নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলো অন্ধকারে যাই

সময়টা কি করে দেবে সেটা তার অধিকারী জানে, চাইলে পোকায় ধরে নষ্ট কাল ভেসে যাবে যমুনার বানে

স্বদেশ হাসনাইন

ছোট একটা ফার্মে কাজ করছি । সৌখিন লেখক । ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি । পকেটে পয়সা থাকলে এদিক ঘুরে খরচ করে ফেলি । সুনীলের লেখার ভক্ত, শামসুর রাহমানের কবিতা পড়ি। বিদেশী লেখকের মধ্যে ড্যানিয়েল স্টীলের লেখা ভাল লাগে । সবচেয়ে ঘৃণা করি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে । একাত্তর আমার সবচেয়ে বড় অহংকার। ইমেইল: [email protected]

স্বদেশ হাসনাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

খুব সাধারণ এক ঘটনা

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৮

সাধারণ একটা ঘটনা। কবির মামা বাসায় এসে তার কোট খুলে বসেছিলেন। আমি তখন ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়ছি। দুর থেকে দেখেছি কিন্তু সামনে আসি নি। আম্মা গোসল করতে যাবার সময় বললেন, মুনিরা তোর মামা ঐ ঘরে একা তোরা তাকে জিজ্ঞাস কর কিছু লাগবে নাকি।

মেজ আপা পাখা তার বাচ্চাটাকে শুইয়ে এ ঘরে এলেন। দেখলেন মামা সোফায় চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস ফেলছে।

মামা, আপনার কি খারাপ লাগছে।

আমি দরদায় এসে দাঁড়িয়ে দেখলাম লোকটা দরদর করে ঘামছে। ড্রইং রুমের টিভিটা প্রায় সারাদিনই চলে। ফ্যানটা পুরনে। তাকে আম্মার রুমে শুইয়ে ফ্যানটা ছেড়ে দেয়া হল।

তার টেম্পারেচার ফল করছিল। হাত পা বরফের মত ঠান্ডা। শরীর কাঁপুনি দিচ্ছিল।

মামার এজমা। আম্মা নিক্স মালিশ করলেন। ভাইজানকে একটু দুধ দে মুনিরা। ফ্রিজে নাই?

মামী সিরাজগঞ্জে। বাসায় আপা কল করলেন সুস্মিকে। সুস্মি গেছে জাহাঙ্গীর নগরে।

এদিকে আব্বার আজকে ব্যাংকের কি ডিউটি আছে। উত্তরায়।

শুনছো, ভাইজানের কি যেন হইসে। তুমি পারলে আসো। আগের বার স্ট্রোক করার কথা মনে করে ভয় লাগে।

তুমি একটু বাকেরকে খবর দাও। বাকের কেউ না।আমাদের নিচের তলায় একটা দোকানদার । কিন্তু দেশের বাড়ি একই জেলায়। সে আমাদের সাহায্য করে।

জামি তুই নিচে যা।

বাকের কাকা আসলো। পরিস্থিতির অবনতি। আপা তেল মালিশ করেন হাতে পায়ে। হাত পাঙ্খা আছে?

বললাম আছে।

আম্মা বললো একটা এম্বুলেন্স দরকার। কিন্তু গাড়ি কোথায় পাবো? একটা নম্বরে ফোন করার পর এম্বুলেন্স মিললো না। বললো পলিটিক্যাল সিচুয়েশন খারাপ হলে সব এম্বুলেন্সই ব্যস্ত থাকে। একটা সিএনজি আনতে আমি দৌড়াতে দৌড়াতে মেইনরোডে আসলাম।

×

ঘটনার পর জামি কোন কিছুই পেল না যে যেতে রাজি হবে হাসপাতালে। কেউ হাসপাতালে যাবে না। রাস্তার অবস্থা ভাল না। এই দিনে ফিরতি খেপ পাওয়া যায় না বলে সব কম দুরত্বে বেশি ভাড়া টানে। জামি একটা সিএনজিকে রাজি করাতে পারলো এই বলে যে জরুরী রোগী। জীবন মরণ সমস্যা। যেন একটু দয়া করে। ভাড়া যা চায় তাই দেয়া হবে।

এখন সিএনজি বাসা পর্যন্ত আসতে পারবে না।

পাশের বাসায় বিবাহের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ডেকোরেটর রাস্তার উপর লাল নীল গেট তৈরি করছে। রাস্তার পাশেই বড় ডেকচি বসানো। রান্নার আয়োজন। গত কাল রাত মহল্লা উজাড় করে গান বাজছে।

