নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো অন্ধকারে যাই

সময়টা কি করে দেবে সেটা তার অধিকারী জানে, চাইলে পোকায় ধরে নষ্ট কাল ভেসে যাবে যমুনার বানে

স্বদেশ হাসনাইন

ছোট একটা ফার্মে কাজ করছি । সৌখিন লেখক । ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি । পকেটে পয়সা থাকলে এদিক ঘুরে খরচ করে ফেলি । সুনীলের লেখার ভক্ত, শামসুর রাহমানের কবিতা পড়ি। বিদেশী লেখকের মধ্যে ড্যানিয়েল স্টীলের লেখা ভাল লাগে । সবচেয়ে ঘৃণা করি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে । একাত্তর আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। ইমেইল: [email protected]

স্বদেশ হাসনাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্প: কবরের পাশে সেই লোকটা

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৭

হরিণঘাটা থেকে লোকটা আমার পিছন পিছন আসছিল।

সিগারেটটা শেয়ার করা যাবে?

কণ্ঠস্বরটা শুনে না করতে পারলাম না। বললাম, যাবে।

দেশলাই? তোমার ঠোঁটে ওটা তেমন জ্বলছে না। আমি ওটা নিভিয়ে তারপর আবার জ্বালবো।

তুমি মদ খাও?

না। এত প্রশ্ন করার কি আছে? এ সময়ে আমি সিগারেট শেয়ার করতে যাই না। আপনাকে করলাম। কারণ আপনাকে দেখে মনে হল আপনার জরুরী দরকার।

হা হা, দয়া হলো আমার দিকে?

জ্বি না। আমি চেইন স্মোকার বলে বুঝতে পারি অসময়ে একটা বিড়ির তেষ্টা পেলে কেমন ছটফট লাগে। আমি নিজেই দু শলা এনেছি বহু কষ্টে। এত রাতে দোকান সব বন্ধ হয়ে যায়।

আমি বড় পায়ে হাঁটতে হাঁটতে সহিসডাঙায় চলে এসেছি। এই নির্জন জায়গার দু মাইল পরই আলো মিলবে। আমি হরিণঘাটা বাজারে আলকাতরার স্টোরে কাজ করি। দিনের রোদেও আন্ধারি কাজ..স্যাৎসাতে আর কদাকার ড্রামে ওসব বস্তু তুলতে হয়! অনেক বার ধুয়ে ফেলার পরও পায়ের নিচে চটচট করে।

লোকটা আমার পাশে চলে এল। আকাশে আধখানি চাঁদ চড়ুই পাখির মত মেঘে ঢুকছিল আর বের হয়ে আসছিল।আবছা আলোয় দেখলাম একটা লম্বা আলখেল্লা পরা মানুষ। কাপড় নয় যেন চটের পোশাকে।

ভয় পাচ্ছো নাকি? বয়স হয়েছে তাই গলা ভাঙা। আমি যখন তোমার মত তরুণ নবীনগরে থাকতাম। হাতে টাকা পয়সার অভাবে আমি ডোমের কাজ নেই। মৃতদেহ সৎকারের অফিস থাকে খবর দিতো ট্রাক এসে বেওয়ারিশ লাশ নামিয়ে যেত। একাই কোদালে কবর খুঁড়তাম। আমার অনুভূতি বলে কিছু নেই। গোরচাপা দিয়ে বাড়িতে গিয়ে গোসল করে নির্দ্বিধায় ভাত পাক করে খেতাম।

এখন? আমার জানতে ইচ্ছে হল তার সম্পর্কে। এখন কি করেন?

এখন তো আর বেঁচে নেই। সময় আছে হাতে? বিড়িটা নিয়ে অশথ গাছের তলায় বসি। অথবা ঢাল দিয়ে হাঁটি তাতে কথা বলার সুবিধা হবে।

আমার বাড়িতে চিন্তা করবে। জলদি ফেরা দরকার। তবে অসুবিধা নাই।



লোকটা আমার চেয়ে দ্রুত হেঁটে আমাকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছে। তাকে অনুসরণ করে পাকা ইঁট বিছানো সড়ক থেকে নির্জন কাঁচা পথে চলে এসেছি। কোথাও ভুল হচ্ছে আমার। এ নিশ্চয়ই ভয় দেখানোর কেউ না। এই পথে বাড়ি ফিরি কম করেও পাঁচ বছর। এই পথে আমাকে ভুল ভাল নেয়ার উপায় নেই।

লোকটার মুখ দেখি নি।

আমার ভয় করছিল না যে তা বলবো না। চাঁদের কিরণ মিলিয়ে যায় তাই আন্দাজে পা ফেলতে হয়। একবার মনে হল এই ঢালে কেন নামাতে যাবে। কাদা থাকলে পা ডুবে যাবে। তখন যদি না উঠতে পারি?



আচ্ছা, তুমি মরা মানুষের ফিরে আসা বিশ্বাস করো?

কি বলছেন? কেন করবো?

বিশ্বাস না করলেও এটা সত্যি!

একটা অজ্ঞাত লোক আমার কৌতূহল হোক আর যাই হোক আমার দখল নিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু মনু নাম শুনে চমকে উঠে বললাম, ভাই, আপনি আমার নাম কোথা থেকে জানলেন? আপনি কি আমাকে চেনেন?

লোকটার মুখে সিগারেট নেই।

একি, আপনি না আমার আমার সিগারেট নিভিয়ে ফের জ্বালাবেন?

হা হা, অট্হাসি। দু পাশে ঝোঁপ কেপে উঠলো। মৃত মানুষের সিগারেট খাওয়া কি তোমার মত হবে? এখন সিগারেট ছাড়াই ভাললাগছে।



আমি এই মধ্যরাতে রসিকতা করে ফেলি - এত জোরে হাসছেন কেন? এরকম হাসে সাধারণ মানুষ!

তোমাকে না বললেই নয় মনু, তুমি যখন মরবে বুঝবে পরজন্মে মানুষ বদলায় না।

তোমাকে বলেছি আমি ডোম। যখনই ডাক পড়তো ্আমি আসতাম। আঁধারে একটা হারিক্যান জ্বালিয়ে মানুষ চাপা দিতাম। যতক্ষণ আমার নতুন মেহমান আসতো আমার খুশি লাগতো। বেওয়ারিশ লাশের কোনটি উদ্ধার হয়েছে কয়েকদিন পর। কড়া পঁচনের ঘ্রাণ। কোনটি সদ্য মৃত। দুর্ঘটনায় উদ্ধার করা একটা স্টিমারের তেরটি লাশ আমি একরাতে সৎকার করি। এরকম পেশায় যারা থাকে তাদের ধূমপানের নেশা পায়। সেদিন বৃষ্টি হয়েছিল এক পশলা। ভ্যান গাড়িতে কনস্টেবলগুলো উঠে গেছে। আজকের মত ভয়ানক তেষ্টা পেলো বিড়ির। তখনই একটা মৃতদেহের বুকপকেটে সিগারেটের কেস পেয়ে গেলাম। ওস্তাদ বলতো সিগারেট জিনিসটা শবদেহের অনুকরণে বানানো। সাদা কাগজের কাফনে মোড়ানো। তারপর চিতার মত আগুন জ্বলে জ্বলে ধুঁয়া হয়ে যায়।

