নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেলাওয়ার জাহান। সাধারন পাবলিকের একজন। ভাব বা ভেটকিবাজি পছন্দ করি না।

দেলাওয়ার জাহান

পড়ি। লিখতে চাই। মরতে চাই না।

দেলাওয়ার জাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হে দারিদ্র, তোরে কোপাইতে মন চাই- পারি না

২৪ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৩

১।
জীবনানন্দ দাশ। জীবন কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। সারাজীবনের সংগ্রামের কথা নিতান্তই কম নয়। এমন অনেক রাত গেছে হয়ত মাথায় গিজগিজ করছে লেখা, কিন্তু তাকে রাত জেগে হারিকেন জ্বেলে এর কাছে ওর কাছে টাকা ধার চেয়ে চিঠি লিখতে হয়েছে। লিখতে না পারার যে যন্ত্রণা তা কবির মগজকে নীরবে খেয়ে চলেছিলো, সাথে দুশ্চিন্তা-ক্লান্তি।

শেষ কয়েকবছর কবি জীবনানন্দ দাশ চরম অর্থকষ্টে ছিলেন। তুচ্ছ কারণে একটার পর একটা চাকরি হারিয়েছেন। স্ত্রী লাবণ্যগুপ্তর অসুস্থতাসহ পুরো পরিবারের ভার তাকে অস্থির এবং ক্রমশ অসহায় করে তুলেছিলো। টিউশনি করেছেন, এমন কি বীমা কোম্পানির দালালি পর্যন্ত করেছেন। টাকা ধার করেছেন সম্ভব-অসম্ভব যে-কোন সূত্র থেকে।

শরীরটা একদিন ভেঙ্গে পড়লো ট্রামের নিচে। অথচ ট্রামটিকে খুনি বলা যায় না। ট্রামটিই কি মুক্তি দিয়ে গেলো না কবিকে? “আরম্ভ হয় না কিছু — সমস্তের তবু শেষ হয় — কীট যে ব্যর্থতা জানে পৃথিবীর ধুলো মাটি ঘাসে তারও বড় ব্যর্থতার সাথে রোজ হয় পরিচয়! যা হয়েছে শেষ হয়; শেষ হয় কোনোদিন যা হবার নয়!”
২।
নিদারুণ দুঃখ কষ্টের দিনে যারা খবর নেয়নি মৃত্যুর পর তাদেরকে বিবৃতি দিতে দেখা গেলো। মানিকের কফিনে কত রকম ফুল! বাধানো ফুলের তোড়া। তিনি মৃত্যুর পর কয় গাড়ি ফুল চেয়েছিলেন? “পাথরের ফুল” শিরোনামে কবিতা লিখলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়ঃ
............
ফুলকে দিয়ে
মানুষ বড় বেশি মিথ্যে বলায় বলেই
ফুলের ওপর কোনোদিনই আমার টান নেই।
তার চেয়ে আমার পছন্দ
আগুনের ফুলকি
যা দিয়ে কোনোদিন কারো মুখোশ হয় না।

জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাড়া করে বেড়াত যে প্রশ্ন তা হলো “কেন”? এই ‘কেন’র উত্তর খুঁজতে গিয়ে সম্মুখীন হয়েছেন জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মূহুর্তে বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব। জীবনের শেষভাগে মার্কসীয় দর্শনের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদও গ্রহণ করেছিলেন।

১৯৫০ সালে কমিউনিস্টদের উপর নেমে এলো সরকারি দমননীতি। পত্রিকাগুলো তাঁর লেখা ছাপানো বন্ধ করে দিলো। “দেখো, দুটি ডাল ভাতের সংস্থান না রেখে বাংলাদেশে কেউ যেন সাহিত্য করতে না যায়”– পেশা হিসেবে সাহিত্যচর্চা বেছে নিতে যিনি আপোষ করেননি, তাঁর এ কথা বলতে বুক ফেটে গেছে হয়তো। চরম দারিদ্রের মুখোমুখি তবু সাহিত্যচর্চাকেই পেশা হিসেবে আঁকড়ে ধরেছেন। এক সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর জন্য সাহিত্যিক বৃত্তির ব্যবস্থা করেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯ মে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে, বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকায়; মৃত্যু ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে, কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে। যক্ষ্মায়- বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায়- মারা গেলেন।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস স্মরণযোগ্যঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির কাকের বাসায় কোকিলের ছানা। অমন কুবের আর শশী সৃষ্টি করার মানুষ গণ্ডায় গণ্ডায় জন্মায় না!
৩।
নজরুলের চোখের দিকে তাকাতে ভয় লাগে। ছবিটা দেখুন। শুধু কি অভিমান? একটু কি রাগও নেই? ব্যথার সমুদ্র তার চোখের চেয়ে বড় হবার কথা নয়। ঋত্বিকের ছবিটা আরো ভয়ংকর। শুধু অভিমান নয়, ক্রোধ উপচে পড়ছে। তাঁর কথা আরেকদিন।

