নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

এখনো বিয়ে হয় নি!

১৩ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৮

‘’অনার্সে উইলিয়াম ব্ল্যাকের লেখা সংস অফ ইনোসেন্স এন্ড এক্সপেরিয়েন্স আমাদের পাঠ্য ছিল।তখন শুধু পড়ার জন্য, পরীক্ষায় পাস করার জন্য কবিতাগুলো পড়েছিলাম।এখন নিজের জীবন দিয়ে ঐ কবিতাগুলোর মর্মার্থ বুঝি।জীবনের অভিজ্ঞতা যার নেই তার চোখে জীবন যেমন উচ্ছ্বল, উজ্জ্বল, দুরন্ত; জীবনের রূঢ় বাস্তবতার অভিজ্ঞতা যার আছে, তার চোখে জীবন আরেক রকম। একসময় বিয়ে নিয়ে আমার অনেক রকম ফ্যান্টাসী ছিল। এখন বুঝি বিয়ে কোন ফ্যান্টাসী নয়।তাই বিয়ে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও আমার জন্য এত সহজ নয় আগের মত।‘’

কথাগুলো বলতে বলতে কোথায় যেন একটা বিষন্নতার সুর টের পাওয়া গেল তিতলী্র (ছদ্মনাম) মাঝে। উচচশিক্ষা, ক্যারিয়ারে মনোযোগী হতে গিয়ে, পরিবারের প্রয়োজনে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে, নানা কারণে একটি মেয়ের বিয়ে হতে দেরি হতেই পারে। আর দেরি হলেই তাকে শুনতে হয় ‘আইবুড়ো’ খোটা। পরিবারেও যেন মেয়েটি হয়ে উঠে বাড়তি এক বোঝা। বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেলেও বিয়ে না হওয়াটা বা করাটা এদেশের মেয়েদের জন্য যেন একটা বড় অপরাধ। আর এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে কিছু বিড়ম্বনা তো তাকে সহ্য করতেই হবে।তিতলী নিজে অবশ্য এসব বিড়ম্বনাকে কোন আমল দেন না। নিজের মতই চলেন।কিন্তু সমস্যা হয় তার পরিবারের মানুষদের নিয়ে। তিতলীর বিয়ে নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। আর সে দুশ্চিন্তা থেকে তিতলীর উপর তারা চাপিয়ে দেন নানা রকম দোষ। কিন্তু তিতলীরই বা এখানে করার কী আছে?



নুসরাতও (ছদ্মনাম) বলছিলেন প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতার কথা।বিয়ের জন্য বাসা থেকে প্রায় সময় তাকে দোষারোপ করা হয়, খোটা দেওয়া হয়।সবার কথা শুনলে মনে হয়, বিয়ে না হবার কারণে সে একটা বোঝা হয়ে গেছে। এসব তাকে কষ্ট দেয়।বাইরের মানুষের নানা রকম মন্তব্যে তার তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হয় না। কিন্তু ঘরের মানুষের অবজ্ঞা, অবহেলা তার একেবারেই সহ্য হয় না।মাঝে মাঝে তাই নিজেই পরিবারের সদস্যদের উপরে চাপ প্রয়োগ করেন, ভালো পাত্র খুঁজে দিতে।তখন পরিবারের অন্যান্যরা নুসরাতের উপরেই আবার দোষ দিয়ে, নিজেদের ব্যররথতার ভার ওর উপর চাপিয়ে দেন। নুসরাতকে নিজের জন্য পাত্র নিজেই বের করে আনতে তাগাদা দেন।পরিবারের লোকজনের মুখে এমন কথা শুনলে ওর ঘেন্না লাগে।তার কারণটা নুসরাতের কাছ থেকেই শোনা যাক, ‘’আমার এখনো বিয়ে হয় নি, বা আমি বিয়ে করি নি, এতে তো আমি কারো ক্ষতি করি নি কিংবা আমারও কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমাকে বিয়ে দেবার জন্য যাদের এত মাথাব্যথা তারাই পাত্র খুঁজে নিয়ে আসুক। আমি কেন পাত্র খুঁজে বের করতে যাবো? আমার কি এমন ঠ্যাকা পড়েছে? ’’