সেদিন এক ডজন লাশ সমাধিস্ত করার পর আমি খুব একা হয়ে যাই। মনে হল একটু আগে মৃত সংসারের সাথে ছিলাম। একটা কাটা শরীর গাছের মত পুঁতে দিলাম। একটা আস্ত বুক পেট চেপে মাটিতে ঢুকলাম। সবাইকে মাটির ভিতর রেখে আমার যেন কেউ থাকলো না। আমি খোদার কাছে বলি একজন মানুষ যেন থাকে আজ যে আমার বন্ধু।

তখন এই পথে তুমি আসছিলে। তোমার সঙ্গে বন্ধুটি ঠিক এখানে এসে বিদায় নিয়ে চৌরাস্তার দিকে চলে যায়। তোমার কাছে আমি সিগারেট ধার নেয়ার ছলে পরিচিত হই।

তুমি বোকা বলেই আমাকে একটা পুরো প্যাকেট দিয়েছিলে..

আজকে অনেক ক্ষণ ধরে পথের পাশে অপেক্ষায় আছি তোমার জন্য,

আমার জন্য?

হুম, আমার কণ্ঠহাড়টা দেখছো?

জি না আমি আঁধারে দেখতে পাই না।

আমার পুরো শরীর কেবল হাড় আর হাড়। পাঁজরের ভিতরে হৃদপিণ্ড শুকিয়ে খসে গেছে। সেজন্য ওটা দিয়ে ধৌঁয়া আর ঢোকে না। গলার পুরোটাই কঙ্কাস্থি। হাড়ের ভিতর ধোঁয়া কি আটকে?

জীবন বড় সুন্দর, মনু। তুমি কি সুন্দর ধোঁয়া খাচ্ছিলে। হিংসা লাগে আমার।

আমার ভয় সরে একটা মমতা জন্মেছে।

আপনি তাহলে জীবিত নন। কোথা থেকে এসেছেন?

আমি সিলেটের মন্দিরায় একটা চা বাগানের ভিতর কাজ নেই। বিলাতীদের একটা কবরস্থানে কাজ। সংখ্যায় অল্প মানুষ। বিলাতীদের আয়ু লম্বা। তাই অবসরেই কাটাতাম। ওখানে যাবার দু মাস পরে আমি সাপের কামড়ে মারা যাই। একটা বড় ইচ্ছে আমার পূরণ হলো না। আমার ইচ্ছে ছিল সহিসডাঙাতে আমার দাফন হবে। কিন্তু কেউ জানেনি বিধায় ইচ্ছেটা পূরণ হয় নি। তাই যখন ছুটি পাই এখােন আসি। কোন একটা খোলা গোরে ঢুকে বসে নিজের হাতে গোর দেয়া মানুষগুলোকে স্বজনের মত ভাবি।

আর একটা কথা মনু। তুমি আমাকে এক রাতে সঙ্গ দিয়েছিলে জানি না। যখন খুব ধূমপানের তৃষ্ণা হয় মনে হয় তুমি এক শলা দিলে ভাল হয়।

লোকটা খুব বিষাদে ধরা গলায় এটা বললো। যেন আমার বাজার থেকে কেনা একটা সিগারেটের শলাকা খুব দামী কিছু।

আমি পকেটে হাত বাড়িয়ে শেষ শলাকাটা বের করে বললাম,

ভাই, আমার একটা কথা রাখবেন? এইটা শেষ। কিন্তু এটাও খান।

তুমি তো দেখেছ আমি খেতে পারি না, কষ্ঠাস্থি নেই। তাই হাতে মুচড়ে শেষ করি।

আমি অনুরোধ করলাম।

লোকটা তর্ক করলো না, ঠিক আছে তুমি সিগারেট জ্বালাও।

সিগারেট জ্বললো.. একটা হাত বাড়িয়ে তিনি সেটা নিলেন।

খস খস শব্দ হয়ে দপ করে আগুন নিভে গেল।

চুপচাপ কিছুক্ষণ। আঁধার ঘুট ঘুটে।

একটা খুব করুণ শব্দ হলো। কেউ আবেগে কেঁদে দিল। আবার মনে হল কেউ নেই। মনের ভুল। চারপাশটা খালি অথবা কেউ মিথ্যে মিথ্যি কাশছে। শুনেছি মৃত আত্মা কথা বলতে জানে। মৃতদেহের পক্ষে কাশি দেয়া সম্ভব কিনা আমার জানা নেই।

=

ড্্রাফট ১.৬/ এডিট করেছি

মন্তব্য ৪০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪

ফ্‌জলূল করিম বলেছেন: ভাল লাগল।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৫

নাহিদ হাকিম বলেছেন: ভাল।শুভ কামনা

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৪৯

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ নাহিদ হাকিম

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১২

নেক্সাস বলেছেন: গল্পটার ঠিক গন্তব্য কোথায় বুঝতে পারিনি...।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫১

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: এটা কয় মিনিট সময় ধরে যা মনে এসেছে লিখেছি। এখন কিছুটা পরিবর্তন করলাম। ছন্ন ছাড়া বাউলকে - ঠ্যালা থেকে নামিয়ে ট্রেনে তুলতে বড় বেগ হয় এটার সেই অবস্থা।

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: আপনার লেখা অনেকদিন ধরে পরি না---- ভীষণ ভাল লিখেছেন

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫১

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: কৃতজ্ঞতা আপনাকে। অনেক।

৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: আমিও বুঝতে পারি নি।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫২

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: এই জন্য আপনাকে পছন্দ। আমিও বুঝি নি আজকে পড়ে। তবে এডিট করলাম। দেখি আরো দুই চারবার ঘষে মেজে একটা সুরত পাই কি না।

৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১৮

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: ভাল ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫২

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ পরিবেশ বন্ধু

৭| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৩

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: গল্পটা ভালোই এগোচ্ছিলো। বর্ণনা বেশ সাবলীল। শেষটা আরেকটু সুন্দর হলে পূর্ণতা পেতো। যদি একটা স্পষ্ট ম্যাসেজ থাকতো।
ভালো লাগলো। শুভকামনা রইলো।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫৪

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: শেষটা বদলেছি। তবে আইডিয়া খুঁজছি কি করে সাবলীল করা যায়। একটা কিছু শুরু হয়েছে তাতেই আমি খুশি হয়ে যাচ্ছি নিজে নিজে।
ভাল থাকবেন তাহসিনুল ইসলাম।

