নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারুণ্যের সেকাল একাল

২৭ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



তারুণ্য মানেই উচ্ছ্বাস, উচ্ছ্বলতা, মুক্তচিন্তা, উদ্যমতা, সতেজতা আর কিছুটা অবুঝতা। রবীন্দ্রনাথ তো বলেছেনই,

‘’ওরে অবুঝ, ওরে আমার কাঁচা

আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।‘’

তারুণ্য তা সে কয়েক দশক আগেরই হোক বা এই একবিংশ শতাব্দীর তারুণ্যই হোক, তাদের মধ্যে কিছু মিল যেমন আছে, তেমনি খুঁজে পাওয়া যায় কিছু সময়ের অমিল।

ফ্যাশনঃ ৭০ এর দশকে বেলবটম প্যান্টের প্রচলন ছিল। এ ধরনের প্যান্টকে টেডি প্যান্টও বলা হত। সে সময় অনেকেই এ ধরনের প্যান্টগুলো পরত, আবার অনেকেই পরত না। টেডি প্যান্ট পরিহিতদের কেউ কেউ আবার ‘’টেডি’’ বলে ক্ষ্যাপাতো।ছেলেদের চুলে ছিল ঢেউ খেলানো কাট। চশমায় চলত বেশি কালো মোটা ফ্রেম।মেয়েদের মধ্যে মাথায় উঁচু করে খোঁপা করার প্রচলন ছিল। সে সময় মেয়েরা বেশির ভাগ সুতি শাড়িই পরত। সেলোয়ার কামিজেরও চল ছিল। মেয়েরা সে সময় শর্ট কামিজের সাথে ঢোলা সেলোয়ার পরত। পায়ে থাকত খড়মের মত উঁচু জুতো।খুব বেশি মেকাপের চল ছিল না তখন, সাধারণ পাউডার দিয়েই সাজ সম্পূর্ণ হয়ে যেত। তবে চোখ সাজানো হত লম্বা করে টেনে কাজল দিয়ে। টিপ পরা হত কপালের একটু উঁচুতে।

এখনকার তরুণদের মধ্যে রঙ্গিন জেগিংস পরতে দেখা যায়।চুলে স্পাইক, ব্যাকহাম সহ আরো নানা ধরনের কাট দারুন জনপ্রিয়।মুখের দাঁড়িতেও রয়েছে বৈচিত্র।হাতে নানা রকমের ব্রেসলেট ছাড়াও এখন ট্যাটু আঁকা বা পিয়ার্সিং-ও করছে অনেকেই। একটু ‘কেয়ারফুললি কেয়ারলেস’ভাবটাই যেন বেশি থাকে ওদের স্টাইলে।মেয়েদের ফ্যাশনেও রয়েছে অনেক ফিউশন।লেগিংস, জিন্স, স্কার্ট, ফতুয়া, হিজাব সব ধরনের স্টাইলই তাদের মধ্যে দেখা যায়। হালের মেয়েদের নখে ‘নেইল আর্ট’ বেশ নজর কাড়ে। ফ্যাশনের দিক থেকে এখনকার তরুণেরাই যেন একটু বেশি রংগিন।

খেলাধুলাঃ সেকালের তরুণদের খেলার জন্য জায়গার অভাব ছিল না। খেলতে ইচ্ছে হয়েছে কিন্তু খেলার জায়গা নেই, এমনটা যেন ভাবাই যেত না।হাডুডু, ফুটবল, ডাংগুলি ইত্যাদি খেলারই বেশি চল ছিল। খেলার সরঞ্জামের জন্যও খুব বেশি কিছুর দরকার ছিল না।বৃষ্টির দিনে কাদামাখামাখি করে জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলার দিনগুলির কথা স্মরণ করে সেকালের তরুণেরা এখনো নস্টালজিক হয়ে উঠেন।এক সময় পাড়ায় পাড়ায় তরুণদের দেখা যেত ক্যারাম কিংবা দাবা খেলতে।মেয়েরা সময় কাটাতো লুডু, বাঘবন্দী ইত্যাদি সব ঘরোয়া খেলা খেলে।

