নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুখবইয়ে বন্ধুতা : ভার্চুয়াল বন্ধু—বাস্তব বন্ধু

১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৭

ঘটনা ১

ফেসবুকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেখতে পেল ছন্দা। নামটা ভীষণ পরিচিত। ১৬ বছর আগের স্কুলের বান্ধবী রিমিকে চিনতে পেরে এক ক্লিকে তাকে নিজের ফেসবুকের বন্ধুতালিকায় জায়গা দিয়ে দিল। তারপর শুরু হয়ে গেল দুই বান্ধবীর এত দিনের জমে থাকা জীবনের গল্প।

--তোকে আমি কত খুঁজেছি ফেসবুকে।

--আমি ভেবেছিলাম জীবনে আর তোর সাথে, তোদের সাথে আমার আর দেখা হবে না।

--তুই তো আগের মতই আছিস!

--তুইও, একটু মোটা হয়েছিস যদিও।

--তোর মনে আছে, ক্লাসে ফার্স্ট হবার জন্য আমাদের মধ্যে কত প্রতিযোগিতা ছিল!

--এখন দেখ, আমাদের দুজনের জীবন এখন কত আলাদা। কোন মানে ছিল ওসবের?

--এই বিদেশে এসে তোদের কথা আমার খুব মনে পড়ত।

--কী আশ্চর্য জীবন দেখ! আগে এক পাড়াতেই থাকতাম, অথচ আমাদের তেমন দেখা হত না।আর দুজন দুই দেশে, এখন থেকে ফেসবুকে আমাদের প্রতিদিন আড্ডা হবে।

--তুই টুম্পাকেও এড করে নে না। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে তো। দাঁড়া, তোকে সাজেস্ট করে দিচ্ছি।

--তাড়াতাড়ি দে। কতদিন পরে ওর সাথে যোগাযোগ হবে আমার! ইস! মনে হচ্ছে যেন আবারও সেই স্কুল জীবনে ফিরে গেছি।

--এই যে দেখ, এটা টুম্পার আইডি।

--কী বলিস! এত বদলে গেছে! আমি তো চিনতেই পারছি না! তুই বলে না দিলে আমি কখনো ওকে চিনতে পারতাম না!

--এখন তো চিনেছিস! জলদি এড কর। এবার আমরা সবাই মিলে আড্ডা দেব, সেই আগের মত।



ঘটনা ২.

রুম্পার ইনবক্সে একটা নতুন মেসেজ এলো।ইমতিয়াজ আহমেদ নামের একজন তাকে লিখেছে, ‘’আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি?’’

--ফেসবুকের একটা ক্লিকে কি বন্ধুত্ব হতে পারে? বন্ধুত্ব অনেক বড় ব্যাপার।---রুম্পা রিপ্লাই দিয়ে দিল অপরিচিত ছেলেটিকে।এরপর ছেলেটির আরেকটি রিপ্লাই, রুম্পার আবারো রিপ্লাই…এভাবেই কথার পর কথা সাজাতে সাজাতে একসময় দুজন দুজনের বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেল ফেসবুকে।



ঘটনা ৩।



শুক্রবারের জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়ে জাফর সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেল রিয়াদের। রিয়াদই জাফর সাহেবের কাছে এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে বলল, ‘’আমি আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে আছি।‘’

--রিয়াদ!? ওহ! হ্যাঁ, তুমিই তাহলে সন্ধানী রিয়াদ?

--আমি কিন্তু আপনাকে দেখেই চিনতে পেরেছি।

--তোমার স্ট্যাটাসগুলো কিন্তু অনেক সুন্দর হয়। আমি যে সব সময় লাইক দিয়ে থাকি খেয়াল করেছ নিশ্চয়ই।