৮| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৯

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: সাবলীলভাবে উপস্থাপন ভাল লাগল, আরেটু ছোট বয়সী হলে হয়তো ভয়ে পেতাম :)

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫৫

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: এজন্যই আমি ছোটদের কে বেশি গল্প বলি। ওদের ভয় দেখানো সোজা।

৯| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৯

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: এক কথায় দারুণ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫৫

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক, মৃদুল শ্রাবন।

১০| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: ক্যাটাগরিতে লিখেছেন 'গল্প' আবার নামকরণে স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দিয়েছেন অণুগল্প। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত এটাকে অণুগল্প না বলে গল্প বলাই ভালো যদিও অণুগল্পের মতো কিছু ভাবটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন এবং বেশ দুর্বোধ্য ঠেকল। তাই বুঝতে পারি নাই।

আমার মনে হয় অনুগল্প এক বা দুই প্যারায় হলে ভাল ৷ আর সার্থক শব্দ নির্বাচন কিন্তু বৃহৎ বাক্য অনেকাংশে ছোট করে দেয় ৷ ছোট গল্পের প্লটই এ গল্পের বিবেচ্য ৷ অনুগল্প হিসেবে আকৃতি কিঞ্চিৎ দীর্ঘ হয়েছে আরো নাতিদীর্ঘ হলে পাঠক কিছু প্রশ্নোত্তর খুঁজতে বারবার গল্পটি পড়তে বাধ্য হত নিশ্চয় ৷ বাক্য গঠনে আরেকটু যত্নবান হলে ভাল হত অনেক সময় যথার্থ শব্দ ব্যবহারে বাক্যের রূপান্তর ঘটে পাঠক মনে ৷ যাই হোক চূড়ান্ত বিচারক কিন্তু লেখক নিজেই ৷ কলম বা কাঁচির মালিক আপনার চিন্তাশক্তি ৷

অনুগল্প প্রসঙ্গে জনাব শাহরিয়ার সোহেল তার প্রবন্ধে বেশ সুন্দর বলেছেন। সেখান থেকে কিছু অংশ তুলে ধরছি। আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
“অনুগল্পে আসলে অনুভবের বিষয়টি থাকে প্রকটতরভাবে। ঠিক কবিতা নয়, আবার ঠিক ছোটগল্পও নয়; এর মাঝামাঝি অনুগল্পের অবস্থান। অনুগল্প মূলত ফোরডাইমেনশন বা চতুর্মাত্রিক। সব দিক থেকেই যার বিশ্লেষণ করা সম্ভব। একটি লাইনের অর্থ বহুভাবে বিশ্লেষিত হবে, তবে অপ্রাসঙ্গিক বা শৃঙ্খলহীনভাবে নয়।অদৃশ্য সুতার বাঁধনি থাকবে অবশ্যই। ছোটগল্প যদি নৃত্য হয়, অনুগল্প হবে একটি সার্থক ভাবমুদ্রা। তবে সেই ভাবমুদ্রা থেকে নৃত্যের পুরোটুকুই আস্বাদন করাসম্ভব হবে। ছোটগল্প সমাজের কথারূপ ব্লুপ্রিন্ট, অনুগল্প সম্ভাবিত সমাজের কথাকলি নির্দেশ। অনুগল্প কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, সুনিয়োজিত ঘটিতের ওপরএক সারি অর্থবহ শব্দের টেরাকোটা নির্মিতি।
অনুগল্পের বলার প্রয়াসটি বিদ্যুৎ চমকের মতন; যা এক মুহূর্তে সমস্ত আকাশ চিনিয়ে দেয়, দেখিয়ে দেয় এবং যা শুধু অবাকই করে না, মোহিত করে। সে আসেসংক্ষিপ্ত অবয়বে পূর্ণতার ব্যাপ্তি নিয়ে। যেন কচুপাতার ওপর টলমলে শিশিরে সমস্ত আকাশ। a neat critical wisdom is must there. একটি পূর্ণ বিজ্ঞতার ছাপঅবশ্যই অনুগল্পে থাকবে। অনুগল্পের ভাষা হবে অবশ্যই সংক্ষিপ্ত ও ঘনত্বসমৃদ্ধ। অনুগল্পে লিখতে হলে চাই সমূহ ভাষা, ভোরের ভাষা; যা সমস্ত দিনকেইআলোকপাত করে। কবিতার মতো ব্যক্তিক ভাষা বা সন্ধ্যা ভাষা নয়। যদি বলা হয়, কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল যে, সে আগে মরে নাই। এটাই কিন্তু সমূহ ভাষারউদাহরণ।
অনুগল্প পিকাসোর গোয়ের্নিকা বা মাতিসের আকাশের মতো বৃহৎ; তবে অনুগল্প ব্যঞ্জিত করে না, ব্যক্ত করে।
অনুগল্পের শব্দকে অবশ্যই প্রতীকী হতে হবে। প্রতিটি শব্দ থেকে মূর্ছিত হবে অসংখ্য গুঞ্জন, যেমন : গঙ্গা শব্দটি অনুগল্পে ব্যবহৃত হলে, এর অর্থ অনেক প্রকারহতে পারে। এটি হতে পারে লৌকিক নদী, পবিত্র তরল পদার্থ, একজন দেবী বা অসংখ্য myth-এর ধারক। পাঠকই খুঁজে নেবেন কিভাবে শব্দটি লেখক ব্যবহারকরেছেন।
অনুগল্পের দর্শন ব্যাপক, ভয়াল, খণ্ডিত চিত্রকল্প। অনুগল্পে সব কিছু বলে দেয়া হয় না, শুধু ইঙ্গিত করা হয়। পাঠক সেই ইঙ্গিত অনুযায়ী এগিয়ে যাবেন।”
সব শেষে তাই বলবো এটাকে ঠিক অণুগল্প না বলে ছোট গল্প বললেই মনে হয় ভালো হবে। আমি নিজেই অণুগল্প লেখার চেষ্টা করছি। এই ব্লগে কয়েকটা পোস্টও দিয়েছি কিন্তু এখনো কোনটাকে সার্থক করে তুলতে পারি নাই। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ স্বদেশ হাসনাইন।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৮

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: আমি জানি না আপনার পরিচয় তবে আপনি ব্লগের প্রচলিত সংক্ষিপ্ত মন্তব্যের বাইরে এসে যে ভাবে মন্তব্য দেন তাতে অনেক কিছু জানার থাকে।

প্রথমত আমি ক্যাটেগরী কম বুঝি। যখন লিখতে শুরু করেছি তখন ৪/৫ টা ক্যাটেগরি বানাই। কোন সময় টিক চিহ্ন দিলেও এটা গৌন হয় যায়।