প্রায় একই কথা পুনরাবৃত্তি করলেন তিতলীও।তিতলীর পরিবার থেকেও একইভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, নিজের পাত্র নিজেই খুঁজে বের করার জন্য।উইলিয়াম ব্ল্যাকের কবিতা পড়া তিতলী কেন ছেলেদের পিছে পিছে ঘুরে তাকে বিয়ে করার জন্য ধর্না দিয়ে বেড়াবে, নিজেকে পণ্য হিসেবে অন্যের সামনে উপস্থাপন করবে, এটা তার বোধগম্য হয় না।তিতলীর এই আত্নসম্মানবোধটুকুকেও এখন আর মর্যাদা দিতে চায় না তার পরিবার। কারণ, এতে তো আর তিতলীর বিয়ে হচ্ছে না! কিন্তু তিতলী বলে অন্য কথা, ‘’আত্নসম্মানের সাথে চলার এই যে শিক্ষা, এটা তো আমি আমার পরিবারের কাছ থেকেই শিখেছি। তারাই আমাকে শিখিয়েছে। আজ তাদের কাছেই আমার এই আত্নসম্মানবোধের কোন মূল্য নেই।‘’

পরিবার থেকে পছন্দ করা কোন পাত্রকে বিয়ে করতে কখনো কি অস্বীকার করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিতলী বললেন, ‘’হ্যাঁ’’।

--কেন করেছেন?

--আমি বুঝতেই পারছি, ঐ ব্যক্তি আর আমি দুজন দুই মেরুর মানুষ। বিয়ের পরে আমরা কেউ কাউকে নিয়ে সুখী হতে পারবো না।

--কী করে বুঝলেন?

--আমি তো আর সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটা নই।জীবনের রূঢ় বাস্তবতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। একটা বিয়ের জন্য সারাজীবন আমি অসুখী হয়ে থাকতে চাই না।

--এখন কি আপনি সুখী?

--পরিপূর্ণ সুখ বলে আসলে তো কিছু নেই। যুদ্ধ করেই এ জীবনে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয়। আমাকে এখনো নিজের অবস্থানটা শক্ত করতে যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে। তবুও নিজেকে নিয়ে আমার কোন দুঃখ নেই।বয়স বেশি হয়ে গেছে বলে অপছন্দের কোন পাত্রকে বিয়ে করতে আমি রাজি নই।

--জীবনে সব কিছু একবারে তো পাওয়া যায় না। আপনার পছন্দের সাথে ১০০% মিলে যাবে এমন কোন মানুষ পাওয়া কি আদৌ সম্ভব?

--আমি বলছি না, আমার পছন্দের সাথে ১০০% মিলে যেতে হবে।কিন্তু নূন্যতম মিলটুকু তো দুজনের মধ্যে থাকতে হবে! আমি সেটুকুই বলছি।



