নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট একটা ফার্মে কাজ করছি । সৌখিন লেখক । ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি । পকেটে পয়সা থাকলে এদিক ঘুরে খরচ করে ফেলি । সুনীলের লেখার ভক্ত, শামসুর রাহমানের কবিতা পড়ি। বিদেশী লেখকের মধ্যে ড্যানিয়েল স্টীলের লেখা ভাল লাগে । সবচেয়ে ঘৃণা করি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে । একাত্তর আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। ইমেইল: [email protected]
বাড়ুইপারা পার হয়ে নেতিয়ে পড়ছিল রশিদুদ্দিন আর তখনই মনে হয় পিন পিন শব্দ হয়। কেউ চামড়ার আবরণের ভিতর কান ফাঁক করে মোবাইলের শব্দ আহরণ করে। বাসের দোতলায় যে পানের ঝাঁকা উঠছে, তার নিচে কাছের খোলা জায়গায় পা চেপে মানুষ উপরে উঠছে তার একটু নিচে যে বয়োবৃদ্ধ মানুষ বেতফলের মত চোখে চেয়ে আছে কালো রবারের মালার দিকে। আওয়াল রিপেয়ারিং স্টোর। এইখানে মেরামত করা হয় যাবতীয় যন্ত্রাংশ। রসিকতার পরিস্থিতি নেই। দুরযাত্রী মানুষেরা বলে সব যন্ত্র পারে। মানুষের মেরামত পারে না।
কিছু চাকা খুলে রাখা চেসিস যেখানে। অদূরে টায়ার ঝুলিয়ে রাখছে চালের সাথে লাগানো বাঁশে। যেন এই আড়তের কণ্ঠনালীতে স্মৃতিধর চলমান মালা। নোবেলপ্রাইজ প্রাপ্ত মানুষের গলায় যে পদক। তারও এত অহংকার থাকে না। তখনই আরেকটা ফোনে দ্বিতীয় কোন রিং টোন বাজে। এইবার লোকটি কর্কশ স্বরে কাউকে ধমকাতে থাকে। বলে ফেরেশতা ঠিকই খবর লিখবে কেয়ামতের জন্য কারণ মানুসের শিরায় শিরায় তারা চলতে পারে।
রশিদুদ্দিনের গলা মধুর। মোবাইলে কথা যারা বলে তাদের গলা কেন সব সময় কাকের মত হয়। ঐ প্রান্তের জনৈক কামরুলের নামে গিবত গায়। পাতিকাকের বাসায় নাকি সব পাওয়া যায়। তারকাটা, চিপসের প্যাকেট,খবরের কাগজ ন্যাকড়া। রশিদুদ্দিন মসজিদের উল্টা দিকে একটা গাছে কাকের বাসা থেকে আস্ত সেন্ডেল পাওয়া গিয়েছিল। কাক কি করে সেন্ডেলে ঘুমাতো?
রশিদ সেন্ডেলে বসতে পারে। সে মসজিদের কাজ করতো সেখানে তার খাওয়া ভালই চলতো। মহল্লা থেকে হুজুরের খানা যা আসতো তার ভাগ পেতো সে কিন্তু বাড়িতে কিছু পাঠানোর উপায় নাই। বাড়ির খেতের উপার্জনে বউ বাচ্চা চলতো। তার কণ্ঠ সুরেলা হওয়া সত্ত্বেও সে ঐ মসজিদের ক্লিনার খাদেমই ছিল দেড় বছর। রশিদুদ্দিনের ইচ্ছা ছিল ইমামতি করার। সাধারণত এই মনকুঞ্জ মসজিদে একবার কোন সিনিয়র হুজুর ঢুকলে যেতে চায় না। সাত বছরের সময় পায়ের টাকনুতে একপ্রকার প্যারালাইজ হয়ে যাবার কারণে খুঁড়িয়ে চলে। তাকে ল্যাংড়া রশিদ বলে ডাকে সেই থেকে। রশিদুদ্দিন মেধাবি। দেখে দেখে সে সবই শিখেছিল। সুস্থ সবল লোক যেখানে সুলভ সেখানে খোঁড়া মানুষের পিছনে কেউ দাঁড়াবে কেন।
স্বাভাবিক ভাবে এই মসজিদে একই পদে থেকে যখন পদোন্নতি হয় না। আল্লাহতা'লার কাছে মুনাজাত করেও সে তাহাজ্জুজের পর দোয়া ইউনুস পড়েছিল। তখনই স্বপ্নে দেখে যে তার কপাল খুলে যাবে।
ইস্তেমা শেষে ঢাকায় এসেছিল একটা কাজের জন্য। বসেছিল একটা খোলা দোকানে। থেকে সে এখন ঢাকায় একটা তেলেসমাতি কান্ড ঘটল। দোকানটি ছিল একটি বেসরকারী হাসপাতালের উল্টোদিকে। একজন হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে এসেছিল। আজকে কেউ আছে? আড্ডারত চারজন মাথা নাড়ে।
-হুজুর আপনের রক্তের গুরুপ কি?
রশিদুদ্দিনের সেটা নতুন অভিজ্ঞতা। বলল, আমি জানি না।
দিবেন রক্ত? খুব মৃদুস্বরে জিজ্ঞাস করেছিল। মিলায়ে দেখেন। বড় লোক পার্টি।
ভয় নাই,আমি এই মাসে দুই দিসি।
দোকানদারের অভয়ে রশিদুদ্দিনের মনে হয় একবার দেখতে পারে। তার ভয় ডর বেশি না। তার রক্ত কাকতালীয় ভাবে মিলে যাওয়ায় পরিবারের সবাই স্বস্তি ফেলে। হুজুর এত সম্মান আগে দেখে নাই। ভিতর থেকে দুই তিনজন এসে বলে। আল্লাহ আপনারে মিলায়ে যদি না দিতো তাইলে মেয়েটারে বাঁচাতে পারতাম না। রক্ত দেবার পরই একটা আনাম ফান্টার বোতল এগিয়ে দেয়া হলো। একজন এসে দামদর না করে প্যাকেট গুঁজে দিয়েছিল যা তাতে কড়কড়ে চারটা পাঁচশ টাকার নোটা। এই প্রথম রশিদুদ্দিন বুঝতে পারে তার শরীরের রক্তের দাম অনেক। সে এক মাসে যত টাকা পেয়েছে সেটা এক ব্যাগ রক্ত দিয়েই পেয়ে গেছে।
রশিদুদ্দিন এখন পেশাদার রক্তদাতা। মাথায় আগের মত টুপি নেই। গায়ের রঙ মসজিদের নিয়মিত খাবারে যেমন জেল্লা দিয়ে যেত। তার বদলে এখন শীর্ণ দেখায়। মুখের চামড়ায় নুইয়ে পড়া। তার প্রায়ই মনে হয় কথাটা ঠিক রক্তের ভিতর ফেরেশতা চলাফেরা করে। তবে একটা কথা কোথাও লেখা নেই। যে তার কাছ থেকে রক্ত কিনে নেয়। তারপর টাকা দেয় সে ফেরেশতাদের রাজা
-
ড্রাফট ১.০ / আগের লেখা ঠিক করতে গিয়ে দ্বিতীয় বাই প্রডাক্ট।
©somewhere in net ltd.