নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীর চ্যালেঞ্জ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৪

নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, নারী তার অধিকার নিয়ে দিন দিন সচেতন হচ্ছে, বাড়ছে ঘরে ও বাইরে নারীর ক্ষমতায়ন। আবার একই সাথে প্রাচীন পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবও রয়ে গেছে এ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।নারীর সচেতনতা ও পুরুষতান্ত্রিকতা সব একসাথে মিলেমিশে আমরা যেন জগাখিচুড়ি মার্কা একটি ট্রানজিশন পিরিয়ডে অবস্থান করছি।এ অবস্থায় ঘরে, বাইরে, কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের অস্বাস্থ্যকর দ্বন্দ্ব, বৈরিতা, বিদ্বেষ। যেন নারী ও পুরুষ পরস্পরের প্রতিপক্ষ, একে অপরের জনম জনমের শত্রু!অথচ শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাবার ফলে হবার কথা ছিল উল্টো। এ সমাজে নারী ও পুরুষ পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, সুস্থ, সুন্দর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও শ্রদ্ধাশীল সম্পর্ক কতখানি অর্জিত হয়েছে সে প্রশ্নের উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করবো আমরা।



নারী এখন আগের চেয়েও আরো বেশি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছে।নারীকে নানা রকম বাধাবিঘ্ন পার হয়ে, নেতিবাচক দৃষ্টিভংগিকে উপেক্ষা করে, তার বিরুদ্ধে সহিংসতাকে জয় করে পুরুষের পাশাপাশি চলতে হচ্ছে রূক্ষ্ণ কঠিন পথে। এ পথে চলতে গিয়ে পুরুষের সহযোগিতা যেমন সে পাচ্ছে তেমনি আবার পুরুষই হয়ে পড়ছে তার চলার পথের বড় বাধা।এ প্রসংগেই কথা হল কয়েকজনের সাথে।



Ministry Of Housing & Public Works এ কর্মরত স্থপতি লামিয়া তাইফুর জানালেন তার অভিমত।তিনি মনে করেন, এখন অনেক পুরুষ নারীদের শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকে। তবুও তাদের সংখ্যা অনেক কম। লামিয়া তার অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে পুরুষেরা নারীদের সহযোগিতা করেন তো না-ই বরং তাদের মধ্যে নারীদের সাফল্য ও যোগ্যতাকে ছোট করে দেখার প্রবনতা দেখা যায়। তাদের এমন মনোভাবের কারণে নারীদের মধ্যেও পুরুষদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি হচ্ছে।

এরিস্টোফার্মায় কর্মরত বায়োকেমিস্ট কানিজ ফাতেমা ছন্দার কাছে জানা গেল নারীর প্রতি পুরুষদের দৃষ্টিভংগির কথা। তার মতে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত ও পরিস্থিতি অনুযায়ী নারীর প্রতি পুরুষদের দৃষ্টিপভংগি নির্ভর করে। তাই পুরুষদের মধ্যে যেমন বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ লক্ষ্য করা যায় তেমনি সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতারও দেখা মেলে। প্রসংগত ছন্দা বেশ কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দিলেন, ‘’ যেমন, বাসে মেয়েরা দাঁড়িয়ে থাকলেও গুঁটিকয় ছেলে ছাড়া তাদের বসতে দেয়ার আগ্রহ কেউ দেখায় না। ইন জেনারেল বাসার কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, ছেলেরা সহযোগিতা করলেও একটা সার্টেইন পয়েন্ট পর্যন্ত, চাকরি করলেও একটা মেয়েকেই অনেক দায়িত্ব নিতে হয়। আর কম্প্রোমাইজ?? সেটাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরাই করে। আবার রানা প্লাজা ক্রাইসিসে ক্ষতিগ্রস্থ স্ত্রীদের জন্যে স্বামীদের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখেছি অনেক সময়ই।‘’

বুয়েটের শিক্ষার্থী আদিবা অনন্তীর মতে, ‘’আগের প্রজন্মে নারীর প্রতি পুরুষ কিছুটা বিদ্বেষপূর্ণ ছিল। এখন দিনে দিনে সে অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে বা সংসারে নারীর প্রতি পুরুষের সহযোগিতামূলক আচরণ দেখা যায়। কিন্তু সে সংখ্যাটিও ঘটা করে বলার মত এমন কিছু নয়।‘’ পেশায় ব্যবসায়ী আহমাদ রনি বললেন, ‘’পুরো পৃথিবী জেনারালিজেশনের শিকার। মেয়েরা ছেলেদের গণহারে দোষ দেয় আর ছেলেরা মেয়েদের। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভংগি কোনকালেই নমনীয় ছিলো না। কিছু ক্ষেত্রে বিদ্বেষও রয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, এরোগেন্স এটিটুড, ধর্ম, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এসব হচ্ছে এই মনোভাবের কারণ। পুরুষের প্রতি নারীর দৃষ্টিভংগি এখন নমনীয় নয় আবার বিদ্বেষভাবাপন্নও নয়। তবে নারীরা বর্তমানে পুরুষদের ডোমিনেট করতে পছন্দ করেন।‘’

যতই দিন যাচ্ছে নারীদের জীবন কি ততই চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পেশায় শিক্ষক স্বরূপ কুমার ভক্ত বললেন, ‘’পুরুষদের জীবন তো শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জিং। সে তুলনায় নারীদের জীবনে যদি চ্যালেঞ্জের কথা বলেন, তাহলে বলতে হয়, সমাজের সমস্ত ভ্রুকুটি,কটাক্ষ, নেতিবাচক দৃষ্টিভংগির বাধা পার হয়ে মাথা উঁচু করে সামনে এগিয়ে যাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ।‘’

