নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

জিরো ফিগার

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২৯



পিঠাপিঠি দুই বোন সুরভী ও পূরবী।দুজনকে দেখলে খুব সহজেই ওদের মিলগুলো চোখে পড়ে। দুজনেরই টানাটানা চোখ, গায়ের রঙ ফর্সা, একই রকম সিল্কি চুল, উচচতায়ও সমান, চেহারাতেও অনেক মিল।অমিলের জায়গাটা হল সুরভীর চেয়ে পূরবীর স্বাস্থ্য একটু বেশি। বন্ধু বান্ধব, চেনা-জানা সবাই ওদের দুজনকে একসাথে দেখলেই মিলগুলো নিয়ে কথা বলতে থাকে। আর কথাগুলো বলতে বলতেই অবধারিতভাবে চলে আসে পুরবীর মোটাত্ব নিয়ে কথা।যেমন কেউ বলে, ‘’তোদের দুজনের মধ্যে পুরবী মোটা’’। পুরবী হয়ত একটু মন খারাপের ভাব করে আহ্লাদী গলায় অন্যদের বলল, ‘’আমি কি বেশি মোটা?’’ তখন কেউ স্বান্তনা দিয়ে বলে, ‘’না, না, পুরবী, তোকে ঠিক মোটা বলা যাবে না। তুই যা আছিস, ঠিকই আছিস কিন্তু আর বেশি মোটা হইস না।‘’ নানাজনের নানা রকম মন্তব্য শুনে নিজেকে আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে পূরবী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, ‘’নাহ, ডায়েটিংটা শুরু করে দিতেই হবে।‘’

আঁটঘাট বেঁধে পূরবী ডায়েটিং করা শুরু করে দেয়।নিয়ম করে জগিং ও কিছু এক্সারসাইজও করতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যে সে এর সুফলও পেতে শুরু করল।তাকে দেখলে পরিচিত মানুষজন অনেকেই বলতে শুরু করল, ‘’আরে, তুমি দেখি বেশ শুকিয়েছো‘’ ।এসব মন্তব্য শুনতে পূরবীর বেশ ভাল লাগে।কিন্তু আয়নায় নিজেকে বারবার দেখেও সন্তুষ্ট হতে পারছিল না। তার কেবল মনে হতে লাগলো, ‘’নাহ, আমার আরেকটু শুকানো দরকার।এখনো কত মোটা আমি।‘’ পূরবী আরো বেশি ডায়েটিং করতে লাগলো। ব্যায়ামের মাত্রাটাও বাড়িয়ে দিল। অল্প কিছু সবজির সালাদ ও ফলমূল ছাড়া সারাদিনে খাবার বলতে গেলে সে খেতই না।সামান্য খাবার খেলেও তার মনে হত, এতে তার ওজন অনেক বেড়ে যাচ্ছে।আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের ভেতর কেবল খুঁতই খুঁজে পেত সে।

নিজেকে সবার সামনে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে, সবার প্রশংসা পেতে, নিজেকে আকর্ষণীয়রূপে প্রকাশ করতে, অনেকেই এমন অতি ডায়েটিং-এর মত ভুল করে থাকেন।মিডিয়াগুলোতেও দেখা যায়, আদর্শ নারীর উদাহরণ হিসেবে যাদের উপস্থাপন করা হয় তাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য্য ও স্লিম ফিগারকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কবে কোন সুন্দরী সেলিব্রেটি নারী তার ওজন কমিয়ে নিজেকে জিরো ফিগারে নিয়ে এসেছেন ফলাও করে প্রচার করা হয় সে সব খবর।অন্য নারীরাও কিভাবে এমন সুন্দর ও আকর্ষণীয় ফিগার পেতে পারে সেসব টিপস দিয়েও ভরা থাকে পত্রিকার অনেকগুলো পাতা। মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি হাল ফ্যাশনের পোশাকের ধারণা পাচ্ছেন, ওগুলো হয়ত আপনার পছন্দও হচ্ছে। কিন্তু আপনি এসব পরতে পারবেন না, যদি না আপনার ওমন সুন্দর স্লিম ফিগার থাকে! চারপাশের সমাজ চায় তাদের বেঁধে দেওয়া আকর্ষণীয় ভাইটাল স্টাটিসটিকসে নারীকে দেখতে। নারীও চায় সমাজের এ প্রত্যাশা পূরণ করে সবার চোখে আকাংখিত হয়ে থাকতে।

