নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আল্লাহপাক বলেন \"ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে ভাল কথা কার হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে এবং নেক আমল করে এবং বলে যে নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের মধ্যে একজন।\"(আল-কোরআন)

ইলিয়াস বিডি

আমি এক মুসাফির

ইলিয়াস বিডি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুজাকারা ।।। মাওলানা সাদ (দাঃবাঃ) ।।। বয়ান থেকে নসীহত ।।। দ্বায়ীর সিফাত ◘ পর্ব-২

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:১৫



মাওলানা সাদ (দাঃবাঃ) ২০১২ তে দ্বায়ীর সিফাত সন্মন্ধে বলেন,

প্রথম অংশ পড়ুন
প্রথম অংশর পর>>>

সবর আলামাতে নবুয়ত (নিদর্শন) এর একটি। আলামাত সিফত হতে উঁচু বা উপরের স্তরের। হয়রত জায়েদ ইবনে সানা রদিয়াল্লহু আ’নহু হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে এই নিদর্শন তালাশ করলেন যে, তাঁর মধ্যে সবর কতুটুকু আছে? তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঋন (করজ) দিলেন। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ নিলেন। যার বিনিময়ে খোজুর পরিশোধ করবেন। সময় আসার ৩ দিন আগেই যায়েদ বিন সানা হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামার গারীবান (কলার) চেপে ধরলেন এবং অত্যন্ত রুক্ষ ব্যবহার করলেন্। ঘটনাটি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। হযরত ওমর রদিয়াল্লহু আ’নহু এর অবস্থা এর পরিপ্রেক্ষিতে এমন প্রকাশ পেল যে, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা করলেই তাকে কতল করে দিবেন। কিন্তু হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য বললেন, ওমর তুমি এটা কি করলে ? তোমার তো উচিৎ ছিল আমাকে বলতে ঋণ পরিশোধ করতে আর তাকে বলতে যেন সে তার পাওনা উত্তম পন্থায় চায়। তুমি তাকে হত্যার ধমক কেন দিলে? হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ওমর) যাও তাকে তার পাওনা দিয়ে দাও এবং তাকে তার পাওনার চেয়ে ২০ ছাঁ খেজুর অতিরিক্ত দিবে। এটা আমাদের জন্য শিক্ষা যে বাড়াবাড়ি করনেওলায়াদের সাথে অনুগ্রহ করবে। আমাদের এখানে মুকাফাত বা বাড়াবাড়ি সমান সমান নয় বরং এহছান।

কার উপর এহছান? এহছান করনেওয়ালার উপর?

শোন, ধ্যান দিয়ে শোন, এহছান করনেওয়ালার উপর এহছান তো এহছানের বদলা স্বরুপ। তার চেয়ে বেহায়া কে হবে যে এহছানের বদলা দেয় না? সে তো অত্যন্ত খারাপ মানুষ যে এহছানের বদলা দেয় না। আমাদের স্তর এই নয় যে, শুধু এহছানের বদলা দিব, এহছানের বদলা তো ঋন। আর ঋন তো পরিশোধ করতেই হবে।

যে তোমাদের সালাম দেয় বা হাদিয়া দেয় (উভয় তাফসিরই করেছেন ওলামার) তোমরা তার বদলায় তাকেও সালাম করো বা হাদিয়া দাও (তার চেয়েও উত্তম বা কমপক্ষে ততটুকু)।

