নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় লেখক ও পর্যটক। \'\'ভালো আদর মন্দ আদর\'\'(২০১৩) তাঁর প্রকাশিত প্রথম বই

এইযেদুনিয়া

আমার চোখে তো সকলই শোভন/সকলই নবীন,সকলই বিমল/ সুনীল আকাশ,শ্যামল কানন/বিশদ জোছনা,কুসুম কোমল/সকলই আমার মত

এইযেদুনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রেণীকক্ষে শাস্তি নিষিদ্ধ প্রসংগে

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৫

ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত ম্যাকগ্রেগরের একটি থিওরি আছে, যেখানে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের কথা মাথায় রেখে কর্মক্ষেত্রের মানুষের আচরণ অনুযায়ী তাদেরকে মোটিভেট করার জন্য দুভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১।এক্স টাইপ— এরা ধাড়ি ফাঁকিবাজ, কোনমতে কাজ সমাধা করতে পারলেই যেন বাঁচে, দায়িত্ব নিতে চায় না।প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন নিয়েও তাদের তেমন মাথা ব্যথা নেই।
এদেরকে মোটিভেট করতে হয় মাইরের উপরে রেখে।বকাঝকা, প্রয়োজনে বেতন কাটার মত শাস্তি-টাস্তি দিলে পরে এরা কিছু কাজ করে।
২।ওয়াই টাইপ—এরা কাজের প্রতি বেশ আন্তরিক ও দায়িত্বশীল।সুশৃংখল, পরিশ্রমী, আশাবাদী বলে এদের দিয়ে প্রতিষ্ঠান খুব সহজেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এদেরকে মোটিভেট করতে হয় পুরষ্কার দিয়ে। তার কাজের প্রশংসা করে, বেতন বাড়িয়ে, প্রমোশন দিলে এরা আরো উৎসাহী হয়ে মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করে থাকে।
আমি নিজে ছিলাম ওয়াই টাইপ একজন মানুষ। অথচ এই এক্স টাইপ পৃথিবীতে ধরেই নেওয়া হয় সব মানুষ এক্স টাইপ, সবাইকে মাইরের উপরে রাখতে হয়। তাই আমাকে অন্যদের মত জীবনের সব ক্ষেত্রে এক্স টাইপদের মতই ট্রিট করা হয়েছে।ফলে একজন ওয়াই টাইপ মানুষ হয়েও এক্স টাইপ পাত্রের ভেতরে নিজেকে সেঁটে নিয়ে ঐ পাত্রের আকার ধারণ করতে আমার যথেষ্ট কষ্ট হয়েছে।তারপর ধীরে ধীরে আমাকে এক্স টাইপড একজন বানিয়ে ফেলা হয়েছে, হয়ত।এমনই হয়, আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন হয়ে থাকে।অথচ হওয়া উচিত উল্টোটা।আর এর শুরুটা হওয়া উচিত কোথা থেকে?

