নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ডাচম্যানের খেরোখাতা

দি ফ্লাইং ডাচম্যান

© দি ফ্লাইং ডাচম্যান এই ব্লগের সব লেখার সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ব্যাতিত কোন লেখার সম্পুর্ণ অথবা অংশ বিশেষ পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন অথবা সম্পাদনা করে কোথাও প্রকাশ করা যাবে না।ফেবুঃ দি ফ্লাইং ডাচম্যান

দি ফ্লাইং ডাচম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোজা বিষয়ক কড়চা...

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০৬







দেখতে দেখতে আবার রমযান চলে এলো, তিনটা রোজা চলেও গেলো। এখনকার রোজাগুলো পড়ালেখার খাতিরে ঢাকাতেই করতে হয়, ছুটিতে বাড়ি যেতে যেতে ২৫-২৬ রোজা হয়ে যায়।



আমি রাজশাহীর রোজাগুলো খুব মিস করি! শীতের দিকের গুলো বিশেষ করে। প্রায় রাতেই জেগে থাকতাম। আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে গেলে আস্তে করে উঠে লাইট নিভিয়ে পিসি খুলে ব্লগে বসে থাকা। আম্মু আগে উঠতো। আম্মু ওঠার আগে দিয়ে আবার সুরসুর করে এসে মশারী তুলে বিছানায় ঢুকে পড়া! আম্মু এসে জাগাতো। অতঃপর দুচোখে অনেক ঘুম(!) নিয়ে ওঠার ভান। কোন কোন দিন আম্মু উঠতে দেরি করলে বা আমি ঘুমিয়ে গেলেও সমস্যা ছিলোনা, অনিক টিএন্ডটি তে আর সহিষ্ণু মোবাইলে ঠিকই ফোন দিতো সেহরীর সময়ে। সেহরীতে আমার দুধ কলাই প্রিয় ছিলো। তরকারী বা ডিম জাতীয় কিছু খেতে পারতাম না একদম। সেটা আবার আমাকে মেখে দেয়া লাগতো। এরপর চুপ করে চামচ দিয়ে গেলা। সেহেরী শেষে চা খাবার নেশা ছিলো খুব। আমিই বানাতাম। আব্বু ফজরের নামাজে চলে গেলে উঠে আমার পিসি! আব্বু আসার আগে দিয়ে আবার বন্ধ! বাধ্য ছেলের মত ঘুম। আমার ঘরে দরজা লাগিয়ে ঘুমানোর চল নেই। মাঝে মাঝে পিসি চালাতে গিয়ে আব্বুর কাছে ধরা খেতাম। কখন পা টিপে টিপে আব্বু চলে আসতো টের পেতাম না। তারপর ঝাড়ি সহকারে বিছানায় গমন।



সকালে দেরী করে ঘুম ভাংত। ছুটিই পেতাম বেশিরভাগ রমজানে। সারাদিন বাসায়। গুলতানি করা, আম্মুকে জ্বালানো! টিভি দেখা আর গান শোনা। মাঝে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। এদিক ওদিক যেতাম, অলিগলি ঘুরতাম। দুপুরে স্যারদের কাছে টিউশন থাকত। আমাদের তিন বন্ধুর একটা গ্রুপ ছিলো। রাজশাহী রকার্স। তিনজনে মিলে ঘুরতাম। এপাড়া ওপাড়া বেড়িয়ে ফিরতাম বাড়ি। যতসব শয়তানি, গুলতানি, বদমাশি আমরা সব গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতাম, বাইরের কেউ আমাদের দুষ্টু ছেলে বলতেই পারবে না। পরিচিত মানুষদের কাছে আমরা বিশাল ভালো ছেলে!



