রকে বাধ্য করে পাণ্ডবদের পাশা খেলায় আমন্ত্রণের জন্য ... শকুনির ছলনায় যুধিষ্ঠির একে একে সব হারতে থাকেন ]



ভ্রাতৃবর্গকে ও দ্রৌপদীকে পণ করণ ও যুধিষ্ঠিরের পরাজয়ঃ

শকুনি ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের দিকে চেয়ে বলে –সর্বস্ব হেরেছ এবার আর কি পণ রাখবে!

যুধিষ্ঠির বলেন – আমার অসংখ্য রত্ন এখনও আছে। চারি সিন্ধু মাঝে আমার যত ধন আছে, অযুত, নিযুত, খর্ব, মহাখর্ব, পদ্ম, শঙ্খ, করি যত অনন্ত সম্পদ সব পণ রাখছি।

সঙ্গে সঙ্গে পাশা ফেলে শকুনি বলে – জিতে নিলাম।

যুধিষ্ঠির বলেন –আমার পশুশালার পশুদের বাজি রাখছি। গাভী, উষ্ট্র, খর(গাধা), মেষ অগণন।

এবারও গান্ধারপুত্র বলে ওঠে-সব আমার।

যুধিষ্ঠির বলেন –এবার আমার শাসিত রাজ্যভূমি পণ রাখছি। ব্রাহ্মণের গৃহ ও ভূমি ছাড়া সব পণে দিলাম।

শকুনি আবার বলে ওঠে –এবারও জিতে নিলাম। আর কিছু আছে!

ধর্মপুত্র বলেন –আর তো কিছু ধন নেই!

কুমারদের অঙ্গের যত অলঙ্কার ছিল সব পণ করে শকুনি তাও জিতে নিল। তা দেখে ধর্মনৃপমণি যুধিষ্ঠির চিন্তিত হলেন।

শকুনি বলে ওঠে –এবার বিচার করে বল কি পণ রাখবে!

অনেক ভেবে যুধিষ্ঠির বলেন –আমার ভাই নকুল সুধীর, যিনি এই পৃথিবীতে কামদেব তুল্য তনুর জন্য সুবিখ্যাত। যার সিংহের মত গ্রীবা, পদ্মপত্র যুগল নয়ন। সেই নকুলবীরকে পণ রাখছি।

কপট শকুনি বলে –আহা প্রিয় ভাই যদি, তবে পাণ্ডুর এ সুন্দর কুমারকে কি ভাবে পণে দিচ্ছ!
এই বলে পাশা ফেলে নকুলকেও জিতে নিল।

যুধিষ্ঠির এবার বলে ওঠে –ধর্মজ্ঞ সুপণ্ডিত সহদেব আমার পরম প্রিয় জগৎ বিদিত। এবার তাকে বাজি রাখছি।

গান্ধার নন্দন শকুনি বলে ওঠে –তাকেও জিতে নিলাম।
চতুর কপট শকুনি বলে – আর কি পণ করার আছে, হে নৃপমণি! বৈমাত্রের ভাইদের তো বাজিতে হেরে বসলে। ভীমার্জ্জুনকে কি পণ রাখতে পারবে! বিশ্বাস তো হয় না।

ধর্মরাজ বলেন –মামা আপনার মন কালিমালিপ্ত, তাই আমাদের ভাইয়েদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করছেন। আমরা পাঁচ ভাই এক প্রাণ। না জেনে আপনি এমন কুবাক্য বললেন।

ভীত শকুনি সবিনয়ে বলে ওঠে –হে রাজা, পাশা খেলায় মত্ত হয়ে অন্যায় বাক্য বলে ফেলেছি। আপনি মানবকুলে শ্রেষ্ঠ, আমি গরিষ্ঠ অধম। আমায় ক্ষমা করে দিন।

যুধিষ্ঠির আবার খেলায় ফেরেন। এবার রাজা বলেন –তিন লোক খ্যাত আমার এ সহোদর ধনঞ্জয় অর্জুন। যিনি অবহেলায় দেবরাজকেও জয় করেন। অগণিত গুণে যিনি পৃথিবী বিখ্যাত। সেই ভাইকে এবার পণ রাখছি। যানি ইনি পণ যোগ্য নন। তবু এই দ্যূত ক্রীড়ার কারণে তাকে বাজি ধরলাম।

সঙ্গে সঙ্গে শকুনি বাজি ফেলে বলে ওঠে –জিতে নিলাম।
অর্জুনকে জিততেই কৌরবদের মধ্যে আনন্দলহরী ওঠে।

যুধিষ্ঠির বলেন –এবার আমি পণ রাখছি আমার সেই ভাইকে যার তুল্য বলশালী মনুষ্যলোকে নেই। ইন্দ্র যেমন দৈত্যদের থেকে দেবতাদের রক্ষা করে চলেছেন, সেইমত এই ভীমসেন পাণ্ডুপুত্রদের সর্বদা রক্ষা করেছেন। এ পাশায় ইনিও পণ যোগ্য নন, তবু দৈব্য নির্বন্ধ।