প্রশ্ন এতুটুকু নয় অনুগ্রহকারীর উপর অনুগ্রহ; শুধ এতুটুকু দ্বারা ইজতেমায়িয়াত পয়দা হয় না। বরং এর দ্বারা তওলিয়া হয় অর্থাৎ অমুকে আমার পক্ষে, অমুকে অমুকের পক্ষে, এর সম্পর্ক আমার সাথে, ওর সম্পর্ক ওর সাথে এতটুকু হয়। ইজতেমায়িয়াত পয়দা হয় যে কষ্ট দেয় তার উপর এহছান ও অনুগ্রহ করার দ্বারা। আর এটা এহছানের উচুঁ স্তর। এহছান করনেওয়ালার উপর এহছান, এহছানের নিম্ন স্তর। নবুয়তের শান হলো, তিনি এহছান করতেন কষ্ট দাতার উপর। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জায়েদ ইবনে সানাকে নিয়ে যাও ওমর। তাকে তার পাওনা দিয়ে দাও এবং ২০ ছাঁ অতিরিক্ত দিবে। কম দিতে বলেন নি যে, সে আমার সাথে বাড়াবাড়ি করেছে না? কারণ, আমাদের এখানে ধরপাকড় নেই। এটা তো রাজনীতির মেজাজ; যে আমার সাথে চলবে, তাকে চালাব আর যে বাড়াবাড়ি করবে তার থেকে প্রতিশোধ নেব। এটা রাজনীতির মেজাজ, দাওয়াতের মেজাজ নয়। দাওয়াতের মেজাজ হলো, বাড়াবাড়ি করনেওয়ালার উপর এহছান করা। যখন যায়েদ ইবেন সানা কে অতিরিক্ত ২০ ছাঁ দেয়া হলো তখন তিনি তা নিতে অস্বীকার করলেন। যে, আমার পাওনা তো পেয়েছি। অতিরিক্ত কেন দিচ্ছ? হযরত ওমর রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ২০ ছাঁ খোজুর অতিরিক্ত দিতে বলেছেন। কারণ আমি তোমাকে তলোয়ার দিয়ে ধমক দিয়েছি। তার প্রতিদান স্বরুপ। অর্থাৎ আমি ভুল করেছি। তোমাকে ভয় দেখিয়েছি। এ জন্য বেশি দিতে বলা হয়েছে।

হযরত ওমর রদিয়াল্লহু আ’নহু তাকে বললেন, তুমি ইহুদিদের বড় আলেম, তা সত্ত্বেও এ ব্যবহার কেন করলে নবীর সাথে?

যায়েদ ইবনে সানা বললেন, তিনি নবী, কিন্তু একটা নিদর্শন যা বাড়াবাড়ি করা ছাড়া পরীক্ষা করার নয়, তার পরীক্ষা করছিলাম। তাই এমনি করেছি। যাতে বুঝতে পারি, নিশ্চিত হই, তিনি আল্লাহ্‌র নবী। আর সেটা হলো সবরের পরীক্ষা। এ জন্য এটা বুনিয়াদি বিষয় যে, সবর সব নবীর ইজেতাময় গুন।

নবীর প্রতি এর নির্দেশ হয়েছে: নবীজি আপনি সবর করেন এবং আপনার সবর আল্লাহ্‌র জন্যই যেন হয়।

এমন নয় যে, আজ সবর করব, আর তার উপর ভিত্তি করে কোন প্রতিদান চাইব। সবর করনেওয়ালারা তো সে, যে দুনিয়াতে এর কোন প্রতিদান চায় না।

১ম বিষয় হলো সবর এবং কতক্ষন পর্য্‌ন্ত সবর ? মউত পর্যন্ত । হযরতজী রহ: বলতেন দায়ীর মউত হয় সবরের ময়দানে আর কাফেরের মউত হয় খাহেশের ময়দানে।

সবর করনেওয়ালার উপর হুকুম হলো ক্ষমা করে দিবে । কারন সবরের অর্থই হলো ক্ষমা করা। যে ক্ষমা করে না সে ধৈর্যশীল হতে পারে না।

এজন্যই হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু যার রদিয়াল্লহু আ’নহু কে বলেছেন, আবু যার ক্ষমা করতে থাক। তেমনি হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, নবীজি আপনি ক্ষমা করতে থাকবেন্। কেননা এই গুনাবলী ইজতেমায়িয়াত বজায় রাখার জন্য।

আমাদের সবচেয়ে বড় খারাবী ও দুর্বলতা হলো, আমাদের ইজতেমায়িয়াত ভেংগে যাওয়া। এর এক মাত্র সবব (কারন) হলো, আমাদের মধ্যে দুশমনের প্রবেশ। যত রাজত্ব খতম হয়েছে তার পেছনেও কারণ এটাই ছিল। যে, প্রথমে আপোষে একের উপর অপরের আস্থা নষ্ট হয়েছে। এটা বড় চাল্ বা যুদ্ধের উপকরন বা অস্র। যে, একের উপর অন্যের আস্থা নষ্ট করে দাও। এতে করে তাদের ইজতিমায়িয়াত নষ্ট হয়ে যাবে। আর যখন ইজতেমায়িয়াত নষ্ট হয়ে যাবে, তখন যতই নামাজ, তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ, জিকির আযাকর করুক আল্লাহর সাহায্য পাবেনা, এটা পাকা কথা।