কথা হচ্ছিল প্রতীতির (ছদ্মনাম) সাথে। পেশায় শিক্ষক প্রতীতি তথাকথিত বিয়ের বয়স পেরিয়ে এসে এখন প্রায় চল্লিশের কোঠায়। বিয়ে নিয়ে এখন আর তেমন মাথা ঘামান না। জীবনের অনেকগুলো দিন একা একাই পার করে দিয়েছেন। একলা জীবনের সাথে অভ্যস্থও হয়ে গেছেন।তাই এখন বিয়ে করে আরেকজন ব্যক্তির সাথে মানিয়ে চলার কথা ভাবলে দমবন্ধ অনুভব করেন। তার কাছ থেকে জানা গেল আরেক ধরনের বিড়ম্বনার কথা, ‘’আমাদের দেশে মেয়েদের অনেক দিন বিয়ে না করে থাকা অনেক বড় একটা সমস্যা, যতটা না ঐ মেয়েটির জন্য, তার চেয়েও বেশি আশপাশের মানুষদের জন্য।একটা মেয়ে সে অবিবাহিত হতে পারে বা ডিভোর্সি কিংবা বিধবা, যে কারণেই হোক, একা একটা মেয়ের জীবন কিন্তু অনেক বিড়ম্বনাময়। পুরুষেরা চায় ঐ একা মেয়েটির কাছ থেকে নিজের সুবিধা নিতে। যেহেতু মেয়েটি একা, তাই সে দুর্বলও বটে। আর এ সুযোগটাই পুরুষেরা নেবার জন্য সব সময় ছোঁক ছোঁক করে। মেয়েটিকে যেন একটু বাজিয়ে দেখতে চায়, ঘরে স্ত্রী-সন্তান থাকলেও।সব মেয়েই পুরুষদের এই দৃষ্টিটা খুব ভাল বোঝে। এটা এমন একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি যে, সহজে সবাইকে বোঝানোও যায় না, এমন কি নিজের পরিবারের কাউকেও।কাউকে এসব নিয়ে বলতে গেলে মেয়েটিকেই দোষ দেওয়া হয়। আর মেয়েটি যদি বেশি বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত হয়, তবে তো কথাই নেই। তাই এসব নিয়ে কারো কাছে অভিযোগ করি না। বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে চলার চেষ্টা করি। তাতেও সমস্যা থেকে সব সময় রেহাই পাওয়া যায় না। আসলে কবে যে আমাদের মানসিকতাটা একটু পরিবর্তন হবে, সে কথাই শুধু ভাবি।‘’

আরেকটি বিড়ম্বনার কথা জানালেন প্রাইভেট ফার্মে কর্মরত নাসরিন (ছদ্মনাম)। তিনি বললেন, ‘’একটি মেয়ে ত্রিশ পেরিয়ে বা ত্রিশের কাছাকাছি সময়েও যদি বিয়ে না করে তখন চারপাশের সুন্দর সুসভ্য মানুষজনের আরেকটা চেহারা বের হয়ে আসে। ঐসব সুসভ্য ব্যক্তিরা তখন মেয়েটিকে অস্বাভাবিক হিসেবে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগে যায়। হয় তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবে তারা ট্যাগ দিয়ে দেবে, নয়ত তার শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। এসব একটি মেয়ের জন্য খুবই কষ্টকর। হ্যাঁ, কোন কারণে আমার এখনো বিয়ে হয় নি। তাতে আমি তো কারো কোন ক্ষতি করছি না। তবে কেন আকারে ইঙ্গিতে এ ধরনের প্রশ্ন উঠবে এবং তাদের কাছেই আমার শারীরিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে? আমি তো কাউকে আমার একান্ত শারীরিক সক্ষমতা বা আবেগিক অনুভূতির প্রমাণ দিতে বাধ্য নই। কেউ কেউ তো আরো আপত্তিকর প্রশ্ন করেন। জিজ্ঞেস করেন, তাহলে কেন প্রেম ট্রেম কিছু করি নি!আমি এই প্রশ্নেরও কোন অর্থ বা জবাব খুঁজে পাই নি। যারা এসব প্রশ্ন করেন তারা আসলে প্রেম ভালবাসাকেও পেঁয়াজ-রসুন-তেলের মত নিত্যদিনের হিসেবের খাতায় ফেলে দেন।প্রেম তো জোরজবরদস্তি করে হয় না, হিসেব-নিকেশেরও ব্যাপার নয়। এটা একান্তই মনের ব্যাপার।‘’