আর এটা আমার নিজস্ব ধারণা যে অণূগল্পের নামকরণটা খুব পুরনো না। অণু হোক বা যেমনই হোক সেটা ছোট গল্পেরই একটা ফর্ম। আলস্য এবং সংক্ষিপ্ত প্রযুক্তির যুগে দীর্ঘ গল্প লেখার ফুরসত কম।অণূগল্প যতটা না মুন্সিয়ানা তারচেয়ে ফাঁকিবাজিই বেশি। অর্ধেক যে কোন কিছুতেই রহস্য থাকে। অণূগল্প সেই রহস্যের সুযোগে সফলতা দাবী করে।

১১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৭

সকাল রয় বলেছেন:
খানিকটা স্পষ্ট হতে হতে গিয়ে লীন...
যাই হোক গল্পটা জমে উঠেছে পুন:এডিটে দারুন রুপ পাবে। আপনার লেখায় থাকে অন্যরকম কিছু তাই ভালো লাগে। এটা ঠিক ছোটগল্প অনু হলে আরো কম হত বোধকরি।
অনেকদিন গল্প লিখিনা তাই মাথায় আমার নিজেরও ক্যাটাগরি জিনিসটা কাজ করেনা।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩১

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সকাল ..আপনার কাছে মন্তব্য পাওয়া বিশেষ আনন্দের।

১২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৫

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: এতো সুন্দর একটা সিকোয়েনস এতো সহজে নস্ট করছেন? এর কোন অর্থ হয়নি, কিন্তু ইচ্ছা করলেই অনেক দিকে ঘুরিয়ে দেয়া যায় ... পরিপূর্ণ হবে।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৫

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি! মনে হচ্ছে আপনার নতুন কোন আইডিয়া আছে। এখানে লিখতে পারেন। অথবা রহস্য রাখতে sw.has9 @gmail.com জানান। কি কি দিকে ঘুরানো যায় বলুন। অথবা লিখে দিন।
আমি যা মাথায় এসেছে দিয়েছি । সিনার্জি হোক আপনার ভাবনা দিয়ে।

১৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫২

ডি মুন বলেছেন:
ওস্তাদ বলতো সিগারেট জিনিসটা শবদেহের অনুকরণে বানানো। সাদা কাগজের কাফনে মোড়ানো। তারপর চিতার মত আগুন জ্বলে জ্বলে ধুঁয়া হয়ে যায়।

----- দারুণ লাগল শবদেহের সাথে সিগারেটের সাদৃশ্যের বর্ণনা।


আমি এই মধ্যরাতে "রসিকতার" করে ফেলি ---- সম্ভবত " রসিকতা" হবে।


আমি অনুরোধ "করলাশ"। ----- করলাম

অল্প দুএকটা টাইপিং মিসটেক। এগুলো ঠিক করে নিলে লেখাটা আরো সুন্দর হবে।

+++

অনেকদিন পর এমন লাশ/মৃত মানুষ নিয়ে গল্প পড়লাম।
খুব ভালো লেগেছে।

শুভেচ্ছা লেখকের প্রতি।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৯

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: বানান ভুল হয় খুব...ধন্যবাদ এত মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য

১৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: একটানে পড়ে ফেললাম
দারুন রোমাঞ্চকর ...

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৯

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মনিরা সুলতানা।

১৫| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:২৩

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
স্বদেশ,

অণুগল্প দেখি বিরাট গল্প হইয়ে গেলো-গা !

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:২৮

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: রাসায়নিক ব্যাখ্যায় অণুটা অতিদীর্ঘ পলিমারের অণু। পলিথিন ব্যাগের মত টান খেয়ে বড় হয়ে গেল।

১৬| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৭

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: গল্পের অন্য ব্যাপারে পরে আসি, আগে বলেন, চরিত্র দুটা এমন শুদ্ধ ভাষায় কেন কথা বলে? গোরখোদক আর আলকাতরার দোকানে কাজ করা মানুষের কথায় আঞ্চলিকতা থাকার কথা। এটা কি ইচ্ছাকৃত নাকি দূর্বলতা ধরা হবে?

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫০

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ভাল অবজারভেশন। এটা আঞ্চলিক ডায়াগল। এমন কি পুরোটাই আঞ্চলিক ভাষায় নিয়ে যাবার দ্বিতীয় ইচ্ছে ছিল। কিন্তু খুব যে ভাল লাগছিল তা না। কোন কারণে তখন সেই ভাষাটাই ফোকাসে আসছিল। আবার মনে হল সিনেমার জগতে যেমন নায়ক জঙ্গলে বাস করলেও ক্লিনশেভড থাকে - এর উত্তর কেউ জানে না ...এটাও হোক এই রকম।
-

হরিণঘাটা থেকে লোকটা আমার পিছে পিছে আসছে। আমারে ডাকলো।
ঘাড় ঘুরাতেই বলল, সিগেরেটটা দেওয়া যাইবো?
কণ্ঠস্বরটা শুনে না করতে পারলাম না। বললাম, হুম, নেন।
ম্যাচ? তুমার ঠোঁটে ওইটা নিবা গেছে মনে হয়। আমি ওইটা পুরা নিভায়া ফিরা আবার জ্বালাই।

তুমি কি মদও খাও নাকি?
না খাইনা। তা, এত কতা পারেন ক্যান। এই সময়ে আমি বিড়ি সিগেরেট কেউরে দেই না। আপনেরে দিলাম কারণ আপনাকে দেইখা মনে হল আপনের জরুরী দরকার।
হা হা হা। আমার দিকে দয়া হইছে?
জ্বি না। দয়া না। বিড়ি সিগেরেট ছাড়া আমার নিজেরই দম বন্ধ লাগে। এর লাইগা বুঝবার পারি ধুয়ার ইচ্ছা পাইলে দুইনা কেমন লাগে। আমি নিজেই দুইটা শলা আনছি বহুত কষ্ট কইরা। এত রাতে দোকানপাট সব বন্ধ হয়া যায়।
কথা বলছি আর বড় পায়ে হাঁটতে হাঁটছি। সহিসডাঙা চলে এসেছি।নির্জন জায়গার দু মাইল পরে আলো মিলবে। আমি হরিণঘাটা বাজারে আলকাতরার স্টোরে কাজ করি। দিনের রোদেও আন্ধারি কাজ..স্যাৎসাতে আর কদাকার ড্রামে ওসব বস্তু তুলতে হয়! অনেক বার ধুয়ে ফেলার পরও পায়ের নিচে চটচট করে।
লোকটাও দ্রুত হেঁটে আমার পাশে চলে আসে। আকাশে আধখানি চাঁদ চড়ুই পাখির মত মেঘে ঢুকছিল আর বের হয়ে আসছিল।আবছা আলোয় দেখলাম একটা লম্বা আলখেল্লা। কাপড় নয় যেন চটের পোশাকে।
ডরাইতাসো নাকি? বয়সের কারণে তাই গলা ভাঙ্গা। আমি যখন তোমার মত জোয়ান আছিসলাম, থাকতাম নবীনগরে। রাইজ্যের সাহস কিন্তু পেটের অভাব! তারপরে এক ডোমের লগে থাইকা গোরের কাম শিখলাম। উস্তাদ আমার ফেরেস্তা। কইতো এই কামে ভাতের অভাব নাই। মরা শইল কামড়ায় না। কিন্তু মাইনষের যত ডর তারে নিয়া।
ঐ যে বেওয়ারিশ গোরস্তান ঐ খানেই কাম করতাম। হাসপাতালের টেরাক আইসা আমারে খরব দিতো। কোন কোন দিন আরো লোকজন থাকতো। কোন দিন একলাই কোদাল চালাইতাম। আমার ভয়ডর হাসি কান্দা বইলা কিছু নাই। গোরচাপা দিয়া বিড়ি ধরাইতাম। নগদ টেকা নিয়া বাড়িত গিয়া ডাইল দিয়া কচলায়া ভাত খাইতাম ।
এখন কই? আমার জানতে ইচ্ছে হল তার সম্পর্কে। এখন কি করেন?
এখন কি করবো? মরনের পর খিদাও নাই। কাজ কামের ঝামেলাও নাই। সময় আছে হাতে? আসো বিড়িটা নিয়া পাইকুড় গাছের তলায় বসি। নাইলে ঢাল দিয়ে হাঁটি তাইলে কথা কওনের সুবিধা হইব।
আমার বাড়িতে যাওয়া দরকার জলদি। কালকে বিহানে কাম আছে বড় চালানের। সেই খানে যাইতে হবে।