এজন্য হজরতজী বলতেন, তোমাদের নামাজ, তোমাদের জিকির, তোমাদের তেলাওয়াত, তোমাদের তাহাজ্জুদ আরশেও যদি পৌছেঁ যায় এবং তোমাদের দোয়াও যদি আরশে পৌঁছে যায়; তবুও আল্লাহর সাহায্য আসবে না যদি আপোষে ইজতিমায়িয়াত না হয়। আর ইজতিমায়িয়াতের সবচেয়ে বড় আসবাব হলো, সাথীদেরকে ক্ষমা করার নিজাম তৈরী করা ।
এ জন্য আল্লাহ তাআ’লা বলেন, "হে নবী আপনি ক্ষমা করুন তাদেরকে এবং আল্লাহর সাহায্য ইজতেমায়িয়াতের উপর।"
ইজতেমায়িয়াত বলে দিল এক হওয়াকে; আর দিল এক হওয়ার জন্য আস্থা পূর্বশর্ত। আমি তো বলি, যদি স্ত্রীর উপর থেকেও আস্থা উঠে যায়, তো সে দম্পতির ঐক্য খতম হয়ে যাবে। স্ত্রীর উপর আস্থা না থাকা সংসার ধ্বংস হওয়ার কারণ। তেমনি আমাদের আপোষের ইজতিমায়িয়াত ধ্বংশের আসবাব আস্থা খতম হয়ে যাওয়া।

আল্লাহর সাহায্য ইজতিমায়িয়াতের উপর। সব দুর্বলতা সত্ত্বেও যদি ঐক্য বা ইজতেমায়িয়াত বাকি থাকে তো আল্লাহর মদদ থাকবে । আর যদি উচুঁ দরজার আমলও হয় আর যদি ইজতিমায়িয়াত না থাকে তবে আল্লাহর সাহায্য থাকবে না।

কুরআন পাকে ইজতিমায়িয়াতের আছরাত (প্রভাবসমুহ) বলা হয়েছে এবং অনৈক্যের আছরাতও (প্রভাবসমুহও) বলা হয়েছে। কুর’আন পাকে যত মেছাল (উদাহরণ) বর্ণিত হয়েছে মুনাফিকদের, মু’মিনদের এসব উদাহরণ বর্ণিত হয়েছে মু’মিনদের জন্য। যেমন, নেফাকের নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে এতে মুনাফিককে সম্মোধন করা হয় নি। বরং মু’মিনরাই সম্মোধিত অর্থাৎ মু’মিনদের খেতাব করে বলা হয়েছে। মানুষ মনে করে এটা মুনাফিকদের সাথে সম্পৃক্ত্। নেফাকের আয়াত আর নেফাকের নিদর্শন এর সম্পর্ক মু’মিনদের সাথে।