কবি নজরুল। তারও জন্ম ১৮৯৯ সালে। ন’বছর বয়সে পিতৃহারা কবিকে রোজগারের ধান্দায় নামতে হলো। লেটোর দলে গান গেয়ে ছোট মানুষ ক’টাকা পায়? তারও পরে রুটির দোকানের কাজ। লেটো তার কাব্য-জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখলেও সেদিন ছিলো কেবলই অভাব।

“বিদ্রোহী” তাকে রাতারাতি তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দিলেও লেখালেখির আয় দিয়ে বেহিসাবি কবির কিচ্ছু হতো না। নিদারুণ অনটন। হুগলী ছেড়ে কৃষ্ণনগর। এখানে এসেও তাঁর আর্থিক দুর্গতি ঘুচেনি। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, দিন আর চলে না।

কৃষ্ণনগর থেকে সপরিবার কলকাতা চলে এলেন। দুঃখের উপর দুঃখ- প্রানপ্রিয় পুত্র বুলবুল মারা গেলো। কবি মুষড়ে পড়লেন। কিছু গান লিখলেন। ব্যথা কি কমেছিলো কবির?

কবির বই ছেপে, গান রেকর্ড করে দুপয়সা কামিয়ে নিলে কেউ কেউ। একটা রেকর্ডের দোকান দিয়েছিলেন। কবি ব্যবসা বুঝবেন কেন? দোকানটা নিলাম হয়ে গেলো।

কবিপত্নি প্রমীলা মাত্র ৩০ বছর বয়সে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হলেন। পানি পড়া থেকে আধুনিক সব ধরনের চিকিৎসা করা হলেও রোগ সারেনি। নজরুল ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তাঁর আর্থিক সংকট চরমে ওঠে। ঋণের দায়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েন।

ঋণের ক্রমাগত চাপ, সংসারের জটিলতা, রোগ-শোক, দুঃখ-বেদনা, আঘাত-অবহেলায় ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারালেন। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে চূড়ান্তভাবে মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত। কবির টাকার বড় প্রয়োজন ছিল। কবির জন্মদিনে শুভ জন্মদিন বলতে সত্যি লজ্জা করে।
ঢাকা, ২৪।০৫।২০১৭

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


দারিদ্রতা থেকে বের হতে জাতিকে সাহায্য করুণ; দারুদ্রতা মানুষের সব সন্মান কেরে নেয়।

২৪ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৮

দেলাওয়ার জাহান বলেছেন: কি করা যায় বলুন তো। দারিদ্র আমারেও কুরে কুরে খাচ্ছে। কিছু করতে পারলে জানাবেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন প্লিজ। মানুষ মানুষের জন্য।

২| ২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:০২

চাঁদগাজী বলেছেন:


পথ বের করবো, আমরা দেশের ৬০% থেকে ৭০% মানুষ, আমাদের মিলিত শক্তি সমাধান আনবে।

২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:০৯

দেলাওয়ার জাহান বলেছেন: সে ভোরের অপেক্ষায় আছি। সঙ্গে আছি আপনার। ভালো থাকবেন সবসময়।

৩| ২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমার ওস্তাত একটা দারুন সত্য কথা বলেছেন- দারিদ্রতা মানুষের সব সন্মান কেড়ে নেয়।

২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:৪০

দেলাওয়ার জাহান বলেছেন: হ্যা। এর চেয়ে বেয়ার ট্রুথ সত্যি হয় না রাজীব ভাই।

৪| ২৪ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:৩৫

শরীফুর রায়হান বলেছেন: সাহিত্যচর্চা সব সময়ই কষ্টকর ছিল, ভালো লাগল,

২৬ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:০২

দেলাওয়ার জাহান বলেছেন: নির্মম সত্য কথা বলেছেন ভাই।
অনেক ধন্যবাদ জানবেন।

৫| ২৬ শে মে, ২০১৭ রাত ২:১৮

সালমান মাহফুজ বলেছেন: এইদেশে মার্কেটের সাথে তাল না মিলালে শিল্পীর ভাত নাই । সেদিনো ছিল না আজো নাই ।

অথচ অর্থকষ্টেভোগা এই শিল্পীদের বেইচা আমরা সুশীলরা মার্কেটে খুব আরামে বেচে আছি । এখন ম্যালা টাকার উদযাপন করি ! উদযাপনে বসে কফির মগ হাতে তাদের সংগ্রামের গল্প শুনি এবং শুনাই !

ক্ষমতা থাকলে নিশ্চয়ই এখন কবর থেইকা উইঠা ওরা আমাদের কুপাই তো ।

পোস্টে ভালো লাগা ।

২৬ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:০৪

দেলাওয়ার জাহান বলেছেন: আহা! এতো সুন্দর করে বললেন। আপনার মন্তব্য পেয়ে আমারও ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.