নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাস্তিকরা বঁদড়ামি করবো আর আমি নিশ্চিন্তে বেহেশতে চইলা যাওয়ার ধান্দা করমু ! কক্ষনো না, বরং আমি এই কুলাংগার গুলারে জাহান্নাম পর্যন্ত ধাওয়া করমু, ওগো লগে জাহান্নামে ঢুকমু, ওগো আগুনের চাপাতি দিয়া কুপামু.......এর পরে আমার কইলজা ঠান্ডা হইবো।

চেংকু প্যাঁক

চেংকু প্যাঁক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিবাজী চরিত্র ও ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনীতি

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৩



কে ছিলেন শিবাজী?

যার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানে ও কবিতায় স্তুতি বাক্য ব্যবহার করেছেন এবং তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেছেন সেই শিবাজীর পিতার নাম শাহজী ও দাদার নাম মালোজী। দীর্ঘদিন যাবত পুত্র সন্তান না হওয়ায় মালোজী সকল দেব-দেবীর পূজা করে হতাশ হয়ে অবশেষে শাহ শরিফ নামক একজন মুসলমান ফকিরের দরবারে দোয়াপ্রার্থী হন।কিছুদিন পর তার ঘরে পর পর দুইটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করে। ফকিরের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য তিনি তাদের একজন নাম রাখেন শাহজী এবং অপরজনের নাম রাখেন শরিফজী (দি প্রিনসেস অব ইনডিয়া, স্যার এডওয়ার্ড সুলিভ্যান, এডওয়ার্ড স্ট্যানফোর্ড, লন্ডন,১৮৭৫, পৃষ্ঠা ৪৪৩-৪৪৪)।

কিন্তু তার পরই মনোমালিন্যের কারণে মালোজী দুই পুত্রসহ স্ত্রীকে পূনায় পাঠিয়ে দেন এবং নিজে পুনরায় বিয়ে করে বিজাপুরে অবস্থান করতে থাকেন। শিবাজী ঐ পূনাতেই জন্মগ্রহন করেন, পিতা শাহজী বিজাপুরের সুলতান ইব্রাহিম আদিল সাহেব চাকুরিতে নিযুক্ত থাকায় পুত্রের দেখাশুনার জন্য শিবাজীর দাদীজী তার শিক্ষা-দীক্ষার জন্য পন্থ নামক একজন ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণকে নিযুক্ত করেন। কিন্তু শিবাজী এত অবাধ্য ও দুর্দান্ত প্রকৃতির ছিল যে, কারও কোনও কথাই সে মানত না। মাত্র সতের বছর বয়সে শিবাজী তার সমবয়সী দলবল নিয়ে কয়েকটি তালুক লুন্ঠন ও নারী হরণ করে। তখন অভিভাবাক হিসাবে নিজের দায়িত্বের জবাবদিহির ভয়ে দাদাজী পন্থ বিষপানে আতহত্যা করেন(হিষ্ট্রি অব বৃটিশ ইন্ডিয়া, ৫ম সংস্করণ, ১৮৮৫, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৮৬-২৮৭ ও পৃষ্ঠা ২১)।

ঐতিহাসিক স্যুলিভ্যান এই শিবাজী সর্ম্পকে লিখেছেনঃ

‘‘শিবাজী’’ ছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লুন্ঠক ও হন্তারক দস্যু। আর তিনি যাদের সংগঠিত করেছিলেন সেই মারাঠা জাতি ছিল এমন অপরাধপ্রবণ যে, মুহূর্তের মধ্যে তারা তাঁদের লাঙ্গলের ফলাকে তরবারিতে রুপান্তরিত করে এবং ঘোড়া ধার অথবা চুরি করে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়তো,আর এ ব্যাপারে তাঁরা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কোনও পার্থক্য করতো না। মারাঠাগণ হিন্দু হলেও অবৈধ পন্থায় ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য তারা অবাধে মন্দির ধ্বংস করেছে, গো হত্যা করেছে এবং হিন্দু-ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতকে হত্যা করেছে। যেখানেই তারা গিয়েছে সেখানেই কেবল ধ্বংস ও মৃত্যু রেখে এসেছে(দি প্রিনসেস অব ইনডিয়া, স্যার এডওয়ার্ড সুলিভ্যান, এডওয়ার্ড স্ট্যানফোর্ড, লন্ডন,১৮৭৫)।