নাওয়া খাওয়া ভুলে, অতিরিক্ত ব্যায়াম করে নিজের মনের মত করে ফিগার পেতে চান যারা, তারা আসলে স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি মাথায় রাখেন না।সঠিক পুষ্টি ও ক্যালরি পাচ্ছেন কিনা এসব দিকেও তাদের কোন সচেতনতা থাকে না। তাদের মূল লক্ষ্য হল শুধু ওজন কমানো ও কত বেশি ক্ষীণ হওয়া যায়।আর এই ওজন কমা বা শুকিয়ে যাওয়া তাদের মনে এক ধরনের খুশির বার্তা নিয়ে আসে।একটি সুষম ও স্বাস্থ্যকর ডায়েটের সাথে এই অতি ডায়েটের কোন সম্পর্কই নেই। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য বয়স, উচচতা ও পরিশ্রমের ধরণ অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পুষ্টি ও ক্যালরির ধারণাও দিয়ে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত ডায়েট যারা করেন, তারা এসবের ধার ধারেন না।কারণ তারা যুক্তিহীন আবেগ দিয়ে নিজেদের দেখে থাকেন।ফলে শুধু মাপতে থাকেন তিনি কতখানি শুকালেন, কতখানি ওজন কমাতে পারলেন।নিজের ফিগার নিয়ে আত্নবিশ্বাসহীনতা ও অতি সচেতনতা থেকে কিশোরী ও তরুণী্রাই সাধারণত এমন অদ্ভুত ডায়েটিং করতে থাকেন।এছাড়াও নিজের জনপ্রিয়তা ও ক্যারিয়ার ধরে রাখতে মডেল ও নায়িকাদের মধ্যেও এমন ডায়েটিং-এর অভ্যাস লক্ষ্যনীয়। আর ওদিকে মনোবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘’এনোরেক্সিয়া নারভোসা’’ নামের এক ধরনের মানসিক অসুখ বলেই গণ্য করেছেন।

অপরিনামদর্শী এমন অতিরিক্ত ডায়েটিং এর ফলে নানা রকম সমস্যা হতে পারে। যেমন—ত্বক শুষ্ক ও শ্রীহীন হয়ে যাওয়া, ওজন অতিরিক্ত কমে যাওয়া, অপুষ্টি, হাড়ক্ষয়, দূর্বল হয়ে যাওয়া, অচেতন হয়ে যাওয়া, কাজে অনিহা, আত্নবিশ্বাস কমে যাওয়া, পিরিয়ডে সমস্যা ইত্যাদি। শুধু তা-ই নয়। পরবর্তীতে সন্তান গর্ভ ধারণেও হতে পারে সমস্যা। জিরো ফিগার অর্জনের জন্য অতিরিক্ত ডায়েট করতে গিয়ে পাশ্চাত্যের মডেল আনা কারেনিনা, লুইসেল ও এলিয়ানা রামোসের মৃত্যু পর্যন্ত হয়।

যে নারীর গর্ভে এক সময় নতুন প্রজন্মের জন্ম হবে, তার শারীরিক , মানসিক, আবেগিক সব দিক থেকেই সুস্থতা নিশ্চিত করা জরুরি।বটে।বিজ্ঞাপণে দেখা কোন বিশেষ সাপ্লিমেন্টারি ফুড দিলেই যে একটি শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ও বৃদ্ধি হঠাৎ করে ধুমধাম হয়ে যাবে ব্যাপারটি তা নয়।শিশুর বিকাশ ও বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি শুরু হয় মাতৃগর্ভ থেকেই। আর নতুন প্রজন্মের সুস্থতার দায়িত্ব শুধু নারীরই একারই নয়, তার পরিবার, সমাজেরও। তাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবেই নারীর সুস্থতা, পুষ্টি, মানসিক নিরাপত্তা, স্বস্তির জায়গাটি তৈরি করতে হবে। আর তাই মিডিয়াকেও এক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।নারীর সৌন্দর্য্য যে শুধু তার আকর্ষণীয় দেহেই, এমন ধারণা ভেংগে আমাদের বেড়িয়ে আসা খুব প্রয়োজন।অন্ধ অনুকরণ নয়, নিজের সুস্থতাকে প্রাধান্য দিয়েই হোক সৌন্দর্য চর্চা। সবার প্রিয় অভিনেত্রী অর্ড্রে হেপবার্নের বিউটি টিপস হোক নারীদের আরো সুন্দরী, আরো আকর্ষণীয়, মোহনীয়, অতুলনীয়, অনন্যা করে তুলুক।

‘’ আকর্ষণীয় ঠোঁট পেতে হলে উচচারণ করুন সব থেকে মধুর বাক্য।

যদি পেতে চান সুন্দর দুটি চোখ, তবে মানুষের ভেতরের সৌন্দর্যটা খুঁজে দেখার চেষ্টা করুন।

স্লিম ফিগারের জন্য নিজের খাবার অনাহারীর সাথে ভাগ করে নিন।

সুন্দর চুল পেতে চাইলে প্রতিদিন অন্তত একবার কোন ছোট্ট শিশুকে আপনার চুল নিয়ে খেলতে দিন।

সুন্দর দেহভংগির জন্য জ্ঞানের পথে হেঁটে চলুন।‘’



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯

মুদ্‌দাকির বলেছেন:

মোটা হওয়া ভালো না, একটা বসের পরে বাংলাদেশের বেশীরভাগ মহিলা যেমন হন!! কিন্তু জিরো ফিগারও ভালো না, বিশেষ করে ইয়াং মেয়েদের জন্য !!

সুন্দর লেখা

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৫৭

এইযেদুনিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। সুস্বাস্থ্যের উপরেই কিন্তু বারবার জোর দেওয়া হয়েছে। লেখাটি খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন। মোটা বা খুব ক্ষীণ হওয়া নারী-পুরুষ কারো জন্যই ভাল নয়। যেহেতু জিরো ফিগার নিয়ে মেয়েদেরকেই প্রভাবিত হতে দেখা যায় বেশি, তাই লেখাটি মেয়েদের সচেতনতা নিয়েই লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.