লোকটা আমার চেয়ে দ্রুত হেঁটে আমাকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছে। তাকে অনুসরণ করে পাকা ইঁট বিছানো সড়ক থেকে নির্জন কাঁচা পথে চলে এসেছি। কোথাও ভুল হচ্ছে আমার। এ নিশ্চয়ই ভয় দেখানোর কেউ না। এই পথে বাড়ি ফিরি কম করেও পাঁচ বছর। এই পথে আমাকে ভুল ভাল নেয়ার উপায় নেই।
লোকটার মুখ দেখি নি।
আমার যে ভয় করছিল না - তা না। চাঁদের কিরণ মিলিয়ে যায় তাই আন্দাজে পা ফেলতে হয়। একবার মনে হল এই ঢালে কেন নামাতে যাবে। কাদা থাকলে পা ডুবে যাবে। তখন যদি না উঠতে পারি?

আচ্ছা, তুমি মরা মানুষের ফিরা আসা বিশ্বাস করো?
কি কন এইসব? মরা মানুষ কি ফিরা আসে? এই সবে আমার ডর নাই।
বিশ্বাস না করলেও এইটা হয়! মনু, দুইন্যায় কত কিছু ঘটে।

একটা অজ্ঞাত লোক আমার কৌতূহল হোক আর যাই হোক আমার দখল নিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু মনু নাম শুনে চমকে উঠে বললাম, ভাই, আপনি আমার নাম কোইথ থেকা জানলেন? আপনে কি আমারে আগ থাইকা চিনেন?
লোকটার মুখে সিগারেট নেই দেখে বলল,
আপনেরে যে সিগেরেট দিলাম, শেষ কইরা ফেলছেন? কখন করলেন? ম্যাচ নিলেন ফিরা আগুন ধরানর লাইগা।
হা হা, হা। আবারও হাসি শুনতে পাই। লোকটা যেন আগুন না ধরানোর কারণে খুশি। দু পাশে ঝোঁপ কেপে উঠলো। লোকটা বলল,
মরা মানুষের সিগেরেট খাওয়া কি আর তোমার মত হইবো? এখন সিগেরেট ছাড়াই ভাল লাগতেসে।