মিঃ হলওয়েল তাঁর Interesting History/ Events Holl Well পুস্তুকে লিখেছেন, ‘‘তাঁর ভীষণতম ধ্বংসলীলা ও ক্রুরতম হিংসাত্মক কার্যে আনন্দ লাভ করতো। তারা ভুত গাছের বাগানে ঘোড়া ছুটিয়ে রেশম উৎপাদন একেবারে বন্ধ করে দেয়।দেশের সর্বত্র বিভীষিকায় ছায়া পড়েছে।গৃহস্থ কৃষক ও তাঁতীরা সকলেই গৃহভ্যাগ করে পলায়ন করেছে।আড়তগুলো পরিত্যক্ত, চাষের জমি অকর্ষিত।খাদ্যশস্য একেবারে অন্তর্হিত, ব্যবসা-বাণিজ্য একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।’’ এই ছিল শিবাজী চরিত্রের প্রকৃত স্বরপ। মারাঠা লুন্ঠনের প্রত্যক্ষদর্শী গঙ্গারাম বাবু এক কবিতায় লিখেছিলেনঃ

‘‘কারু হাত কাটে, কারু নাক কান,

একি চোটে কারু বধ এ পরাণ।

ভাল ভাল স্ত্রলোক যত ধইরা লইয়া জাএ

আঙ্গুষ্ঠে দড়ি বাঁধি দেয় তার গলা এ।

একজনে ছাড়ে তারে আর জনে ধরে

রমণের ডরে ত্রাহি শব্দ করে।’’

‘পার্বত্য মুশিক’ বলে কথিত শিবাজী সম্রাট আওরঙ্গজেবকে ব্যস্ত রেখেছিলেন মারাঠা অঞ্চলে লুকিয়ে থেকে যুদ্ধ করার জন্য। যে যুদ্ধে ছিলো না কোন বীরত্বের মহিমা। একবার যুদ্ধে পরাজিত ও বন্দী হয়ে নির্লজ্জের মত প্রাণে বাচঁবার জন্যে কৌশল অবলম্বন করে।কথিত আছে, শিবাজী আওরঙ্গজেবকে জানালেন, তাঁর কোন একটি অনুষ্ঠানের জন্য প্রচুর ফলের প্রয়োজন।আওরঙ্গজেবের অনুমতিক্রমে কয়েকটি ঝুড়ি বোঝাই ফল শিবাজীকে দেয়া হয়।এই ঝুড়ির একটির মধ্যে লুকিয়ে কাপরুষ শিবাজী পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে আফজাল খাঁর মত একজন সাহসী ও দক্ষ সেনাপতির অধীনে কামানের বহরে সুসজ্জিত দশ হাজার সৈন্যেও একটি দুর্ধর্ষ সেনা দল শিবাজীর বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়। শিবাজী সম্মুখ সমরে মোকাবেলা করতে পারবেন না জেনে আলোচনার জন্য মুসলিম সেনাপতির নিকট এক ব্রাহ্মণ দূত পাঠান। শিবাজী ও ব্রাহ্মণ দু‘জনে ষড়যন্ত্র করেন। আলোচনার কথা বলে আফজাল খাঁকে এনে তাঁকে হত্যা করা হবে। এই হত্যার মারাঠাদের কোন ঝুকি নিতে হবে না।

আফজাল খাঁ মৃত্যু


আফজাল খাঁ সহজেই ফাঁদে পা দিলেন এবং মাত্র দু‘জন সঙ্গী নিয়ে প্রতাপ গড়ের শিবিরে শিবাজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আফজাল খাঁ ইসলামী উদারতায় দু‘হাত বাড়িয়ে শিবাজীকে বুকে টেনে নিলেন।অমনি শিবাজী তার বাঁ হাতের মারাত্মক ‘বাঘ নখ’ দিয়ে আফজাল খাঁর পেট ফেঁড়ে ফেলেন এবং ডান হাতের আস্তিনে লুকানো ছোরা দিয়ে আঘাত হানেন। এই অতর্কিত আক্রমনে শত্রু ধরাশায়ী হন। সন্তুজী তার তরবারি দিয়ে মরণোন্নুখ আফজাল খাঁর শিরোচ্ছেদ করেন। সেনাপতির ছিন্নশির দশর্নে মুঘল সৈন্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েন।পাশের জঙ্গলে ওৎ পেতে থাকা মারাঠা সৈন্যরা বেরিয়ে এসে মুসলিম বাহিনীকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। রণক্ষেত্রে প্রাপ্ত প্রচুর গোলাবারুদ, চার হাজার অতি উন্নত জাতের ঘোড়া এবং কামানের বহর শিবাজীর হস্তগত হয়। আফজাল খাঁ বন্ধু ভেবে শিবাজীকে বুকে নিলেন। প্রত্যুত্তরে শিবাজী নিরস্ত্র আফজাল খাঁকে অতর্কিত আক্রমণ করে হত্যা করেন।