×

আমি সিঁড়ি দিয়ে ধরে মামাকে নিয়ে এলাম। অন্যপাশে বাকের দোকানদার। বললাম, কাকা রাস্তা তো বন্ধ। উনি বললেন সাবধানে যাইতে হবে । খেয়াল মাথা য্যান উপর দিকে থাকে। ডেকোরেটরের লোকজনের কয়জন সাথে এগিয়ে এল। ভিড় করে লোকজন দেখছে। এই সর সর করে সাহায্য করছে। কিন্তু রান্নাবান্নার আয়োজনে লাকড়ির কালো ধোঁয়া। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন জায়গা পার হতে হতে।

সিএনজিতে তুলে আমি সামনে বসেছি। সুস্মি কান্না কাটি শুরু করেছে। মুনিরা আপা বললো দুলাভাইয়ের বন্ধু আছেন জনসাস্থ্য হাসপাতালে। বলছে ভয়ের কিছু নাই।

ইট সুরকির ঝাঁকির ভিতর এগিয়ে যাচ্ছি।

মামা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগের মত নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল। বাকের দোকানদার দোয়া পড়ছে। পড়ে ফুঁ দিচ্ছে। পাড়ার একজন পাওয়া গেল তাকেও সিএনজিতে বসানো হল। ছেলেটা বললো বাকের ভাই, উনি মনে হয় শাস নিতাসে না।

আমি কাঁদতে শুরু করলাম। বাকের কাকা বললেন, ধুর মিয়া কুগীত গাও। সব ঠিক আছে। এই তো আইসা পড়ছি। ঢোকার পরই তাড়াহুড়া করে তাকে ইমার্জেন্সিতে ঢোকানো হল।

চারদিক থেকে সবার ফোন বাজছে।

আম্মা ফোন করছে। সুস্মি করেছে।

জনসাস্থ্য প্রাইভেট হাসপাতাল। এডভান্স টাকা দেয়ার সময় আম্মার দেয়া সাড়ে চার হাজার দিয়ে ভর্তি করার হল। তারা এরই মধ্যে জানালো প্রতিদিন তিরিশ হাজার টাকা লাগবে। এই এডভান্সে সাধারণত ভর্তি হয় না। সৌভাগ্য ডা. রফিক পরিচিত থাকায় সব হয়েছে ঠিক মত।

আব্বা আসার সময় আটকে গেছে ক্যান্টনমেন্টে। আমার দুজন মামার এই একজন দেশে থাকে। উনি সরল সিধা লোক।

আব্বা ফোন করে ডাক্তারের সাথে কথা বলছিল।

তারপর উনি আইসিইউতে আছেন। বোঝার উপায় নেই।

এক ঘণ্টা পর ডাক্তার ঘোষণা দিলেন জ্ঞান ফিরেছে।

আমি আম্মাকে বললাম জ্ঞান ফিরেছে মামার। এখন চোখ তুলে চেয়েছে। আম্মা বললো জামি, তুই কোন জায়গায় যাইসনা। থাক।

বাকের কাকা সাথে। আমি আছি -বিপদমুক্ত হবেন। হায়াত মউতে শরীল আল্লাহ পাকের হাতে।

আমি শুনলাম মুনিরা আপা কোরান শরিফ পড়ছে।অসহায় মানুষের এটাই শেষ ভরসা। উপর তলার প্রতিবেশি হাসি খালাম্মা আপার বাচ্চাকে দেখছেন। আশা দিচ্ছেন।

আম্মা আমাকে বললেন, জানি উনার নামে একটা গরু মানুষ করসি। ফিরে আসলে গ্রামে সব গরীব খাওয়ানো হবে।

×

দু সপ্তাহ মামা সুস্থ্য হলেন। স্যালাইনের টিউব মুক্ত হলেন। হাটতে বসতে পারলেন। টেকো মামা আমার। মাথার চুল নেই একটাও। সেই ভগ্ন শরীরেও এক চিলতে হাসি।

আমরা ঘিরে আছি। এর মধ্যে দুর্বল শরীর নিয়ে বসে আম্মার দিকে তাক করে বলছে - কুসুম ছোট বেলা থেইকাই অত অস্থির হয়ে যায়। ছোট বেলা থাইকাই সে এমন। আমার কিছুই হয় নাই পুরা হাসপাতাল পর্যন্ত দৌড়ানি শুরু করসে।



-

ড্রাফট ১.০ / কোন লেখাই ফেলে দেয়ার না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.