বিকেলে পড়া শেষে এসে বিছালায় একটু গা এলিয়ে দেয়া। আম্মু ইফতারীর যোগাড়যন্তর করতো। প্রায়দিনই আমি হাত লাগাতাম। পেঁয়াজির ডালটা মেখে দেয়া, পাঁপড় ভাজা, ফল কাটা এগুলো করা হতো। বেগুনি আর বাঁধাকপির পাকোড়া ভাজা ছিলো প্রিয় কাজ। আম্মুর হাতের বাঁধাকপির পাকোড়া ছিলো ইফতারীতে আমার অন্যতম আকর্ষণ। আব্বু প্রায় দিনই বাইরে থেকে এটা সেটা নিয়ে আসতো। বাইরের খাবার খেতে আব্বু পছন্দ করে বেশ। আমিও হয়েছি আব্বুর মতই! নিজেও বাইরে থেকে এটা ওটা নিয়ে আসতাম। আর আনতাম বাটার মোড়ের জিলাপী। এখনো কোথাও জিলাপী খেলে আমি বাটার মোড়ের সাথে তুলনা করি। ওটা আমার স্ট্যান্ডার্ড। দুঃখের বিষয় সেইরকম স্বাদের জিলাপী এখনো পর্যন্ত কোথাও খেলাম না আর!



সব আইটেম দিয়ে প্লেট সাজানোও একটা ভালোলাগার ব্যপার ছিলো। কে কোনটা খায় খায়না বুঝে প্লেট সাজাতাম। আমি শসা কম খাই, আব্বু জিলাপী কম খায়। আম্মু বুন্দিয়া খায় না ইত্যাদি ইত্যাদি ঠিক ঠাক করে দেয়া। আমি কাজের মেয়ের প্লেটও একই সাথে সাজাতাম, এবং এই ছাদের নিচে বসে হলফ করে বলতে পারি আমার চেয়ে দুইটা খেজুর হয়ত বেশিই দিয়েছি কোনদিন, কম দেইনি কখনো।



ইফতারের পর এমন ক্লান্তি লাগতো, বিছানায় গড়াগড়ি দিতাম। ইফতার আমি আবার দুই বারে খেতাম। পেঁয়াজি আর ছোলা মুড়ি রাখা থাকতো পরের জন্যে। এইটা শিখেছি আব্বুর থেকে। কোন কোনদিন গড়াগড়ি দিতে গিয়ে হয়ত ঘুমিয়েও যেতাম। আমি চিরদিনই রোজায় দুবেলা খাই। ইফতার আর সেহেরী। রাতে খেতাম না। এখনো খাইনা। না ঘুমিয়ে গেলে আব্বুর ঠেলায় নামাজে যেতাম। ৮ রাকাত তারাবীহ পড়ে চলে যেতাম ভিডিও গেমসের দোকানে। মুস্তফা খেলা হলো। তবে বেশী খেলতাম কিং অফ ফাইটার্স ই! মাঝে মাঝে তানজিম আর অনিক এর সাথে বেড়াতাম। তারপর নামাজের সময় পার করে ফিরতাম বাসায়।



বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে ইফতার করা হতো একদিন। চিলিসে, নাহলে মিটলোফে। বুকিং দেয়ার দায়ীত্ব টা বরাবরই সহিষ্ণু আর আশিক ই পালন করতো। ইফতারের পরে বড় মসজিদে নামাজ, নদীর ধারে গুলতানি আর আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতাম। মাঝে মাঝে সহিষ্ণু আর নাফিজের বাসায় দাওয়াত পড়ত ইফতারের। আমার বাসায় একবারই সবাইকে নিয়ে ইফতার করতে পেরেছিলাম। আমার বাসায় অবশ্য ২০ রোজার পর থেকে বেশ কয়েকবার দাওয়াত লেগে থাকতো। বড় কাকা-কাকী আর কাজিনদের নিয়ে একদিন, আব্বুর অফিসের লোকজন একদিন এরকম। আম্মু গোটা রোজা একজন মিসকিন কে ইফতার আর রাতের খাবার খাওয়াতো।