শকুনি এবার গর্জে ওঠে –এই পাশা ফেলে তাকেও নিলাম, মহারাজ! আর কি আছে আপনার পণ করুন।

এত শুনে যুধিষ্ঠির বলেন –এখন কেবলমাত্র আমিই আছি। আমি নিজেকে পণ রাখছি।

তাকেও জিতে শকুনি বলে –হে কুন্তীকুমার বড়ই পাপ কর্ম করে চলেছ। এবার দ্রুপদ কুমারীকে পণ রেখে নিজেকে উদ্ধার কর। নিজেকে উদ্ধার করলে অমন বহু নারী আবার তোমার হবে।

রাজা যুধিষ্ঠির বলে ওঠেন – মামা আপনার এ কথা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি কিভাবে দ্রৌপদীকে পণ রাখতে পারি! লক্ষ্মী রূপিণী, অসংখ্য গুণের অধিকারী, যিনি সব সময় সকলকে তুষ্ট রাখার কাজে ব্রতী। এই রাণী দ্রৌপদী-যিনি সকল দ্বিজ, ক্ষত্রিয়, দাস, দাসী, পশু, পাখী সবাইকে জননী রূপে প্রতিপালন করেন, ভালবাসেন-সেই স্ত্রীকে পণ রাখার মত দুর্মতি এখনও আমার হয় নি।

কপট শকুনি বলে ওঠে –ঠিক বলেছেন রাজা। আপনার এই গৃহিণী সাক্ষাৎ লক্ষ্মীর অবতার। তার ভাগ্যেই হয়ত আপনার পাশা উল্টে যাবে। যা কিছু হেরেছেন এবার ফিরে পাবেন। এর ভাগ্যেই সব উদ্ধার হতে পারে।

বিপদে পরলে বিদ্যান পণ্ডিতও বুদ্ধি হারায়। শকুনির কথা শুনে যুধিষ্ঠিরের মন পরিবর্তিত হল।
তিনি বলে ওঠেন – মামা ঠিক বলেছেন, এবার আমি আমার লক্ষ্মীকেই পণ স্থির করছি।

একথা শুনেই দুষ্ট শকুনি পাশা ফেলে অট্টহাস্যে বলে ওঠে – জিতেছি, জিতেছি।
শুনে দুর্যোধন, কর্ণ সকলে আনন্দে ফেটে পরে। মহা আনন্দে কৌরবরা খলখল করে হাসতে থাকে।
সভাসদরা সব দেখে শুনে আশ্চর্য হয়।
ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপের নয়ন সজল হয়ে অঠে।বিমর্ষ বিদুর অধোমুখে বসে থাকেন।
জ্ঞানবন্ত জন মহাশোকে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে।

হৃষ্ট চিত্তে অন্ধ রাজা চেঁচিয়ে ওঠেন –কে জিতল, কে জিতল!
বহুকালের লুকিয়ে রাখা কুটিল মনকে আজ আর অন্ধ রাজা গোপন করতে পারলেন না।

এভাবে সব কিছু হেরে গেলেন ধর্মরায় যুধিষ্ঠির।

সভাপর্বের এই সুধারস গান কাশীরাম দাস।

......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
.....................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৪৮ Click This Link

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫

নতুন বিচারক বলেছেন: সুন্দর লিখছেন ভালো লাগল।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৩৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, নতুন বিচারক!

২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

শাহীবুল বারী বলেছেন: হুমমমম ভাল লিখেছেন ।

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৩৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, শাহীবুল বারী!

৩| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:২১

আহমেদ জী এস বলেছেন: দীপান্বিতা ,





বিপদে পরলে বিদ্যান পণ্ডিতও বুদ্ধি হারায়। ঠিক কথা ।
দ্রৌপদীকে পাশার দানে বাজী ধরে হেরে যাবার গল্পের পেছনে মহাভারত আসলে কোন মেসেজটি দিতে চেয়েছে ?

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৩৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আহমেদ জী এস!

আমার মনে হয় দ্রৌপদীকে পাশার দানে বাজী ধরাটা যুধিষ্ঠিরের উচিত হয় নি, তিনি চানও নি-কিন্তু ঘটনাচক্রে শেষে তা করেন---এর ফলে দুর্যোধন যে কাজটি করে তা তার মৃত্যুঘন্টা বাজায় এবং কুরুকুলকে নাশ করে

৪| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:২৭

জুন বলেছেন: বহুকালের লুকিয়ে রাখা কুটিল মনকে আজ আর অন্ধ রাজা গোপন করতে পারলেন না।
দীপান্বিতা যার মন কুটিল সে যতই ভদ্র আচরন করুক না কেনো তার ভেতরের ঈর্ষা, কুটিলতা আর নোংরামী অন্ধ ধৃতরাস্ট্রের মতই সুযোগ পেলে এক সময় ফাক গলে বেরিয়ে আসে ভেতরের কদর্যতা ।
ভালোলাগা রইলো
+

৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:২৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, জুন! :)

৫| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০০

রাতুল_শাহ বলেছেন: যুধিষ্ঠিরের অনেক বোকামি ছিলো।
যুবরাজ হিসেবে দুর্যোধনকে বলিষ্ঠ মনে হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.