নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাস্তিকরা বঁদড়ামি করবো আর আমি নিশ্চিন্তে বেহেশতে চইলা যাওয়ার ধান্দা করমু ! কক্ষনো না, বরং আমি এই কুলাংগার গুলারে জাহান্নাম পর্যন্ত ধাওয়া করমু, ওগো লগে জাহান্নামে ঢুকমু, ওগো আগুনের চাপাতি দিয়া কুপামু.......এর পরে আমার কইলজা ঠান্ডা হইবো।

চেংকু প্যাঁক

চেংকু প্যাঁক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোহনদাস করমচান্দ গান্ধীর বিতর্কিত অনশন

২১ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৫০

১৯৩০ সালে, লন্ডনে প্রথম গোল টেবিল সম্মেলন হয়েছিল, যাতে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রেমসি ম্যাকডনাল্ড। সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল স্ব-শাসনের জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা। এই সম্মেলনে ব্রিটিশ ভারতের বিভিন্ন প্রিন্সলি স্টেট, সংখ্যালঘু গ্রুপ যেমন মুসলমান, শিখ, খৃষ্টান, পার্সি, এবং অচ্ছুৎ (অস্পৃশ্য বা আনটাচেবল) দের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিল। অচ্ছুতদের জন্য এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত অচ্ছুৎ বা আনটাচেবলদের রাজনৈতিক ভাবে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস এই সম্মেলন বয়কট করে।

আনটাচেবল গ্রুপকে এই সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেন ডঃ বি আর আম্বেদকার (পিএইচডি, ব্যারিস্টার)। ডঃ আম্বেদকার সম্মেলনে মেমোরেন্ডাম পেষ করেন, যাতে তিনি সাজেস্ট করেন অচ্ছুৎদের জন্য যেন আলাদা নির্বাচন দেয়া হয়। যেই নির্বাচনে অচ্ছুতরা নিজেদের নিজেরাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। এবং এই ব্যবস্থা থাকবে কেবল ১০ বছরের জন্য। তিনি বলেন ভারতের অচ্ছুতরা হাজার বছর ধরে ঘৃণিত আর উপেক্ষিত। তারা স্বতন্ত্র নির্বাচন পেলে, হিন্দু গোঁড়ামীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজস্ব নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে বিকশিত হতে পারবে। সম্মেলনে উপস্থিত সবাই এতে রাজি হয়।

প্রথমেই বলেছি কংগ্রেস হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে এই সম্মেলনে যোগ দেয় নাই। বরং সম্মেলন চলাকালে তারা ভারতে পূর্ণ স্বাধীনতা দাবী করে বসে। ব্রিটিশদের লবনের উপর করের বিরুদ্ধে গান্ধী সারা ভারতবাসিকে সল্ট মার্চে আহ্বান করেন। হাজার হাজার মানুষ এই মার্চে অংশগ্রহণ করে, এরেস্ট হয়, কারাগারে যায়। ভারতের মাঠ গরম হয়ে উঠে। ফলস্বরূপ লন্ডনের গোলটেবিল বৈঠক খুব বেশিদুর আর আগায় না।

১৯৩০ সালে প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনও কংগ্রেস কার্যত বয়কট করে। উচ্চবর্ণের যেসব হিন্দু এই নির্বাচনে দাড়ায় তাদের অপদস্থ করার অভিপ্রায়ে কংগ্রেস কিছু অচ্ছুৎবর্ণের লোককে তাদের সাথে দাড় করায়, যেমন ২ জন মুচী, ১ জন নাপিত, ১ জন দুধ ওয়ালা, ১ জন সুইপার। উদ্দেশ্য কোন সেলফ রেস্পিক্টিং উচ্চ বর্ণের হিন্দু পার্লামেন্টে নিচু বর্ণের মানুষের সাথে বসতে রাজি হবে না, বরং অপমানিত বোধ করবে। ফলে তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ রাজ ১৯৩১ সালে দ্বিতীয় রাউন্ড টেবিল সম্মেলনের আয়োজন করে। এবার কংগ্রেস গান্ধীকে প্রতিনিধি করে সম্মেলনে পাঠায়। কিন্তু এই বৈঠকে গান্ধী আর আম্বেদকার দুইজনই অচ্ছুৎ গোত্রের প্রতিনিধিত্বের ক্লেইম করেন। তাদের মধ্যে গরম গরম তর্ক বিতর্ক হয়। গান্ধী মুসলমান আর শিখদের জন্য আলাদা নির্বাচনে রাজি হলেও নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের বা অচ্ছুতদের জন্য আলাদা নির্বাচনে কিছুতেই রাজি হন নাই।

গান্ধী বলেন, " যারা অচ্ছুতদের রাজনৈতিক অধিকারের কথা বলে তারা ভারতকে চিনে না। তারা জানেনা ভারতের সমাজ কিভাবে গঠিত। তাই আমি জোর দিয়ে বলতে চাই আমার একার ক্ষমতা থাকলে আমি আমার জীবন দিয়ে অচছুতদের এই স্বতন্ত্র নির্বাচনের অধিকার প্রতিহত করব।" (১)