আমি পাল্টা জবাব দিলাম - এত জোরে জোরে হাসতাছেন কেন? মরা মানুষের হাসি কি জোরে হয়? মনে হয় সাধারণ কোন মানুষ!
মনু, তোমার মরা মানুষ নিয়া ধারণা কম। তুমি যেইদিন মরবা বুঝবা মরণের পরেও মানুষের স্বভাব বদলায় না।
তোমাকে বলছি না আমি ডোম আসিলাম। মরা মানুষ চিনছি সেই সময়। অনেক সময় সুবে সাদেকের সময় ডাক পড়তো। ্আমি আসতাম। আঁন্ধারে একটা হারিক্যান পাশে রাইখা কাম করতাম। সুটকেসে যেমন নাইয়র জামা পিরান ঢুকায় তেমন কইরা একটা একটা লাশ চাপা দিতাম। দুই দিন তিন দিন যাইতো আর কোন খবর নাই। তারপরে এক বিষ্যুদবার খুশির খবর শুনলাম। ইস্টিমার ডুইবা গেছে। অণেক লাশ আসতাসে। টেরাক থামলো। মানুষ পঁচার ঘেরান চাইরা পাশে। তেরটা লাশ আমি নামাই। একটা লাশ গইলা গেছে। মনে হয় কোন বাচ্চার। একটা জেনানার। আমি মানুষের বয়স বুঝি না। চরিত্র বুঝি না। আমার কাম সবরে সমান করা।
এই কামে যারা থাকে তাদের কিছুই লাগে না। খালি বিড়ি সিগেরেটের নেশা পায়। আরেকদিনের কথা কই। শাওন মাসের শুরু। আসমান ভাইঙ্গা পানি নামসে। ভিজা চুপ চুপ। একটা বিড়ির নেশায় আমি উচটান। আমি মরা লাশের শইল হাতাইলাম। মনে হয় কোন বড় লোক। পকেটের মধ্যে টিনের কৌট্টা। এর ভিতরে তাজা সিগেরেট।
ওস্তাদ কইতো, সিগেরেট জিনিসটা মরা মানুষের লসনে বানানো। দেখস না, সাদা কাগজের কাফন। চিতার মত সেই জিনিস আগুনে জ্বইলা জ্বইলা ধুঁয়া হইয়া যায়।
যেই দিন আমি কারখানার ভিতর মরা কুড়িটা লাশ চাপা দিলাম কেমন যে একলা লাগলো। মনে হইল একটু আগেই বিরাট সংসারের ভিতর ছিলাম। একটা কাটা হাত গাছের মত পুঁইতা দিলাম। একটা সিনা, পা সুন্দর কইরা সাজায়া রাখলাম মাটির ভিতরে । সবাইকে মাটির ভিতর রাইখা আমার যেন কেউ থাকলো না। আমি খোদার কাছে কইলাম একজন মানুষ যেন থাকে আজ যে আমার বন্ধু।
তোমার মনে নাই। বহু আগের কথা। সেই রাতে পথে তুমি আসতেসিলা। আরও কেউ ছিল এই পথে। সে চৌরাস্তার দিকে চইলে যাওয়ার পরে আমি তোমার কাছে বললাম। সিগেরেট দিতে। কোন কারণে তোমার মন অনেক খুশি। আমারে আস্ত সিগেরেটে প্যাকেট দিলা।
আমি বললাম, আমার মনে নাই। সিগেরেটের প্যাকেটি দিসি সেইটা এমন কিছু বিষয় না।
হু, বিষয় না। জানি । কিন্তু কবরের নিঝুম আন্ধারে আমার কথা বলার মানুষ নাই। আমার একটা উপকার করার ইচ্ছা। তুমি নিজেও জানসি কেউ নাই। পেটের খিদা মিটাইতে আলকাতরার দোকানে কাম করো। আমি তোমারে আমার সাথে নিয়া যাবো। না করতে পারবা না। আমি যেই কবরে থাকি। মানুষ জন নাই কথা বলার। আমার পিছে আসো আমি কোন কথা শুনবো না। হা হা হা।
আমি যাবো না। আমি বাড়ি যাবো।
আইজকা বহুত ক্ষণ ধইরা শিমুলতলায় অপেক্ষায় আছিলাম তোমার জন্য,
আমার জন্য?
তোমারে আমার সাথে নিয়া যাবো।
আমি ম্যাচটা থাকলে ধরাতাম। তাতে ভয় কমে। কিন্তু লোকটা হয়তো কৌশলে সেটা নিয়ে নিয়েছে।
হুম, আমারে দেখছো। চক্ষু নাই, ঠোট নাই, নাক নাই । মরনের সুবিধা অনেক। এইসব লাগে না।
আমি বললাম, জি না আমি আপনের কিছু দেখতে পাই না।
আমার পুরা শইল খালি হাড্ডি আর হাড্ডি। বুকের পিঞ্জিরায় ফেঁফড়া নাই। কলিজা শুকায়ে খইসা গেছে। আমি সিগেরেট খাই। গলার নালিতে খালি হাড্ডি আর হাড্ডি । ওইটা দিয়ে ধৌঁয়া আর ঢোকে না।
আমি কোথাও ছুটে পালানোর উপায় খুঁজছি। একটু আলো। কিন্তু লোকটা আমাকে বাচালের মত বলে যাচ্ছে ।
ধোঁয়া গলার ভিতরে ঢুকলে কি লাভ। যেমন ভাত পেটে ঢুকলে কি লাভ? তারচেয়ে আমার মত এক জাগায় শুয়ে থাকো। কাম নাই। ভাই নাই । বাপ নাই। এইসব কিচ্ছু লাগে না।
আমি বোকার মত প্রশ্ন করি, আপনের কই থাকেন?
সেইটা জানার দরকার নাই। আমি সব দেখায়ে দিব। বলতে বলতে হঠাৎ লোকটার একটু উদাসীন কণ্ঠে বলে
আমি এইখান থাইকা চা বাগানের ভিতরে কবর দেওয়ার কাম লই দুই বছর আগে। বিলাতি সাদা মানুষ কবরখানা।ওখানে যাইবার দু মাস পরে আমি সাপের কামড় খাই। একটা বড় ইচ্ছে আসিল কিন্তু ইচ্ছাটা পূরণ হইল না। আমার ইচ্ছে ছিল সহিসডাঙাতে আমার লাশ চাপা খায় যেন। সেই জন্য এইখানে আসি মাঝে মাঝে। একটা খোলা কবরে ঢুইকা নিজের হাতে গোর দেয়া মানুষগুলোকে স্বজনের মত ভাবি।
আমার পায়ের নিচের ভেজা মাটি টের পাই। চোরা বালির ভিতর দিয়ে আমি হাঁটছি। হয়তো একা। কিন্তু মাটিতে ডেবে যাচ্ছে আমার গোড়ালি। এটা কি সেই চোরাবালির ঘাট?
আপনি কই?
আমি মানুষটাকে দেখতে পাই না।
কই?
আছি। মনু, তোমার সব ব্যবস্তা আমি কইরা রাখছি। আর একটু সামনে যাও। অসুবিধা নাই। আমি আছি। আজকে আমি তোমারে নিয়াই ফেরত যাবো।


১৭| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১২

আরজু পনি বলেছেন:

অনেকদিন পর অফলাইনে এই লেখাটা গতকাল পড়লাম...
আপনার লেখা বরাবরই আমার কাছে কঠিন লাগে এবং ভালো লাগে।

আপনার কথা মনে হলেই আমার কবিতা আবৃত্তি শুনতে ইচ্ছে করে ।

অনেক শুভেচ্ছা রইল ।।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫২

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: ধন্যবাদ আরজুপনি।

আমি মনে হয় মুক্তগদ্য আর কবিতা লিখে লিখে ইমেজটা কঠিন করে ফেলেছি।

১৮| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: কন্ঠহাড়টা না দেখলো, পোশাক দেখতে পারার কথা, অন্তত পোষাকের অবয়ব, তাহলে অন্যভাভে নেয়া যায় একটু বর্ননা দিলেই পোষাকের।

ধরেন লোকটা একটা সাইকো।

অথবা ছেলেটা স্বপ্ন দেখছিল, স্বপ্ন ভেংগে দেখবে ওই লোকের মত কেউ এগিয়ে আসছে। ছেলেটা একটা চক্রে পরে যাবে। যেটা তার নিজেকেই ভাংতে হবে।

অথবা ছেলেটা নিজেই তখনো জানেনা যে সে মৃত।


এইখানেই কিছু বললাম, আপনার থেকে শুনি আগে, পরে বাকীটা।

ধন্যবাদ

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫৯

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: Violation of expectation বলে একটা কথা থাকে। পাঠক অলরেডি সব ভাবতে শুরু করেছে অনেক কিছু। স্বপ্নের ভিতর দেখাটা অথবা লোকটা পাগল নিছক ভয় দেখাচ্ছে এটা কি করে হতে পারে ভাবি।

আমি হয়তো দ্রুত লিখতে গিয়ে শেষটা সুন্দর করতে পারি নি। থীমটা এরকম ছিল একজন মৃত মানুষ বহু দিন আগে একটা লোক তাকে সিগারেট শেয়ার করেছিল সেই মায়ায় তার কাছে আসে। লোকটা ইমোশনাল হয়ে তাকে সিগারেট দেয়। সে মৃত মানুষটি তাতে কৃতজ্ঞতায় কেঁদে ফেলে। এখন লোকটি মৃত না আসলেই পাগল সেটা উহ্য রাখতে পারলেও হতো।


-

১৯| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৬

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: এবার ঠিক ঠাক লাগছে। তোমারে নিয়াই ফেরত যাব, এটাই বলে দেয় অনেককিছু

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩১

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: আমি সামান্য বদলে দেয়া গল্পের ২.০ ড্রাফট দেখাই
-