নারীর জীবনে চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বললেন আদিবা অনন্তী। তিনি বলেন, ‘’নারীকে তার কর্মক্ষেত্রে তার পারদর্শিতা প্রদর্শণ করতে হচ্ছে, এটা একটা চ্যালেঞ্জ। আগে নারীরা ঘরেই থাকতো, নানাভাবে অত্যচারিত হতো, যৌন হয়রানির শিকার হলেও মুখ বুজে থাকতো। এখন নারীরা এসবের প্রতিবাদ করছে, এটাও একটা চ্যালেঞ্জ। নারীকে একই সাথে তার কর্মক্ষেত্র ও সংসার সমানভাবে ম্যানেজ করে চলতে হয়।এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও নারীরা এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। মোবাইল, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহার করতে গিয়ে নারী আরো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। নিজেকে সাইবার ক্রাইম, ব্ল্যাকমেইলিং বা গুজবের ফাঁদ থেকে দূরে রাখতে গিয়ে নারীকে চ্যালেঞ্জিং হতে হচ্ছে। আর সব কিছু বাদ দিলেও, নারীকে প্রতিনিয়ত যে সামাজিক কটাক্ষ সহ্য করে চলতে হয়, এটাও বড় একটি চ্যালেঞ্জ।‘’

প্রায় একই কথা কানিজ ফাতেমা ছন্দারও। ছন্দার মতে, ‘’একটা মেয়েকে এখন জন্মের পর থেকেই অনেক কিছুর সাথে ফাইট করতে হয়...ইভ টিজিং, চাইল্ড অ্যাবিউজ। মিডিয়ার কল্যাণে এখন যুক্ত হয়েছে নারীকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরা।মিডিয়া ও করপোরেট জগতে মেয়েরা আজকাল সহজেই সেক্সুয়ালি অবজেক্টিফায়েড হচ্ছে। এছাড়াও সাথে হেলথ ইস্যু- পিরিয়ড, ব্রেস্ট ক্যান্সার ইত্যাদি সমস্যা ফেইস করে চলতে হয় তাদের। একটা মেয়ে একই সাথে নার্স, হোম মেকার, বুয়া, চাকরিজীবী, মা, স্ত্রী, মেয়ে সর্বোপরি মানুষের ভূমিকায় যেভাবে কাজ করে তার সাথে একটা ছেলের কাজের তুলনা যায় না...অবশ্যই আমি ছেলেদের কাজকে ছোট করছি না । কিন্তু এটাই বলছি যে ছেলেরা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অন্তত মেয়েদের তুলনায় কম চ্যালেঞ্জিং লাইফ লিড করে...ব্যতিক্রমও যে নেই, তা না।‘’

এত এত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে যেন কখনো কখনো নারীরা যেন ক্লান্তি ও হতাশায় খেই হারিয়ে ফেলেন।সে কথাই যেন বলতে চাইলেন লামিয়া তাইফুর, ‘’এখন কর্মক্ষেত্র বা সংসার কোনখানেই একটুও ছাড় দেয় না কেউ।ব্যতিক্রম থাকলেও তা খুব কম।এদিক দিয়ে ভাবলে মেয়েদের জীবন এখন অনেক কঠিন। মাঝে মাঝে মনে হয়, এত কষ্ট করে লেখাপড়া কেন যে করলাম!’’

নারীর সাফল্যকে অনেক পুরুষই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না।তারা নিজেদের অবস্থান নিয়ে একটি মানসিক অনিশ্চয়তায় ভুগে।পুরুষ ভাবে, নারী বুঝি তার জায়গা দখল করে ফেলছে।তাই নারীর সাফল্যকে তারা বেশির ভাগ সময় খাটো করে দেখে নিজেকে মিথ্যে স্বান্তনা দিয়ে রাখতে চায়। অনেক সময় তারা মনে করে নারীরা তাদের সৌন্দর্য ব্যবহার করে কিংবা নারী বলে বিশেষ সুবিধা পেয়ে পেয়ে সহজে এ সাফল্য পেয়েছে। নারীর বিপুল অংশগ্রহন, সাফল্য কি পুরুষকে তার অবস্থান নিয়ে চিন্তিত করে তোলে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে আহমাদ রনি বললেন, ‘’হ্যাঁ, চিন্তিত করে তোলে।এর কারণ, হাজার বছর ধরে চলা সাম্রাজ্য হারানোর ভয়।‘’ একই মত জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার পাভেল। অন্য দিকে সদ্য স্নাতকোত্তর করা আশরাফুল ইসলাম দুর্জয় ভিন্ন মত প্রকাশ করে বললেন, ‘’নারীরা বিপুলভাবে তাদের সাফল্য কিভাবে দেখালো? কোটা ছাড়া কজন নারী সফল হয়েছে?’ স্বরূপ কুমার বললেন, ‘’নারী যখন পুরুষের সাথে একই পদ্ধতিতে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে নিজের স্থান করে নেয়, তখন পুরুষেরা ঈর্ষান্বিত হয় না।কিন্তু যখন কোটার মাধ্যমে নারীরা সহজেই পুরুষকে ডিংগিয়ে সামনে চলে যায়, তখন তা পুরুষদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করে।‘’

নারীদের একটি বড় অংশ এখনো অনগ্রসর। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোটার কারণে নারীদের সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। অনগ্রসর নারীদের আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কোটার প্রয়োজনও রয়েছে। কিন্তু তাই বলে নারীদের শুধু কোটা নির্ভর হয়ে থাকলেই চলবে না। তাকে হতে হবে আরো কঠিন, আরো শক্ত। অন্যের গলগ্রহ না হয়ে মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই নিজের অবস্থান তৈরিতে নারীকে বেশি মনোযোগী হতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নারী তার শক্তি দেখিয়ে দিক।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.