নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো অন্ধকারে যাই

সময়টা কি করে দেবে সেটা তার অধিকারী জানে, চাইলে পোকায় ধরে নষ্ট কাল ভেসে যাবে যমুনার বানে

স্বদেশ হাসনাইন

ছোট একটা ফার্মে কাজ করছি । সৌখিন লেখক । ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি । পকেটে পয়সা থাকলে এদিক ঘুরে খরচ করে ফেলি । সুনীলের লেখার ভক্ত, শামসুর রাহমানের কবিতা পড়ি। বিদেশী লেখকের মধ্যে ড্যানিয়েল স্টীলের লেখা ভাল লাগে । সবচেয়ে ঘৃণা করি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে । একাত্তর আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। ইমেইল: [email protected]

স্বদেশ হাসনাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনিবার্য হয়ে যায় গতি

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৩৪

বড়লোক হলেই যে মন বড় হবে তার কোন কথা নেই। পাজেরো মার্সিডিসে চড়ে এমন লোক আছে যে কাজের ছেলেটার একটা ভাল জামা দিতে গরিমসি করে। তখন মনে হয় এত টাকা নিয়ে কার জন্য মানুষ বাঁচে। চোখের সামনে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে কেউ মুখ ঘুরায়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। বলে, এত মানুষের উপকার করলে আমি বাঁচবো কি করে। আমাদের পরিচিত সার্কেলে একটা মেয়ে ছিল। তার বাবা ব্যাংকের ক্লার্ক, হিসেব করে চলতো কিন্তু দেখতাম ফকির এলে ফিরিয়ে দিতে পারতো না। তবে কি পয়সা বলেই ওর মন ভাল ছিল। একটা সূত্র পেয়েছিলাম - যেসব মেয়ে বাঁচে শুধু অন্যের প্রশংসা শুনতে তারা নিজের জন্য ধুমসে খরচ করে। এখন একটা বহু হাজার টাকার ড্রেসের ভিতর একটা মেনি বিড়াল রাখলেও তাকে সুন্দর লাগবে। এখানে সকল স্তুতিবাক্য তো ড্রেসের প্রাপ্য। যেমন বেশন দিয়ে যা কিছু ভাজো তাকে মচমচে লাগবে। সেটা লাউয়ের পাতা না আলুর চাক বিষয় না। আমি বহুবার দেখেছি সবাই সখ করে আইসক্রিম ভ্যান থেকে আইসক্রিম কিনে খাচ্ছে। এমন সময় একটা খুব গরীর মেয়ে এলো সাথে একা বাচ্চা। সবাই নানান প্রশ্ন এগুলো বাজে মেয়ে। রুমানা বাচ্চাটাকে একটা আইসক্রিম দিয়ে আমাদের বলল, এই বাচ্চাটা বাজে না। ওর চোখগুলো কেমন করে তাকিয়ে ছিল। আমার আব্বা যদি এই ছেলেটার মত রেখে চলে যেত আমার কেমন লাগতো। ফয়সালের সাথে রুমানার প্রেম ছিল হয়তো। সেও ভাল মানুষ। কিন্তু তার পরিবার বেশ স্বচ্ছল। উত্তরাতে বাসা। হাসানুজ্জামান স্যারের মায়ের জন্য টাকা তুলছিল সবাই। ফয়সাল তার চাচার কোম্পানী থেকে দেড় লাখ টাকা যোগাড় করে দিয়েছিল। আমি আগেও বলেছি মানুষ যারা ভালা তারা ভাল। সবার মন সমান বড় না। ফয়সালের যেমন কোনদিন খুব ভাব ছিল না। রুমানা আর ফয়সালের জুটি বেশ ভাল ছিল। ফয়সালের স্বভাব কেমন ছিল বলি। সে ভোর বেলা তার করোলা গাড়িটা ড্রাইভ করে আসতো। বিল্ডিং এর পিছনে পার্ক করে পুড়ির দোকানে গিয়ে বসতো। ওই আলো আঁধারির রেস্টুরেন্টে বসে চা পুড়ি গিলে সে ঠিক ক্লাসের সময় উধাও। চার পাঁচ জন বন্ধু মিলে একটা জামাকাপড়ের দোকান দিয়েছিল। যারা ওর পার্টনার কেউই পড়াশোনার ধার ধারে নি। সাড়ে দশটার দিকে তার দোকানে সে বসতো। তারপর যদি বিকালে ক্লাস থাকতো করতো। এটা তার খামখেয়ালি। সে বলতো যে আব্বা বলেছে