মেয়ের বয়স বেড়ে যাচ্ছে।অথচ এখন বিয়ে হলো না্‌ ভেবে প্রায়ই দুশ্চিন্তা করেন মিরপুরের বাসিন্দা রওশন আরা (ছদ্মনাম)। মেয়ে তার সুন্দর সংসার নিয়ে সুখী হবে, এ দৃশ্য দেখে তিনি নিজেও সুখী হতে চান।কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সবাই বিয়ের জন্য চায় উচচশিক্ষিত পাত্রী, কিন্তু মেয়ের বয়স হতে হবে কম। একজন উচচশিক্ষিত মেয়ের বয়স কিভাবে কম হবে, যেখানে সেশনজটের ধাক্কাও সামলাতে হয়?এরপরে একটু প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে বয়স বেড়ে যায় আরো। উচচশিক্ষা শেষ না করে কিংবা প্রতিষ্ঠিত হবার আগে মেয়ের বিয়ে দিতে রওশন আরাই চান নি এতদিন।কিন্তু এখন মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র খুঁজে পেতে সমস্যাই হচ্ছে।বিয়ে হতে দেরি হচ্ছে দেখে মেয়ের যেন মন খারাপ না হয় সেজন্য নিজেই মেয়েকে সব সময় সাপোর্ট দিয়ে যান।তিনি বললেন, ‘’মেয়ে যদি তার শিক্ষাজীবনে কোন প্রেমের সম্পর্কে জড়াতো তবে, আমরাই তা মেনে নিতাম না। ও যেন কখনো এমন কোন সম্পর্কে না জড়ায় সেজন্য সব সময় সতর্ক ছিলাম, মেয়েকেও সেভাবেই তৈরি করে নিয়েছি।এ ধরনের সম্পর্ক ক্যারিয়ারে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, তাছাড়া অল্প বয়সে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর কী দরকার, এমন ভেবেই ওকে এসব থেকে বিরত রেখেছি।তাই বিয়ে নিয়ে মেয়েকে আমি চাপ দেই না। যদিও আমরা ওর জন্য উপযুক্ত পাত্র এখনো খুঁজে পাই নি। ব্যররথতা আমাদেরও আছে।এসব নিয়ে মাঝে মাঝে আমার দুশ্চিন্তা হলেও মেয়ের উপর তার প্রভাব পড়তে দিই না।আমার মেয়ে হাসিখুশি থাকুক, এমন দেখতেই আমার ভাল লাগে।‘’



ভীষণ হাসিখুশি একজন মানুষ তামান্না(ছদ্মনাম)। পেশায় চিকিৎসক, বয়স ৩২। এখনো বিয়ে করেন নি।সেজন্য খুব একটা চিন্তিতও নন তামান্না।উলটো হেসে বললেন, ‘’আরে, বিয়ে হলে কি আমি এত শান্তিতে নিজের কাজগুলো করতে পারতাম? এই যে পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে এখন কনসাল্টেন্ট হিসেবে কাজ করছি, এরপর আমার এত শখের গানের ক্লাস, কবিতার ক্লাসগুলো করছি, আমার বিয়ে হয়ে গেলে এসব তখন কে করত? স্বামী-সন্তান সংসার চালাতে গিয়ে আমার গান-কবিতা লাটে উঠত না?’’ ফুরফুরে মেজাজে উড়ে বেড়াতে ভালবাসেন বলে কখনো কি তাহলে কারো সাথে বিয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়বেন না তামান্না? এমন প্রশ্নে বললেন, ‘’ বিয়ে করার ইচ্ছে নেই এমন কথা কখনো বলি নি, বলছিও না। কিন্তু যতদিন বিয়ে হচ্ছে না, ততদিন কি আমি আমার সব কাজ বন্ধ করে দিয়ে, মুখ অন্ধকার করে ঘরে বসে বসে কাঁদবো নাকি? আমার বিয়ে হচ্ছে না, তবুও এত আনন্দে আছি, দেখে কি আপনাদের পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে নাকি? হা হা হা।‘’