কুর’আনে ঘটনা বর্ননা করা হয়েছে, ঐক্যের ফায়দা অনৈক্যের লোকসান বলার জন্য। কুর’আনে ২টি মসজিদের আলোচনা করায়েছে। একটি হলো মসজিদে কুবা অপরটি হলো মসজিদে দ্বারার। উভয়টি বাহ্যত মসজিদ হলেও প্রত্যেকটির মাকসাদ আলাদা। অথচ মসজিদ বলাই হয় যে জায়গা আল্লাহকে সেজদা করার জন্য হয়। মসজিদ কুরাওয়ালার পবিত্রতা খুব পছন্দ করতেন।
আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেন, ঐ মসজিদ যার ভিত্তি তাকওয়ার উপর, যার মধ্যে অনেক এমন লোক আছে যারা পবিত্রতা পছন্দ করেন্। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন না; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা জানতেন যে, মসজিদে কুবায়ালারা ইস্তেনজায় পানিও ব্যবহার করতেন, ঢিলাও ব্যবহার করতেন। তাই আল্লাহ তা’য়ালা তাদের প্রশংসা করেছেন কুর’আন পাকে: "আল্লাহ অনেক পবিত্রতা পছন্দকারীদের পছন্দ করেন।"
অন্য দিকে মসজিদ দ্বারার, সেখানে কিছু যুবক একত্রিত হয়ে ঈমানদারদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল। সেটাও মসজিদ। এমন নয় যে, মন্দির বা গির্জা বানিয়েছে। বরং মসজিদই বানিয়েছে। কিন্তু উদ্দেশ্য হলো, মোকাবেলা করার এবং মু’মিনদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করার। মসজিদে দ্বারারওয়ালাদের উদ্দেশ্য তাফরিক অর্থাত অ্নৈক্য সৃষ্টি করা। আর মসজিদে কুরাওয়ালাদের উদ্দেশ্য তাকওয়া। আল্লাহ তা’লা নবী (দ) কে নির্দেশ দিলেন, আপনি অবশ্যই মসজিদে কুবায় যাবেন। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সপ্তাহে কুবায় যেতেন। আর মসজিদে দ্বারার সম্পর্কে বললেন যে, নবীজি আপনি কখনও সেখানে যাবেন না। কুর’আনে বলা হয়েছে, মসজিদে দ্বারারওয়ালারা কসম খেয়ে বলবে: আমরা তে কাজ ঠিকই করতে চাই। আমাদের উদ্দেশ্য ভালো ছাড়া কিছু নয়। মনোযোগ দিয়ে শোন, তারা কসম খেয়ে বলেছে। অথচ আল্লাহ তা’লা বলেছেন, এরা মিথ্যাবাদী। কারণ তারা বলেছে, আমরা ভালোর ইচ্ছাই পোষন করছি। কিন্তু তারা যদি ভালোরই ইচ্ছা করত তাহলে তো সাথী হয়ে কাজ করত; প্রতিদ্বন্দী হয়ে নয়। এজন্য আল্লাহ তা’লা বলেন, নবীজী, আপনি সেখানে কখনো যাবেন না ।

হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু নওজোয়ানদের হুকুম দিলেন, যাও, মসজিদে দ্বারার এ আগুন লাগিয়ে দাও। সুতরাং আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হলো। এর সাথে যারা ছিল তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। তারা বিক্ষিপ্ত হওয়ার পর ঐ জায়গা খালি পড়ে ছিল।

এক সাহাবী জায়েদ বিন আকিল রদিয়াল্লহু আ’নহু। তার কোন ঘর বাড়ি ছিল না। তিনি হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তার প্রয়োজনের কথা করেন। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জায়েদ বিন আকিল রদিয়াল্লহু আ’নহু কে বললেন, মসজিদে দ্বারার এর জাগয়াটি খালি পড়ে আছে। তুমি সেখানে ঘর বানিয়ে নাও। জায়েদ বিন আকিল রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহ তা’লা আপনাকে বলেছেন, আপনি সেখানে কদমও রাখবেন না। আর আমি সেখানে ঘর বানিয়ে থাকব? না , আমি এ জায়গা চাই না। অন্য একজন সাহাবী রদিয়াল্লহু আ’নহু , তার কোন ঘর ছিল না। হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ঐ জায়গায় ঘর বানিয়ে নাও। তিনি বলেন, হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলার কারনে সে জায়গাটি নিয়ে নিলাম। আমি সেখানে ঘর বানিয়ে নিলাম। কিন্তু যতদিন ঐ ঘরে ছিলাম ততদিন আমি নি:সন্তান ছিলাম। যেমন আল্লাহ তা’লা বলেন, যদি তোমাদের নিয়ত ফাছাদের হয় তবে এর প্রভাব তোমাদের সত্ত্বা পর্যন্ত নিহিত থাকবে না বরং তোমাদের সন্তান এবং তোমাদের ক্ষেতও হালাক বা ধ্বংশ করবে। ঐ সাহাবী বলেন, যতদিন আমি ঐ ঘরে ছিলাম ততদিন আমার কবতুর ডিম দেয় নি। ঘরে মুরগী তায়ের জন্য বসালাম, সে ডিম থেকেও বাচ্চা হলো না।

আমি বলেছিলাম যে, ঐক্যের কি ফল আর অনৈক্যের কি প্রভাব ?