একটা ডিগ্রি নিতে। আমি নিলাম। এত বেশি নম্বর পেয়ে কি লাভ। রুমানা একটু সিরিয়াস মেয়ে। সে পড়াশোনা কামাই করতো না। বিকেলের ক্লাস শেষে তাদের দেখতাম বসে আছে দুজন। রিকশায় করে কোথাও যাচ্ছে। ফয়সাল অবশ্য একা জিনিস ভাল যে রুমানার সব কাজেই সাথে থাকতো। একবার কি একটা মার্কশিট তুলতে ঝামেলা হচ্ছিল রুমানার। আমি দেখেছি কত ভাবে দৌড়াদৌড়ি করে সেটা উদ্ধার করেছে। এটা স্বাভাবিক যে সাড়ে তিনবছর প্রেম তাদের। এত বছর প্রেম হলে এমনিতেই হাজব্যান্ড ওয়াইফের মত হয়ে যায়। আমরা মিডলক্লাসের পয়সা হিসাবের স্বভাব কম। কারো জন্মদিন, ধুম ধাম করে পয়সা চান্দা তুলে খেতে চলে গেছি। ফয়সাল কি করে মাদকে অভ্যস্ত হলো জানি না। তবে ছ্যাচড়াগুলো যেমন করে নেশা করে পড়ে থাকে সেরকম না। সে রাতের পর মুহম্মদপুরে একটা আডডায় মদের আসরে বসতো। মদের সাথে গাঁজা ছিল। তবে ইয়াবা বা এরকম ড্রাগ নিয়েছে বলে শুনিনি।রুমানা এ নিয়ে আমাদের কিছু না বললেও বুঝতে পারতাম সে চেষ্টা করছে ফেরাতে। আমরা বলেছি যে রুমানা সিম্পল মেয়ে তার লাইফ তুই নষ্ট করিস না ফয়সাল। তোর বাবার বিজনেসে ধ্বস নেমেছে। এখন এই মেয়েকে বিয়ে করে সংসারী হয়ে যা। ফয়সাল বলতো আমি কি অন্য মেয়ের সাথে গেছি? আমি কি মাগীখোর যে এসব বলিস। এই আমি রাতের তিনঘণ্টা আমার জন্য রাখি। এটা পার্সনাল বিষয়। আমি ছাড়তে পারবো না। আমরা শুনছিলাম যে ফয়সালের ফ্যামিলি রাজি ছিল না। কিন্তু রুমানাকে বিয়ে করতে ফয়সাল মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিল। তবে মানুষ চেনা কঠিন নয়তো সারাজীবন ভাবতাম রুমানা একা বোকা মেয়ে। ফয়সালের সাথে ভালবাসায় সে কাঁদবে কিন্তু তা হলো না। পাশ করার পরের বছর রুমানা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের তার বিয়ের খবর দিল। নিজেই কার্ড দিতে এলো।আমাদের অনেক প্রশ্ন।সে বলল, আব্বা আম্মা একটা ছেলে ঠিক করেছিল। আমি আপসেট ছিলাম। আমি ফয়সালের জন্য অপেক্ষা করেছি। ভেবেছি। শেষে ওকে ছাড়ার ডিসিশন একাই নিলাম। লাইফ একটাই । যে ছেলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না তাকে এত বড় ডিসিশনে জড়াতে চাইলাম না। সেলফ কন্ট্রোল ম্যাটার্স। যাকে বিয়ে করছি সে নিছক বিএ পাস। ফয়সালের মত বড় বাড়ি গাড়ি নেই। মাকে নিয়ে থাকে ঢাকায়। বাবার মৃত্যুর পর কনট্রাকটরীর একটা চাকরীতে সৎ ভাবে পরিশ্রম করেছে। ছবি দেখালো। ফয়সালের পাশে তার হবু বরকে কে দেখাবে কাকের মত। নজরুল ফয়সালের মত মেধাবী না। কিন্তু জীবনের এই ২৮ বছর বয়সে সব সংগ্রামে ও পাশ করেছে। তার সাথে কথা বলেছি। বলেছে একটা কথা। আমার মা চোখে দেখতে পায় না। আমার রাতে ডিউটি থাকে। ছোটবোনটাকে অনেক বকেছি। ও ঘুমে থাকে। তুমি মাকে দেখো। অন্ধকারে বাথরুমে নিয়ে যেতে হবে ধরে ধরে। অসুবিধা হবে না তো? রুমানা বলেছিল না, হবে না। ফয়সালও রুমানার বিয়ের পর তেমন কোনই বিকার দেখায় নি। তার বন্ধু সার্কেলটা খারাপ হলো দিন দিন। আমাদের আর আগ্রহ থাকলো না তাকে নিয়ে। রুমানার দুটো বাচ্চা। জন্মদিনের ছবি দেখলাম ফেইসবুকে। মিরপুরে একটা টিনশেড বাড়িতে হয়েছে নিজের। অনেক পয়সা নেই কিন্তু সুখে আছে।

-

ড্রাফট ১.০

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.