একজন চিকিৎসক হিসেবে তামান্নাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ঝুঁকিমুক্ত প্রসবের জন্য ত্রিশ বছরের মধ্যেই প্রথম সন্তানের মা হওয়া ভাল, তাহলে ত্রিশের পরে বিয়ে হলে সমস্যা হতে পারে কিনা ।তিনি বললেন যে, সন্তান প্রসব, অটিজম ইত্যাদি নিয়ে এখনো আমাদের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার আছে। এমন কি শিক্ষিতদের মাঝেও। তিনি বললেন যে, খুব অল্প বয়স ও খুব বেশি বয়স, দুটি ক্ষেত্রেই সন্তান প্রসবে জটিলতা হয়ে থাকে। তাই জটিলতা এড়াতে অন্তত প্রথম সন্তানটি ত্রিশের মধ্যে জন্ম দিতে পারলে ভাল হয়।তামান্নার নিজের জীবনের ক্ষেত্রে বাস্তবতা তার ইচ্ছের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না, এখানে তার নিজের কিছু করার নেই। তামান্না বললেন, ‘’যারা বিয়ের ব্যাপারে বড় বড় পরামর্শ দিতে আসেন, তারা কেউই আমার জীবনটিকে যাপন করবেন না। আমার জীবন আমাকেই যাপন করতে হবে। আর সেটা কিভাবে করবো তা একান্তই আমার ব্যাপার। আর নিজেকে আমি শুধু সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবেই ভাবেন না। তাই এসব নিয়ে মন খারাপ করার পক্ষপাতিও নই।আমি মনে করি এ সময়টা হল কাজে লাগানোর।এখনই সময় বিভিন্নভাবে নিজেকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার।‘’

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭

বহুব্রীহি বলেছেন: আপনি কি জিজ্ঞেস করেছিলেন পাত্রী ও পাত্রীর বাবা-মা রা উপযুক্ত পাত্র বলতে কি বোঝাচ্ছেন?

সঙ্গীর অভাব বা শারীরিক তাড়ণা অনুভব করেন কি না, জিজ্ঞেস করেছিলেন?

মেয়েদের বিয়ে নিয়ে যেমন কথা শুনতে হয় এটি যেমন সঠিক তেমনি একজন পুরুষকে বিয়ের সময় এটা কেন দিলে না, দেন মোহর কেন কম হল এমন অনেক কথা শুনতে হয়। আপনি যেহেতু মধ্যবিত্ত সমাজের কথা লিখেছেন আমিও তাই নিম্ন থেকে উচ্চ মধ্যবিত্ত পুরুষের কথাই বলছি।

এ পোস্টের প্রায় সব কথার সাথেই একমত। কিন্তু সেভাবে কন্ট্রাস্ট আসে নাই। গতানুগতিক পোস্ট।


কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

(ঘটনা ১)

সরকারী ব্যাংকের বড় পোস্টে আছেন। ফটোজেনিক চেহাড়ার চামড়া সুন্দরী নন। তেমন লম্বাও নন। সারা জীবন এ জন্য অনেক কথা শুনতে হয়েছে। অফিসের এক কলিগকে জড়িয়ে কথা শুনতে হয় মাঝে সাঝেই। কাজ করতে গিয়ে দেখেন তার সতীর্থ নারী কর্মিরাই তার নামে এসব রটাচ্ছেন। অথচ অফিসের নামকরা লুচ্চা বদমাসটি যখন আরেক কলিগের সংসার এ আগুন দিল, তিনি সন্তানকে স্বামীর কাছে ফেলে রেখে এ সাথে ঝুলে পড়লেন। তাকে নিয়ে কোন কথা হয় না। কারণ ... তার আত্মীয় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

লক্ষনীয় - প্রায় সময়ই মেয়েদেরকে কথা শুনতে হয় তাদের সেম জেন্ডারের কাছ থেকেই।

(ঘটনা ২)

বুয়েট থেকে বের হয়ে সুদূর আমেরিকায় পারি জমিয়েছিলেন। ম্যলা চড়াই উতরাই পার হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেখেন বয়স ত্রিশ পার হয়ে চল্লিশ এর কোঠায়। এর মাঝে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন একবার। টেকেনি। স্ত্রী খুজছেন। মেয়ের বাবা-মা অনেকেই বেশী বয়স দেখে এড়িয়ে যান। পাত্রের চাহিদা ফরমাশ মত পাত্রীকে হতে হবে - সুশ্রী, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হতে হবে, নামাজি হতে হবে (নিজে কিন্তু ধার্মিক নন, যতদূর জানি হালকা পানাভ্যাস ছিল)। শেষমেশ বিয়ে করছেন সচিবের কন্যাকে। আর কিছু না থাকলেও পাত্রীর বাবার ট্যাক উপচে পড়া বিত্ত আছে বটে।