পরবর্তীতে আওরঙ্গজেব শিবাজীকে দমন করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেন ‘ইয়া তখত্ ইয়া তাবু‘ত’। অর্থাৎ হয় সিংহাসনে না হয় মৃত্যু। কিন্তু সম্রাটের দাক্ষিণাত্যে পৌছার আগেই ১৬৮০ খৃষ্টাব্দে শিবাজী মারা যান।শিবাজীর মৃত্যুও পর তার পুত্র সর্দার শম্ভুজী গদীতে বসেন। শিবাজীর গুরু রামদাস মারাঠা শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যে উত্তেজক কবিতা লিখতে শুরু করেন।

ইংরেজ ইতিহাসবেত্তা সিসেন্ট ও স্মিথ ‘দি অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব হিন্ডিয়া’ গ্রন্থের বিবরণ অনুযায়ী দেখা যায় ১৬৬৪ খৃষ্টাব্দে স্মিথ নামে এক ইংরেজ স্বচক্ষে দেখেন সুরাটের এক তাঁবুতে বসে শিবাজীর নির্দেশে কিভাবে সম্পদ গোপনকারীদের হাত ও মাথা কেটে ফেলা হচ্ছে।শিবাজী যখন সম্পদ সংগ্রহ করতো তখন ভারতীয় দস্যু ও লুটেরার মত নির্মম ও পৈশাচিক রুপ ধারণ করতো। কিন্তু ব্রাহ্মণদের পারিতোষিক প্রধানের ফলে এক গরু রক্ষা করার দরুন এই দস্যুই শেষ পর্যন্ত দেবতা হয়ে গেল। এই ইতিহাসবেত্তা শিবাজীর রাজ্যকে ‘দস্যু রাজ্য’ আখ্যা দেন।

শিবাজি বন্দনা ও ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনীতি

ঐতিহাসিক কল্যাণ চৌধুরী তাঁর ভারতের ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেনঃ

”….. মুসলমানদের কাছ থেকে ইংরেজ রাজত্ব কেড়ে নিয়েছিল। মুসলমানদের সম্পর্কে অমুসলমানদের মনে ঘৃণা-বিদ্বেষ জাগ্রত করার জন্য তারা মুসলমান শাসকদের পরধর্মপীড়ক রূপে চিত্রিত করেছিলেন যাতে এ দেশের অমুসলমানদের ভারতে বৃটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার সহযোগী হিসাবে পেতে পারে এবং এদেশের অমুসলমানরা বৃটিশ শাসনকে বিধাতার আর্শিবাদ বলে ভাবতে পারে । ইংরেজ তার নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে মুসলিম শাসকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবার কাজে হাত দিয়েছিল। মুসলমান শাসনের বিরুদ্ধে ইংরেজের সহযোগিতায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল প্রশাসনের সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্ত উচ্চবর্ণের আমলারা। এরা নতুন নতুন প্রভুর চাটুকারিতায় সকলকে ছাড়িয়ে গেল। ইংরেজও শ্বেতাঙ্গ ও আর্য হওয়ার কারণে গৌরবর্ণ দেশীয় আর্য ব্রাহ্মণদের প্রশাসনে অগ্রাধিকার দিল। ফলে ব্রাহ্মণ্যবাদ ইংরেজ শাসনে শুধ্ অটুটই রইল না বরং তা একাধিপত্য স্থাপন করে বসলো।এ জন্য বাংলার ব্রাহ্মণরা ইংরেজ বিরোধিতায় তৎপর না হয়ে মোঘল-পাঠান বিরোধের ন্যায় মধ্যযুগে যে মোঘল রাজপুত , মোঘল-মারাঠা বিরোধ ঘটেছিল তাকে হিন্দু মুসলিম-বিরোধ হিসাবে চিত্রায়িত করে দেশে সাম্প্রদায়িকতার আমদানি করলো। প্রতাপ ও শিবাজিকে তারা হিন্দু জাতির ’হিরো’ হিসাবে চিহ্নত করলেন।যা আদৌ সত্য ছিল না।”।