প্রথম বিষয় হলো, আপোষের ইজ্‌তেমিয়াতকে সর্বাবস্থায় বাকি রাখতে হবে। না-গাওয়ারী বা অপছন্দনীয় হালত বরদাশ্‌ত করা এ রাস্তার হাকিকত। এ রাস্তায় অপছন্দনীয় অবস্থা তো আসবেই। এ জনই হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুকুম করা হয়েছে নম্রতার। সাথীদের সাথে নম্র ব্যবহার করেন। কেননা শুরা কোন দারোগা বা শুরা কোন শাষক নয়। বরং শুরা তো খাদেম। আমাদের এ কাজে ফয়সালার বুনিয়াদ ফাসয়াল হওয়া নয় বরং ফয়সালার বুনিয়াদ সাথীদের অন্তরকে মুতমাইন করা । শাসক শাসিতের লড়াই এই জন্য যে, হাকিম বা শাসক ফয়সালার বুনিয়াদ সে শাসক। আমরা তো খাদেম, শাসক নই।

খাদেম তার মাখদুমকে বলে, আমার রায় এ ভাবে হলো ভাল হয়। মাখদুম বলে, এভাবে করো, এভাবে করো। আমরা মাখদুম নই, আমরা খাদেম। সুরা খাদেম। কোনো গোত্রে শাসক সেই হয় যে, খাদেম হয়। এ জন্য প্রথম বিষয় হলো, নম্রতা অবলম্বন সাথীদের সাথে।
আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেন, হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে যাবে তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন কওমকে আনবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের উপর বিনম্র এবং কাফিরদের উপর কঠোর হবে। আল্লাহর রাস্তায় তারা জিহাদ করবে এবং কোন কটাক্ষকারীর কটাক্ষকে ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
এ আয়াতে ৪টি বিষয় বলা হয়েছে।, যার প্রথমটি হলো নম্রতা। ২য় বিষয় হলো ক্ষমা করা। আমাদের এ কাজে ধরপাকড় নেই। যে, অমুককে ধর; অমুককে জিজ্ঞাসা করো; সে কেন এ রকম করেছে? অনেক সময় এর প্রয়োজন পড়ে; তরে এটা ইজতেমায়ী নয়; ইনফেরাদী ভাবে হতে হবে। যে, তার সাথে কার ভালো সম্পর্ক আছে? তাকে দিয়ে চেষ্ঠা করব। এমন না যে, আমাদের শুরা আছে্। শুরার সামনে তাকে উপস্থিত করতে হবে।

গলদি বা ভুল করনেওয়ালার ভুল লুকানো এবং তাকে মুতমাইন করা, এটা মেজাজে নবুয়ত।

আমাদের মেজাজ হলো পুলিশের মত যে, ভুলকরনেওয়ালাকে ভয় দেখাও, ভীত করো। না, এটা তরবীয়তের রাস্তা না। তরবীয়তের রাস্তা হলো, ভুল করনেওয়ালার ভূল দেখেও এমন হয়ে যাও, যেন দেখই নি।


হযরত ওমর রদিয়াল্লহু আ’নহু রাতে বের হয়েছেন। এক ঘরের দরজা খোলা ছিল। দেখলেন, এক ব্যক্তি শরাব পান করছে। সাথে হযরত আব্দুর রহমান ইব্‌নে আউফ রদিয়াল্লহু আ’নহু ছিলেন। তাকে বললেন, দেখ, ঐ ব্যক্তি কি করছে?

তিনি বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! আপনি তো ঐ কাজ করলেন, যা কুর’আনে নিষিদ্ধ।

হযরত ওমর রদিয়াল্লহু আ’নহু বললেন, কি ভাবে?

তিনি বললেন, আপনি তাজাছ্ছুছ অর্থাৎ দোষ অন্বেষণ করলেন। যা কুর’আনে নিষেধ করা হয়েছে।

হযরত ওমর রদিয়াল্লহু আ’নহু জিজ্ঞাসা করলেন, এখন আমার এ গুনাহ কিভাবে খতম হবে?