(ঘটনা ৩)
ছেলেবন্ধু ছিল, তার সাথে শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে। কিন্তু ছেলেটির বাবা মা মেয়েটিকে পছন্দ না করায় দীর্ঘ চার বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। মেয়েটির এরপর আরো রিলেশন হয়েছে। যার সাথে গাটছড়া বেধেছেন তিনি জানেন না এই ঘটনা গুলোর কথা। সেই ছেলে বন্ধুটিরও বিয়ে হয়েছে। বলা বাহুল্য তার স্ত্রীও এসব কথা জানেন না।

(ঘটনা ৪)

ছোট বেলায় বিয়ের পর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি বের হয়ে আসে সঙ্গসার থেকে। সাথে দু বছরের শিশু সন্তান। এনজিও তে কাজ নেন। নিজের খরচের সাথে ভাইকেও পড়া শোনা করান। কিছুদিন আগে একটা ব্যাংকে অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছেন। আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক নেই। দুখের দিনে যারা খোঁজ নেন না, আবার রটনা করতেও ছাড়েন না। তাদের খোঁজ রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না। আত্মসম্মানের সাথে বেঁচে থাকাটাই বড়।

(ঘটনা ৫)

ইঞ্জীনীয়ারিং পাস করে চাকরী করছেন। ভালো বেতন। বন্ধুদের প্রায় সবাই বিয়ে করেছেন। বাসা থেকে প্রায়শই বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসে। সঙ্গীর অভাব যে বোধ করেন না তা নয়। কিন্তু যখন দেখেন ভালো পাত্রের বাজার দর বেশী, মেয়ে দেয়ার জন্য অনেকেই গদগদ ভঙ্গীতে হাত কচলাচ্ছেন তখন নিজেকে কমডিটি মনে হয়। যাকে স্ত্রী হিসেবে চান তাকে নিজের পায়ে দাড়াতে সক্ষম এমন কাউকে স্ত্রী হিসেবে চান। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। প্রেম ভালোবাসার কথা ভাবেননি কখনো। জীবনের অনেক দূর গিয়ে উপলব্ধি আসলে সবাই একা। সৎ স্ত্রীর চেয়েও ভালো বন্ধু থাকা বেশি জরুরী।

২১ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩

এইযেদুনিয়া বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

'উপযুক্ত'--ব্যাপারটি অনেক জটিল। এই টপিক নিয়ে আলাদা আরেকটি লেখা যায়।

''সঙ্গীর অভাব বা শারীরিক তাড়ণা অনুভব করেন কি না, জিজ্ঞেস করেছিলেন?''--এই প্রশ্নটি করা হয় নি। তবু যে কয়জনের সাথে কথা হয়েছে, তারা সবাই বিয়ের ব্যাপারে পজিটিভ।

লেখাটি মূলত মেয়েদের সমস্যা নিয়েই লেখা। পুরুষদেরটা হাইলাইট করা হয় নি, সংগত কারণে। পুরুষদের বয়স বেশি হলেও বিয়ে হতে তেমন সমস্যা হয় না, ৪০ বছরেও দিব্যি ১৮ বছরের বউ বিয়ে করা যায়।

লেখাটি ইচ্ছে করলে আরো বড় করা যেত। অল্প পরিসরে লিখতে চেয়েছিলাম, তাই সব কথা বলা হয় নি কিংবা বলা যায় নি।



আপনার দেওয়া উদাহরণগুলো এই সমাজেরই গতানুগতিক কিছু ঘটনা। তাই নতুন করে বলার কিছু নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.