“শিবাজি আওরঙ্গজেবের সংঘর্ষে কেউ কেউ ধর্মগত কারণ দিয়ে ব্যাখ্যা করবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এর সমর্থনে কোনো ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় নি।ধর্মগত ভাবে আওরঙ্গজেব যে মারাঠাদেও বিরোধিতা করেছিলেন তারও প্রমাণ মেলেনি।শাহজী ভোঁসলে এবং তাঁর পুত্র শিবাজি নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র রাজ্য গঠন করতে চেয়েছিলেন বলেই মোঘল শক্তির সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধেছিল” (অরুন মাল, রুদ্র ব্রাহ্মণ শূদ্র শিবাজী, দ্রষ্টব্যঃমাসিক সফর, এপ্রিল ৯৩) ।

শিবাজীকে ব্রাহ্মণ ঐতিহাসিকরা গো-ব্রাহ্মণ প্রতিপালক হিসেবে চিত্রিত করেন। তাঁকে ইসলামের বিরুদ্ধে সনাতন ধর্মের রক্ষক হিসাবে চিত্রিত করা হয় অথচ এটাও প্রকৃত চিত্র নয়। কল্যাণ বাবু লিখেছেনঃ

“হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা হিসাবে শিবাজীর দাবীকে আধুনিক ঐতিহাসিকরা মানতে রাজি নন। শিবাজি হিন্দু ধর্মোদ্ধারক উপাধি গ্রহন করলেও আশেপাশে হিন্দু অধিবাসীদের মারাঠা আক্রমণ থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি” (পুর্বোক্ত)।

ব্রাহ্মণরা মানুষে মানুষে সমতার নীতিতে বিশ্বাসী নয়; তাই অশোকের সাম্যনীতি তাদের পছন্দ হয়নি। কায়েমী স্বার্থ অক্ষুণ রাখতে তারা সাম্যবাদী বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধরাজ খতম করার জন্য সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র শুরু করেন। খৃষ্ট-পূর্ব ১৮৪ খৃষ্টাব্দে পুষ্য মিত্র নামে এক ব্রাহ্মণ মৌর্য সেনাপতি বৃহদ্রনকে হত্যা করে মৌর্য সিংহাসন অধিকার করেন । ইতোপূর্বে ব্রাহ্মণরা কখনও সরাসরি সিংহাসনে বসে নি। সিংহাসন দখল করার পর ব্রাহ্মণরা অশ্বমেথ যজ্ঞ শুরু করেন , শুরু করেন ভয়ংকর বৌদ্ধ নির্যাতন । এই ব্রাহ্মণ রাজত্বকালেই মনুস্মৃতিকে চালু করা হয় এবং এর নাম দেয়া হয় মানধর্ম শাস্ত্র । অথচ এত বড় শূদ্রবিরোধী , মানবতাবিরোধী শাস্ত্র দুনিয়াতে আর কোথাও কখনও রচিত হয়নি। (আরো দেখুনঃ ব্রাক্ষণ্য অত্যাচারের ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ধর্মের অবলুপ্তি)

অনুরূপ অবস্থা ঘটেছিলো শিবাজির আমলেও। মোঘলদের বিশেষত আওরঙ্গজেবের ইসলাম প্রভাবিত মানবীয় শাসন ব্রাহ্মণদের গাত্রদাহের কারণ হয়েছিলো। তিনি সতীদাহের বিরুদ্ধে ছিলেন।ইসলামের সাম্যবাদী জীবন ব্যবস্থা বৌদ্ধ জীবন ব্যবস্থার মতোই তাদের আশংকার কারণ হয়েছিলো। কিন্তু এটাই এদেশের অব্রাহ্মণ জনতার জন্য আশার আলো স্বরূপ ছিলো।এই ব্রাহ্মণ্যবাদী আন্দোলনসমূহ শিবাজীকে তাদের স্বার্থ রক্ষার কাজে ব্যবহার করে।

মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাংশে স্বাধীন এক হিন্দু রাজ্য স্থাপনের পর শিবাজী নিজেকে রাজা হিসাবে ষোষণা করার জন্য অভিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন করতে মনস্থ করেন। শিবাজী ও তাঁর সহৃদবর্গ এ-ও অনুভব করেন যে, অভিষেক বৈদিক রীতি অনুযায়ী না হলে তার আদৌ কোনো মূল্য নেই। তাঁর এই বাসনা পূরণ করতে গিয়ে শিবাজী বহু সমস্যার সম্মখীন হন। তিনি দেখলেন যে, বৈদিক রীতি অনুযায়ী তাঁর অভিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন হবে কি- না তা সম্পূর্ণরুপে ব্রাহ্মণদের উপর নির্ভরশীল।ধর্মীয় দিক থেকে ব্রাহ্মণ ছাড়া কেউ এ কাজ করার জন্য উপযুক্ত নয়। ব্রাহ্মণ তাঁর প্রজাও ছিলো।অথচ শিবাজী কাউকেও তাঁর অভিষেক সম্পন্ন করতে বাধ্য করতে পারেননি।

সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেনারসের এক গঙ্গাভাট ব্রাহ্মণের সহায়তা লাভ করেছিলেন।বেদ ও শাস্ত্র জ্ঞানী গঙ্গাভাট সব সমস্যার সমাধান কওে দিয়েছিলেন।১৬৭৪ খৃষ্টাব্দের ৬ই জুন রায়গড়ে প্রথম ব্রাত্য অনুষ্ঠান এবং পরে উপনয়ন করিয়ে রাজ্যাভিষেক সম্পন্ন করেছিলেন।

কৌলিন্যের ব্যাপারে ব্রাহ্মণদের সিদ্ধান্ত ছিলো ক্যাথলিক গীর্জায় পাপমুক্তির সার্টিফিকেটের মতোই বিক্রয়যোগ্য পন্য মাত্র। ব্রাহ্মণরা কখনও রীতি-নীতির ধারে ধারে না। তাদেও কাছে শাশ্বত সত্য বলে কিছুই নেই।

গঙ্গাভাটের সিদ্ধান্ত যে সৎ ছিলো না তা এই ঘটনা থেকেই সুস্পষ্ট। গঙ্গাভাট ও অন্য ব্রাহ্মণরা সরকারী পুরোহিত হিসাবে সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়েছিলেন। শিবাজীর রাজ্যভিষেকে যে টাকা খরচ হয়েছিল তার কত অংশ গঙ্গাভাট এবং অন্য ব্রাহ্মণরা পেয়েছিলেন- তার হিসাবে পাওয়া যাবে শ্রী বৈদ্যের সংগৃহীত বিশদ বিরণ থেকে। এই মন্ত্রীরা উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন এক লাখ করে টাকা, একটা করে হাতী- ঘোড়া পোশাক- পরিচ্ছদ ও অলংকারাদি।অনুষ্ঠানটি তদারক করার জন্য গঙ্গাভাটকে এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছিলো।রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের অনেকগুলো ঘটনায় শিবাজীর প্রদত্ত দক্ষিণার পরিমাণ ছিলো বিপুল। সভাসদরা বর্ণনা করেছেন যে, অভিষেকটি সম্পন্ন করতে ১ কোটি ৪২ লাক্ষ ৪২৬ টাকা লেগেছিলো। সভাসদরা আরো বর্ণনা করেছেন, শিবাজীর রাজ্যভিষেকে ৫০০০০ বৈদিক ব্রাহ্মণকে সংগ্রহ করা হয়েছিলো।

ডাচ বর্ণনায় রয়েছে,(১৩৮৪ পর্তুগীজ সনের ৩রা অক্টোবর) রাজ্যাভিষেকের সময় শিবাজীকে ১৭০০০ তংকা দিয়ে ওজন করা হয়েছিলো এবং তাঁকে রৌপ্য, তাম্র, লৌহ ইত্যাদি ধাতু, কপূর, লবণ, চিনি, মাখন, নানা ধারনের ফল, সুপারী প্রভৃতি দিয়ে মাপা হয়েছিলো এবং এসব কিছুর মূল্য ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিলে। ৭ জুন অভিষেকের পরের দিন সাধারণভাবে দক্ষিণা দেয়া হয়েছিলো এবং প্রত্যেক ব্রাহ্মণ ৩ থেকে ৫ পেয়েছিলো আর নারী হোক শিশু হোক প্রত্যেকেই ৩,এবং ১, পেয়েছিলো। মোটের ওপর দক্ষিণার পরিমাণ ছিলো দেড় লাখ তংকার সমান।(এক তংকা ৩ টাকার সমান ছিলো)।