একালের তরুণদের খেলার জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না।কখনো হরতালের দিনে খালি রাস্তাটাকেই মাঠ বানিয়ে খেলে ওরা।অবশ্য এখন ওদের খেলার তৃষ্ণা অনেকটাই মিটিয়ে দিচ্ছে পিসি বা স্মার্টফোনের গেমসগুলো। এছাড়া স্নুকার বা বিলিয়ার্ড খেলাও তাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

গ্যাজেটঃ স্মার্টফোন, আইফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ ছাড়া এখনকার তারুণ্যকে কল্পণাই করা যায় না। তরুণেরা বইও পড়ছে ই-বুক রিডারে। এখন অনেকের মধ্যেই ফটোগ্রাফিতেও বেশ আগ্রহ দেখা যায়। তাই অনেকের প্রিয় গ্যাজেটের তালিকায় রয়েছে (ডিএসএলআর না হলেও নিদেনপক্ষে) তার ডিজিটাল ক্যামেরাটি।

৭০ বা ৮০ এর দশকে তরুণদের গ্যাজেট বলতে ছিল ট্রানজিস্টর।৮০ দশকের তরুণেরা টু ইন ওয়ানে ক্যাসেট বাজিয়ে গান শুনতো।৯০ এর দশকে ওয়াকম্যান অনেক জনপ্রিয় ছিল।

বিনোদনঃ দল বেঁধে সিনেমা দেখতে যেত সেকালের তরুণেরা।মেয়েরাও সে সময় বান্ধবীরা মিলে সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যেত। অভিভাবকদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেত।ছবি তুলতে হলে যেতে হত স্টুডিওতে।

হাল আমলের তরুণেরা মুভি দেখে ফেলে তাদের ডিভিডি বা সিডিতে।সিনেমা হলে গিয়েও দেখা হয় ট্রিডি মুভিগুলো।বলিউড ও হলিউডের মুভিই তাদের পছন্দের তালিকায়।

ছেলে-মেয়েদের বন্ধুত্বঃ বর্তমানের তরুণ-তরুণীরা যত সহজে একে অন্যের বন্ধু হয়ে যায় বা তুই-তোকারি করে কথা বলে, সেকালের তরুণদের কাছে তা ছিল কল্পণাতীত।ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব সে সময় তেমন দেখা যেত না।বরং সহপাঠিনীর সাথে কথা বলতে হলেও শিক্ষকেরা কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হত।নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ দৃষ্টিভংগি ছিল সবার।

প্রেম ও যোগাযোগঃ সেকালের প্রেমিক-প্রেমিকাদের মনের কথা মুখ ফুটে বলার পরিস্থিতি ছিল না। দূর থেকে চোখে চোখেই কথা সেরে নিতে হত।সময়টা ছিল ‘’নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন’’ এর।তাই মনের কথা আদান প্রদান করতে হত চিঠির মাধ্যমেই। ছোট ভাই-বোন বা অন্য বাহকের উপরে নির্ভর করতে হত চিঠি চালাচালির জন্য। সেজন্য বাহককে নানা রকম ছোটখাট ঘুষও প্রদান করতে হত। এরপরেও ভয় ছিল চিঠি ঠিক ঠিক প্রাপকের কাছ গিয়ে পৌঁছুবে কি না।কেউ কেউ পত্রমিতালীও করত নতুন বন্ধু বানাতে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এমন উৎকর্ষতার সময়ে বর্তমান প্রেমিক-প্রেমিকাদের যোগাযোগ খুব সহজ হয়ে গেছে। খুব সহজেই প্রেম হয়ে যাচ্ছে ভার্চুয়ালি। সারারাত প্রেমিক-প্রেমিকা চুটিয়ে আলাপ করতে পারছে মোবাইলে। আর তাই হয়ত প্রেমিকার জন্য একালের প্রেমিকের উৎকণ্ঠা, ব্যাকুলতা, প্রতীক্ষা, বিরহ, প্রেমের শুদ্ধতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন সেকালের তরুণেরা। তবুও প্রেম আছে, থাকবে সব সময়েই তার সমস্ত আবেগ, অনুভূতি ও আবেদন নিয়ে—সমানভাবে সেকালেও, একালেও।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.