এই হুংকার দিয়ে গান্ধী লন্ডন ত্যাগ করেন। ভারতে আসার পথে ইতালিতে মুসলিনির সাথে দেখা করেন। আর স্বৈরাচারী মুসলিনির ভুয়সি প্রশংসাও করেন।

এর এক বছর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ড ২০ বছরের জন্য অচ্ছুতদের নিজেদের জন্য আলাদা নির্বাচনের অধিকারের ঘোষণা দেন। সেই সময় গান্ধী পুনার সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন। কারাগার থেকেই গান্ধী অচ্ছুতদের আলাদা নির্বাচন তুলে নেয়ার দাবীতে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।

এক মাস অপেক্ষা করে ব্রিটিশ সরকারকে রাজি করাতে না পারলে গান্ধী অবশেষে আমরণ অনশন শুরু করেন। এই অনশনকে কেন্দ্র করে সারা ভারতে উথাল পাতাল শুরু হয়। সবাই আম্বেদকারকে দোষারোপ করতে শুরু করে, ওনাকে ভিলেন আখ্যা দেয়। ওনাকে গান্ধির হত্যাকারী হিসাবে ডাকতে শুরু করে।

গান্ধির অনশন বন্ধের জন্য মানুষ জায়গায় জায়গায় পুজাপাঠ করে, পিটিশান সাইন করে, মিটিং করে, ব্রিটিশ সরকারকে অচ্ছুতদের নির্বাচনী আসন তুলে নিতে অনুরোধ করে। ব্রিটিশ সরকার জানায় কেবলমাত্র অচ্ছুৎ কমিউনিটি রাজি হলেই তারা এই প্রভিশান তুলে নিবে, না হলে না।

এই সময় মাদ্রাসের বিখ্যাত অচ্ছুৎ নেতা এম সি রাজা বলেন " হাজার বছর ধরে আমরা অস্পৃশ্য, নিপীড়িত, অপমানিত, তুচ্ছ হয়ে থেকেছি। এখন আমাদের কারনে মহাত্মা তার নিজের জীবন নিচ্ছেন। আর তিনি যদি মারা যান তাহলে আগামী হাজার বছর বাকি হিন্দুদের ধাক্কায় আমরা আরও অনেক পিছনে পড়ে যাবো।" (২) তিনি আম্বেদকারকে তাদের নির্বাচনী আলাদা আসনের দাবী তুলে নিতে বলেন।

অবশেষে আম্বেদকার গান্ধির অনশনের চতুর্থ দিনের মাথায়, ১৯৩২ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বরে পুনা কারাগারে গান্ধির সাথে দেখা করে পুনা প্যাক্ট সাইন করেন। যাতে গান্ধী নিম্নবর্ণের হিন্দুদের আলাদা নির্বাচন নয়, বরং জেনারেল নির্বাচনে আলাদা আসনের জন্য রাজি হন, এবং বেঙ্গল, আসাম, পাঞ্জাব, বোম্বে সহ মোট সাতটি প্রভিন্সে ১২০ টি আসন দেন। উদ্দেশ্য কেবলমাত্র উচ্চবর্ণের হিন্দু যারা কন্সটিটুয়েন্সি কে ডমিনেট করবে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট নিম্নবর্ণের নেতারাই রাজনীতিতে আসবে। অর্থাৎ ঘুরে ফিরে ক্ষমতা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের হাতেই থাকবে।

এরপর ডঃ আম্বেদকার লিখেন, " There was nothing noble in the fast. It was a foul and filthy act....It was a worst form of coercion against a helpless people to give up the constitutional safeguards of which they had become possessed under the Prime Minister's Award and agree to live on the mercy of the Hindus. It was a vile and wicked act. How can the Untouchables regard such a man as honest and sincere?" (3)

পুনা প্যাক্টের পর গান্ধী আন্টাচেবল ক্লাস কে হরিজন নাম দেন, তাদের জন্য মন্দির উন্মুক্ত করে দিতে বলেন, কিন্তু আদতে এসব কার্যকর হয় নাই, আর গান্ধীও এই দাবীতে কোনোদিন অনশন করেন নাই। কিন্তু হরিজনেরা সুক্ষ হিসাব ধরতে না পেরে দলে দলে কংগ্রেসে যোগ দেয়। গান্ধী রাজনীতিতে বাজিমাৎ করে দেন, আর ডঃ আম্বেদকার হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেন।

(১) Babasaheb Ambedkar: Writings and Speeches, Education Department, Government of Maharashtra, pg-69.
(2) Servants of India Society member Kodanda Rao's account cited in Jaffrelot; 2005, 66,
(3) Babasaheb Ambedkar: Writings and Speeches, Education Department, Government of Maharashtra, pg-259.
- The Doctor and the Saint; Arundhati Roy
-সাবিনা আহমেদ/ফেসবুক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.