Oxendone ও তাঁর ১৮ই মে থেকে ১৬ই জুনের ডাইরীতে বর্ণনা করেছেন যে, শিবাজীকে সোনা দ্বারা ওজন করা হয়েছিল এবং এই ওজনের পরিমাণ হয়েছিলো ১৬০০ তংকা আর এর সাথে যুক্ত করা হয়েছিলো আরও এক লাখ তংকা এবং এসবই দক্ষিণা হিসাবে ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিলি করা হয়েছিল।

উপরোক্ত ডাচ বিবরনীতে আরও বলা হয়েছিলো যে, ব্রাত্য অনুষ্ঠানে ৭০০০ তংকা গঙ্গভাটকে দেয়া হয়েছিলো, ১৭০০০ দেয়া হয়েছিলো অন্য ব্রাহ্মণদের। ৫ই জুন শিবাজী গঙ্গাস্নান করেছিলেন এবং প্রত্যেক উপস্থিত ব্রাহ্মণকে ১০০ তংকা করে দেয়া হয়েছিলো।

শিবাজী যখন মোঘলদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সফলতা লাভ করে তখন ব্রাহ্মণদের আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ব্রাহ্মণরা তাঁকে রাজা হিসাবে মানতে রাজী হয়নি। কারণ শূদ্রকে রাজা হিসাবে মান্য করা মনুশাস্র বিরোধী। শিবাজী তাঁকে ক্ষত্রিয়ত্ব দান করার জন্য ব্রাহ্মণদের নিকট অনুরোধ জানান। কারণ ইতোপূর্বে ব্রাহ্মণেরা স্ব-স্বার্থে শূদ্রদের ক্ষত্রিয়ত্ব প্রদান করেছেন এমন প্রমাণ আছে। উত্তরে ব্রাহ্মণেরা বলেন,

”সেটা পূর্বে হয়ে থাকলেও কলিযুগে শূদ্রকে ক্ষত্রিয়ত্ব প্রদান করা যাবে না। শিবাজী তখন একজন ব্রাহ্মণকে প্রচুর ঘুষ দিয়ে ক্ষত্রিয়ত্ব সার্টিফিকেট লাভ করেন, কিন্তু ব্রাহ্মণরা তাঁকে জাল সার্টিফিকেট নাম দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে। এই দ্বন্দের ফলেই পরে মারাঠা রাজ্যে পেশোয়াতন্ত্র প্রবল হয়ে ওঠে।পেশোয়ারা ছিল ব্রাহ্মণ।ফলে, দেশে আবার ব্রাহ্মণ শাসন কায়েম হয়।

পেশায়াদের শাসনামলে অচ্ছুতদের দূরবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডাঃ আস্বেদকর লিখেছেনঃ

”পেশোয়াদের আমলে মারাঠা রাজ্যে অচ্ছুতদের সাধারণ রাস্তায় চলবারও অধিকার ছিল না, যদি সে রাস্তায় কোন হিন্দু আসে পাছে তার ছায়ায় হিন্দু অপবিত্র হয়ে যায়।অচ্ছুতাকে তার হাতের কব্জী অথবা ঘাড়ে কালো সূতা পরতে হতো নিজেকে চিহ্নিত করার জন্য, যাতে হিন্দুরা ভুলক্রমে অপবিত্রতার লীলাক্ষেত্রে ঢুকে না পড়ে। পেশোয়াদের রাজধানী পুনায় অচ্ছুতদের কোমরে ঝাটাঁ দড়ি ঝুলিয়ে চলতে হতো, যাতে তার চলা পথের ধুলা সাফ হয়ে যায় । অন্যথায় সে পথের ধুলো মাড়িয়ে হিন্দু অপবিত্র হয়ে যেতে পারে।পুনাতে অচ্ছুতাকে মাটির ভাড় গলায় ঝুলিয়ে চলতে হতো থুথু ফেলার জন্য।কারণ তার থুথু মাটিতে পড়ে গেলে তা অজান্তে মাড়িয়ে কোন হিন্দু অশুচি হয়ে যেতে পারে” ।

পেশোয়াদের আমলে ব্রাহ্মণরা তথাকথিত ছোটজাত ব্রাহ্মণদের মত আচার-ব্যবহারও করতে দেননি।ভাঁজ করে ধুতি পরা কিংবা নমস্কার বলাও তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিলো।ব্রাহ্মণরাজ কায়েম করার জন্যই ব্রাহ্মণরা শূদ্র শিবাজীকে ব্যবহার করে, কিন্তু কাজের সময় কাজী হলেও কাজ ফুরালেই পাজী বনে যান। শিবাজীর পৌত্র শাহু এই চক্রান্তের উপলব্ধি করেণ।শাহু আওরঙ্গজেবের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতেন, এমনকি প্রতিবছর তাঁর সমাধিত বসে শ্রদ্ধা অর্পণ করতেন ।