আমাদের বাড়ির আসেপাশে তিনটা মসজিদ। আর ক্যান্টন্মেন্ট থেকে সাইরেন বাজানো হতো বেশ জোড়েসাড়েই। সন্ধ্যা হলে খাবার সামনে নিয়ে সেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা, কিংবা ঈদের চাঁদ দেখার খবর পেয়েও নিজে দেখতে না পারার আকূলতা, চাঁদ দেখে ছাদেই আগের দিন কিনে আনা তারাবাতি আর মরিচ পটকা ফুটানো, এসব আনন্দের কোন তুলনা হয়না।



এখন আর সেই আগ্রহ নিয়ে ইফতারের জন্যে বসেও থাকা হয়না, সেহরী ইফতারের সময়সূচীই এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। আযান দেয়, খেয়ে ফেলি। রাতে আগে আগে সেহরী খেয়ে ঘুমিয়ে যাই।





কোথায় আমার নানান রঙএর দিনগুলি!!!

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:২৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: ওয়েলকাম ব্যাক রবিন ভ্যান পার্সি! সবাই ইদানিং খালি স্মৃতিকাতর হয়!

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫

দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: স্মৃতি বড়ই বেদানা :(

ভ্যান পার্সি আমার ফেভারিট কিন্তু! আর্সেনাল এ যখন খেলত তখন থেকে।

২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩৭

রাতুল_শাহ বলেছেন: ছবিটা সোনা মসজিদের মনে হচ্ছে।

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬

দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: জ্বী ঠিক ধরেছেন। রোজা সংক্রান্ত কিছু খুজছিলাম। সার্চ দিয়ে মনে ধরছিলো না কিছু। শেষে এই সোনা মসজিদ। :)

৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:২৭

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: পুরান কথা মনে করাই দিলেন ভাই :(


ভালো আছেন আশা করি।

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:১৮

দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: ভালো আছি। আপনিও ভালো আছেন এই প্রত্যাশা করি :)

পুরনো দিন গুলোই তো ঝামেলা বাধালো! ওদের এত ভালো হতে কে বলেছিল?

৪| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩১

নীল বরফ বলেছেন: পড়ে পুরানো দিনের কথা মনে পরে গেলো,সাথে ফেলে আসা দেশের কথা।
ভালো থাকবেন। :)

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:২০

দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: আপনিও! :)

৫| ০৩ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৫৯

নীল-দর্পণ বলেছেন: কোথায় আমার নানান রঙএর দিনগুলি!!!

ভাল লাগল স্মৃতিচারণ

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:২১

দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ :) কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি, দর্পণ টা নীল ক্যানো?

৬| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:১০

শুকনা মরিচ বলেছেন: এখন মনে হয় ইফতারের সময় আর সাইরেন বাজেনা । আমাদের সময় - সাইরেন বাজাটা ছিল আরেক আকর্ষণ । আমি আব্বা 'কে জিজ্ঞেস করতাম - আব্বা যারা সাইরেন বাজায় তারা রোযা রাখেনা তাইনা ? আমার ধারনা ছিল সাইরেন তো অনেকক্ষণ ধরে বাজে তাইলে ইফতার করে কখন ? তার মানে ওদের রোযা রাখতে হয়না ।

কেমন আছেন ডাচম্যান ? অনেকদিন পর :)

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০০

দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: সাইরেন বাজানোর পেছনের কথাটা শুনে বড়ই মজা পেলাম :) আসলেই সে সময় গুলো কত মজার ছিল!!!

ঢাকায় বাজে না। রাজশাহীতে এখনো বাজে আমি দেখেছি।

আছি ভালোই আপু! আপনি? পিচ্চিটা ক্যামন আছে?

৭| ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৪২

শুকনা মরিচ বলেছেন: আমরা ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ !!! পিচ্চি ভালো আছে - গরমের ছুটি চলছে তার - খালি বেড়ানো আর বেড়ানো :)

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬

দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: :) ভালো থাকুন সবসময়, এভাবেই কাটুক! শুভকামনা রইল!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.