নিজের প্রশংসা শুনে লজ্জা পেল রিয়াদ।



এভাবেই ভার্চুয়াল ও বাস্তব জীবনের সাথে ফেসবুক আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। প্রতিদিন নতুন ও পুরাতন কত মুখের সাথে, কত মানুষের সাথে, কতভাবেই না পরিচয় হয় এই ফেসবুকে। কখনো ফেসবুক থেকে বাস্তবের বন্ধু, কখনো বাস্তব জীবন থেকে ফেসবুকের বন্ধু তৈরি হচ্ছে। মনের লুকোনো সব কথা স্ট্যাটাসে শেয়ার করে এক মুহূর্তে পৌঁছে দেওয়া যায় হাজার জনের কাছে। এই ফেসবুকের জাদুমায়া থেকে মুক্ত নন কবি নির্মলেন্দু গুণও। ভক্তদের সাথে তাকে ফেসবুকে দারুনভাবে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়। তাঁর কাছেই জানতে চাইছিলাম, ফেসবুক ব্যবহার করতে কেমন লাগছে? ফেসবুক নিয়ে কবি তাঁর উচ্ছ্বাসের কথা জানালেন, ‘’ফেসবুক ব্যবহার করতে আমার খুবই ভালো লাগছে। এটা ব্যবহার করতে তো কেউ আমাকে বাধ্য করছে না বা ব্যবহার না করলে কেউ আমাকে শাস্তি দেবে না।ফেসবুক আমি আনন্দের সাথেই ব্যবহার করছি। আরো যারা ফেসবুক ব্যবহার করছে, নিশ্চয়ই তাদের ভালো লাগে বলেই করছে।এই ফেসবুকের মাধ্যমে কত মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছে, কত হারিয়ে যাওয়া মানুষের সাথে আবার যোগাযোগ হয়েছে, এসব তো সত্যি ভাল লাগে।ফেসবুক না থাকলে তাদের সাথে আমার কিভাবে যোগাযোগ হত?’’

ফেসবুকের এক সেলিব্রেটি হিসেবে কবি নির্মলেন্দু গুণকে কিছু উটকো ঝামেলাও পোহাতে হয় বই কি! রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা থেকে অনেকেই কবির পোস্টগুলোতে মতবিরোধ করেন। মতবিরোধ থেকে কেউ কেউ গালাগালিও করেন। এসব অবশ্য কবির জীবন বা মনে কোন প্রভাবই ফেলে না। কারণ, এধরনের কমেন্টদাতাদের বন্ধুতালিকা থেকে বাতিল বা ব্লক করে ফেলার অপশন তো তাঁর হাতে রয়েছেই।

অন্যদিকে কবি নির্মলেন্দু গুণের ভক্তরা ফেসবুকে খুব সহজে তাঁর সান্নিধ্য পেয়ে অনেক বেশি আনন্দিত। কবি অবশ্য বলে থাকেন ‘’কবিকে পাবে না তুমি জীবনচরিতে’। তবুও তাঁর ভক্তরা কিছুটা হলেও তো তাঁকে ফেসবুকের জীবনচরিতে (প্রোফাইল) পেয়ে থাকেন। সেটাই বা কম কি সে?



আপনি কি ফেসবুকে আসক্ত?



ঘুম থেকে উঠেই কি আপনি ফেসবুক খুলে বসেন? দিনের কয়েকবার করে স্ট্যাটাস দেবার জন্য মন খুব উসখুস করতে থাকে আপনার?দিনের বেশির ভাগ সময়টাই কি ফেসবুকের পেছনে ব্যয় করে ফেলেন মনের অজান্তে? একটু পর পরই কি ফেসবুক চেক করে থাকেন আপনি? ফেসবুকে অসংখ্য বন্ধু এড করার পরেও কি খুব নিঃসংগবোধ করেন? কিংবা কোন পার্টিতে অনেক বন্ধু-বান্ধব বা আত্নীয় স্বজনের সাথে থেকেও সময়টা ফেসবুক ছাড়া একেবারেই উপভোগ করতে পারেন না? যদি এসব প্রশ্নের বেশিরভাগের উত্তরই আপনার বেলায় ‘হ্যাঁ’’ হয়ে থাকে তবে আপনি ফেসবুকে আসক্ত।







যদি বুঝতে পারেন আপনি ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন এবং এই অবস্থা আপনি কাটিয়ে উঠতে চান, তবে আপনার জন্যই এই টিপসগুলো।প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করুন, ফেসবুক আপনি আসলে কেন ব্যবহার করছেন?শুধুই কি কিছু গেমস, পোকিং, লাইকিং, ছবি দেখার মত তুচ্ছ বিষয়ের জন্য?লক্ষ্যহীনভাবে এভাবে শুধু শুধু এইসব সামান্য বিষয় ফেসবুকে দেখার জন্য নিজের এত মূল্যবান সময় আপনি কেনই বা নষ্ট করবেন, বলুন তো?কেউ কেউ ফেসবুকে নতুন নতুন বন্ধু বানাতে পছন্দ করে। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, ফেসবুকের বন্ধু মানেই কি আর বাস্তবের বন্ধুত্ব?আবার অনেকেই আছেন তার নিজস্ব কাজের জন্য বিভিন্ন মানুষের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করা বা কোন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেও ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এসব কাজের জন্য হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুক ব্যবহার করা কোন কাজের কথা নয়।ফেসবুকটা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও যদি ব্যবহার করে থাকেন, তবুও কথা থেকে যায়। যেকোন বিনোদনই পরিমিতভাবে গ্রহণ করা উচিত।ফেসবুক আপনার ব্যক্তিগত জীবনে যদি কোন ভাল কোন কিছু দিয়ে থাকে, তবে সেটাও খুবই তুচ্ছ।যখন ফেসবুক ছিল না, তখনও আপনার জীবন চলত, বেশ ভাল ভাবেই চলত।