ব্রাহ্মণদের জুলুম-অত্যাচারের ফলে মারাঠা সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যায়।তাদের আমলে বর্গীয় অত্যাচারে বাংলা পর্যন্ত বিপর্যস্ত হয়। ভাস্কর পন্ডিতের নেতৃত্বে ও অত্যাচারে বাংলা পর্যন্ত বিপর্যস্ত হয়। আজও প্রবাদ-প্রবচনে সে জুলুম বাণীবদ্ধ হয়ে রয়েছে। যদি মারাঠা সাম্রাজ্য স্থায়ী হতো তাহলে ব্রাহ্মণরা আবার মনুর শাসন প্রবর্তন করতো। এটা করার জন্যই ১৭৩৯ খৃষ্টাব্দে পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধে পরাজয়ের পর তারা সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে ক্লাইভের সাথে ষড়যন্ত্র করেছিলো এবং ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল।

পলাশীর যুদ্ধের পর তারা কলিকাতায় ক্লাইভ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের সসম্মানে দূর্গা আমন্ত্রন করে, এমনকি গৌরী দানও করে। ইংরেজকে দিয়ে কার্যোদ্ধারের পরে স্বাধীনতা আন্দোলনের নামে তারা আবার ইংরেজকে হটিয়ে ক্ষমতার মালিক হয়েছে এবং অ-ব্রাহ্মণ জাতিগুলোকে পিষ্ট করে চলছে।ব্রাহ্মরাই শিবাজী উৎসবের নামে সাম্প্রদায়িকতা আমদানি করেছে।

‘গো-ব্রাহ্মণ প্রতিপালক’ শিবাজী একটি গরুর জন্য কয়েকশত মুসলমানকে হত্যা করতেন।মুসলমান মেয়েরা মারাঠা বাহিনী কর্তৃক ধর্ষিতা হতেন। মুসলমানদের সম্পদ লুণ্ঠিত হতো।মোটকথা, মুসলমানদের ত্রাস ছিলেন এই শিবাজী।অবিভক্ত বাংলায় মুসলমান নিধনের জন্য শিবাজী উৎসব প্রবর্তিত হয়।

[উৎসঃ সরকার শাহাবুদ্দীন আহমদ, ইতিহাসের নিরিখে রবীন্দ্র- নজরুল চরিত, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ, দ্বিতীয় সংস্করন, জুলাই ২০০২, ঢাকা পৃষ্ঠা ১০৩-১১৯]

প্রাসঙ্গিক পোষ্টঃ

হিন্দু রাজাদের হাতে ভারতের মন্দির ধ্বংসের অজানা ইতিহাস – পিনাকি ভট্টাচার্য্য

‘It’s a myth that Muslim rulers destroyed thousands of temples – Richard Eaton

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অজানা অনেক তথ্য সমৃদ্ধ পোষ্ট!

কি ভয়াবহ ছিল ব্রাহ্মন্য তন্ত্র আর পেশৌয়া তন্ত্র! ভয়াবহ!!!!!!!!!!!!!!

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪০

চেংকু প্যাঁক বলেছেন: ধরণটা পরিবর্তিত হয়ে গেলেও ব্রাহ্মন্য তন্ত্র এখনো ভয়াবহই আছে, খালি আমরা সচেতন না।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সচেতন হলেও শেকড় এমন গভিরে
তার জন্য ব্যাপক যে গণ জোয়ার, জাগরনের জাতিগত চিন্তা, চেতনার উন্মেষ, বিকাশ ও ধারন করা দরকার; তার চিন্তা অনেকের মাঝে থাকলেও উপকরণ নেই!!!!

অথচ উল্টোটার জন্য ব্যাপক কর্পোরেট বিনিয়োগ নিত্য চলছে!

অসম যুদ্ধের পরিণতিতো সমাজেই দৃশ্যমান! নয়?

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৯

চেংকু প্যাঁক বলেছেন: একজন মানুষও সিরিয়াসলি এই বিষয়টা নিয়ে কাউন্টার একটভিটিজ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.