তিনি বললেন, এ গুনাহের ক্ষমার রাস্তা হলো, আপনি এখান থেকে এমনভাবে সরে যান, যেন, আপনি কিছু দেখেন নি। আর ঐ ব্যক্তি বুঝতে না পারে যে, আপনি দেখেছেন। তাহলেই আপনার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।

আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করেন। আমাদের তবিয়ত তো এখন এমন হয়েছে (আমি আমার কথাই বলছি, আপনাদের কথা বলছি না) যে, গলদ বা ভূল করনেওয়ালাকে ভুল করা অবস্থায় ধরে ফেলি। যাদের এ মেজাজ হয়, খোদার কসম তাদের দ্বারা উম্মতের তরবিয়ত কখনও হতে পারে না। তাজাছ্ছুছ বা দোষ তালাশ কুর’আনে নিষেধ করা হয়েছে। খোদার কসম, যেনা করনেওয়ালার তত বড় গুনাহ হয় না, যত বড় গুনাহ ঐ ব্যক্তি হয়, যে যেনার সংবাদ দেয় বা গোপনীয়তা উন্মোচন করে। যেনা করনেওয়ালা যদি তওবা করে নেয়, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু যে প্রকাশ করল, তার কোনো ক্ষমা নেই। কেননা, যেনার ক্ষমা আছে, গিবতের ক্ষমা নেই। শিরকের তওবা আছে, কিন্তু গিবতের তওবা নেই। এ জন্য হুকুম হলো, কাউকে ভুল করতে দেখলে এমন হয়ে যাও যেন তোমরা দেখোই নি। ধর-পাকড়, পিছে পরা, দোষ তালাশ এগুলো আমাদের এ কাজে নেই। বরং ভুলকে লুকাও। ভুল করনেওয়ালাকে মুতমাইন (অর্থাত তাকে আন্তরিকভাবে নিশ্চিত) করো।

এক মহিলা এলো হযরত ওমর রদিয়াল্লহু আ’নহু কাছে, কিছু বলার জন্য, কাছে এসে বসল। সে কিছু বলবে এমন সময় তার অজু ছুটে গেল অর্থাৎ বায়ু বের হলো। মহিলাটি অত্যন্ত লজ্জায় পড়ে গেলেন। হযরত ওমর রা: বুঝে ফেললেন। তিনি বললেন, মা, তুমি একটু জোড়ে বলো, আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না। মহিলাটি মুতমাইন হলেন যে, তাহলে ওমর রা: আমার বায়ু বের হওয়ার শব্দ শুনতে পায় নি। চিন্তার বিষয়।

এমন বলেন নি, তোমার মধ্যে কোন আদব নেই। উঠ এখান থেকে। এটা তরবিয়তের এলেম। এ জন্যই বলছি আমাদের এখানে কোন ধর পাকড় নেই। সহজ কাজ হলো, ভূল করনেওয়ালার জন্য এস্তেগফার করো। এর হুকুমও রয়েছে, ‘নবীজি আপনি তাদের ক্ষমা করুন এবং তাদের জন্য এস্তেগফার করুন।’

ভুল কার না হয় ? বড় বড় ভুল সাহাবদের থেকেও হয়েছে। তাদের ভুল থেকে ‌কিছু বিষয় সামনে এসেছে- কোন ভুল ক্ষমার যোগ্য ? কোনটা ক্ষমার অযোগ্য ? ক্ষমা কতক্ষণ করব ? ইত্যাদি ।

এক সাহাবী হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি আমার গোলামকে কতবার ক্ষমা করব? হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন দিনে ৭০ বার ক্ষমা করো।

৭০ এর সংখ্যা হাদীসে আধিক্য বুঝানোর জন্য আসে। অর্থাৎ অসংখ্যবার ক্ষমা করবে, যার কোন সীমা নেই। এই যদি হয় গোলামের ক্ষমা; তাহলে সাথীর ক্ষমার ব্যাপারে কি ধারনা ? আল্লাহ ক্ষমা করলে তুমি কে বাধা দেয়ার? এজন্য একটি উসুলি বিষয় হলো সাথীর দ্বারা কোনো ভুল হলে তার গুনের প্রতি দৃষ্টি দাও, তার পূর্বের কোরবানী দেখ। যখন কুরানির প্রতি দৃষ্টি দিবে তখন তার ভুল অত্যন্ত হালকা মনে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় কমজোড়ি হলো সাথীর কোনো ভুল দেখে তার কুরবানী ভুলে যাই। এ দ্বারা কামলা বা কামকরনেওয়ালা নষ্ট বা হাত ছাড়া হয়ে যায়।


চলবে>>>

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.