রবীন্দ্রনাথ তো অনেক আগেই বলেছেন, ‘’গাধাকে পিটোলে ঘোড়া হয় না, কিন্তু অনেক সময় ঘোড়াকে পিটোলে গাধা হয়ে যায়।‘’ সুতরাং মারামারি, পিটা-পিটির সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে শিক্ষার একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সব রকম শারীরিক, মানসিক শাস্তি দেওয়া যাবে না,এই আইনটি করা হয়েছে। এটি খুবই ভাল উদ্যোগ, এতে ওয়াই টাইপ শিক্ষার্থীদের নিজের মত করে বিকশিত হবার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।এবং এক্স টাইপদেরও ওয়াই-মুখী করে গড়ে তোলা যাবে।শিক্ষার্থীরা খুশি মনে পড়বে, ক্লাসে তার মনে কোন লজ্জা-ভয় থাকবে না, আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠবে সে। তবে এমন পরিবেশের স্বপ্ন রাতারাতি বাস্তব হয়ে যাবে না। সব সময় মাইর খেয়ে, শাস্তি পেয়ে অভ্যস্ত আমাদের মানসিকতা পরিবর্তনে সময় তো কিছু লাগবেই।
শিক্ষার্থীদের সব রকম শাস্তি নিষিদ্ধ করার খবরে দেখা গেল শিক্ষার্থীরা খুশি, শিক্ষকেরা ব্যাজার।শাস্তি না দিয়েও যে কারো আচরণের কাংখিত আচরণ পরিবর্তন সম্ভব, কোন কিছু শেখানো সম্ভব এই কনসেপটাতেই যেন কেউ কেউ একমত হতে চান না। কারণ, শাস্তি না দিয়ে ‘রেইনফোর্স’ দেওয়ার মাধ্যমে যে শিক্ষার্থীদের শেখানো যায় এ ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা অনেক কম। আর প্রশিক্ষণ তো নেই-ই।তাই এতদিন বেতের ভয় দেখিয়ে যে শিক্ষার্থীদের ঠাণ্ডা করে ক্লাস নেওয়া যেত, এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না।আগে সব সময় মাইর খেয়ে অভ্যস্থ শিক্ষার্থীরাও এখন নতুন আইনটি জানে। তাই তারাও এর সুবিধা নিয়ে একদম বাধনহারা হয়ে যেতে চায়। এদেরকে ঠিক কোন কৌশলে মোটিভেট করতে হবে, কোন শিক্ষার্থীকে কিভাবে রেইনফোর্স দিতে হবে, শিক্ষার্থীকে কিভাবে শিখণ প্রক্রিয়াতে ব্যস্ত রাখতে হবে সে ব্যাপারে জানা না থাকায়, প্রশিক্ষণ না থাকায় একজন বেতবিহীন শিক্ষকের অবস্থা হচ্ছে, একদল বাঘের মুখে পড়া অসহায় ব্যক্তি। এখন বেতবিহীন শিক্ষককে বাঘের মত ভয় পায় না তার শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের মাত্রা ছাড়া উশৃংখলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে গিয়ে শিক্ষক নিজেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তাই শাস্তি দেওয়া নিষিদ্ধ করে শুধু আইন করলেই চলবে না, দরকার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও।
আরেকটি ব্যাপার, যে শিক্ষার্থীটি তার ঘরে শাস্তি পেয়ে অভ্যস্ত, ক্লাসে কিন্তু তার আচরণ সহজে পালটাবে না, যতক্ষণ না সে শাস্তি পাচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের আচরণের যে পরিবর্তনগুলো আমরা চাই, সেগুলো অর্জনের জন্য শুধু ক্লাসে শিক্ষকদের শাস্তি দেওয়া নিষিদ্ধ করলেই হবে না, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, সাথে সাথে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে অনেক বেশি।শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সম্পর্কের এই স্যান্ডউইচটি-ও হয়ে উঠুক ওয়াই টাইপ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪০

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: বেত ব্যবহার না করে ও গায়ে হাত না দিয়ে কিছু শাস্তির দরকার আছে. তবে, আমাদের কালে দেখেছি, কিছু শিক্ষকরা নিতান্ত পাশবিক ছিলেন. সার্বিক বিচারে, শাস্তির দরকারের চেয়ে শিশুদের কতিপয় শিক্ষকদের পশু-মানসের হাত থেকে রক্ষা করা বেশি জরুরি.

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩

এইযেদুনিয়া বলেছেন: শাস্তি নয়, আসলে রেইনফোর্সমেন্ট করতে হবে ওদেরকে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভাল বলেছেন । শাসন বেশী করলে বেহায়া হয়ে যায় ।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৭

এইযেদুনিয়া বলেছেন: অতিরিক্ত কিছুই ভাল নয়, না শাসন, না আদর! আর শাসন করা তাকেই মানায়, যে আদর করে! মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১

Saeen বলেছেন: B-)

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২১

এইযেদুনিয়া বলেছেন: হাসবেন না! B:-)

৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৮

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো পোস্ট +

শুভেচ্ছা ।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫০

এইযেদুনিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.