হরিণঘাটা থেকে লোকটা আমার পিছে পিছে আসছে। আমাকে ডাকলো। ঘাড় ঘুরাতেই বলল, সিগেরেটটা দেওয়া যাইবো?
কণ্ঠস্বরটা শুনে না করতে পারলাম না। বললাম, নেন।
ম্যাচ? তুমার ঠোঁটে ওইটা নিবা গেছে মনে হয়। আমি ওইটা পুরা নিভায়া ফিরা আবার জ্বালাই।
তুমি কি মদও খাও নাকি?
না খাইনা। তা, এত কথার কি দরকার। এই সময়ে আমি বিড়ি সিগেরেট কাউরে দেই না। আপনেরে দিলাম কারণ আপনাকে দেইখা মনে হইল আপনের জরুরী দরকার।
হা হা হা। আমার দিকে দয়া হইছে?
জ্বি না। দয়া না। বিড়ি সিগেরেট ছাড়া আমার নিজেরই দম বন্ধ লাগে। এর লাইগা বুঝবার পারি ধুয়ার ইচ্ছা পাইলে দুইনা কেমন লাগে। আমি নিজেই দুইটা শলা আনছি বহুত কষ্ট কইরা। এত রাইতে দোকানপাট সব বন্ধ হয়া যায়।
কথা বলছি আর বড় পায়ে হাঁটতে হাঁটছি। সহিসডাঙা চলে এসেছি। নির্জন জায়গার দু মাইল পরে আলো মিলবে। আমি হরিণঘাটা বাজারে আলকাতরার স্টোরে কাজ করি। দিনের রোদেও আন্ধারি কাজ..স্যাৎসাতে আর কদাকার ড্রামে আলকাতরা ঢালতে হয়! অনেক বার ধুয়ে ফেলার পরও পায়ের নিচে চটচট করে।
লোকটাও দ্রুত হেঁটে আমার পাশে চলে আসে। আকাশে আধখানি চাঁদ চড়ুই পাখির মত মেঘে ঢুকছিল আর বের হয়ে আসছিল।আবছা আলোয় দেখলাম একটা লম্বা আলখেল্লা। কাপড় নয় যেন চটের পোশাকে।
ডরাইতাসো নাকি? ঠান্ডা লাইগা গলা ভাঙ্গা। আমি যখন তোমার মতন জোয়ান আছিসলাম, থাকতাম নবীনগরে। দিলের ভিতরে রাইজ্যের সাহস কিন্তু পেটে অভাব! তারপরে এক ডোমের লগে থাইকা গোরের কাম শিখলাম। উস্তাদ ছিল আমার ফেরেস্তা। কইতো এই কামে ভাতের অভাব নাই। মরা শইল কামড়ায় না। মরা শইলের জোরও কম। কিন্তু মাইনষের যত ডর এদের নিয়া।

ঐ যে সহিসডাঙ্গা বেওয়ারিশ গোরস্তান ঐ খানেই কাম করতাম চাইর বছর। হাসপাতালের টেরাক আইসা আমারে খরব দিতো। কোন কোন দিন আরো লোকজনও থাকতো। কোন দিন একলা কোদাল চালাইতাম। আমার ভয়ডর হাসি কান্দা কিছু নাই। গোরচাপা দিয়াই জম্পেস বিড়ি ধরাইতাম। নগদ টেকা নিয়া বাড়িত গিয়া ডাইল দিয়া কচলাইয়া ভাত গিলতাম ।
এখন কই থাকেন? আমার জানতে ইচ্ছে হল তার সম্পর্কে। লোকটা কি ইচ্ছে করে এসব বলছে ভয় দেখাতে?

এখন আর কি করবো? মরা কোন খিদা নাই। কাইজকামের হিসবাও নাই। ইচ্ছা মত ঘুরি ফিরি। ঘুমাই। আসো পাইকুড় গাছের তলায় বসি। আমি তোমারে কিছু কথা কই। নাইলে নিচের ঢাল দিয়ে হাঁটি।

আমি বললাম, আমার বাইত যাওয়া দরকার। কালকে বিহানে কাম আছে বড় চালানের।

লোকটা আমার চেয়ে দ্রুত হেঁটে আমাকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছে। তাকে অনুসরণ করে পাকা ইঁট বিছানো সড়ক থেকে নির্জন কাঁচা পথে চলে এলাম। কেন এলাম? কোথাও ভুল হচ্ছে আমার। এ নিশ্চয়ই খারাপ কেউ না। এই পথে বাড়ি ফিরি কম করেও সাড়ে পাঁচ বছর। এই পথে আমাকে ভুল ভাল নেয়ার উপায় নেই।
লোকটার মুখ দেখতে পারছি না।
আমার যে ভয় করছিল না - তা না। চাঁদের কিরণ মিলিয়ে যায় তাই আন্দাজে পা ফেলতে হয়। একবার মনে হল এই ঢালে কেন নামাতে যাবে। কাদা থাকলে পা ডুবে যাবে। তখন যদি না উঠতে পারি?

আচ্ছা, তুমি কি মরা মানুষের ফিরা আসা বিশ্বাস করো না?
কি কন এইসব? মরা মানুষ কি ফিরা আসবো কেমনে? এই সবে আমার ডর নাই।
বিশ্বাস না করলেও এইটা হয়! মনু, দুইন্যায় কত কিছু ঘটে।

একটা অজ্ঞাত লোক আমার কৌতূহলকে ঘিরে আমার দখল নিয়ে নিচ্ছে।
মনু নাম শুনে চমকে উঠে বললাম, ভাই, আপনি আমার নাম কোথ থেইকা জানলেন? আপনে কি আমারে আগ থাইকা চিনেন?
লোকটার মুখে সিগারেট নেই। আমি যোগ করলাম,
আপনেরে যে সিগেরেট দিসিলাম, শেষ কইরা ফেলছেন? ম্যাচ নিলেন ফিরা আগুন ধরানর লাইগা। ম্যাচটা দেন।
হা হা, হা। আবারও হাসি। লোকটা যেন আগুন না ধরানোর কারণে খুশি। দু পাশে গুল্মের কেপে উঠলো। লোকটা বলল,
মরা মানুষের সিগেরেট খাওয়াতে আগুন লাগে না। সিগেরেট ছাড়াই ভাল লাগতেসে।

আমি পাল্টা জবাব দিলাম - এত জোরে জোরে হাসেন কেন? বুঝাইতে চান যে আপনে মরা? এইভাবে হাসে পাগলা মানুষ!
মনু, তোমার মনে হয় মরা মানুষ নিয়া ধারণা কম। তুমি যেইদিন মরবা বুঝবা মরণের পরেও মানুষের স্বভাব বদলায় না।