যদি সত্যিই চান ফেসবুকের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে তবে বারবার স্ট্যাটাস দেবার অভ্যাস বদলাতে হবে।না, না, আপনাকে ফেসবুক ব্যবহার করা একেবারেই বন্ধ করে দিতে বলছি না, শুধু একটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনি এটি ব্যবহার করবেন। নিজেই ঠিক করে নিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোন দুই ঘণ্টা আপনি ফেসবুক ব্যবহার করবেন।আর ফেসবুক ব্যবহার করার সময় ঘড়িতে অবশ্যই এলার্ম দিয়ে রাখতে হবে।এলার্ম বাজলেই অফলাইনে চলে আসতে হবে আপনাকে।সপ্তাহে কয়দিন ফেসবুক ব্যবহার করছেন তার হিসাবও রাখুন ক্যালেন্ডারের পাতায়।বন্ধুদের সাথে দেখা হলে, ‘’তোমার সাথে ফেসবুকিং করবো’’ বা ‘’ফেসবুকে মেসেজ পাঠাবো’’ এ ধরনের বাক্য বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। তারচেয়ে বলুন, ‘’আবার দেখা হবে।‘’ ফেসবুক ছাড়া যদি নিঃসংগতাবোধ ঘিরে ধরে তবে ঐ সময়টাতে কোন বই পড়ুন, মুভি দেখুন কিংবা কোন বন্ধুর সাথে বেড়িয়ে আসুন। বন্ধুদের সাথে ফেসবুকেই সব আলাপ সেরে ফেলবেন না, বরং চেষ্টা করুন ভার্চুয়াল জগত থেকে বেরিয়ে বাস্তবে তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার।

আপনার পরিবারের কেউ যদি ফেসবুকে আসক্ত হয়ে যায় বুঝতে পারেন, তবে তাকে সারাক্ষণ অভিযোগ করবেন না। বরং এ সমস্যা যেন সে কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য তাকে সাহাযহ্য করুন। তাকে সময় দেবার চেষ্টা করুন।তাকে নিয়ে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসুন।এই ব্যস্ত জীবনের মাঝেও প্রতিদিন পারিবারিক আড্ডা দিন বিকেলের একটুখানি অবসরে। সারাদিন কে কি করলেন সেসব মজার গল্প শেয়ার করুন একে অন্যের কাছে।



এরপরেও যদি কারো ফেসবুকের আসক্তি না কাটে তবে অবশ্যই থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে হবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪

চানাচুর বলেছেন: আপনার পরিবারের কেউ যদি ফেসবুকে আসক্ত হয়ে যায় বুঝতে পারেন, তবে তাকে সারাক্ষণ অভিযোগ করবেন না। বরং এ সমস্যা যেন সে কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য তাকে সাহাযহ্য করুন। তাকে সময় দেবার চেষ্টা করুন।তাকে নিয়ে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসুন।এই ব্যস্ত জীবনের মাঝেও প্রতিদিন পারিবারিক আড্ডা দিন বিকেলের একটুখানি অবসরে। সারাদিন কে কি করলেন সেসব মজার গল্প শেয়ার করুন একে অন্যের কাছে।


ঘুরতে গেলেও হাতে মোবাইল থাকে। আর যে ফেইসবুকে আসক্ত থাকে, তার ঘোরাঘুরির সময়েও মাথায় ঘুরতে থাকে স্ট্যাটাসে কি লিখবে, চেক ইন দিবে কিনা... হেহেহেহহে :D :D

১৬ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২

এইযেদুনিয়া বলেছেন: হে হে হে। মোবাইল ব্যবহার করা বন। নইলে, মোবাইলে ব্যালেন্স কম রাখবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.