আমার নামে সবাই চিনে। আমি ডোম আসিলাম। মরা মানুষ চিনছি সেই সময়। কোনো দিন সুবে সাদেকের সময় ডাক পড়তো। ্আমি আসতাম। আঁন্ধারে একটা হারিক্যান পাশে রাইখা কাম করতাম। বাক্সের ভিতরে যেমনে নাইয়ের জামা পিরান ঢুকায় তেমন কইরা একটা একটা লাশ চাপা দিতাম। দুই দিন তিন দিন যাইতো আর কোন খবর নাই। তারপরে এক বিষ্যুদবার খুশির খবর শুনলাম। ইস্টিমার ডুইবা গেছে। অণেক লাশ আসতাসে। টেরাক থামলো। মানুষ পঁচার ঘেরান চাইরা পাশে। তেরটা লাশ আমি নামাই। একটা লাশ গইলা গেছে। মনে হয় কোন বাচ্চার। একটা জেনানার। ডোমেরা মানুষের বয়স বুঝে না। চরিত্র বুঝে না। তার কাম সবাইরে মাটি দিয়া সমান করা।
এই কামে যারা থাকে তাদের কিছুই লাগে না। খালি বিড়ি সিগেরেটের নেশা পায়।
শাওন মাসের মেঘলা দিন। আসমান ভাইঙ্গা পানি নামসে। ভিজা চুপ চুপ। একটা বিড়ির নেশায় আমি উচটান। আমি মরা লাশের শইল হাতাইলাম। মনে হইল কোন বড় লোক। আহারে ফস্যা হাত। পকেটের মধ্যে টিনের একটা কৌট্টা। কতগুলা তাজা সিগেরেট।
ওস্তাদ কইতো, সিগেরেট জিনিসটা মরা মানুষ দেইখা বানানো। সিগেরেট য্যান সাদা কাগজের কাফন। চিতার মতন সেই জিনিস আগুনে জ্বইলা জ্বইলা ধুঁয়া হইয়া যায়।
যেই দিন আমি কারখানায় মরা কুড়িটা লাশ চাপা দিলাম কেমন যে একলা লাগলো। মনে হইল একটু আগেই বিরাট সংসারের ভিতর ছিলাম। একটা কাটা হাত গাছের মত পুঁইতা দিলাম। একটা সিনা, পা সুন্দর কইরা সাজায়া রাখলাম মাটির ভিতরে । সবাইকে মাটির ভিতর রাইখা আমার যেন কেউ থাকলো না।
আমি সেইদিন খোদার কাছে কইলাম একটা মানুষ আমারে দেও। সে আজ বন্ধু হইয়া আজীবন আমার সাথে থাকে।
আমি অনুসরণ করে যাচ্ছি গল্প শুনতে। আমার জানতে ইচ্ছে হল সে কি পেয়েছিল বন্ধু।

তোমার মনে নাই মনু। সেই রাইতে তুমি আসতেসিলা। আরও কেউ ছিল সঙ্গে। সাথের মানুষ চৌরাস্তার দিকে চইলে যাওয়ার পরে আমি তোমার কাছে বললাম একটা সিগেরেট দিতে। কোন কারণে তোমার মন অনেক খুশি। আমারে আস্ত সিগেরেটে প্যাকেট দিলা। অনেক কথা বললা।

কবে? আমার মনে নাই। এই রকম সিগেরেট অনেকেই দেয়।
হু, বিষয় না। জানি । কিন্তু কবরের নিঝুম আন্ধারে আমি থাকি। আমার কথা বলার মানুষ নাই। তুমিও জানি পেটের খিদা মিটাইতে আলকাতরার দোকানে কাম করো। তোমার বাড়িতে কেউ নাই। আমি তোমারে আমার সাথে নিয়া যাবো। না করতে পারবা না।
আমি যেই গোরে থাকি কেউ নাই কথা বলার।
আমি বলতে চাইলাম, না! কিন্তু বলা হলো না।
আমার পিছে পিছে আসো আমি কোন কথা শুনবো না।
বললঅম, আমার বাইত যাওয়া দরকার।
তুমি কি জানো, আইজকা বহুত ক্ষণ ধইরা শিমুলতলায় অপেক্ষায় আছিলাম তোমার জন্য,
আমার জন্য? লোকটা হয়তো মাতাল। বা পাগল।
আমি ম্যাচটা থাকলে ধরাতাম। মুখটা দেখলেই হতো। তাতে ভয় কমতো। কিন্তু লোকটা হয়তো কৌশলে সেটা নিয়ে নিয়েছে।
হুম, আমারে দেখছো। চক্ষু নাই, ঠোট নাই, নাক নাই । মরনের সুবিধা অনেক। এইসব লাগে না।
আমি বললাম, জি না আমি আপনের কিছু দেখতে পাই না।
আমার পুরা শইল খালি হাড্ডি আর হাড্ডি। বুকের পিঞ্জিরায় ফেঁফড়া নাই। কলিজা শুকায়ে খইসা গেছে। তারপরেও আমি সিগেরেট খাই। গলার নালিতে খালি হাড্ডি আর হাড্ডি । ওইটা দিয়ে ধৌঁয়া আর ঢোকে না।
আমি কোথাও ছুটে পালানোর উপায় খুঁজছি। একটু আলো পেলে জানতাম। কিন্তু লোকটা আমাকে বাচালের মত বলতেই থাকছে।
ধোঁয়া গলার ভিতরে ঢুকলে কি লাভ। যেমন ভাত পেটে ঢুকলে কি লাভ? তারচেয়ে আমার মত এক জাগায় শুয়ে থাকো। কাম নাই। ভাই নাই । বাপ নাই। এইসব কিচ্ছু লাগে না।
আমি বোকার মত প্রশ্ন করি, আপনে আমারে কই নিবেন।
আমি সব দেখায়ে দিব। বলতে বলতে হঠাৎ লোকটার একটু উদাসীন কণ্ঠে বলে, আমার জায়গাটা খারাপ না।
আমি সহিসডাঙ্গা থাকই দুই বছর আগে এক চা বাগানের ভিতরে কবর দেওয়ার কাম লই। বিলাতি সাদা মানুষ কবরখানা। ওখানে যাইবার কয় মাস পরে আমি সাপের কামড় খাই। তোমারে কই নাই। একটা বড় ইচ্ছে আসিল সহিসডাঙাতে আমার লাশ চাপা খায় যেন। সেই জন্য এইখানে আসি মাঝে মাঝে। একটা খোলা কবরে ঢুইকা নিজের হাতে গোর দেয়া মানুষগুলোকে স্বজনের মত ভাবি।
আমার পায়ের নিচের ভেজা মাটি টের পাই। চোরা বালির ভিতর দিয়ে আমি হাঁটছি। লোকটা চুপ। সে ছায়ার মত। মাটিতে ডেবে যাচ্ছে আমার গোড়ালি। হাঁটু। এটা কি সেই চোরাবালির ঘাট?
আপনি কই?
আমি মানুষটাকে দেখতে পাই না।
কই?
আমি কই আসলাম।
আছি। মনু, তোমার সব ব্যবস্তা আমি কইরা রাখছি। আর একটু সামনে যাও। নাইলে চুপ থাকো। অসুবিধা নাই। আমি আছি।

২০| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪০

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: এইবার লাল সালাম। ভালো হইছে।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৬

স্বদেশ হাসনাইন বলেছেন: থ্যাংকস অনেক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.